ঋ ত্বি ক ত্রি পা ঠী
নির্জনতার বাংলা সাহিত্য
এই সেই প্রলুব্ধ বায়ু, দীর্ঘ মাঠের
আলে আলে উড়ে বেড়াচ্ছে সূচনাপর্ব
উৎসাহী শর লক্ষ্যভেদ করে বেরিয়ে যাচ্ছে...
যাওয়ার সময় আলাে ফেলছে যন্তর মন্তর
ভেসে উঠছে রাখালিয়া গান, কী মায়ায়
জড়িয়ে যাচ্ছে প্রাণ, সবুজ ঘাস ও তার শীর্ষ
শীর্ষে এসে দাঁড়ালাম এই আমি, এখন তবে
শুরু হােক কথােপকথন, রূপবর্ণনা
কী সুখে স্মৃতি জাগরণ, মধ্যে থাকুক রূপক
রূপক কবি শবরপাদ, শবরীর খোঁপায়
ময়ূর পাখা, গলায় গুঞ্জা ফুলের মালা
নিঝুম সন্ধে, গােপন করছি প্রবৃত্তি
প্রবৃত্তি উপেক্ষণীয় নয়, বৃষ্টি বাদল
বন্ধু সব ফুলের পসরা সাজিয়ে নরম মোম
ঝেঁপে, দৌড়ে আসছে জল, আরও কত কী!
কী ভাবে সম্ভব! ধূসর আকাশে সবুজ চারা
মাটি, মিশে যাচ্ছে, জলস্রোতে কী বর্ষণ
তবে শুরু হােক কর্ষণ, বীজরােপণ
রােপণে জেনেছে রাধা সুখ কী পরিমাণ
হাতের তালু থেকে তাই ফের উড়ে যাচ্ছে
বেলুন, তার রং ক্রমশ ফিকে হচ্ছে
হচ্ছে হােক ঘটন-অঘটন প্রসঙ্গ, তাই না
লিখছি দিনলিপি, ঝড়ের পাখির আত্মকথা
লিখে কী হয়! ওই যে দাঁড়িয়ে রাধা
রাধা কৃষ্ণ-হারা। তার দিকে তাকিয়ে আমি
ভুলে যাচ্ছি অস্তিত্ব, গায়ত্রী মন্ত্র, তন্ত্র
কেঁচো খুঁড়তে সাপ, মস্ত চিড়িয়াখানা
খানাপিনা সব বন্ধ আগে তাে জীবন দান
দুকলি গাইতে পারি, হােক পােশাক আলুথালু
দেরি কেন! শুরু হােক নাচ, বেহুলা সুন্দরী
সুন্দরী মানে টানা টানা চোখ, কামার্ত ঠোঁট
গর্ব ভরা স্তন, নৃত্য মানে হেমামালিনী
শােলের দৃশ্যপট, ফুলে ফুলে উঠছে বাঘ
বাঘ আর কেউ নয়, যে ভাঙবে বাঁধ
ঢেউ থেকে স্রোত অথচ বদ্ধ জলাশয়
সুতরাং এঁকে নাও সুইমিং পুল, সাঁতার
সাঁতরে ওঠো পাড়ে, সেখানে দাঁড়িয়ে ফুল্লরা
অভাবী শরীরে গড়িয়ে পড়ছে মাংসের রস
কামনার পেছনে রয়েছে বিশাল গহ্বর, অন্ধকার
অন্ধকারেই উঠছে ধোঁয়া, চন্দ্রাবতী করুণ রস
ঘুমিয়ে সীতা, মেঝেতে রাবণের ছবি, সে তাে
নিজেরই আঁকা, সে তাে মুগ্ধ সম্পর্ক
সম্পর্কের মধ্যে চালান করে দিচ্ছি নিজেকে
আছড়ে বকাসুরের পায়ে, হায় ঢুকে পড়ছি
ডেলি প্যাসেঞ্জারি হয়ে মহাভারতের মধ্যে
মধ্যে মধ্যে মুগ্ধতা, স্বাভাবিক সন্দেহ প্রবণতা
দ্বন্দ্বময় অথচ একমুখী, ভীষণ দায়, তাই
দ্রৌপদী পাঁচমুখী, সরি, দোষ দিয়ো না
না বললেই হল! দাঁড়িয়েছ যখন বারান্দায়
বিশ্বাস নিয়ে বারান্দায় একা, কী অভিমুখ
ফেরাবে কেমন বলো, মোবাইল সম্বল
সম্বল যদিও বা, লাইফটাইম তবু নিচে
ছোট্ট লেখা : শর্তসাপেক্ষ। স্বামী নপুংসক
স্ত্রী আর কেউ নন, দৌলত কাজীর চন্দ্রানী
চন্দ্রানীর প্রেমিক স্বামী লাের চিনেছে আগুন
ঘন জটিলতার মধ্যেও মায়াবী তার হাত
সেখান থেকেই চন্দ্রানী বুঝেছে জীবন একটাই
একটাই পৃথিবী, সূর্যাস্তর কপাল, রেখা স্পর্শ
উমা সরল, তলপেটে স্বপ্ন বায়ু, বয়স আট,
তাতেই গিন্নিভাব, ঘরের বাইরে গাঁজাখাের শিব
শিব রােল মডেল সালােয়ার মেয়েদের
এ যেন ভস্ম আগুন সমস্ত ঘরে ঘরে
উধাও রক্ত রাগ, প্রজ্ঞা জানে অগ্নি বাষ্প
বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে ভালোবাসা, রাগ অনুরাগ
তবু উমা সামান্য মেয়ে নয়, মেনকাকে বলে
সব মিথ্যে, শিব নিন্দাকে করে অস্বীকার
অস্বীকারের মধ্যে থাকে বিকেল বেলার সুর
মাথানত, বিনম্র মানুষেরা আজও এভাবেই
এভাবেই ঘর করে, করে কামনা বাসনা পূরণ
পূরণ না হলেও ক্ষতি নেই, আছে প্রবৃত্তি
আছে নিবৃত্তি, ক্যাথারসিস, কলম সচল...
নির্জনতার আত্মপ্রকাশ বাংলা সাহিত্য।
অলংকরণ - ঋত্বিক ত্রিপাঠী
9 Comments
দীর্ঘ কবিতা, সুন্দর কবিতা।
ReplyDeleteএত জনের ভিড়েও নির্জনতা খুঁজে দেওয়ার জন্য কবিকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ
ReplyDeleteলাইভ এবং ট্রুথনেস, জীবন এবং ইন্সটিংক্ট এর চিরন্তন অভিঘাতকে অনবদ্য ব্যঞ্জনাবহ করে তুলেছেন। সৃষ্টির প্রজ্ঞায় নৈঃশাব্দ্যিক আবহটিও এখানে তুলনাহীন:
ReplyDelete"পূরণ না হলেও ক্ষতি নেই, আছে প্রবৃত্তি
আছে নিবৃত্তি, ক্যাথারসিস, কলম সচল...
নির্জনতার আত্মপ্রকাশ বাংলা সাহিত্য।"
অসাধারণ ভাবনার ববহিঃপ্রকাশ।
ReplyDeleteভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, কি বলব।এভাবেও ভাবা যায়।বারবার পড়ব।সব অবসাদ কাটিয়ে নতুন করে লিখব
ReplyDeleteঅসাধারণ
ReplyDeleteসুখপাঠ্য কবিতা🙏
ReplyDeleteবাহ্! সুন্দর লাগলো।
ReplyDeleteখুব সুন্দর। সুন্দর ভাবনা।একটা বিস্তৃত ব্যঞ্জনাময় চিন্তাধারা-
ReplyDelete