জ্বলদর্চি

দীর্ঘ কবিতা / পার্থ সারথি চক্রবর্তী


 
 ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   


জার্নি  

 পা র্থ  সা র থি  চ ক্র ব র্তী 

আমি প্রতিদিন জন্মাই 
আর প্রতিদিনই আবার মরে যাই
দিনের শেষে । রাতের অন্ধকারে ।
এ চলছে প্রথম জন্ম থেকেই ,
প্রথম দিন থেকেই ।
তারপর - প্রতিদিন,  অনায়াসে ।
দিন বদলায়। একই সূর্য ওঠে ।
শুধু আমার জীবন পাল্টে নিই

কিসের টানে বারবার ফিরি?
ধুস্! তার আমি কি জানি!
ভাবি ছোট একটা নোটবুকে-
রক্তিম কালিতে লিখে রাখব
দিনের অবসৃয়মান সমাপ্তি 
রাতের অন্ধকারের ব্যাপ্তি 

সব যেন বদলে যায়-
যখন তখন ।মুহূর্তের মধ্যে ।এক লহমায় ।
রিভলভিং চেয়ারের মত
এই দেখি সকাল । হঠাৎ দেখি-
সন্ধ্যা। কখনো বা মধ্যরাত।

আমার কাতর ডাক
ক্ষনিকেই বদলে যায়-
অস্ফুট গোঙানিতে। আগুনের আঁচে ।
মাটি খুঁড়ে উঠে আসা গান
পংক্তিতে পংক্তিতে আগুন 
আর তার লেলিহান শিখা।
কোথাও কোন সুর নেই।
শুধু অর্কেস্ট্রা বদলায়! 
বাজনাদারদের পোশাক বদলায়
মুখ বদলায় । তাও সুর আসে না! 

মহাকাশের মহাশূন্যতা ক্রমশ গ্রাস করে 
নীল রঙ ভেঙে যায়  
ধূসর হয় ।তারপর কালচে ।
সবশেষে ঘন কালো। কিছুটা নীলচে।
জমাট বাঁধা রক্তের মতো।
আরিব্বাস! এই তো চাই! 
ব্লু-ব্লাডেড প্রিন্স ! রাজরক্ত! 
শোষন করা পাঁচমিশালি রক্ত 

আবার শুরু কাউন্টডাউন 
সমুদ্র ঢেউ তোলে।মাটি ফেটে যায়।
গাছ, পাতা ঝরিয়ে দেয় 
উঁকি মারে গোধূলি 
হয় হৃদয়ের উন্মোচন ।
বাতাসে তখন দীর্ঘশ্বাস।

ধীরে ধীরে পুরনো হয়-
প্রেম ।প্রতীক্ষা।প্রত্যাশা ।পরিণাম ।
খোলস পাল্টায় শীতকাতুরে ঢোড়া 
নির্বিষ ছোবলের মিথ্যা অভিনয় করে 
পড়ে থাকে এক নিঃসঙ্গ খোলস
ত্যাগ ক'রে ক্ষুধা,তৃষ্ণা, প্রতিদান 

ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়-
হৃৎপিন্ড ।ফুসফুস ।পাকস্থলী 
আকাশ কাছে নেমে আসে 
বিদ্যুৎ খেলে যায় শিরায় 
অনুভূত হয় এক আদিম টান
এক অন্তহীন অপেক্ষা।

নিঃশ্বাসের হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যায়
প্রাণের অস্তিত্ব ।আত্মার স্পন্দন।
মুছে যায় জীবনের প্রচ্ছদ 
উড়ে যেতে থাকে একে একে-
মেঘ । বৃষ্টি । ঘাম । রক্ত ।
পার হয়ে যায়, 
আকাশের সীমানা, মেঘের শামিয়ানা 

ক্রমশ এগিয়ে আসে দিনের শেষ 
ভেসে আসে শেষগান।
মন্ত্রোচ্চারণ! আদিম স্তোত্র! 
তবু শেষ হয় না জার্নি ।
হেরেও যে হারিয়ে যাওয়া মানা
অনেক জন্ম, সত্যিই অনেক জন্ম 
এখনো যে নেওয়া বাকি।

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   

Post a Comment

0 Comments