জ্বলদর্চি

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা (তিনটি অণুগল্প)/ অভিজিৎ সাউ

২০২১ নতুন বছর নতুন লেখা 
তিনটি অণুগল্প 
অভিজিৎ সাউ

 দুর্ভোগ 

রোজকার মতো অমিত আজও টিউশনি পড়িয়ে লোকাল ট্রেনে করে নিজের মেসে ফিরছিল। উস্কোখুস্কো চেহারা, একগাল দাড়ি, আধ-ময়লা ঘামে ভেজা জামা দেখে বোঝার উপায় নেই ছেলেটি ইংরেজিতে এম.এ, বি.এড পাস করেছে। গন্তব্যের আগের ষ্টেশন আসতেই সিট ছেড়ে উঠে গেটের কাছে স্যুট-বুট পরা অফিস ফেরত  বাবুদের পাশে এসে দাঁড়ালো। ওকে দেখে অনেকেই নাক সিঁটকে একটু দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ভিড় ট্রেনে সে উপায় ছিলনা। একজন অবজ্ঞার সুরে বললো "এই যে ভাই, একটু এগিয়ে দাঁড়াও তো"। আবার একজন বললো "এই যে, আপনি হাতটা উপরে তুলুন"। কী জানি লোকটা বোধহয় তাকে পকেটমার ভাবছিল। ষ্টেশন আসতেই সে নেমে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।


শিক্ষকের অবদান 

রোজকার মতো একটি সরকারি স্কুলের গণিত শিক্ষক অমলেন্দু বাবু ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলেন; এমনসময় তাঁর কম্পার্টমেন্টের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল সবচেয়ে সুখের চাকরি কোনটি? সংখ্যা গরিষ্ঠের মতানুসারে শিক্ষকতার পেশা সবচেয়ে সুখের। কারণ শিক্ষকদের ডিউটি টাইম অনেক কম, ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশুনা করলো না-করলো তাতে উনাদের কিছু আসে-যায় না, ক্লাসে গিয়ে শুধুমাত্র সময় কাটানোটাই উনাদের আসল উদ্দেশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। অমলেন্দু বাবু সবার কথা খুব মন দিয়ে শুনছিলেন। আচমকা উনি বলতে শুরু করলেন, "আজকে আপনারা অনেকেই সমাজের গন্যমান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, অনেকেই উচ্চপদস্থ অফিসার; আপনাদের বাড়ির ছেলে মেয়েরাও কেউ কেউ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকার, নার্স বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত; আপনাদের ছেলে মেয়েরা বা আপনারা যা কিছু হতে পেরেছেন তাতে আপনাদের শিক্ষকদের অনেকটাই অবদান আছে, একথা কি অস্বীকার করতে পারবেন? আপনারা শুধুমাত্র নিজেদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত কিন্তু একজন শিক্ষকের কাঁধে হাজার হাজার ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব থাকে।" সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।


বার্থডে গিফট 

আজ সুস্মিতার জন্মদিন। বিয়ের পর এই প্রথমবার সে জন্মদিনে বাবা-মা'কে ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে আছে। তার স্বামী কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে রাতে পায়েস রান্নার প্রস্তাব দিলে বাকি সদস্যরা কেউ কর্নপাত করেনি বরং কিছুটা তাচ্ছিল্যের সুরে তার শ্বাশুড়ী বলল, "এই বয়সে তোর বউয়ের আবার জন্মদিনের পায়েস খাওয়ার শখ হয়েছে নাকি! বাবা বাবা!"  তবুও তার মনে কোনো দুঃখ নেই। সে একাই সংসারের সব কাজ করে। শ্বাশুড়ী-ননদ সবাই পায়ের ওপর পা দিয়ে বসে গল্প করে, টিভি দেখে; কেউ কুটোটি পর্যন্ত নাড়ে না। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর গা-হাত-পায়ের ব্যথাই ছিল তার এ'বছরের বার্থডে গিফট।

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments