জ্বলদর্চি

মিছিলে হাঁটি না আমি তোমার প্রেমের পথে হাঁটি/ সুভান

ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু  


মিছিলে হাঁটি না আমি তোমার প্রেমের পথে হাঁটি


সু ভা ন

আমাদের মাঝে আর কথা হয় না বলে 
স্মৃতিরা কথা বলে।
একে অপরের সাথে কথা বলে সারা রাত 
           একে অপরের কিছু পুরনো আঘাত,
           নিয়ে ফিরে আসে বুকের পাঁচিলে, 
           প্রাচীন বাড়িতে, 
           প্রহরীবিহীন দেহঘরে
হামেশাই ঢুকে পড়ে স্মৃতির শরীর...
শরিকি বিবাদ। ইঙ্গিতে বাজে কলহকারণ। 

ঠান্ডা মাংস নয়, তবু খিদের ভিতর শুধু ঘুম নেই বলে
দুঃখের কাছে বসে থাকে বালিকার বয়ঃসন্ধিকাল
অন্ধের লাঠি, ভাবতে ভাবতে মাটি 
ভেদ করে উঠে আসে দেহআলো...
অতীতের বলিরেখা ভালো? এভাবে কপাল জুড়ে,
আঙুলে আঙুল মেপে রাস্তার পরিধি চিনেছি নিষেধের।
আজ কাদায় কাদায় ঢেকে গেছে আমাদের মিথের শহর।

রাতের অলি ও গলিতে ঘুরে বেড়ানো পাগল
একদিন আমাদের নিয়ে যাবে ভুবনপুরের জোড়াঝিলে।
জলেরও তো কথা থাকে কিছু...
শুনবো না বলো? শুনবে না তুমি? আমাদের না বলা ফরিয়াদ।

বারুদের স্তুপ হয়ে জেগে আছি দিন ও পৃথিবী।
বুকের তাপেই সব জ্বলে পুড়ে যেতে পারে নিমেষে।
প্রেমের কবিতা লিখে আর অমর হবে না কোনো কবি।
প্রতিবাদ হবে না কোথাও...

আমি নিজেও জানিনা, কোন সর্বনামের কাছে
নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি অকাতরে, কার ঘোরে
এখন শুধু গোপনে অভাব সঞ্চয় করে রাখি। 
ঠান্ডা মাংস যেন মৃতটেরাকোটা। বলহরি খই উড়ে যায়।

এত কালো জমেছিল বুকে,
এত ঘৃণা ছিল আস্থায় মোড়া পাথরের তলদেশে,
মন্দিরে মসজিদে, শান্তির পাতাল প্রবেশে?

ধর্ম-কর্ম নাম, জাত-বেজাত হারাম, কারা?
আমি মিছিলের পথে হাঁটব না সুধী। 
জয় জয় বলব না একবারও।
যারা খিদে পেটে জেগে থাকে সারারাত 
তাদের আস্তাবলে ঢুকে বসে থাকবো। 
হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলব না আর...

আমি দ্বিধা ও বোধের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জল।
হাওয়ায় নিষেধ লিখে উড়িয়ে দিয়েছি কোলাহল। 
ঘরের অন্ধ জানে বাইরের আলো কী জিনিস।

চোখের নেশায় লাগে খিদে,  
বেনাম তবুও ভালো, আগুনে পোড়ে না এত জ্বালা।
এত ফুল আর মালা, মৃতপাহাড়ের সাজসজ্জায় 
কাজে লাগে। কবির কপালে থাক চুমু। 

আমি হাল্লা বলিনি। আমি আল্লাও বলিনি কোথাও। 
আর বলবো না। শুধু চোখ মেলে দেখবো অবাকে,
কীভাবে পোকারা এসে ধীরে ধীরে পাতা ছিঁড়ে খায়।
ছিঁড়ে খাওয়া 
         কেড়ে খাওয়া 
                    না খেতে পাওয়াদের কথা
আমি বলবো না। মুখের প্রদাহ নিয়ে বেঁচে থাকব,
তবু বলব না ভাত নেই বলে আমি মিছিলে হাঁটিনি।
তুমি নেই বলে আমি মিছিলে হাঁটিনি। 

কথায় কথারা বাড়ে, বিষে বিষে নীলের ওজন।
দূর থেকে মেঘের ইশারা দেখি। জানো, আজও 
আকাশের রঙ ভালো নয়। 
রঙ বলতেই এখন দল ও বল বুঝি। 
পতাকায় নিজেকে খুঁজি না কোত্থাও...

একটাই প্রেমে মানুষের চোখ ভিজে যেতে পারে
ভেবে মনে মনে হাসি, 
এখনো নুনের কাছে প্রেমিকের ঋণ এইটুকু...
ভালোবাসা মানে কোনো তৃতীয় বিশ্ব নয়, 
দেহ নয় পুঁজিবাদী জিন। 

একটা হাতের পাশে একটা লাশের ভার 
লেগে থাকবেই দিনশেষে। 
বন্ধুর মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাবে কেউ কেউ।
প্রেমিকার কাছে গিয়ে জল চেয়ে চোখ বুজে নেবে।

একদিন সব পাখি গাছের দিকেই ফিরে আসে৷ 
সিরিয়া বা লেবানন নয়। কাশ্মীর -বালুচেও নয়।
শান্তির বীজ থাকে ঠোঁটের ভিতরে। 
গাছ হয়ে ভরে যাক মাটি... 
আজও আমি তোমার প্রেমের পথে হাঁটি, 
ধর্মের মিছিলে হাঁটি না।

  ফোটোগ্রাফি- সৈয়দ স্নেহাংশু  

Post a Comment

2 Comments

  1. প্রেমের কবিতা গুলি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এত সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete