জ্বলদর্চি

আবৃত্তির পাঠশালা-১৪/শুভদীপ বসু

আবৃত্তির পাঠশালা-১৪

শুভদীপ বসু

বিষয়-মঞ্চভীতি

অনেক কিছু বলবো ভাবি একবার সুযোগ পেলে/ সবকিছুই গুলিয়ে যায় আমার সময় এলে।-এই পরিস্থিতির সম্মুখীন আশাকরি সকলেই একবার না একবার হয়েছেন।আবার প্রতিবারই অনেকেই হয়ে থাকেন।দর্শক শ্রোতার সামনে কোন কিছু পরিবেশন করার সময় যদি মাত্রাতিরিক্ত ভয় বা আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তখন পরিবেশকের সমস্তকিছুই গুলিয়ে যায় এটি মূলত মঞ্চ ভীতি বা স্টেজ ফ্রাইট।

  লক্ষন:বুক ধড়ফড় করা, হাত পা কাপা,ঘেমে যাওয়া,শ্বাসকষ্ট হওয়া, মুখ শুকিয়ে যাওয়া,বমি পাওয়া, পেটের ভেতর গুড়গুড় করা,চোখে ঝাপসা দেখা,সবকিছু ভুলে যাওয়া ইত্যাদি।
এবার আপনারা ভাবছেন এই সমস্ত লক্ষণগুলো কিছু কিছু তো আমারও হয় তাহলে আমিও কি পারফরম্যান্স অ্যাংজাইটির শিকার? না তা নয়।
আপনি মঞ্চে উঠে কিছু পারফর্ম করবেন আর একটুও টেনশন হবে না,এটা অসম্ভব। একবার রাহুল দ্রাবিড়ের একটি সাক্ষাৎকার পড়তে গিয়ে দেখেছিলাম উনি বলছেন- বহু ক্রিকেট খেলার পরেও প্রথম বলটি খেলার সময় ওনার পা কাঁপে। আর এই কাঁপা উনি ভালো বলেই মনে করছেন।সামান্য টেনশন থাকলে কাজে মনোযোগ বেশি আসে ও সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি ছোট্ট joke আপনারা সকলেই জানেন।-"ছাত্রর সামনে বিরাট সিলেবাস,প্রচুর বই।খুব স্বাভাবিক ভাবেই সকলেই চিন্তিত শেষ করবে কিভাবে?তখন ছাত্রটি শুধু জিজ্ঞেস করল-পরীক্ষাটা কবে?" আমরা পরীক্ষার হলে অনেক সময় দেখি বড় বড় প্রশ্নের উত্তর লিখতে যা বাড়িতে বহু সময় লাগত কিন্তু পরীক্ষাকেন্দ্রে  মনোসংযোগ থাকার ফলে নির্দিষ্ট সময়ে লেখা হয়ে যায়। তাই বলা যায় একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পারফরমেন্স এ্যাংজাইটি থাকা ভালো।

  মঞ্চ ভীতির কারণ:অ্যাংজাইটি যদি মাত্রাতিরিক্ত ও অযাচিত হয় তবে তা পারফরমারের ক্ষেত্রে খারাপ। এর ফলে পরিবেশনায় বিঘ্ন ঘটে। দেখা গেছে সমবেত কোন পরিবেশনায় তুলনামূলকভাবে একক পরিবেশনার থেকে মঞ্চভীতি পারফরমারদের কম হয়। মনোবিদরা বলেন ব্রেইনের ভেতর নার্ভ কোষের মধ্যে যে নিউরোট্রান্সমিটার থাকে সেটার তারতম্যের জন্য এই পারফর্মার অ্যাংজাইটি হয়।
  মঞ্চভীতি নিবারণের উপায়:
১) মঞ্চে পরিবেশনের আগে শরীরকে রিলাক্স রাখতে হবে। এর জন্য একটু হেঁটে নেওয়া যেতে পারে।
২) নিয়মিত শরীরচর্চা করলে এই ধরনের অ্যাংজাইটি থেকে দূরে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
৩) গ্রিনরুমে সম্ভব হলে মঞ্চে ওঠার আগে 5 মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নেওয়া যেতে পারে এর ফলে শরীরের মাংসপেশি গুলো রিলাক্স হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে আশেপাশে কেউ না থাকলেই ভালো।
 ৪) মুখের মাংস পেশি রিলাক্স রাখার জন্য চুইংগাম খাওয়া যেতে পারে এতে অ্যাংজাইটি কমে।
৫) মনকে সতেজ রাখার জন্য অবশ্যই একাগ্রচিত্তে ধ্যান করে নেওয়া যেতে পারে।
৬) পারফরমেন্সের আগের রাতে ঘুমটা অত্যন্ত জরুরী।না ঘুমোলে পারফরম্যান্স খারাপ হতে পারে।
৭) খালি পেটে কখনোই পারফর্ম করবেন না পারফর্ম করার আগে হালকা কিছু খাবার অবশ্যই খাবেন। আবার অতিরিক্ত খাওয়াও ভালো নয়। অনেকে লেবুর জল অনুষ্ঠান পরিবেশনের আগে খান,এটা ভালো।৮)অতিরিক্ত সিগারেট বা মদ্যপান কখনোই আপনার এ্যাংজাইটি কমাতে পারে না বরং আপনার শরীরকে আরো খারাপ করে তোলে।
৯) অ্যাংজাইটি কমানোর জন্য আপনি অনুষ্ঠান পরিবেশন হওয়ার আগে হলে পৌঁছে যেতে পারেন। এর ফলে পরিবেশের সাথে আপনি একটি যোগাযোগ তৈরি করে নেবেন।
১০)আপনি যেটি পরিবেশন করবেন সেটি বাড়িতে যত বেশি বার অভ্যাস করতে পারেন ততোই ভালো প্রয়োজনে আয়নার সামনে অভ্যাস করতে পারেন।
১১)অনুষ্ঠান পরিবেশনের ক্ষেত্রে আকাশের দিকে না তাকিয়ে অথবা মাটির দিকে না তাকিয়ে যদি দর্শকের দিকে তাকিয়ে আপনি আপনার পরিবেশনাটি রাখেন তবে আপনার উপস্থাপনা আরও সুন্দর হতে পারে। আপনার কনফিডেন্স লেভেল আরো অনেক বাড়তে পারে।
১১) যদি আপনি মঞ্চে বক্তৃতা করেন তাহলে বক্তৃতার মাঝে মাঝে কোন গল্প অথবা মজার কথা বলতে পারেন তাহলে দর্শকদের সাথে একটা যোগাযোগ তৈরি হয়ে যায় যা আপনার কনফিডেন্স লেভেল কে বাড়াতে সাহায্য করবে।
১২)মঞ্চে উঠে জোরে জোরে শ্বাস নিলে আপনার ব্রেনে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে অ্যাংজাইটি কমে যায়।
১৩) যারা প্রাণায়ম করেন তাদের ক্ষেত্রে মঞ্চভীতি দূর করাটা আরও সহজ। প্রশ্বাস নিঃশ্বাস নেওয়ার নির্দিষ্ট কৌশলের মধ্য দিয়ে তারা এই অ্যাংজাইটি দূর করতে পারে।
১৪)'আমি কখনোই ভালো করতে পারি না' বা 'আমি নিশ্চয়ই একটা ভুল করব'ইত্যাদি নেতিবাচক ভাবনাগুলো কখনই ভাববেন না। মনে রাখবেন ভুল হলেই তবে তো তা ঠিক হবে। আর আমরা কেউ ঈশ্বর নই।আমরা মানুষ।মানুষ মাত্রই ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক।'great speaker made-not born'
১৫)এসব সত্ত্বেও যদি আপনার ভয়টা কোনমতেই না যায় তবে অবশ্যই মনোবিদের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে পারেন। কখনোই নিজে থেকে পাকামো করে ওষুধ খাবেন না।

   সবশেষে বলতে পারি অভিজ্ঞতা থেকে আপনি যখন মঞ্চে পারফর্ম করবেন,ভাববেন আপনার সবথেকে প্রিয় মানুষেরা আপনার সামনে বসে রয়েছে।তারাই আপনার গান,আবৃত্তি বা বক্তৃতা শুনছে।আপনি রাজা।আপনি যা বলবেন,আপনার সমস্ত কথা আনন্দের সাথে -ভালোবেসে আপনার সামনে থাকা দর্শকের আসনে প্রিয় মানুষেরা তা শুনবে। আপনিই পারেন মঞ্চভীতির ভীতিটি মুছে দিয়ে, একজন মঞ্চ সফল পারফর্মার হতে।

পেজ-এ লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments