জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /আবীর ভট্টাচার্য্য চক্রবর্তী

গুচ্ছ কবিতা 

আবীর ভট্টাচার্য্য চক্রবর্তী 


আগমনী

তুমিই চেয়েছ বলেই  শিউলীরা খেলা ভুলে
তারাপথে নামে। মিছিলে মিছিলে ঘেরে
মহার্ণব জাগরুক ধ্বনি
বকপক্ষে আকাশের শুভ্রতা সিঞ্জিনি… 
তোমাদের আয়ু বাড়ে তিলে তিলে প্রতিদিন
বিষুবের মন্দ্র অধিকারে
মৌসমের জলকণা শিশু তরু পল্লবের পেলব শরীরে,
ভোরের মাধুরী লেখে বিবশ কলমে।
তুমি বা তোমরা তাই অলিখিত কথা আঁক
আশ্বিনের নীলাজ বিকেলে
 নদীর গভীর থেকে উঠে আসা দু’-একটি নুড়ি,
মন দিয়ে শোনে তার অর্বাচীন ঝিকমিক সুখ
শরতের পড়ে থাকা রোদ,গোছা গোছা কাশেদের বনে
সাবালক হয়ে ওঠা একটি কবিতাক্ষত দেখে আনমনে।


🍂

আবাহনী 

শত বিভেদের মাঝে জ্বেলে রাখো অমর্ত্য-প্রদীপ
মাতৃরূপা মনােময়ী, তুমি যেন স্নেহ-অন্তরীপ।
শিউলিতে সুবাসিত, শিশির সিক্ত আলপথ ;
শরৎ-আলোয় ধোওয়া, দিগন্ত-বিস্তৃত মনোরথ।
আভাসে পরশে মন, দিবানিশি প্রিয় দরশন--
মধু-স্মৃতি-ছায়া-পথে হেঁটে যায় আমার স্বজন।
পুলক-বেদনা বাজে, ভুলে যাওয়া আগমনী সুরে।
স্মৃতির মেখলা ভাসে আশ্বিনের অলস দুপুরে।
দু'কূলে ছাপায় নদী, -----মহালয়া-তর্পণ-ভোরে ,
শৈশব কৈশোর ভাসে রেণু রেণু আলোকমঞ্জীরে।
বোধনের সুর মেলে বিসর্জনে;---বিদায়ের গানে ;
পূর্ণ মানি জীবনেরে শুধু তারই অসামান্য দানে।
গোধূলিতে ছায়া ফেলে : শুকতারা ,উষ্ণ-অভিমানে,
ক্ষণিকের উপহারে;---অসীমের অমূল্য বরদানে। 


বানভাসি 

এই শরতে আনন্দ কই আগমনীর গানে
পালক সাদা মেঘের দল দুখ বারতা আনে!
নিয়মমতোই কাশ ফুটেছে ধূ ধূ বালির চরে
পুজোর খুশি তবুও আজ এলো না কেন ঘরে?

পথে পথে কাঁদছে দেখ আতুর আমার ভাই
ঘর সংসার ভাসছে জলে,মাঠে ফসল নাই 
খাবার নেই, বস্ত্র নেই,ঘর ভেসেছে বানে 
অসহায়ের আর্তি তবু পৌঁছে রাষ্ট্র কানে?

মাঝ দরিয়ায় ভীষন প্লাবন,বানভাসি চারধার
গরীব শুধু বিপদে পড়ে!কেমন অবিচার! 
আকাশ পানে তাকিয়ে দেখি,তারও চোখে জল
বৃষ্টি তো নয়,মেঘ ভাসিয়ে অশ্রুর সম্বল…

তিথি সময় পেরিয়ে গেলেও এলো না আগমনী 
বোধন আগেই বিসর্জনের বাদ্যে সুরধূনী
মা তো নয় শুধুই ধনীর, মা যে জগন্মাতা 
মায়ের অমল মুখখানিতেও বেদন ছায়া আঁকা…

Post a Comment

1 Comments

  1. খুব সুন্দর মননশীল কবিতা, অভিনন্দন আর ভালোবাসা জানাই রাশি রাশি, আবীর

    ReplyDelete