জ্বলদর্চি

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস -৮


ইংরেজি সাহিত্য: পর্ব বিন্যাস ও রূপরেখা

পর্ব- ৮      

সৌ ম্য দী প  চ ক্র ব র্ত্তী

 

মডার্ন পিরিয়ড

১৯০১ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যু ভিক্টোরিয়ান যুগের অবসান ঘটায়। এরপরের যুগ শিল্প ও সাহিত্য-কর্মের অঙ্গনে মডার্ন পিরিয়ড বা আধুনিক যুগ নামে পরিচিত। মডার্ন পিরিয়ড বা আধুনিক যুগ হলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার যুগ। বিশ্ব-যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ইউরোপ তথা ইংল্যান্ডে ঘটে যাওয়া দোলাচলের মধ্যে, ১৯৩০-এ ইউরোপ এবং আমেরিকায় ঘটে যাওয়া প্রবল আর্থিক মন্দার প্রভাবে টালমাটাল আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই যুগ প্রায় প্রতি দশকেই দেখেছে শিল্প-কলা, সাহিত্য ক্ষেত্রে নতুন গোষ্ঠী, নতুন ভাবধারা, নতুন কৃষ্টি-দর্শনের উত্থান। ফরাসি কবি, সাহিত্যিকদের সম্পূর্ণ নতুন ধারার নন্দন-চিন্তার প্রভাব বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই ইংরেজি কাব্য-চর্চায় পড়তে থাকে। মূলত এর-ই প্রভাবে ইংরেজি কবিতায় ১৯১২ সালে 'ইমেজিস্ট মুভমেন্টে'-এর  পথ চলা শুরু হয় এজরা পাউন্ড, অ্যামি লাওয়েল, হিল্ডা ডুলিটল, রিচার্ড অ্যালডিংটন, উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস দের হাত ধরে। ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্ব-যুদ্ধের বর্বরতার আবহে ট্রিস্টান জারা, মার্সেল ডিউসাম্প, ম্যাক্স আর্নস্ট এবং ম্যান রেয়-দের উদ্যোগে আধুনিক মানব-জীবনের অসারতার, অর্থহীনতার দিকগুলিকে তুলে ধরে, প্রচলিত সৃজন-শৈলীর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের 'ড্যাডা' মুভমেন্ট আধুনিক যুগের ইংরেজি সাহিত্যে এক নতুন দিশা নিয়ে আসে। পরবর্তীতে এর হাত ধরেই লুই অ্যারাগন, সালভাদোর দালি, পল এলুয়ার্ড-রা 'সুররিয়ালিস্ট' মুভমেন্টের পথ প্রশস্ত করেন। এই সময়ে ১৯১২ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে রাজা পঞ্চম জর্জের রাজত্বকালে কাব্য-চর্চা করা কবিদের (যেমন জি.কে. চেস্টারটন, জন ম্যাসফিল্ড, ডি.এইচ. লরেন্স প্রমুখ) 'জর্জিয়ান পোয়েট্স' বলেও অভিহিত করা হয়।
কাব্য-কবিতার জগতে এসময়ের সবথেকে বড় নাম ডব্লিউ. বি. ইয়েটস এবং টি. এস. এলিয়ট। আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনে ডব্লিউ. বি. ইয়েটসের লেখনীর অবদান অপরিসীম। তাঁর লেখা 'দি সেকেন্ড কামিং', 'ইস্টার ১৯১৬' তাঁর অনন্য প্রতিভার পরিচয় দেয়। আধুনিক যুগের অবক্ষয় ও মানুষের জটিল মনস্তত্বের দিকগুলিকে দর্শিয়ে টি. এস. এলিয়টের 'দি ওয়েস্টল্যান্ড', 'দি হলো মেন্', 'দি লাভ সং' বিশ্বসাহিত্যের সম্পদ। ইয়েটস এবং এলিয়ট ছাড়াও এসময়ের বিশিষ্ট কবিদের মধ্যে উইলিয়াম হেনরি ডেভিস, ওয়াল্টার ডে লা মেয়ার, এল. অ্যাবের্ক্রোমবি, অ্যালফ্রেড নয়েস, এডিথ সিট্ওয়েল, এডউইন মুর-এর নাম বিশেষ ভাবে উঠে আসে।  এলিয়টের দেখানো পথে হেঁটে, আধুনিক কবিতার অঙ্গনে নতুন আঙ্গিকের কবিতা নিয়ে ১৯৩০ এর দশকে অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজের স্নাতক একদল কবি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। ডব্লিউ. এইচ. অডেন-এর নেতৃত্বে সীসিল ডে লুইস, লুই ম্যাকনিস্, স্টিফেন স্পেন্ডার, ডিলান থমাস, ক্রিস্টোফার ইশারউড প্রমুখ কবিদের নিয়ে গড়া এই সাহিত্য-গোষ্ঠীকে আমরা 'পোয়েটস অফ থার্টিজ' বা 'অডেন গ্রুপ অফ পোয়েটস' বলেই চিনি। বিশ্বযুদ্ধের হানাহানি, বর্বরতা এবং এর ফলে সমাজের সর্বস্তরে ঘটে যাওয়া অবক্ষয়ের আবহে যুদ্ধের ভয়াবহতা, পৈশাচিকতা ও সর্বোপরি সার্বিক অসারতাকে বিষয়বস্তু করে এসময়ে উত্থান ঘটে 'ওয়র পোয়েটস' দের। উইলফ্রেড আওয়েন, সিজফ্রেড সাসুন, আইসাক রোসেনবার্গ, এডওয়ার্ড থমাস, রুপার্ট ব্ৰুক এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বলে রাখা ভালো, যুদ্ধে সৈন্য হিসেবে সক্রিয় যোগদানের মধ্যে দিয়ে এঁদের মধ্যে অনেকেই যুদ্ধের অসারতাকে উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯৫০ এর দশকে একদল কবিদের আমরা পাই যাঁরা 'পোয়েটস অফ থার্টিজ'-দের কবিতার আঙ্গিক থেকে সরে এসে নিরাভরণ ভাষায়, মাটির কাছাকাছি থাকা বিষয়বস্তু নিয়ে, নস্টালজিক ভাবধারায় কবিতা রচনা শুরু করেন; এঁরা 'মুভমেন্ট পোয়েটস' বা  'পোয়েটস অফ ফিফ্টিজ' বলে সুপরিচিত। ফিলিপ লার্কিন, কিংসলেই অ্যামিস, জন ওয়েন, ডি. জে. এনরাইট, এলিজাবেথ জেননিংস, টম গান এঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।
কাব্য-কবিতা ছাড়াও মডার্ন পিরিয়ডে আমরা বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য নাটক পাই। নাটকের জগতে এসময়ের সবচেয়ে বড় নাম জর্জ বার্নার্ড শ। সমাজতান্ত্রিকতার পৃষ্ঠপোষক, 'ফ্যাবিয়ান সোসাইটি'-র সদস্য জর্জ বার্নার্ড শ তাঁর নাটকে বার বার পুরোনো ধারা ভেঙে নতুন ধারার প্রবর্তন করেছেন। তাঁর নাটক 'আর্মস এন্ড দি ম্যান', 'ম্যান এন্ড সুপারম্যান', 'পিগম্যালিয়ন', 'ক্যানডিডা' সে কথাই বলে যায়। এসময়ের নাটকের ধারাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান জন গোলসওরদি, সন ও'কেসি, নোয়েল কাওয়ার্ড -এর মতোই নাট্যকারেরা। বিশ্বযুদ্ধের অবক্ষয়ের ইউরোপ জোড়া প্রভাবের মধ্যেই নাটকের জগতে আসেন একদল নাট্যকার। জীবনের সার্বিক অর্থহীনতায় জীবনের আসল অর্থ অন্বেষণ করে এঁরা তৈরী করেন স্বাভাবিক নাট্যতত্বের ও নাট্যআঙ্গিকের অতিরিক্ত এক নাট্যধারা যাকে মার্টিন এসলিন 'দি থিয়েটার অফ দি অ্যাবসার্ড' বলে অভিহিত করেছেন (১৯৬২ সালে প্রকাশিত 'দি থিয়েটার অফ দি অ্যাবসার্ড' বইয়ে তিনি প্রথম এই শব্দবন্ধের ব্যবহার করেন)। স্যামুয়েল বেকেট, আর্থার অ্যাডামভ, ইউজিন আয়োনেস্কো, হ্যারল্ড পিন্টার এই নাট্যধারার প্রবর্তনে উল্লেখযোগ্য নাম। সামাজিক দোলাচলের প্রভাবে পারিবারিক ক্ষেত্রে ও ব্যক্তি-সম্পর্কের অলিন্দে টানাপোড়েনের বিষয়বস্তুকে সামনে রেখে জন অসবর্ন, অ্যালান সিলিটো, জন ব্রেন এসময়ে আরেক ভিন্ন ধারার নাটক উপস্থাপন করেন।

উপন্যাসের ক্ষেত্রে মডার্ন পিরিয়ড যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এসময়ে আমরা পাই থমাস হার্ডির 'টেস', 'দি মেয়র অফ ক্যাস্টারব্রিজ', 'দি রিটার্ন অফ দি নেটিভ', জোসেফ কনরাডের  'হার্ট অফ ডার্কনেস' (জটিল মনস্তত্ব ও ঔপনিবেশিকতা কেন্দ্রিক উপন্যাস), 'লর্ড জিম', ই. এম. ফরস্টারের 'আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া' (ঔপনিবেশিকতা কেন্দ্রিক উপন্যাস), ডি. এইচ. লরেন্স-এর 'সান্স এন্ড লাভার্স', জেমস জয়েসের 'আ পোর্ট্রেট', 'ইউলিসিস' (এ দুই-ই হলো চেতনাপ্রবাহী উপন্যাস), ভার্জিনিয়া উলফের চেতনাপ্রবাহী উপন্যাস 'টু দি লাইটহাউস', নারীবাদী সমালোচনামূলক লেখা 'আ রুম অফ ওয়ান'স ওন', রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের 'দি জাঙ্গল বুক'-এর মতো লেখা। এইচ. জি. ওয়েলস এযুগে কল্প-বিজ্ঞান ভিত্তিক গদ্য ও উপন্যাসের ধারাকে দৃঢ়তা দিয়েছেন। ইংরেজি সাহিত্যের মডার্ন পিরিয়ডের সুবিশাল সাহিত্য ভান্ডারকে কোনো সীমিত আলোচনায় তুলে ধরা নিতান্তই এক অসম্পূর্ণ, বিক্ষিপ্ত রূপরেখা অঙ্কনের প্রচেষ্টা মাত্র।

Post a Comment

0 Comments