জ্বলদর্চি

নারীদের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসতে হবে নিজেদেরকেই, এক স্বাধীন চিন্তাভাবনা নিয়ে

নারীদের উন্নতির জন্য এগিয়ে আসতে হবে নিজেদেরকেই, এক স্বাধীন চিন্তাভাবনা নিয়ে  

পা র্থ সা র থি  চ ক্র ব র্তী 



নারীদের উন্নয়ন এবং  ক্ষমতায়ন এক জ্বলন্ত ইস্যু । তা নিয়ে আলোচনারও যেন কোন শেষ নেই । পুরুষদের কিভাবে নিজেদের পাল্টানো দরকার,  তা নিয়ে বহু প্রস্তাব রয়েছে ।
যেমন পুরুষরা যেন মেয়েদের শ্রদ্ধা করে, মানুষ হিসেবে গণ্য করে, বস্ত্র হিসেবে নয়। নারীদের প্রতি গৃহ অথবা কর্মক্ষেত্রে  সমমনোভাবাপন্ন মানসিকতা পোষণ করে । নারীদের  ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকে মর্যাদা করা উচিত, কখনো তাদের উপর নিজের মতকে চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয় পুরুষদের ।

সত্যি ,পুরুষদের অনেক শিক্ষার দরকার,  দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার । এ নিয়ে আলোচনা নিরন্তর ।এটাও সত্যি যে, বহু পথ চলা এখনো বাকি,  নারীদের প্রাপ্য সম্মান বা মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হতে।
কিন্তু এক্ষেত্রে একটা অংশ কখনো তেমন আলোচ্য নয় বা আলোকিত হয়নি পর্যাপ্তভাবে। আমার মতে,যে বিষয়গুলো  নারীদের ভাবা উচিত নিজেদের প্রসঙ্গে; সেগুলোর দিকে তাকানো অবশ্য প্রয়োজন ।এই দুঃসাহসের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী । তবে নারীদের প্রতি অপরাধ প্রবণতার বিষয় এক্ষেত্রে বিবেচ্য নয়,  সেগুলো অপরাধ মাত্রই। তা আইনের চোখে যথাযথভাবে বিচার্য্য ও  শাস্তিযোগ্য ।

বেশ কয়েকটি বিষয় যা নারীদের ভেবে দেখা উচিত বলে মনে হয়,  সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা যাক।

প্রথমতঃ মেয়েদের অন্য মেয়েদেরকে অযথা বিচার করার প্রবণতা ত্যাগ করা উচিত ।নারীরা নিজেদের প্রতি কঠোর, একে অন্যের প্রতি আরো কঠোর । বাচ্চার স্কুলের মিটিং-এ যদি কোন কর্মরতা মা উপস্থিত হতে না পারেন তার কাজের চাপের জন্য,  অন্য মায়েরা ভাবেন কি অদ্ভুত দায়িত্বহীনা মা সে! যদি কোন সুন্দরী নারী তার কর্মক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি পান, তবে অন্যান্য মহিলা কর্মীদের মনেও সন্দেহের উদ্রেক হয়।আসলে একটা  তথাকথিত বেমানান পোশাক থেকে শুরু করে ততটা না-সুস্বাদু  রান্না পর্যন্ত; সর্বত্র এক মহিলা অন্য এক মহিলার বিচার ও সমালোচনা করতে উদ্যত ।
এই মানসিকতা সর্বাঙ্গে পরিবর্তন করা দরকার ।পুরুষশাসিত (তথাকথিত) সমাজে এক মহিলার অন্য মহিলার প্রতি আরেকটু সহানুভূতিশীল হওয়া দরকার ।

দ্বিতীয়তঃ পুরুষদের খুশি করার বা রাখার মানসিকতা (সকলের মধ্যে উপস্থিত নাও হতে পারে)ত্যাগ করা আবশ্যক কারণ এই অন্তহীন পুরুষ-চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিজেরাই শেষের দিকে এগিয়ে যায় নারী। অকারণে পুরুষকে এগিয়ে যাবার জন্য ওয়াক-ওভার দেওয়া বন্ধ করতে হবে ।

তৃতীয়তঃ নারীদের সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া একান্ত আবশ্যক ।হাজার হাজার ভারতীয় নারী তাদের ভাই,ছেলে বা স্বামীর জন্য তাদের প্রাপ্য সম্পত্তির অধিকার ছেড়ে দেন।দুঃখিত, শুনতে কর্কশ লাগলেও এটা বোকামির ই পরিচায়ক। যখন তারা প্রাপ্য সম্পত্তি ছেড়ে দিচ্ছেন তাদের নিঃস্বার্থতা প্রমাণিত হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু পরোক্ষভাবে তারা নিজেদের আত্মা বা নিজস্বতাকেই কষ্ট দিচ্ছেন বা আঘাত করছেন ।সার্বিক স্বাধীনতা বা স্বাবলম্বীতার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানো এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ,  এ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয় ।

চতুর্থতঃ নারীদের আরো বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে বা আরো বড় স্বপ্ন দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ।সমস্ত যুবাদের তারা পুরুষ ই হোক বা নারী; বুকে আগুন জ্বালিয়ে রাখতে হবে । সম্ভবত ভারতীয় সমাজব্যবস্থা ই নারীদের খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া থেকে বিরত রাখতে একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে,  তবে তাদের নিজেদের জন্য এবং সমাজের জন্য স্বপ্ন দেখা খুব ই জরুরী ।অনেক ভারতীয় মহিলারা  পুরুষদের চাইতে অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বেশি ভালো কাজ করছেন বা অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছেন । নারীদের সাফল্যই সমাজের চোখে তথা পুরুষদের চোখে নারীর সম্মান বৃদ্ধি করবে।

পঞ্চমত এবং শেষ পর্যন্ত;মহিলাদের উচিত সম্পর্কের নাটকীয়তা থেকে বেড়িয়ে আসা।সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য । ভালো মা,স্ত্রী, বোন,কন্যা বা বান্ধবী হওয়া খুবই দরকার । কিন্তু তার আগে দরকার ভালো নারী হওয়া ।অন্য সব কিছুর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার আগে দরকার নিজের সাথে ভালো সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা। অন্যের জন্য ত্যাগ করা ভালো; কিন্তু নিয়মিত এবং নিরন্তর তা করে যাওয়া নিজের প্রতি বঞ্চনার ই নামান্তর ।নারীর জীবন শুধু অন্যের সাহায্যের জন্য  বা উৎসর্গ করার জন্যই নয়।নারীর নিজস্ব একটা জীবন ও বিদ্যমান ।
আসলে নারীদের অবস্থার উন্নতি বা ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে নিজেদেরকে এবং  একত্রিত হতে হবে।নারীদের উন্নতির সাথে সাথে উন্নতি ঘটবে সমাজের এবং তার মানসিকতার, যা অনেক কালো দিককে মুহূর্তে আলোকিত করার ক্ষমতা রাখে ।
---

Post a Comment

0 Comments