কন্যা যখন মা
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
সোমদত্তা জানা
বাস্তব জীবনের পরিকাঠামো ও সমাজের বিধিনিয়মে মানব জীবন বাঁধা। তারা নিজেদের মনুষ্য প্রজাতি বলে পরিচয় দিতে খুবই ভালোবাসে, কিন্তু যখন কোন সামাজিকতার বিপক্ষে মানবিকতার প্রশ্ন ওঠে তখনই তার প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
কথাটা আর কিছুই না শুধু একটু বুদ্ধি প্রয়োগ করলেই বোঝা যায়। তাহলে চলুন একটা ছোট্ট গল্প বলি। একটি মেয়ে নাম তার অনিন্দিতা, থাকত ডায়মন্ডহারবারের একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে। পরিবার যৌথ হলেও কেউ ভাল চাইতো না। ব্যবসায়ী পরিবার ও বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা সে।
হঠাৎ একদিন উত্তম পাত্রের সাথে বিবাহ করে পাড়ি দিল সুদূর পর্তুগালে। বহুকাল মা-বাবার সঙ্গে পায়নি তার উপর ছোট্ট একটি পরীর মত মেয়ের জন্ম দিয়ে সেও এক মা হয়ে উঠলো। দীর্ঘ তিন বছর পর বাড়ি ফেরার আশায় বুক বেধে ছিল অনিন্দিতা। কিন্তু বাঁধ সাধলো এই কোভিড মহামারী। আন্তর্জাতিক বিমানগুলি সব বন্ধ তাই তার বাড়ি ফেরা হলো না। বাবা মায়ের সাথে অনলাইনের মাধ্যমে কথা হত তার। মেয়েকে এত দূরে পাঠিও মায়ের মন গুমরে কাঁদে। হঠাৎ একদিন দুর্গা পূজার প্রাক্কালে খবর পেল তার বাবা ও মা এবং গোটা পরিবার করোনা আক্রান্ত। পরিবারের বাকিরা সমস্যামুক্ত হলেও তার বাবা-মাকে সুস্থ করতে পারল না অনি। সুদূর পর্তুগাল থেকে রোজ ফোন করে বাড়ির অন্য সদস্যদের কাছে আকুতি করতে থাকলো যে হাসপাতালে গিয়ে তার বাবা মায়ের খোঁজ নিয়ে আসুক - হাজার হোক মেয়ে তো ! কিন্তু কিছু করার নেই, একদিন খবর পেলাম কাকু মারা গেছেন। যে হাসপাতালে তিনি ছিলেন আইসিইউতে সেই পাশের বেডে ছিলেন কাকিমা। কাকু মারা যাওয়ার ঠিক দিন দশেকের মধ্যে কাকিমা ও মারা গেলেন। সেদিন পর্যন্ত তিনি জানতে পারেননি তিনি স্বামীহারা। অনিন্দিতা ফোনের ওপার থেকে মেয়েকে মুহূর্তে জড়িয়ে শুধু চিৎকার করে কাঁদতে লাগল আর একটাই প্রশ্ন করলো আমায় -' তুই কেন গেলি না রে? আমার মাকে বাড়িতে থাকাকালিন একটুও খাওয়ার বাড়িয়ে দেয়নি কেউ। দুদিন মা না খেয়ে কাটিয়েছে। তুই থাকলে আমি মাকে হারাতাম না। আমার আর বিদেশ থেকে ফেরা হলো না রে।'
কথাগুলো আমার মনে আজ ও যন্ত্রণা সঞ্চার করে আর শুধু একটা কথাই বলে যে স্ত্রী সন্তানকে দশ মাস গর্ভে ধারণ করে এক কন্যাকে জন্ম দেয়। একদিন সেই কন্যা আর এক সন্তানের প্রতি, স্বামীর প্রতি নিষ্ঠাভরে দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু আমাদের এই সমাজের তথাকথিত সামাজিক জীবেরা সেই সামাজিকতা পালন করতে পারে? এর উত্তর আপনারাই খুঁজুন। মনে রাখবেন সৃষ্টিতে পুরুষ ও প্রকৃতি অর্থে নারীর সমান ভূমিকা রয়েছে। একে অন্যের পরিপূরক। তাই আজকের এই দুঃসময়ে 'প্রত্যেকে আমরা পরের তরে' এই ভূমিকা অবশ্যই পালন করুন। তবেই এই সমাজের কিছু পরিবর্তন সম্ভব।
জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
0 Comments