জ্বলদর্চি

গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চাই/ সন্দীপ কাঞ্জিলাল


গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চাই

দেশের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য যখন ভীষণ খারাপ, প্রায় কোমায় চলে গেছে, তখন শাসক রাজ্যের ভেঙে পড়া জনগণের স্বাস্থ্য ফেরাতে সবার জন্য স্বাস্থসাথী কার্ডের ব্যবস্থা করছে। ১ডিসেম্বর থেকে এটা সর্বজনীন হবে। সাড়ে সাত কোটি মানুষের কাছে এই কার্ড পৌঁছে যাবে। বছরে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ পাওয়া যাবে। কিন্তু ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না সারিয়ে কার্ড বাড়িয়ে কি হবে? 
রাজ্যের বাইরের কথা বাদ দিলাম, আমাদের রাজ্যের অনেক বেসরকারি হাসপাতাল এবং অনেক ডাক্তার এই কার্ডে চিকিৎসা করতে নারাজ। আমি বিশেষভাবে এর ভুক্তভোগী। এক বেসরকারি হাসপাতালে এই কার্ড না নেওয়ায় স্বাস্থ্য ভবনে যোগাযোগ করি।আমাকে বলা হয় সব হাসপাতাল কিংবা ডাক্তার এর আওতায় নয়। যেখানে এটা চলে সেখানে যান। তার মানে দাঁড়ালো, আমি যেখানে চিকিৎসা করাতে চাই তা পারবো না! আবার অনেক ডাক্তার এবং হাসপাতাল বলে, সাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা করা মানে--ভোটে গাড়ি ভাড়ায় দেওয়া। তাহলে এটা ভোটের গিমিক ছাড়া আর কী?

সর্বোপরি বলি রাজ্যের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভীষণ খারাপ। কোনোরকমে স্যালাইনে বেঁচে আছে। বর্তমানে কিছু বাহুবলী আর অর্থশালী মুখে মাস্ক পরে তাঁর চিকিৎসা করছে। আমার মনে হয় জনগণের স্বাস্থ্য ফেরানোর চাইতে আগে গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ফেরানোর চেষ্টা করা উচিত। 'গণ' এর 'তন্ত্র'। গণতন্ত্র। 'তন্ত্র' এর বুৎপত্তি হল,তন্ ধাতু নিষ্পন্ন যার অর্থ 'বিস্তার'। জনগণের বিস্তার হওয়ার বদলে, তাঁরা গর্তে সেঁধিয়ে যাচ্ছে।বর্তমানে গণতন্ত্র হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতে, ফলে তাঁর নাভিশ্বাস উঠছে। যারা প্রতিভাসম্পন্ন ডাক্তার গণতন্ত্রের কাছে ভিড়তে পারছে না। তারফলে গণতন্ত্র যত নিস্তেজ হচ্ছে, তত গুণহীন গড়পড়তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। মনে রাখা দরকার প্রেম, সৌহার্দ্য, মমতা, করুণা, দুর্বলের প্রতি সবলের - দায়িত্ববোধ সেবাবৃত্তি। এটা তখনই মেলে, যখন গণতন্ত্র সুস্থ ও সবল থাকে। নইলে সংখ্যার প্রাধান্যের জন্য নিকৃষ্টরা সর্বেসর্বা হয়ে ওঠে। তাই জনগণের স্বাস্থ্য গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর নির্ভরশীল। তাই আগে গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড চাই। যাতে গণতন্ত্র সুস্থ ও সবল থাকে, এবং সব ডাক্তার, সব হাসপাতাল যেন এর আওতায় থাকে।

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments