জ্বলদর্চি

গান্ধি চর্চা /ঋত্বিক ত্রিপাঠী

 চিত্র - শুভ্রাংশু আচার্য্য


গান্ধি চর্চা

ঋ ত্বি ক  ত্রি পা ঠী

আজ মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন। ২০০৭ সালে রাষ্ট্রসংঘ তাঁর জন্মদিন তথা ২ অক্টোবরকে 'আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস' হিসাবে ঘোষণা করেছে। তার আগে ও পরে তাঁকে নিয়ে বিস্তর গবেষণা, আলোচনা, সমালোচনা, সেমিনার, গ্রন্থ ও মূর্তি নির্মাণ ইত্যাদি হয়েছে। হচ্ছে এবং আরও হবে। হিংসাকে সম্বল করে যাঁরা বাঁচেন ও গান্ধির দর্শনকে মানেন না, তাঁরাও গান্ধির অহিংস নীতি দেখে সামান্য হলেও আশ্চর্য হন বই-কি! অন্যদিকে যাঁরা গান্ধিকে নিয়ে অগাধ বক্তৃতামালা রোজ তৈরি করছেন, তাঁরা সবাই যে ব্যক্তিজীবনে গান্ধিকে মেনে চলেন -- এমনটাও নয়। তাই পক্ষ ও বিপক্ষ -- উভয় দলের কাছেই গান্ধিচর্চা আজও অম্লান। পৃথিবী থেকে কোনওদিনই হিংসা যাবে না। গান্ধিবাদও তাই চিরকাল প্রাসঙ্গিক হয়েই থাকবে।          
     
যেকোনও ঘটনায়  ট্র‍্যাজেডি ও কমেডি থাকে। থাকে জয় পরাজয়। হিংসা ও অহিংসা। ধর্মেও আছে হিংসা ও অহিংস-বাণীর ঐতিহ্য।  

সারা পৃথিবী জুড়ে হিংসা আছে। সমান্তরাল ভাবে আছে গান্ধিবাদ। আছে অহিংস নীতির চর্চাও। চর্চা মানেই যে আত্মস্থ করা কিংবা গ্রহণ -- তা নয়। অন্তত মানুষ তাকে জরুরি মনে করেনি। কারণ প্রবৃত্তি। প্রবৃত্তি আদিমও বটে, নবীনও। হিংসার মতো অহিংস-নীতিও ছড়িয়ে, সারা পৃথিবী জুড়ে। 

গান্ধি কি বিশেষ কালের! না কি সর্বকালের! দেশ ও রাজনীতিতে তিনি সফল না ব্যর্থ! গান্ধি কি প্রবৃত্তির বিপরীতে নিবৃত্তির কথা বলেন! গান্ধিবাদ কী নিছক বিলাসিতা! এর মধ্যে কি রয়েছে নিছক কল্পনা! না কি রয়েছে গভীর মনস্তত্ত্ব! রয়েছে চিরন্তন বিজ্ঞান! প্রেমে যে ত্যাগ থাকে তাকেই তিনি অর্জন করেছিলেন অতুলনীয় ভাবে! তবে সে কি আর নতুন! নতুন-ই যদি না হয়, তবে তাকে বিশেষ 'গান্ধি' নামে চর্চা করা কেন! 'চর্চা' মানে অনুসরণের আকাঙ্ক্ষা না কি বিতর্ক জুড়ে অহং প্রকাশ! 

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই  অন্নদাশঙ্কর রায়ের 'গান্ধিত্ব: ক্ষুরধার পন্থা' প্রবন্ধে --

"অন্যায়ের সঙ্গে সন্ধি না করে সংগ্রাম করে  অন্যায়কারীকে ঘৃণা না করে ভালোবেসে সর্বপ্রকার দুঃখদুর্ভোগ স্বেচ্ছায় বরণ করার নামই গান্ধীপ্রদর্শিত অহিংস পন্থা। ক্ষুরধার পন্থা।...  গান্ধী পরিচালিত সত্যাগ্রহীরা ইংরেজিবিদ্বেষী ছিলেন না। ইংরেজ জাতিকে তাঁরা কমবেশি ভালোবাসতেন। তাঁদের সংগ্রাম ভারতের পরাধীনতা নামক অভিশাপের বিরুদ্ধে। দীনদরিদ্রের শোষণ নামক অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মন্দের সঙ্গে সংগ্রাম করা নীতিবিগর্হিত নয়৷ বরং সেইটেই হচ্ছে নীতি। কিন্তু মন্দের  সঙ্গে  সংগ্রামে নেমে মন্দকে ঘৃণা করা ও তার অনিষ্ট করা গান্ধীজির বিচারে নীতিবিগর্হিত। তা যদি তুমি কর তবে তুমিও মন্দ কর্ম করলে। তুমিও ভালো থাকলে না।"

বেশ। ভালো কথা। হিংসার বিপরীতে, প্রেমের কথায় পৃথিবীতে বহু মানুষই তো প্রাণ দিয়েছেন! গান্ধি তাহলে নতুন কি করলেন! উত্তর - "ইতিহাসে অহিংসার নজির অনেক আছে, কিন্তু অহিংস পদ্ধতির বলপরীক্ষা গান্ধীজির নেতৃত্বেই প্রথম। নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের নজির অনেক আছে, কিন্তু সক্রিয় সত্যাগ্রহের এপিক উদাহরণ অভূতপূর্ব।"              

এই পর্যন্ত পাঠ নিয়ে  নিজেকেই প্রশ্ন করি --"পৃথিবীতে ক'জন মানুষ সম্পূর্ণ নির্ভীক ও সপ্রেম! শতকরা একজনও নয়। ভিতরে ভয় আর দ্বেষ, বাইরে অহিংসার অভিনয়, এ কি কখনো সঙ্কটকালে উদ্ধার করতে পারে!" তাই, পৃথিবীতে হিংসা আছে থাকবে, হিংসার বিপরীত যাওয়ার আকুলতায় গান্ধিচর্চাও থাকবে। 
----------------------

গান্ধিচর্চার পথ অনুসরণ করে জ্বলদর্চিতে প্রকাশিত হয়েছে তিনটি লেখা। পড়ে দেখা যেতেই পারে।

১. অহিংসার পূজারী--মহাত্মা গান্ধী
     স্ব রূ প কু মা র  ম ণ্ড ল  

২. সত্যের পূজারি মহাত্মাজী 
রচনা – মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

3. Mahatma Gandhi’s “Ram-Rahim” Approach For Inter-Religious Amity

Post a Comment

0 Comments