জ্বলদর্চি

অমৃতা ভট্টাচার্য


অ মৃ তা ভ ট্টা চা র্য  


প্রেম

আমি তার কষ্টকল্প পাখি।
সে আমার অনুগত স্বস্তিক বেদনা।

 অসাড় উষ্ণীষ নিয়ে,
 দীর্ঘপথ পার হয়ে
 ক্রীড়াক্ষেত্রে — অনন্ত কোলাজে —
 স্বাভিমানী —
 সে
 যুদ্ধে স্থির —
 জাতিস্মর, কিশোর উন্মাদনা।


ঘাটসিঁড়ি

 ওদিকে রাবণ পুড়ছে
 সিঁদুর উড়ছে
 এক সিঁথি থেকে অন্য সিঁথিতে —

 সিঁড়ির শরীর ছুঁয়ে
 গড়িয়ে পড়ছে স্রোত
 বিষন্নতার ভিড়ে
 কলকাতা থেকে বরাকের রাস্তায় —

 এদিকে জলের বুকে
 স্থির ভেসে আছে
 চাঁদের জারজ মুখ —
 একা উৎসব হয়ে!


ঋণকথা

 সবকিছু ঋণী তার কাছে
 পশম, ধোঁয়ায় ধরা দাগ
 উষ্ণ চোখের কোণ ভিজে
 অভিযোগ? নাকি মৌতাত?

 বিনিময়ে মুঠো ভরা আলো
 পরিচয় পায় কাচ ছুঁয়ে
 অচেনার থরথর জানে —
 মেঘ সিঁদুরের কাছে গিয়ে

 কানে কানে সইকথা বলে
 বলে — জানো? আমাদের বাড়ি —
 রূপকথা, তোমাদেরই মত;
 রোজই শ্রাবণ, চোখ ভারী!

 বলে — শোনো, সেঁজুতির আলো
 উঠোন ভরিয়ে রাখে ত্রাসে
 যেমন রূপকথারা থাকে
 সিঁদুরে মেঘের পাশে পাশে।

 স্বপ্নে যেমন বুদবুদে
 মরা ছায়া রোজ খোঁজে শোক —
 প্রতিটা শ্রাবণ তার চোখে
 ঝকঝকে যন্ত্রণা হোক!

 এই সব ঋণ তার কাছে
 এই সব ভুল তার আলো
 বলো ঋণ, ইতিহাস ভুলে
 বোঝাবে আমায়, ঋণ ভালো?
জ্বর

প্রতিবার জ্বর হলে ভাবি
আর বাড়িমুখো নয় তোমার ট্রেন —
বদলে ঠাণ্ডা প্রশ্রয়
কপালে ঘরোয়া টীকা —
 বৈধ জন্মনামা,
 উঠলে যাওয়া দাগ।

 আমি তো উদার ছিলাম না কখনও
 বৃত্তের মতো।
 শেষ বললে, শেষ-ই হতো
 অগ্নুৎপাত — কোমল-কঠিন
 আর
 বাস্তুশাপের দাঁত।

 এখনো জ্বর হলে
 অভুক্ত পাপ বয়ে যায়
 কানের পাশ দিয়ে।
 দৃষ্টি আর ঝাপসা নয় তখন —
 ঠাণ্ডা আঙ্গুল থেকে 
 বেরিয়ে আসে
 না-ছেঁড়া নাভির ফুল।

এখনও জ্বর হলে ভালো থাকি খুব।
 শুধু জ্বর হলেই বুঝি —

এখনো জন্মাইনি আমি!


সংলাপ

মন:  তেলের ঘনত্ব সরিয়ে একলাবাজি করে এক লহমায় পারি জঙ্গলে বান ডাকতে... মথের ডানার গরল তুলে কপালে টিপ করে অভিসার সাজাতে... রক্তশিব গড়তে পারি... এক দমে তাকে নিয়ে মাটি ফুঁড়ে উড়ে যেতে পারি সময়গর্ভ ছাড়িয়ে...

শরীর:  আগুনে বুদবুদ তুলতে পারো? ... পারো কি স্বপ্ন ফিরিয়ে দিতে সেই কিশোরকে,  যে তার কৌমার্য ভাঙতে প্রস্তুত?...

------

Post a Comment

4 Comments

  1. কবিতার গন্ধভরা এ কবিতা।
    খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  2. সব কবিতাগুলোই ভালো।
    ঘাটসিঁড়ি,জ্বর,সংলাপ বেশ অনবদ্য।

    ReplyDelete