গুচ্ছ কবিতা
অনিন্দ্য পাল
হারিয়ে যাবার আগে
সময়ের কোদাল দিয়ে কাটতে কাটতে যখন
পৌঁছাই, রাত তখন যৌবনবতী
আমার আজন্ম তৃষ্ণা চেয়ে থাকে
ঘোর লাগা চোখে দেখি, বিশ্বময় প্রসব যন্ত্রনা
অন্ধকার থেকেই তো এসেছিলো শুরুর সেদিন
এখনও তাই কেঁদে ওঠে আলো
কৃষ্ণকোটরে দ্রব হয়, যাবতীয় উচ্চাকাঙ্খা
এবং 'আমি '
এরপর রাত প্রৌঢ়া হয়ে যায়
আমাকে তাড়া করে ফিরতিযৌবন
দৌড়াতে চাই, পারিনা
পালাতে চাই, দেখি সব খানে সবাই চেনা
অতঃপর পিছন ফিরে দেখি
দেখি আমার পিছনে
আমি
এবং
আমি
আর শুধু আমি ...
ধৈর্য
কত আগুন সহ্য করে এই এতটুকু পেয়েছি
চাঁদ-জোৎস্নার আলো
কত ধ্বংস তাণ্ডব ধরেছি অন্তর-দেহ ঘরে
তারপর পেয়েছি বিশ্রাম ফুলের বাসরে,
এখনও চোখে লেগে আছে বাস্তবিক সমুদ্র
এখনও পায়ের তলায় ঘুমিয়ে আছে
বাপ-পিতমোর ছাই
এখনও তরুণ জোনাকির আলোয় খুঁজে নিই
বিশুদ্ধ রাত আর জন্মগত ভাই ...
এখনও দেখি ভোরের স্বপ্ন, মানুষের গৃহকোণে
তীব্র সাদা ফুটে আছি, সেই আদিম আমরা ক'জনে।
আমার ধ্রুবতারা
তোমাকে ছুঁয়ে এসেছে যে আলো
তাকে ছুঁয়ে দেখেছি আমি,
স্বাদ নিয়েছি রেটিনায়
অন্ধকার সমুদ্রের নাবিকের ঘাম
কিছুটা মেখেছি বাস্তুতলায়
বিশুদ্ধ রাতে চুমুক দিয়েছি তোমার ধ্বংসে
গড়েছি ইচ্ছাহ্রদ, জমিয়েছি তোমার ক্ষয়
সুখ তবু এল না, সেই ঘরে বসত এখন পুরাতন
ধ্রুবতারা, আর পাঠিওনা ধবংস, ক্ষয়
এখন ভালোবাসা কৃষ্ণগহ্বরে, মৃত্যু সনাতন।
ভিড় থেকে বলছি
আমরা যখন মাংসের সামনে দাঁড়িয়ে
ঝুঁকে পড়ি দৃষ্টি দিয়ে ভোগ করি
মৃত্যুর আনন্দ আর স্বাদ নিই অসহায়তার,
তখনো আমরা মানুষ থাকি
আমাদের মনুষ্যত্ব তখন হয়ে ওঠে যেন
সোফা-কাম-বেড...
বাজারের রক্ত গায়ে মেখে রাস্তা পেরিয়ে
চলে আসি যেই পুরসভার শ্মশানের সামনে,
চোখ নামিয়ে নিই
কারো আত্মার শান্তি কামনা করি মনে মনে,
তারপর বাড়ি ফিরে স্নান সেরে চিবিয়ে নিই
দু'ঘন্টা আগে মৃত হাড় ...
তারপর আবার
আবার আমরা মানুষ হয়ে উঠি, মানুষের মত
ঢেকুর-শব্দ ক্ষীণ হলে পর।
হাসি আসছে না এখন
এখন হাসতে চাই না আমি
অথবা ধরে নিতে পারো হাসার ইচ্ছা নেই এতটুকু আমার ভিতরে কোথাও, ঠোঁটের সাঁকোয় লেগেছে উল্কার আগুন, পুড়ে গেছে সব আনন্দঅণু,
সময় পুড়ে ছাই হয়ে বন্দী হয়ে আছে পিতলের ঘটিতে, আমি কেবল খুঁড়ে চলেছি হিরন্ময় বালি
মাত্র একঢোক নির্ভীক জলের জন্য।
পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন
1 Comments
কবি অনিন্দ্য পালকে শ্রদ্ধা ,শুভেচ্ছা জানাই।
ReplyDeleteকবিতা খুব ভালো লাগলো।