জ্বলদর্চি

‘ওয়ান্ডার ওম্যান ১৯৮৪’ – সুপারহিরো থেকে সুপার হিউম্যান হয়ে ওঠার কাহিনী/ রাকেশ সিংহ দেব

ওয়ান্ডার ওম্যান ১৯৮৪’ – সুপারহিরো থেকে সুপার হিউম্যান হয়ে ওঠার কাহিনী

পরিচালক – প্যাটি জেনকিনস 
অভিনয় – গাল গ্যাডোট, ক্রিস্টেন উইগ, পেড্রো পাস্কাল, ক্রিস পাইন, রবিন রাইট, কনি নিয়েলসন। 
মুক্তি – ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০ (সিনেমা)
রেটিং – 4/5 

একটি হলিউডি সুপারহিরো মুভির কিছু আবশ্যিক শর্ত হল সুপারহিরোর সাথে টক্কর দেওয়া এক শক্তিমান ভিলেন, দুর্ধর্ষ গ্রাফিক্সের কাজ, আসাধারণ কিছু অ্যাকশন সিকোয়েন্স আর সবার শেষে ভিলেনকে হারিয়ে আমাদের সুপারহিরোর দুনিয়া রক্ষা।সুপারহিরোদের নিয়ে সিনেমার ব্যাপারে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স অনেকটা এগিয়ে গেলেও ডিসি সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স যে ক্রমশ তার গতি বাড়াচ্ছে তা এই ছবি দেখলেই বোঝা যায়। এই রেসে ডিসির দুরন্ত ঘোড়া হল ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’। সুপারহিরো মুভির এই আবশ্যিক শর্তগুলো পূরণ করেও পরিচালক প্যাটি জেনকিনস এর সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত মুভি ‘ওয়ান্ডার ওম্যান ১৯৮৪’ কোথাও যেন একটু অন্যরকম। ২০১৭ সালে প্রথম ছবির মুক্তির সাথে সাথে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিল যে মহিলা সুপারহিরো (নাকি সুপার হিরোইন!) দ্বিতীয় ছবিতেও দর্শকদের প্রত্যাশা পূরনে সে সফল। তিনি এলেন দেখলেন আর জয় করলেন। তার লাস্যে আহত হল পর্দার ওপারের দর্শক হৃদয়, আর ঘুষিতে কুপোকাত হল পর্দার ভিলেন। 
মুভির শুরুতেই দেখা যায় ছোট্ট ডায়ানা তার রাজ্য থিমাস্কিয়েরার সবচেয়ে বড় অ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতায় যোগদান করে শর্টকার্ট অবলম্বন করে জিততে চাইলে বিজয়ের দোরগোড়া থেকে তাকে সরিয়ে দেয় তার মাসি এবং আর্মি চীফ অ্যানিটোপ। তিনি তাকে বলেন একজন সত্যিকারের হিরো কখনও মিথ্যার অবলম্বন নেয়না। এরপর সময় পরিবর্তিত হয় ১৯৮৪ তে অর্থাৎ প্রথম সিনেমার প্রায় ছয় দশক পরে। প্রেমিক স্টিভ ট্রেভরকে হারিয়ে (ক্রিস পাইন) ওয়ান্ডার ওম্যান ওরফে ডায়ানা প্রিন্স (গাল গ্যাডোট) একাকী অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে আছে। ওয়াশিংটন ডিসির স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটে সিনিয়র নৃতাত্ত্বিক হিসাবে কাজ করছে। তবে নিয়মিতভাবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করে অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা থেকে বিরত থাকেনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত প্রেমিক স্টিভের স্মৃতি রোমন্থন করে নিয়মিত দিনযাপন করছে নিউ ইয়র্কের সাধারণ মানুষদের মাঝে। ডায়ানার গবেষণাকেন্দ্রে বার্বারা মিনার্ভা (ক্রিস্টেন উইগ) নামে এক ইনসিকিয়োর্ড কমপ্লেক্সে ভোগা এক তুখড় প্রত্নতাত্বিক যোগদান করে যে তাত্ক্ষণিকভাবে ডায়ানার তুলনামূলক অনুগ্রহ, ভদ্রতা এবং সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়। সে মনে মনে কেবল তার মতো হতে চায়– তার এই নিরীহ কামনা শেষ পর্যন্ত বিশ্বকে ধ্বংস করতে পারে এমন এক কুৎসিত চক্রান্তের অংশ হয়ে যায়। এর শুরু হয় যখন ক্যারিশম্যাটিক ব্যবসায়ী এবং আমেরিকার অন্যতম বিখ্যাত টিভি ব্যক্তিত্ব ম্যাক্সওয়েল লর্ড (পেড্রো পাস্কাল) তার লোভী দৃষ্টি গবেষণার জন্য বার্বারার দখলে থাকা একটি শক্তিশালী প্রাচীন ‘ইচ্ছাকৃত পাথর’ (ড্রিমস্টোন)-এর দিকে রাখে। মানুষের অন্তহীন কামনা বাসনা কিভাবে তাকে ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, আর ত্যাগের মাধ্যমে কীভাবে মোক্ষলাভ সম্ভব এই প্রাচীন সনাতনী চিন্তাধারাই এই মুভির সারবস্তু বলা যেতে পারে। 

  অন্যান্য সুপারহিরো চলচ্চিত্রের প্লটগুলির বাইরে ‘ডাব্লুডাব্লু 84’ তার সরলতা এবং চরিত্রগুলির সাথে দর্শকদের সম্পর্কিত হওয়ার সাথে সাথে নিজেকে আলাদা করে দেয়। এই মুভি দেখতে দেখতে সবসময় মনে হয় পরিচালক প্যাটি জেনকিনস এবং তার সহ-লেখকরা (জেফ জনস, ডেভিড কলাহাম) দর্শকদের একজন সুপার হিউম্যানের রুদ্ধশ্বাস গল্প উপহার দেওয়ার পাশাপাশি চরিত্রের ভেতরকার মানবিক সত্তা এবং প্রবৃত্তিগুলিকে সহজভাবে উন্মোচন করেছেন। এই মুভিতে তাই ডায়ানা প্রিন্স তার প্রেমিক স্টিভকে হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়। ছলছল চোখে এক সাধারণ মানবী প্রেমিকার মত বলে, ‘আমি এই দুনিয়ার মানুষের জন্য অনেক করেছি কিন্তু আমি শুধুমাত্র তোমাকেই চেয়েছি। তুমি চলে গেলে আমি আবার ভালোবাসতে ভুলে যাব।’  আসলে এই সিক্যুয়াল দর্শকদের অ্যাড্রেনালিন রাশ দেওয়ার চেয়ে হার্টের স্ট্রিংগুলিতে টান দেওয়ার দিকে ঝুঁকছে এবং সাফল্য লাভ করেছে। পরিচালক জেনকিনস গ্যাডোটের ক্যারিয়ার সেরা পারফরম্যান্সটি বের করে এনেছেন। গাল গ্যাডোটের শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য, চৌম্বকীয় ব্যক্তিত্ব এবং আন্তরিক অভিনয় হল তার চরিত্রের বীরত্বের মূর্ত প্রতীক, যা তার অভিনীত চরিত্রের সুপার শক্তিগুলির চেয়ে অনেক বেশি। ম্যাথু জেনসেনের বিস্তৃত সিনেমাটোগ্রাফি এবং হান্স জিমারের শক্তিশালী ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর মুভিতে অন্য মাত্রা দিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, ‘ডাব্লুডাব্লু 84’ একটি পরিষ্কার এবং বিনোদনে ভরপুর মুভি যার অ্যাকশন এবং অ্যাডভেঞ্চার থেকে নাটক এবং আবেগ দর্শকদের আবার বড় পর্দার দিকে টেনে আনে। 

রেটিং
5 – অসাধারণ
4- বেশ ভালো
3 – ভালো
2- দেখতে পারেন 
1 – না দেখলেও চলবে

জ্বলদর্চি পেজ- এ লাইক দিন👇

আরও পড়ুন

Post a Comment

0 Comments