জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা /কমলিকা ভট্টাচার্য

গুচ্ছ কবিতা 
কমলিকা ভট্টাচার্য


কবিতায় পাশাপাশি

তোমার মনের শীতলতার ছোঁয়াতেই
আমার কষ্টমেঘের যত ধারাপাত।

সারাদিনের কুড়িয়ে-বাড়িয়ে জড়ো করা
খুশি টুকু নিকড়ে দিলেও,
জানি— তোমার কষ্টের পাথর মাটিতে
ভেজা দাগ টুকু আঁকতে পারবো না।

তবু তোমার স্বরে ফিরিয়ে দাও
আমাকে শতগুণে খুশি—
শূন্য মনের কলসীতে তুমি
কি যে অনুভূতি ভরো!

যা আমাকে বিস্ময়ে তোমার
আরো কাছে নিয়ে যায়—
কবিতায় পাশাপাশি বসি আমরা।


কেক

তোমার হাসি, আমার অভিমান,
তোমার চোখের জল, আমার চুরি করা সুখ—
সবকিছুই আলাদা,
তবু মিশতে থাকে ধীরে ধীরে।

প্রথমে লাগে সাহসের মাপঝোক—
ময়দার মতো সাদা সততা,
চিনি-চিনি ছোট ছোট যত্ন,
ডিমের মতো নরম ভরসা,
আর একটু মাখন—
যতটা দরকার কোমলতাকে বেঁধে রাখতে।

তারপর দু’জন মিশে যাই—
হালকা নাড়াচাড়া,
কখনও দ্বিধা, কখনও উচ্ছ্বাস—
সবকিছু নরম হয়ে আসে
যেন হৃদয়ের ভেতর ব্যাটার
ধীরে ধীরে জমছে।

তারপর আসে উত্তাপ—
হালকা অভিমান,
ভুল বোঝা, মৃদু তর্ক,
অল্প অল্প রাগ—
চুল্লির আগুনের মতো।
কিন্তু সেই আগুনেই
প্রেম ফুলে ওঠে,
ভিতরটা হয় মোলায়েম সোনালি।

অবশেষে—
ঠান্ডা হলে
তুলে ধরি আমাদের সম্পর্কটাকে।
চাকচিক্য নেই,
শুধু উষ্ণতার গন্ধ,
মোলায়েম ভরসা,
আর কাটলে দেখা যায়—
অদ্ভুত নরম একটি কেন্দ্র
যার নাম ভালোবাসা।



তার সাথে সাথে

যেতে যেতেও ফিরে আসে সে—
যেন জোয়ার ছুঁয়ে দেখে ফেলে
বাঁধা নৌকার ক্লান্ত দড়ি,
ছলাৎ ছলাৎ টানে আহ্লাদে,
দুলে ওঠে নীরব জল।

যেন দ্বিধার সুতোর সঙ্গে ঝুলে থাকা পেন্ডুলাম—
থেমে থাকা সত্ত্বেও
অদৃশ্য সময়ের ঢেউ বয়ে যায় ভেতরে ভেতরে,
স্তব্ধতা গিলে খায়
ঢং ঢং করে ওঠা প্রতিটি অনিশ্চয়তা।

যেন পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে শব্দ—
নিজেই নিজের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে
হারিয়ে ফেলে আগের নাম, আগের রং।
তেমনি সে-ও ফিরে আসে—
কিছু বলে না, শুধু বলে, “আসি।”

আমি মাথা নাড়ি—
কথাহীন সম্মতিতে খুলে যায় বাঁধন,
ভেসে যায় আমার গতি, আমার সময়,
আমার সমস্ত উচ্চারিত আর নিঃশব্দ শব্দ
তার একটুখানি উপস্থিতির স্রোতে।

পড়ে থাকে শুধু—
ঘাটে দড়ি-ধরা নিঃসঙ্গ নৌকা,
দেওয়ালঘড়ির নিয়মমাফিক টিকটিক,
আর ঘরবন্দী এক আত্মচিৎকার—
যার প্রতিধ্বনি কেবল আমিই শুনি।


বুদবুদ 

অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ছে বাইরে।
একে একে মনখারাপের কারণগুলো
আমার পাশে এসে বসছে।

আমি তখন বয়ে চলা জলের বুদবুদ—
আছি, তবু নেই!

হাতড়ে ফিরছি কিছু মুহূর্তের পুনর্জীবন।
কপালে, এখানে—এখানে, ঠোঁটে,
আঙুলের নির্দেশে এঁকে যাওয়া চুম্বন
সময়ের পেলবতার মতো
হাত বুলিয়ে যায় আমার কপালে।

বুদবুদের মতো মিলিয়ে যাচ্ছি আমি
নিঃশব্দ অপেক্ষার সান্ত্বনায়।
🍂

Post a Comment

0 Comments