জ্বলদর্চি

অন্যধারার শর্টফিল্ম-২ / নিসর্গ নির্যাস মাহাতো

মেদিনীপুর মানেই শ্যুটিং স্পট, ঘর থেকে অলিগলি- শর্ট এর সেট, স্বাভাবিকতা

শ্যুটিং স্পট- এর জন্য মেদিনীপুর (অবিভক্ত) বিখ্যাত। তা সে পুরনো দশক হোক বা নতুন। দীনেন গুপ্তের পরিচালনায় 'বসন্ত বিলাপ', মৃণাল সেনের 'কোরাস', সৈকত ভট্টাচার্যের 'দুলিয়া', সুনিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি', পীযূষ বসুর 'সন্ন্যাসী রাজা' থেকে সন্দীপ রায়ের টিনটোরেটোর যীশু, নেহাল দত্তের 'আরও এক  ছদ্মবেশী', অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের 'মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি', বা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের শর্ট ফিল্ম 'সত্যদার কোচিং' সহ বহু শ্যুটিং হয়েছে এখানেই। কিন্তু সারা বছর এই শহর এই জেলায় শ্যুটিং করেন যাঁরা, তাঁরা মেদিনীপুরেরই (অবিভক্ত) বাসিন্দা। 

ডিরেক্টর, স্ক্রিপ্ট রাইটার, মেকআপ আর্টিস্ট, আর্ট ডিরেক্টর, অভিনেতা- অভিনেত্রী, কোরিওগ্রাফার, লিরিসিস্ট, মিউজিক ডিরেক্টর, সিঙ্গার, ভোকাল আর্টিস্ট, ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফার, এডিটর, প্রোডিউসার, প্রোডাকশন হাউজ ছড়িয়ে আছে এখানেই। প্রতিটা কাজে চ্যালেঞ্জ করে তারা বলছে, কম বাজেটে বেটার প্রোডাকশন দেয় আমার জেলা। আমাদের টলিপাড়া নেই, নন্দন নেই। আছে ফিল্ম সোসাইটি, রবীন্দ্র নিলয়।

এখানে টলিউড গিল্ড নেই। প্রশ্রয় দেয় 'মেদিনীপুর ফিল্ম সোসাইটি'। শর্ট ফিল্ম, মিউজিক ভিডিও বা ফটো সিরিজ একসঙ্গে আত্মপ্রকাশ করে 'রিলিজ উইন্ডো' মঞ্চ থেকে। কারণ, সিন্ডিকেট নয়, হাতে হাত রেখে জোট বদ্ধ হয়ে কাজ করতে শেখায় মেদিনীপুর।
বাইরে থেকে এসে এখানে শ্যুটিং করেছেন বহু প্রখ্যাত পরিচালক। কিন্তু সারা বছর এখানে শ্যুটিং করেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের শিল্পীরা। এখানের অলিগলি, জঙ্গল, নদী, সমুদ্র, পাহাড়, রাজবাড়ি, ধ্বংসাবশেষ, বাড়ি মুহূর্তে মুহূর্তে হয়ে ওঠে শ্যুটিং স্পট। প্রতি নিয়ত।

জেলার চেনা জানা বা অপরিচিত জায়গা হয়ে উঠছে শ্যুটিং স্পট। গোপগড় ইকো ট্যুরিজম, পুলিশ লাইন পার্ক থেকে শুরু করে মল্লিক রাজবাড়ি, নন্দী রাজবাড়ি, কর্ণগড়, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, চিল্কিগড় রাজবাড়ি, কণকদুর্গা মন্দির, লালগড়, কনকাবতী, অ্যানিকেট, পাথরা, দিঘা, মন্দারমনি, মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন 'সূর্যাস্ত' বা পরিচালক সুমন্ত সাহার বাড়ি, বেড়বল্লভপুর এমনকি রাজপথ থেকে অলিগলি পর্যন্ত লেগে থাকে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন। আবার শহরের গির্জা, কর্ণগড় মন্দির, গান্ধীঘাটের মাজার একাধিক ধর্মীয় স্থান বিভিন্ন সময়ে হয়ে উঠেছে শ্যুটিং স্পট। নতুন শ্যুটিং স্পট হিসেবে ভাবা যেতে পারে ঘাঘরা, ফুলকুশমা ড্যাম বা শিলদার রাণি কিশোরমণির মন্দিরকে।

এখানের স্ক্রিপ্ট বোকা বোকা নয়। এঁরা ভাবে। কারণ তাঁদের একটাই কথা। ঋত্বিক কথা 'ভাবো ভাবো ভাবা প্র্যাকটিস করো'। তাই প্রেমের দৃশ্য দেখাতে এখানে পাহাড়ে নাচতে হয় না, দু-তিনটে বিয়ে দেখাতে হয় না, ভারী গয়না পরে ঘুমোতে যেতে হয় না, ঘরে চড়া মেক-আপ করে থাকতে হয় না। এখানের শিল্পীরা স্বাভাবিকতায় বিশ্বাসী। স্বাভাবিকতাই তো 'অতিসাজ'- এর ভিড়ে হয়ে উঠেছে 'অন্যধারা'। 

তাই এঁদের ফিল্মে ফুটে ওঠে দর্শন, দাবি, জীবনবোধ। শিল্প সময়ের দাবি রাখে। আর এই জেলার শিল্পীরা খুঁজে নেয় সেই ধারাকেই।
প্রতি মঙ্গলবার। ধারাবাহিক। অন্যধারার শর্টফিল্ম/ নিসর্গ নির্যাস মাহাতো। অভিমত জানাতে পারেন-- মেল-jaladarchi@yahoo.in
--------------------------------------
আরও পড়ুন। 
শুক্রবার সিনেমাবার। 
রাকেশ সিংহ দেব। 

Post a Comment

0 Comments