জ্বলদর্চি

মায়াগাছ / শ্যামলশুভা ভঞ্জ

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   

মায়াগাছ 

শ্যা ম ল শু ভা  ভ ঞ্জ  প ণ্ডি ত


আচ্ছা সেই ছেলেটা 

যার ভাঙাচোরা একটা সাইকেল

আর হলুদ রঙের রঙচটা জামা ছিল।

কোঁচানো চুল কপালে এসে পড়লে বেশ লাগত ওকে। 

কে জানে কি নাম!

স্কুলের শেষে দাঁড়াত নিম গাছটার নীচে ।

রোজ দাঁড়াত রোদ বৃষ্টি যাইহোক ।

চোখদুটো তুলে ও দেখত আমাকে  ধীর স্থির 

নিস্তরঙ্গ পুকুরের মত।

ওর সাথে কথা হয়নি কোনদিন।

তবু আমার ব্যালকনির আধমরা রোদে

যখন বাসি কাপড়ের সাথে একটা দিন

আস্তে আস্তে ফুরিয়ে আসে,

ওর জন্যে মনকেমন করে।কোথায় গেল ও ! 

চাকরি পেয়েছে ,

নাকি আজও পুরোনো ভাঙাচোরা  সাইকেলে 

বাড়ি বাড়ি ও টিউশন পড়িয়ে বেড়ায়,

হয়ত এখন কাউকে ভালোওবাসে।

যাকে ভালোবাসা হল না কোনদিন

তার জন্য বুঝি মনকেমন করে!

নারকেল নাড়ুর লোভে যেতাম আন্নাপিসির বাড়ি।

ছেলে মেয়ে নেই।

মন্দিরে মন্দিরে মানত করে ফেরে।

একদিন বিকেলবেলা বলেছিল"আমার মেয়ে হবি বুড়ি।"

সেই আন্নাপিসি পুড়ে মরল ভোররাতে।

তারপর নতুন বউ এল,

ডাগর ছেলে হাঁটল উঠোনজুড়ে।

আন্নাপিসিকে ভুলে গেল সবাই ।

কেবল নারকেল নাড়ুর আদরমাখা

গায়ে রয়ে গেল আমার আন্নাপিসির ঘ্রাণ,

আমার মায়ের ঘ্রাণের মতো।

মনে পড়ে নতুন বিয়ের পরে

একটা কাগজের বাক্সে

এক বাক্স মিষ্টি নিয়ে ঢিপ করে

প্রণাম করতেই অসহায় চোখে বাবা

এদিক ওদিক দেখছিল সেদিন।

'পর হলি বুঝি!'

"এ বাড়িতে মিষ্টি না আনলে  ও বাড়ির মান থাকেনা বাবা।"

এখন বাড়ন্ত মেয়ের মায়ামুখ দেখে কি জানি কেন 

টনটন করে বুকের ভেতর।

পাড়া ছাড়লাম যখন-

ঘিঞ্জি দমবন্ধ একচিলতে ঘর 

ছাড়ার আগে পিছু ডেকেছিল

যে বুড়ি বেড়ালটা,অলুক্ষণে বলে

গালি দিয়েছিলাম ওকে।

হালকা মায়ার মতো সেও  ডেকে  যায় ঘুমের ভেতর।

ফেরিওয়ালা বুড়ো  অশক্ত শীর্ণ শরীর

ধূপ বিক্রি করে। চোখে পিঁচুটি, গায়ের জামাটা নোংরা

ওরও কি  মনে পড়ে আমায় ! 

দুটো ধূপের প্যাকেট নিয়ে সিগন্যালে আমার গাড়িটা 

হুশ করে উধাও হয়েছিল সেদিন।

আমার ঘর জুড়ে ধূপের গন্ধ।

নাম ঠিকানা কিছুই তো জানা হল না ওর।

আয়নার জলে পুকুরের ছায়া পড়ে আছে

ব্যস্ত জীবন রোদ্দুর মেখে ঘুমোয় যেখানে।

আমি বসে থাকি ।

মায়াগাছ বেড়ে ওঠে বুকের ভেতর ।

শ্যামলশুভা ভঞ্জ পণ্ডিত। হাওড়া।

ফোটোগ্রাফি - সৈয়দ স্নেহাংশু   



Post a Comment

0 Comments