জ্বলদর্চি

গাউকোর কন্যা/ শ্রীতনু চৌধুরী

    ফটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু  


গাউকোর কন্যা  

শ্রী ত নু  চৌ ধু রী 


চারদিন আলো দেখিনি
জবাকুসুম- শঙ্কাসং সূর্য
কতবার ছড়িয়ে গেল উত্তাপ
কতবার দেখিয়ে গেল আলো
সে হিসেব রাখাও আমার পাপ ।

আমি অন্তজ নই
বাসি ফুলের মতো গন্ধহীন নই
নই কুলভাঙ্গা নদী
তবু নির্বাসিতা পরিত্যক্তা।
তোবড়ানো টিনের ডিসে 
রাত থাকতে একবার কেউ
ঝুপড়ির সামনে রেখে দিয়ে যায়
দলা মাখা ভাত।
বুক ফেটে গেলেও দিনভর
একফোঁটা জল নিয়ে 
বাড়িয়ে দেয় না কেউ এনামেলের গ্লাস ।
যখন আমার খাদ্য চাই,আদর চাই
চাই নিরাপত্তা ও শুদ্ধি
তখনই আমাকে ঘেন্নায় ছুঁড়ে দিলে তোমরা
অন্নহীন,বস্ত্রহীন,ভালোবাসাহীন----
যখন একরাশ ভয় আর যন্ত্রনায়
কুঁকড়ে যায় আমার ছোট্ট বিষণ্ণ শরীর বেড়ার ঝোপে তখনই অন্ধকারে
ধাতব শব্দে আঁচড় কাটে ভীষণ শ্বাপদ
আতঙ্কে দুলে ওঠে পৃথিবী
আর্তনাদ করে উঠি-
বাঁচাও -বাঁচাও---
কেউ আসে না
শুধু উড়ে যায় গুটিকয় রাতচর।
আতঙ্কে প্রহর গুনতে গুনতে
লোপ পেয়ে যায় সংজ্ঞা
ওঁৎপাতা শিকারি তখন
টেনে হিঁচড়ে  নিয়ে যায়
আমার অবশ প্রতিরোধহীন শরীর
আর তা না হলেও
শরীরের সব রস ঝরে গিয়ে 
আপনা আপনিই আমি কখন
হয়ে পড়ি নিঃসাড় ----

এমনি করেই হারিয়ে যায় গাউকোর কণ্যা
ঋতুমতী,অস্পৃশ্যা, অশুচি
যাকে ছোঁয়া তো দূরের কথা
তার মুখ দেখাও পাপ।
সমাজ তো রইল শুদ্ধ, নির্মল
গঙ্গার মতো পবিত্র ।

ঋতু তো প্রথম বর্ষা-প্রস্তুত হয় মাটি
যে মাটিতে যুগ যুগ ধরে তুমি
বুনেছ স্বপ্ন, ফলিয়েছ ফসল
সেই মাটিকেই যদি ছুঁড়ে ফেল গাউকোরে
সেই মাটিকেই যদি করে দাও বন্ধ্যা
তবে ধিক তোমার সভ্যতা
ধিক তোমার সংস্কৃতি
ধিক তোমার চেতনা।

অথচ কাব্যে আমি প্রেয়সী
গল্পে আমি মানবী
আমি প্রকৃতি আমি উদ্গম
পূজার বেদিতে আমি মাতৃরূপেন সংস্থিতা
তোমার জন্মদাত্রী মা।
              
    ফটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু  

Post a Comment

2 Comments