জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ অমিত কুমার রায়


গুচ্ছ কবিতা
 
অমিত কুমার রায়


কাটমানি

ক্রিং ক্রিং ক্রিং
কলিং বেলটা বাজতে থাকে।
কে এল এতো রাতে।
বিরক্তি নিয়ে ডাক্তার খিল খোলে
আপনি, আপনি এমন সময়?
বাবা আগে তো ভেতরে দাঁড়াতে দাও!
আপনার ওষুধ তো ছেলে নিয়ে যায়?
হ্যাঁ কিন্তু এবার সে আসতে রাজি হয় নি।
কেন?
আমি দু'মাস পেনশন তুলতে পারিনি।
হ্যাঁ বাবা, তুমি ওষুধ আর ডাক্তারি ফি সহ 
চারহাজার টাকা চেয়েছো?
কই না তো!
আপনার যা রোগ তাতে দুমাসের জন্য ওষুধ সহ
দুহাজার টাকা নিয়ে থাকি।

দেখলে বাবা, পুরো টাকা না দিলে সে আসবে না 
তার ওপর ট্রেন আর টোটো ভাড়া......
এতো লোভ কেন ছেলের কে জানে
এমন শিক্ষা কখ্খনো দিইনি
যুগের হাওয়া ডাক্তার 
মায়ের থেকেও কাটমানি খেতে চাইছে
ডাক্তার, এই নাও দুহাজার টাকা 
ওষুধ দাও আমার 
ফিরতে হবে আবার এই রাতে।
....... না। আপনি রাতটুকু এখানে থাকুন।
ভোরে বাক্সি যাব।
পৌঁছে দেব বাগনান
ভেতরে আসুন 
আমাদের সঙ্গে খেতে হবে।
বৃদ্ধার চোখে উজ্জ্বল জল-বিন্দু
এই আহ্বানেই আলসারটা
অর্ধেক আরোগ্য লাভ করল বুঝি।
বৃদ্ধা ভাবে কার জঠর যে কি ধাতুর।
সন্তান খাচ্ছে মায়ের ওষুধে কাটমানি
আর ডাক্তার? 
সেও তো মায়ের জঠরের সন্তান।


ক্ষত

লাইব্রেরিটা পুড়েছিল কয়েক বছর আগে 
আমার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে।
অন্য জায়গায় অন্য কোনো স্থানে 
পুড়েছে স্কুলবাড়ি 
একজন উপযুক্ত শিক্ষককের উপস্থিতি 
পাল্টে দিল জঙ্গি ছাত্রের জীবন 
শিক্ষক স্কুলবাড়ি পুড়তে পারে
সুশিক্ষা কখনও পোড়েনা
কারণ পোড়ানো যায় না।
মনুষ্যত্ব যদি পুড়ে তবে 
সে আগুন 
ছড়িয়ে পড়লে 
এ বিশ্বে কার লাভ বেশি?


যত্ত সব যন্ত্রণা 

যত্তসব যন্ত্রণা আমি ভুগছি নিজের জ্বালায় 
ফেলে গেল কে যে হাগিস, সবজিখোসা নালায়।
বলে বলে মুখ যে মুড়ো শোনে কি আর খুড়ো?
মায়ের টাকায় ওষুধ কিনে খাচ্ছে কাট-মানির গুঁড়ো।

যত্ত সব যন্ত্রণা   চারিদিকে মঞ্চ না! 
মাইক নয় অমায়িক যতই কর ভৎসনা। 
শিল চোর রান্নাঘরে আর পাড়ায় পাড়ায় ঘোরে, 
শিল-নোড়া হচ্ছে উধা শিলান্যাসের তরে!

যত্তসব যন্ত্রণা আমি ভুগছি নিজের জ্বালায়
জুতো দেখি পুকুর চুরি  কুশ-পুতুলের গলায়!
কান পাতলায় লাগায় দেখি কানকাটা এক মশা 
পরচর্চায় বয়স পাকে ফেরে কি আর দশা?

যত্তসব যন্ত্রণা    নাম ভুলে যাই হঠাৎ করে 
চাঁদুর নাকি বিয়ে কানা আনে পাত্র ধরে।
গিনেসবুকে তুলতে নাম ঘুষ দিয়েছে বাপন? 
দেশের সেবা করতে গিয়ে জেলে করছে যাপন।

যত্তসব যন্ত্রণা   আবোল তাবোল বকছি 
দুধ উতলে পুড়ছে খিদে জ্বালায় ভুগছি! 
ছি ছি বল যতই   ভোটের টিকিট পাবোই,
জিতু ঘোড়া খোঁড়া সেজে বলবো শুধুই মাভৈ।

🍂


হাঁ

এতো খিদে পেটে 
বিশাল পেট
হাঁ টা পৃথিবী গিলতে চায়।

আমার এতো খিদে 
গিলে চিবিয়ে শেষ করে দিচ্ছি 
পুকুর মাঠ মান সম্মান এমনকি 
অপমান।
আমার আগ্রাসী খিদে হাঁ করে 
সবাই এখন হাঁ করে 
যুব সমাজের মুণ্ডু চিবিয়ে খেতে চায় 
সবটা পারে না 
কিছু তো পারে।
নতুন হাঁ খিদে বেড়ে চলে 
ধর্ষণের খিদে কাটমানি ঘুষের হাঁ
মিষ্টি কথার হাঁ এখন সোস্যাল মিডিয়ায় 
একটা লিংক একটা ওটিপি
সব ম্যানহোল গহ্বরে চলে যাবে
আশ্বিনের নীল চোখে প্রেম
হেমন্তের ঠোঁটে রূপালী হিম

তবুও 
পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে 
কখন যে পাহাড় খেয়ে ফেলি
হাঁ এখন বড্ড বড়
পৃথিবী খেয়ে ফেলে।

৫) কলকাতা 

কলকাতা কত স্মৃতির পাতা খুলে রাখে
কলকাতার ওপরে যত রাগ
যত অভিমান 
যত অত্যাচার 
তবুও 
কলকাতার কাছে ছুটে যাই
মিছিল মিটিং ধর্নায়
কলকাতার কাছে যতো নালিশ 
একা কলকাতা সামলায়
গাড়ি ট্রাফিক জট
এম্বুলেন্স জল ডাক্তার নার্স
আটকাতে পারে না ধর্ষণ 
কলকাতা সচেতন করে 
তুমি সচেতন না হলে 
কলকাতা কার গলায় ঘন্টা বাঁধবে
তাই
ঘন্টা বাঁধা আছে 
দমকলকর্মীর গাড়ির মাথায়।

Post a Comment

0 Comments