পুলক কান্তি কর
অনেকক্ষণ ধরেই মেয়ের সাথে বসে খুনসুটিঁ করছিল নন্দন। ওর মেয়ে মিত্রা এখন লরেটো থেকে বেরিয়ে সেন্ট জেভিয়ার্স এ ইকোনমিক্স নিয়ে পড়ে। বাবার সাথে আজকাল ওর সখ্যতা বেড়েছে অনেকগুণ। ইদানিং ওর ক্লাসমেট বা সিনিয়াররা ওর রূপমুগ্ধ হয়ে হঠাৎ হঠাৎ গুণমুগ্ধ হয়ে পড়ছে বলেই আজকাল ওদের রুটিন আড্ডাটা অনেকবেশী নির্দিষ্ট বিষয় নির্ভর হয়ে পড়েছে। আজও মিত্রা একটা লাভ লেটার বের করে নন্দনকে শোনাচ্ছিল এমন সময় নন্দনের ফোনে এক আননোন নম্বর থেকে ফোন এল, হ্যালো, আপনি কি লেখক নন্দন মজুমদার বলছেন?
-হ্যাঁ। আপনি?
-আমাকে আপনি চিনবেন না। আমি আপনার লেখার একজন পাঠিকা।
-তা পাঠিকা মহোদয়ার তো একটা নাম থাকবে! সেটাই বলুন।
-আপনাদের মতো বিখ্যাত লোকেরা কি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের নাম মনে রাখবেন?
-মনে রাখব কিনা বলতে পারিনা, তবে কথোপকথোনের সময়টুকু অন্তত আমার সুবিধা হবে।
-আমার নাম ধৃতি।
-আপনি কি আমায় চেনেন? বা আপনাকে আমি?
-আপনাকে অনেকেই চেনে। আপনি আমায় চেনেন না, আগেই সেটা বললাম।
-তবে? আমাকে ফোন করলেন যে!
-আপনার একটা লেখার বিষয়ে আমার কিছু জোরালো বিরুদ্ধতা আছে।
-বেশ তো, বলুন না। তবে তার আগে বলুন আমার নম্বরটা পেলেন কোথ্থেকে?
-এটা আজকাল কোনও ব্যাপার নয় নন্দন বাবু। লেখক কবিদের ফোন নম্বর বা ঠিকানা পাওয়া খুবই সহজ।
-আচ্ছা আপনার প্রিয় লেখকদের কোনও লেখা পছন্দ না হলে আপনি কি ফোন করেন?
-দু-একবার চিঠি লিখেছি। তবে ওঁরা তো ব্যস্ত থাকেন, সাধারণ পাঠক পাঠিকাদের উত্তর দেওয়ার মতো ওঁদের সময় হয়না।
-অনেকেই চিঠির উত্তর দেন। আজকাল তো ফেসবুক, ,টুইটারের জমানা। লেখকরা তাতেও সক্রিয় থাকেন। সবাই একরকম নন।
-আপনি কোন দলে নন্দন বাবু?
-আমরা ছোটখাটো লোক। পরে আপনার মুখ থেকেই শুনে নেবো, আমি কোন দলে পড়ি।
-পরে আপনার সাথে যোগাযোগের সুযোগ দিচ্ছেন তাহলে!
-আগে আপনার অবজেকশন দেওয়ার মতো কিছু লিখি! আপাতত বলুন, কোন লেখাটা নিয়ে আপনার বিরুদ্ধতা?
-আপনার ওই ‘প্রেম ও প্রণয়’ উপন্যাসটা নিয়ে। ওখানে নায়ক মন্দারকে যেভাবে আপনি একজন ডিগনিফায়েড এবং পার্সোনালিটি সম্পন্ন লেখক দেখিয়েছেন তা এককথায় অনবদ্য। কিন্তু সেই মানুষটা যখন তার হাঁটুর বয়সী মেয়েটিকে বার বার প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে এবং প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে তা একেবারেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না!
-প্রেমের প্রস্তাব দেওয়াটা অন্যায় বুঝি?
-ওটা সব মানুষ কে মানায় না নন্দন বাবু। এটা প্রায় কাতরতার পর্যায়ে চলে গেছে!
-কিন্তু এই ধরনের ডিগনিফায়েড কোনও মানুষ যদি এমন কাতরতা দেখায়, তবে আমি কী করতে পারি?
-মানে? এটা কি সত্যি ঘটনা?
-মিথ্যে মানে বানানো গল্প হলে বুঝি আপনার অভিযোগ থাকবে না?
-না। তখনও থাকবে। মন্দারের যথেষ্ট আত্মসম্মান বোধ! যথেষ্ট ইগো প্রবণ সে। এটা ওর চরিত্রের সাথে একেবারে খাপ খাচ্ছে না।
-সব মানুষ একরকমের হয়না ধৃতি। আপনার আর কোনও অভিযোগ আছে?
-আছে। কিন্তু এতকথা কি আপনি ফোনে শুনবেন?
-অন্য কোন মাধ্যম নিয়ে আপনার কি কোনও প্রস্তাব আছে?
-আমি কি আপনার সাথে দেখা করে কথা বলতে পারি?
-আপনার বাড়ী কোথায়?
-আমি কসবায় থাকি।
-আগামী শনিবার বিকেল চারটেয় সুভাষ সরোবরে আসতে পারবেন? আমি থাকব ওখানে।
-পারবো।
-তাহলে এখনকার মতো গুডনাইট। ফোনটা কেটে দিল নন্দন। মিত্রা বলল, কী হল বাপি? কার সাথে ডেটিং ফিক্সড করলে?
-পাঠিকা।
-সে কী? বয়স কতো?
-চিনি না তো! গলা শুনে যুবতীই মনে হল!
-তা তুমি যুবতী পাঠিকার সাথে লেকে ঘুরে বেড়াবে, মা জানতে পারলে তো কুরুক্ষেত্র করবে!
-জানতে পারবে না। আর তাছাড়া মা জানে মোল্লার দৌড়!
-কিন্তু পাঠিকার বক্তব্যটা কি?
-সাংঘাতিক অভিযোগ। আমার ওই লাষ্ট উপন্যাসটার মন্দারকে নিয়ে ক্ষোভ!
-ক্ষোভটা কী?
-ও ওই মেয়েটি – পিউ যার নাম – ওকে এত কাতরভাবে বারবার কেন নিজের হৃদয় বেদনা ব্যক্ত করছে!
-কথাটা উনি ঠিকই বলেছেন বাপি। উনি তো ভদ্র ভাষায় ‘কাতর’ বলেছেন। আমার তো হ্যাংলামি মনে হচ্ছিল। আমি জাষ্ট নিতে পারছিলাম না।
-ওটার কারণটা বোধহয় আমি জানি। আমার ভাষ্যে উপান্যাসটা লেখা বলে তোর সবসময় মনে হচ্ছিল বুঝি আমি এমনটা করছি। চরিত্রের সাথে আমার সমাপতনটা একটা কারণ হতে পারে।
-সেটা হয়ত একটা কারণ! তবু বাপি আমার এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা হজম হওয়ার নয়!
-এতদিন বলিসনি তো!
-সময় পেলাম কই বাপি! গত বৃহস্পতিবার উপন্যাসটা পড়া শেষ করেছি। তারপর মামার বাড়ী চলে গেলাম।
-তা ঠিক! তোর মার সাথে আজ তোর কথা হয়েছে?
-হ্যাঁ।
-কবে ফিরবে?
-চিন্তা নেই তোমার। তোমার অভিসার পার করেই ফিরবে।
-মানে? রবিবার?
-হ্যাঁ। ছাড়ো ওসব। মন্দারের হ্যাংলামির কারণটা বলো।
-হ্যাংলামি বলিস না!
-ওটা হ্যাংলামিই বাপি! এবার বলো মন্দার কেন এরকম করছিল?
-ওটা আমি কি করে বলব সোনাই?
-তুমি ওর বয়ানে লিখেছো যখন ওর মনস্তত্ত্বটা জানো!
-তুই আমাকে স্পেসিফিক প্রশ্ন কর।
-ধরো আমাদের পাশের ব্লকের অনিতা পিসি। তুমি যথেষ্ট তার প্রতি দুর্বল। তুমি তাকে তোমার ভালোলাগার কথা বলতে পারবে?
-তুই বড় পেকে যাচ্ছিস সোনাই! তুই বুঝে গেছিস, আমি দুর্বল?
-একটু ইন্টু-মিন্টু তো আছে বাপি! আচ্ছা ছাড়ো! ধরো, সত্যিই যদি কিছু থেকে থাকত, তুমি প্রেম প্রস্তাব দিতে পারতে?
-না।
-তার কারণ হচ্ছে তোমার সম্মানহানির ভয়, ভাবমূর্তির ভয়! তাহলে মন্দার তার হাঁটুর বয়সী মেয়েকে বারবার প্রনয় ভিক্ষা করছে,তার সম্মানহানি হচ্ছে না? তার ইগোতে লাগছে না?
-না। তার কারণ মন্দার পিউকে এতটাই নিজের মনে করে, তার অসম্মান বা প্রত্যাখ্যানকে সে গায়ে মাখে না। সে তো জানেই, তার প্রস্তাবে পিউ’র সাড়া দেওয়া স্বাভাবিক নয়, এককথায় অসম্ভব!
-এই অসম্ভবকে সম্ভব করার ব্যর্থ প্রয়াস তবে কেন বাপি? মন্দার কি বাস্তবকেও স্বীকার করতে চায়না?
-চায়। কিন্তু সে লেখক মানুষ তো! কল্প-জগতের অনেক নান্দনিকতা থেকেও সে মুখ ফেরাতে পারে না!
-কিন্তু তোমার লেখাটায় তুমি তো কোথাও দেখাওনি যে পিউ মন্দারকে ভালোবাসতো। বা তার প্রতি সামান্যতম কোনও দুর্বলতার লক্ষণও দেখাওনি কোথাও!
নন্দন হাসল। ওকে দেখে মিত্রা বলল, কী হল বাপি? পিউ কি ওকে ভালোবাসতো?
-ওটা মন্দারই বলতে পারবে।
-এটা আমায় এড়িয়ে যাওয়া! আচ্ছা আরেকটা কথা। মানুষ কাউকে সাহস করে একবার নিজের দুর্বলতার কথা বলে। কেউ যদি সেটা প্রত্যাখ্যান করে, মানুষ সাবধান হয়ে যায়। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে। ভালোবাসার মানুষের কাছে মানুষ তার প্রিয় স্মৃতিটুকু রাখতে চায়, বিরক্তি নয়।
-আছা সোনাই, হায়ার সেকেন্ডারীর সময় তুই ঈশ্বরকে প্রার্থনা করতিস, তোর যেন নাইনটি পার্সেন্ট নম্বর হয়। তুই পাসনি, তোর কিছুদিন অভিমান হয়েছিল। ঠাকুর নমো করতিস না। পার্ট ওয়ানের পরীক্ষার সময় আবার জোরকদমে ডাকাডাকি শুরু করলি। কেন?
-ওটা ঠাকুর বাপি। ওর সাথে এর মিল কোথায়?
-উপন্যাসটা মন দিয়ে পড়েছিস সোনাই?
-মোটামুটি।
-ওখানে খেয়াল করে দ্যাখ মন্দার মাঝে একটা সময় প্রচন্ড অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ওর লেখা হচ্ছিল না। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সাইকিয়াট্রিক ড্রাগস নিচ্ছিল, ওর সে সময়ই পিউ এর সাথে দেখা। পিউ এর সাহচার্যে সে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরল, লেখা শুরু করল, অ্যাওয়ার্ড পেল। তার কাছে পিউ ঈশ্বর। কবিতার ঈশ্বর। সে বিশ্বাস করে পিউই তাকে লেখা দেয়। বারবার পিউকে তার অ্যাপ্রোচটা বলতে পারিস মন্দারের পূজা। ভক্তিতে তুষ্ট করার পূজা। এই প্রত্যাখ্যানটা তাই অর কাছে সিদ্ধিলাভের উপায়, সোনাই, পরাজয় নয়!
-কিন্তু এরকম ছোট একটা মেয়ের কাছে এইভবে নতজানু হওয়াটা পাঠকরা নিতে পারছেনা বাপি!
-ওটা পাঠকেরা মন্দারের চোখে পিউ’র ঈশ্বর সত্ত্বাটা মানতে পারছেনা বলে!
-তুমি আমাকে বোঝালে, আমি বুঝলামও, কিন্তু মানতে পারলাম না বাপি। এমন একটা বড় মানুষ কোথাও যেন পাঠকের চোখে ছোট হয়ে যায়!
-তুই রবিঠাকুরের ওই কবিতাটি পড়েছিস, যাতে ভীমরুল আর মৌমাছির মধ্যে তর্ক লেগেছে কে বড়?
-পড়িনি।
-ওখানে ভীমরুল বলেছে, সে’ই বড় কেন না ‘তোমার দংশন নহে আমার সমান’। মৌমাছি এতে মন খারাপ করে যখন বনদেবীর কাছে গেল, উনি ওকে আশ্বস্ত করলেন এই বলে - ‘কেন বাছা নতশির/এ কথা নিশ্চিত,/বিষে তুমি হার মানো/মধুতে যে জিত!’
-এর সাথে এই ঘটনার কী মিল হলো বাপি?
-ভাবতে থাক, মিল পাবি।
-তুমি তোমার ফোনের পাঠিকাকে এই সব সাফাই দিলে না কেন?
-সবার জন্য কি এক কথা, সোনাই?
-সাক্ষাতে বলবে বুঝি!
নন্দন মিত্রার পিঠে হালকা একটা কিল দিয়ে বললেন, বড় পেকেছো! যা, খাবার গুলো গরম কর গিয়ে। আমার একটা লেখা মেল করার আছে।
শনিবার প্রত্যাশিত সময়েই সুভাষ সরোবরের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে নন্দন। আজ সকালেই ধৃতি ফোন করে আসাটা নিশ্চিত করে নিয়েছে। দু-এক মিনিট বাদেই একজন ভদ্রমহিলা এসে নমস্কার করে বলল, ‘আমি ধৃতি’। নন্দন ভালো করে এবার দৃষ্টি দিল ওর দিকে। পঁয়ত্রিশ-সাঁইত্রিশের এক সুন্দরী বিবাহিতা মহিলা। সুন্দর একটা কুর্তির সাথে পালাজোঁ পরে; চোখে সানগ্লাস, ঠোঁটে লিপস্টিক; বেশ মডেল মডেল চেহারা। এমন চেহারার মেয়েরা বাংলা গল্প উপন্যাস পড়ে এটা ভাবতেই আজাকাল অবাক লাগে, তার চেয়ে বড় কথা, উনি শুধু পড়েই শান্ত নন, সমালোচনা করার লোভে এতদূর উজিয়ে চলেও এসেছেন। নন্দন বলল, ‘চলুন একটা বেঞ্চ দখল করি!’
-গাছের তলায় মন্দ হতো না!
-আপনার আপত্তি না থাকলে, আমার আপত্তি নেই।
ওরা দুজন একটা গাছের তলায় গিয়ে বসল। জায়গাটা বেশ নির্জন। বিকেল বেলা বুড়োবুড়ি ছাড়া খুব একটা ভিড় থাকে না ওখানে। উঠতি প্রেমিক প্রেমিকার উপদ্রব তুলনায় কম। খানিকক্ষন একথা সেকথার পর নন্দন বলল, ‘আপনি কখনও ‘লঙ্কা চা’ খেয়েছেন?’
-না, ওটা কি?
-লেবু চা তে কাঁচা লঙ্কা ডলে দেয়। ভালোই লাগে খেতে। খাবেন?
-ঝাল লাগবে না?
-না না। ঝাল ঝাল ব্যপারটা থাকবে, কিন্তু ঝাল থাকবে না।
-এই সুবল দা, এদিকে দুটো দাও। হাঁক পাড়ল নন্দন।
-আপনি বুঝি এখানে প্রায় আসেন?
-হ্যাঁ। এখানেই আমার ঠেক।
-কারা কারা আসেন?
-আপনি কি কবি সাহিত্যিকদের কথা ভাবছেন?
-হ্যাঁ।
-শুনুন ধৃতি, অতটা আঁতেল নই যে রোজ কবি সাহিত্যিকদের সাথে উঠবোস করি!
-সেটা আপনার আমাকে সময় দেওয়া থেকেই বুঝতে পেরেছি।
-নিন, বলুন এবার। আপনার অভিযোগগুলো শুনি!
-আগে বলুন, এই উপন্যাসের ঘটনা সত্যি কিনা!
-আমার মনে এসেছে যখন কোনও না কোনও জগতে তো এর অস্তিত্ব আছে ধৃতি!
-কিন্তু বাস্তবে এমনটা হওয়া উচিৎ নয় নন্দন বাবু। এমন মানুষ এরকম করতে পারে না!
-আপনার মানুষটি কি করেছিল শুনি!
-মানে?
-মানে আপনার যে চেনা মানুষটি মন্দারের মতো হয়েও তার মতো কাতরতা দেখায়নি তার কথা শুনতে চাই!
-আপনি কী করে জানলেন, আমার চেনা এরকম লোক আছে? লেখকের কি অন্তদৃষ্টি আছে?
-এটা কমন সেন্স ধৃতি। এই উপন্যাসটা পড়ে আপনি এতটাই উত্তেজিত যে আপনি আমার নম্বর জোগাড় করে আমাকে ফোন করেছেন, আমার সাথে দেখা করতে এতদূর উজিয়ে এসেছেন, এটা কোনও একটা নিছক বিরুদ্ধাভাসের জন্যে নয়।
-তা কেন? আপনার সাথে দেখা করার বাহানা বলে কেন ভাবছেন না? বড় লেখককে আমি এমনি এমনি অনুরোধ করলে কি তিনি আমার সাথে দেখা করতে রাজী হতেন?
-দেখুন ধৃতি আমরা যখন কোনও লেখকের গল্প উপন্যাস পড়ি, সব কি আমাদের ভালো লাগে? অধিকাংশ ভালো লাগে না। অধিকাংশ লেখার সাথে আমরা সহমত হইনা। তখন সিম্পলি লেখাটাকে আমরা পাস কাটিয়ে যাই, দ্বিতীয়বার পড়ার কথা ভাবি না বা কোনও সাহিত্য আড্ডায় বসলে ম্যাক্সিমাম তার ভুল ত্রুটি নিয়ে দু-একটা মন্তব্য করি। কিন্তু একটা লেখা নিয়ে লেখকের সাথে আমরা আলোচনায় বসতে চাই তখনই, যখন ওটা আমাদের মনের মধ্যে তীব্র আন্দোলন তোলে। আমরা তখনই সোচ্চার কন্ঠ হতে চাই, যখন আমরা বুঝি আমার অতি প্রিয় জিনিসটা ঠিক আমার মতো হচ্ছে না! তাই নয় কি?
-চুপ করে রইল ধৃতি। নন্দন আবার বলল, আমি লেখক মানুষ। মানুষকে স্টাডি করাটাই আমার কাজ। আপনি সেদিন যখন ফোন করলেন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হল, আপনার জীবনেও কোনও মন্দার আছে বা ছিল। আপনি কি দয়া করে ওনার কথা বলবেন?
-আমি অস্বীকার করব না নন্দন বাবু। মেয়েরা যুবতী হওয়ার মুখে এরকম অনেক প্রণয় প্রস্তাব পায় -যেটা খুবই স্বাভাবিক।
-শুধু স্বাভাবিক বলবেন না, এটা সঙ্গত এবং মেয়েদের নৈতিক অধিকার। এই প্রণয়-পূজা না থাকলে যৌবন ঠিক মতো পূর্ণতা পায়না ধৃতি।
-বাঃ। ভারী সুন্দর বললেন। এই জন্যেই পুরুষ লেখকদের এত মেয়ে ভক্ত থাকে। আপনি এই জায়গাটা কোনও একটা গল্প উপন্যাসে লাগিয়ে দেবেন, দেখবেন আপনার ফ্যান ফলোয়ার আরও বেড়ে যাবে।
-যাইহোক, তারপর বলুন।
-হ্যাঁ। আমারও বেড়ে ওঠার মুখে এরকম অনেক স্মৃতি ছিল। পাড়ার সমবয়সী ছেলে-ছোকরা, সহপাঠী, সিনিয়ার, বন্ধুর দাদা, জামাইবাবুর বন্ধু - এরকম অনেক তালিকা! সবার দিকে যে আমার দৃষ্টি পড়েছিল, তা নয়। দু-একটায় হয়ত মন ভিজেছিল, দু-একটার জন্যে হয়ত ছটফটানি ছিল। কিন্তু বেশীর ভাগটাই মাঝপথে ডুবে গেছিল। আমি যখন কলেজে উঠি, তখনই আমার জীবনে সত্যিকারের প্রেম এল। সে সময় আমি একজনের কাছে নাচ শিখতাম, উনি বেশি বয়সের ছিলেন না। আমার থেকে বছর পাঁচ-সাতেকেরই বড়, কিন্তু খুব ভালো এবং দক্ষ ছিলেন। উনি অন্য কাউকে ভালোবাসতেন। সেও আমাদের ওখানেই নাচ শিখতো, আমার সিনিয়ার।
-আপনি কি আপনার দুর্বলতা কখনও প্রকাশ করেছিলেন?
-না। সে অবকাশও ছিল না। কেননা পারুলদি প্রায় সব সময় ওর অধিকার বোধটা প্রকাশ করেই রাখতো।
-আপনার জীবনে মন্দারের প্রবেশটা ঠিক কখন হল?
-ওটাই বলব এবার। আমি কলেজ ছেড়ে তখন ইউনিভার্সিটি গেছি। একবার কী একটা উপলক্ষ্যে আমাদের ওখানকার নজরুল সদনে আমার একটা নাচের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে আমাদের পাড়ার অনেক লোকই দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মুক্তিবাবুও গেছিলেন। উনি আমাদের পাড়ারই লোক, আমার ছোট কাকার বন্ধু। গুণী মানুষ। একসময় জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মস্ত অফিসার ছিলেন। বছর পঁয়তাল্লিশ-ছিচল্লিশেই ভি.আর.এস নিয়ে নেন। ছবি আঁকতেন ভালো। অনেক এক্সিবিশানও হয়েছে ওঁর ছবির। হিমালয়ে ট্রেকিং এ যেতেন। তা সেই মুক্তিকাকু ওই প্রোগ্রামটা দেখেই কেমন যেন আমার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়লেন।
-কী করে বোঝা গেল ব্যাপারটা?
-ওনার আমাদের বাড়ীতে আসাটা খুব বেড়ে গেল। ছুতো পেলেই আমার প্রশংসা করতেন।
-আপনার কাকার বন্ধু, বাড়ীতে তো আসতেই পারেন!
-তা পারেন। ইনফ্যাক্ট ওঁর এই বেশী বেশী আনাগোনাটাও আমাদের বাড়ীর কেউ খেয়ালও করেনি। উনি খুব ডিগনিফায়েড ছিলেন। ওনার অভিব্যাক্তি এবং ব্যবহার একদম মাপা ছিল।
-তাহলে আপনি বুঝলেন কিভাবে?
-মেয়েদের একটা সিক্স সেন্স থাকে নন্দন বাবু। ওঁর চোখে আমার প্রতি মুগ্ধতাটা আমার চোখ এড়ায়নি। মাস ছয়েক এভাবেই কেটে গেল। একবার উনি আমার বাবার সম্মতি নিয়ে আমার ফটো শুট করলেন। তার জন্য আমাকে নিয়ে প্রিন্সেপঘাট, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাগবাজারের ঘাট, ওনার বাড়ীর ছাদেও নিয়ে গেছেন। এই ফটোগুলোর এক্সিবিশানও হয়েছিল।
-ওনার কি ফটোগ্রাফিতেও সখ ছিল নাকি?
-হ্যাঁ। তবে আগে পুরোটাই নিসর্গ নির্ভর ছিল। সবটাই হিমালয়ের। মানুষ আমিই প্রথম।
-আপনিই কি শেষ?
-বোধ হয়! অন্য কারোর ছবি আমি পরে ওনার ঘরে গিয়েও দেখিনি।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল ধৃতি। নন্দন বলল, আপনি কি ওনার ঘরে যেতেন মাঝে মাঝে?
-না। আমি এড়িয়েই চলতাম। কেননা আমার দৃষ্টিতে ওনার দুর্বলতাটুকু আমি পড়ে ফেলতে পেরেছিলাম।
-আপনিই তো বললেন, মেয়েদের বড় হওয়ার পথে এগুলো অবশ্যম্ভাবী অংশ। এগুলো বাদ দিয়ে নারী হয়ে ওঠা যায় না!
-তাই বলে যে কেউ! একটা বয়সও তো ম্যাটার করে! ওনার থেকে আমি কম করে পঁচিশ বছরের ছোট। যে কেউ যখন খুশী ভালোবাসলেই হল?
-আপনি কি তখনও আপনার নৃত্যশিক্ষকের মোহে আচ্ছন্ন, না কি অন্য কেউ এসেছে?
-তখন আমার জীবনে অনিন্দ্য এসেছে। ও আমার সাথে ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়তো।
-তিনি কি এখনও টিকে আছেন? হাসল নন্দন।
-হ্যাঁ। উনিই আমার স্বামীত্বের দখল নিয়েছেন।
-বেশ। আপনি মুক্তিবাবুর কথা বলুন।
-দেখতে দেখতে বছর কাটতে লাগল। আমার বিয়ের দিনও ঠিক হল। মুক্তিকাকু আমাদের বাড়ী আগের মতোই আসতেন। চা-টা খেয়ে পেপার পড়ে বাড়ী যেতেন। সবদিন যে ছোট কাকুর সাথে আড্ডা হত তা নয়। মা-কাকীমাদের এটা একটা অভ্যাসই হয়ে গিয়েছিল।
-আপনি সে সময় ড্রইংরুমে গিয়ে বসতেন না?
-না। তবে আমাদের ড্রইংরুমটা ঘিরেই বাড়ীর অন্যান্য ঘর গুলো। ফলে রোজ না হলেও প্রায়দিনই ওনার সাথে আমার চোখাচুখি হত।
-উনি কোনও অছিলায় আপনাকে কাছে ডাকতেন না?
-না। কোনও বাহানা করে কিছু জিজ্ঞাসাও করতেন না। এমনকি স্বাভাবিক ভাবে আমরা বলি না, ‘কী, কেমন আছো?’ - এসব কথাও বলতেন না। কাগজ থেকে চোখ তুলে একবার তাকাতেন, আবার চোখ নামিয়ে কাগজে মন দিতেন।
-আপনার বিয়ের দিনে মুক্তিবাবু এসেছিলেন?
-হ্যাঁ। খেয়েছিলেন কিনা জানিনা, তবে আমাকে একটা সুন্দর ছবি এঁকে উপহার দিয়েছিলেন, একজন নৃত্যরতা পুজারিনী! জানেন তো - ওই মেয়েটার অঙ্গভঙ্গি, চাউনি কোথাও আমার মতো ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, কিন্তু অন্যরা কেউ ধরতে পারেনি মিলটুকু!
-খুব উঁচুদরের শিল্পি তবে!
-হ্যাঁ। এরপর আমি যখন দ্বিরাগমনে ফিরি, আমার কোনও একটা সত্ত্বা আমাকে টেনে নিয়ে গেছিল ওঁর বাড়ী। সেদিন সকালে যথারীতি উনি আমাদের বাড়ীতে চা খেতে এসেছিলেন।
-আপনাকে কুশল সংবাদ জিজ্ঞাসা করেনি?
-না। আমিও বলিনি আমি ওনার বাড়ী যাব। বিকেল একটু গড়িয়ে যেতে অনিন্দ্যকে আমার সব বোনেরা ধরল সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে। মাথা ধরার বাহানায় আমি ওদের সঙ্গ এড়ালাম। যখন সন্ধে হয় হয়, আমি গিয়ে মুক্তিকাকুর ঘরের কলিংবেল বাজালাম। উনি একেবারেই প্রত্যাশা করেননি। অথচ আমাকে দেখে খুশীই হলেন মনে হল। বললেন, ‘এসো এসো। তোমার বরকে নিয়ে আসোনি?’
-না। ও সব শালী-শালাদের নিয়ে সিনেমায় গেছে।
-তুমি গেলে না?
-না। মাথাটা ধরেছিল।
উনি একটু বিব্রত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন কি কমেছে? নাকি ওষুধ-টষুধ এনে দেব কিছু?
-না না, কমেছে।
-একটু চা খাও।
-না, না বসুন না!
-আরে খাও! আমার হাতে চা তো কখনও খাওনি। খেয়ে দ্যাখো, ভালো লাগবে।
মুক্তিকাকু যখন চা বানাতে গেলেন, আমি ঘুরে ঘুরে চারিদিকটা দেখলাম। কত অসংখ্য পোট্রেট, কত অসংখ্য স্কেচ। সবই কোথায় যেন আমি! মুক্তিকাকু কিছুক্ষণ বাদে চা নিয়ে এলেন। চা খেয়ে বললাম, ‘আমাকে আপনার আঁকার ঘরটা একটু দেখাবেন?’ উনি আপত্তি করলেন না। ওই ঘরে গিয়ে দেখলাম, যেন এখুনি ওখানে একটা এক্সিবিশান চলছে। সবই নৃত্যের ভঙ্গিমায় নারী! আর সেই নারী খুব সুক্ষ্মভাবে দেখলে আমি। সব ছবি গুলো একরকম নয়। কোনটায় আমার চাউনির মিল, কোথাও আমার চুলের। কোথাও আবার উরুযুগলের! নন্দন বাধা দিয়ে বলল, এটাও স্কেচ দেখে বোঝা যায় বুঝি?
-আমার ডানদিকের উরু একটু ফোলা, বিশেষ করে হাঁটুর ঠিক উপরে। খুব নিঁখুতভাবে না দেখলে বোঝা যায় না।
নন্দন জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি এই ছবিগুলো দেখার কথা ভেবে গিয়েছিলেন?
-হ্যাঁ।
-মুক্তিাবাবু বুঝতে পারেন নি?
-আমি একটু পরে যখন চলে আসতে চাইলাম, উনি বললেন,‘হঠাৎ এলে যে?’
আমি বললাম, আপনাকে থ্যাঙ্কস জানাতে। এত সুন্দর একটা ছবি উপহার দিয়েছেন!
নন্দন বলল, উনি কি কিছু বুঝতে পেরেছিলেন, আপনি ছবিগুলো দেখে ধরতে পেরেছিলেন - আসলে ওটা আপনিই?
-বোধ হয় পেরেছিলেন, আমি মুখে কিছু বলিনি, তবে খুব তীক্ষ্ণ চোখে আমার ছবি দেখাটা উনি লক্ষ্য করছিলেন, ওটা বুঝতে পেরেছিলাম।
-আপনি কি এটা মানবেন ধৃতি যে উনি মনে মনে চাইছিলেন ছবিগুলো আপনি দেখুন! শুধু দেখা নয়, আপনি ছবিগুলো দেখে নিজের সাথে সাদৃশ্য খুঁজে পান - এটাও তাঁর আকাঙ্ক্ষা ছিল?
ধৃতি মুখটা নামিয়ে বলল, আমারও তাই মনে হয় নন্দনবাবু!
-আপনার কি মনে হয়না, মুক্তিবাবু মনে মনে আপনার নর্ত্তকীসত্তাটাকেও পূজা করতেন? এসব ছবিগুলো তারই অর্ঘ্য?
-হ্যাঁ।
-তাহলে মন্দার যদি পিউকে মনে মনে ঈশ্বরের জায়গায় বসায়, তার প্রতি ভক্তি নিবেদন করে, তাতে দোষ দেখেন কেন?
-মন্দার বড় বেশী সোচ্চার!
-মুক্তিবাবুর সাথে আপনার সোচ্চার হওয়ার মতো রিলেশন ছিল না, মন্দারের সাথে পিউ’র কিন্তু সেটা ছিল। সারা উপন্যাসটায় আপনি দেখবেন, মন্দার তার অন্যান্য নিভৃততম কথাগুলো পিউকে বলতে পেরেছিল এই সম্পর্কের জেরে!
-কিন্তু নন্দনবাবু নিরুচ্চার প্রেমের সৌন্দর্য বেশী। বার বার প্রত্যাখ্যান পেতে পেতে প্রেমের সূক্ষ্মতাটাও তো নষ্ট হয়ে যায়!
-আপনি একটা সত্যি কথা স্বীকার করবেন, ধৃতি?
-বলুন।
-আপনি কি অস্বীকার করতে পারেন, ভালো আপনি ওঁকে নাই বাসুন, ওঁর ভালোবাসাটা আপনি স্বীকার করে নিয়েছেন?
ধৃতি মাথা নীচু করে রইল। নন্দন বলল, ‘আমি জানি, এরপরে মুক্তিবাবুর প্রতি একটা নরম জায়গা তৈরি হয়েছিল আপনার মনে। আজ এখানে ছুটে আসাটাও তারই স্বীকৃতি। মন্দারেরও সেই স্বীকৃতির প্রয়োজন।‘
-কিন্তু সেটা তো হল না!
-সব ঠাকুর তো একভাবে তুষ্ট হয় না ধৃতি! মনসা ঠাকুর বাম হাতে ছুঁড়ে দেওয়া ফুলেই তুষ্ট হয়েছিলেন। আবার বহু ঠাকুরকে বছরের পর বছর ধরে তপস্যা করে তুষ্ট করতে হয়। পিউ’র প্রত্যাখ্যান তাই মন্দারের সিদ্ধিলাভের পথে এক একটা বিঘ্ন বলেই মানা দরকার। মন্দারের এছাড়া আর পথ নেই। এভাবে ভাবুন, মুক্তিবাবুর মন্দার হয়ে ওঠাটা আপনার কাছে অনেকটা সহনীয় হবে! এতবড় মানুষের এইভাবে প্রণয় ভিক্ষাটা আর আপনার কাছে গ্লাণিকর মনে হবে না!
-ভাগ্যিস আমাকে সময় দিয়েছিলেন, নন্দনবাবু!
-সময়টা আমি আমাকেই দিয়েছিলাম ধৃতি।
-ভালো কাটল আজ সন্ধেটা। আমি কি এবার উঠব?
-তার আগে কয়েকটা কথা জানার এবং বলার আছে আমার!
-বলুন।
-আপনার বিয়ে হয়েছে কত বছর?
-চোদ্দ বছর।
-এর মধ্যে মুক্তিবাবুর কোনও খোঁজ পেয়েছেন?
-শুনেছি তিনি একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। ওনার তো পরিবারে আর কেউ ছিল না!
-এই চোদ্দ বছরে আপনার সাথে ওনার একবারও দেখা হয়নি?
-প্রথম বছর দুই বাপের বাড়ী যাওয়া হত ঘন ঘন। তখন দু-একবার চোখের দেখা হয়েছিল। তারপর আমার ছেলেমেয়ে হল। বিশেষ যাওয়া হত না, খোঁজও নিইনি। বছর চার-পাঁচেক আগে একদিন খবর পেলাম ছোটকাকুর কাছ থেকে, উনি বৃদ্ধাশ্রমে পাকাপাকি চলে গেছেন। ওনার বাড়ী বিক্রি হয়ে গেছে।
-ছবিগুলো?
-জানি না।
-আমার মনে হয় ছবিগুলো আমৃত্যু মুক্তিবাবু সাথেই রাখবেন। আপনি আমার একটা কথা শুনবেন, ধৃতি?
-বলুন না!
-আপনি আপনার ছোটকাকার থেকে মুক্তিবাবুর বৃদ্ধশ্রমের ঠিকানাটা চেয়ে নিন। একবার নিজে যান -সারপ্রাইজ দিন।
-লাভ?
-ক্ষতি কি? যে মানুষটা আপনাকে জীবনের এতগুলো বছর নিঃস্বার্থ ভালোবেসেছে তাকে এইটুকু স্বীকৃতি দিলে কার কোন লোকসান হবে ধৃতি?
-আমার তো পরিবার আছে!
-এতে আপনার বর বা ছেলেমেয়ের কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না ধৃতি। কিন্তু মুক্তিবাবু একটা নিশ্চিন্ততা নিয়ে মরতে পারবেন। এটা একপ্রকার ওনার ভালোবাসার স্বীকৃতি! আপনি খুব শিগগিরি যান ওনার কাছে!
-বেশ। তাই হবে নন্দনবাবু। আমি নিশ্চিত যাবো। আপনি যদি অনুমতি দেন, পরে আপনাকে এ বিষয়ে আপডেট খবরও দেব।
-আমার কান আপনার ফোনের জন্যে সব সময় খোলা ধৃতি। ভালো থাকবেন। আর একটা কথা, মন্দারের উপর আর ক্ষোভ পোষা রইল না তো?
ধৃতি কিছু বলল না। একটুখানি হেসে নন্দনের হাত দুটো ধরে বলল, ‘একটু ছুঁয়ে গেলাম...’
0 Comments