জ্বলদর্চি

হাসপাতালে মা / মন্দাক্রান্তা সেন

  ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু   



হাসপাতালে মা

(তখন মানুষ চিনতে পারছিলেন না)

ম ন্দা ক্রা ন্তা  সে ন

১.

মাঝে মাঝে চোখ বড় করছ

মনে হচ্ছে এই এই এই

এইবার চিনে ফেলবে



তারপরই কী এক ক্লান্তিতে

চোখ নিভে আসছে তােমার



অনেক অচেনা মানুষ দেখার  ক্লান্তি



কিন্তু আমি যে যে-কোনও মানুষ নই মা গাে



গর্ভের মধ্যে যতদিন..



ততদিনও তাে আমার নাক-মুখ-চোখ। চিনতে পারােনি তুমি !



২.

আমি তেমন কোনও কাজ করিনি 

যাতে লােকে আমায় চিনবে



আমি তাে তােমার পাকা চুল বেছে দিয়েছি আমাকে চেনাে, মা



৩.

চিনতে পারছ না

তবু তােমার হাত ধরলে

ছাড়তে চাইছ না 

টেনে রাখছ জোরে



বােধহয় একেই বলে 

রক্তের টান



8. 

হাসপাতালের বিছানার পাশে বসে

তােমার প্রিয়

রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই



তােমার স্থির দৃষ্টি 

আমাকে আকুল করে

বুঝতে পারি

আমি নয়,

রবীন্দ্রনাথকে তােমার 

একটু একটু মনে পড়ছে



৫.

ও মা, মা গাে

কবে বাড়ি ফিরবি বল তাে!



তাের জন্যে রান্নাঘরের দাওয়ায় পিঁড়ি পেতেছি 

গরম ভাতে ধোঁয়া উঠছে

তাড়াতাড়ি আয়,

এলে সজনেফুলের বড়া দো'ভাজা করব পাঁচমিশেলি ডাল আর দুটো নিরিমিষ তরকারি



রাইলস টিউব কী জানবে

তাের পাকস্থলী 

কীরকম ব্যঞ্জনের আলাদা আলাদা স্বাদের জন্য

একটু একটু করে মরে যাচ্ছে...



৬. 

এরকমও তাে হতে পারত

তুমি ফিরলে না



আই.সি.ইউ-এর বেডে

হাত পা ছটফট করছ বলে

দড়ি দিয়ে বাঁধা



তােমাকে আদপে কখনও কেউ 

বাঁধতে পারে, 

একথা অবিশ্বাস্য



এরকমও তাে হতে পারত

শান্তভাবে কোনও কষ্ট না পেয়ে

বুক বাজিয়ে তুমি চলে গেলে



কাঁদলাম আমি, বাবি, দাদা, আর 

ব্যাঙ্ক পােস্ট অফিসে যাওয়ার রাস্তাটা...

 
   ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু

Post a Comment

0 Comments