জ্বলদর্চি

'জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে'/(গল্প) /(উৎসব ১৪২৮)/কোয়েলিয়া বিশ্বাস

'জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে'

কোয়েলিয়া বিশ্বাস

              
দুপুর গড়িয়ে আসছে। আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে আসছে সূর্যের তেজ। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে রঙবেরঙের পাখিরা ফিরে যাচ্ছে নিজেদের বাসায়। দেবেশবাবু পা চালালেন দ্রুত। বাঁ হাতের পঞ্চাশ বছরের পুরানো রোলেক্সের ঘড়িটার দিকে চোখ রাখলেন। বিকেল চারটা।

"  নাহ্, খুব বেশি দেরি হয়নি", বিড়বিড় করে বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি।
দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে আসার ফলে একটু বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করলেন দেবেশ বাবু, আর ঠিক তখনই চোখে পড়লো রঙিন ফুল, লতাপাতা, আর গাছগাছালিতে ঘেরা সেই অপূর্ব পার্কটি। 
'আরে এই তো সেই উদ্যান', খুশি হলেন তিনি।          উৎসুক দেবেশ বাবু দ্রুত পা বাড়ালেন। পার্কের সামনে যেতেই দেখতে পেলেন বাহারি ফলকের উপরে সুন্দরভাবে বড়ো বড়ো করে লেখা 'স্বর্গোদ্যান'। 

'আরে বেশ কিছু বাচ্চাও আছে দেখছি'। এবার আরো খুশি হলেন তিনি। পার্কে ঢুকেই দেবেশবাবু নিজের জন্য একটি বসার জায়গা খুঁজে নিলেন। তসরের পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে সবুজ কচি ঘাসের উপরে বসে পড়লেন। রুমালের কোনায় 'দেবেশ' অক্ষরটি যেন নতুন করে আজ চোখে পড়লো। রমলার দেওয়া প্রথম উপহার। রমেশ চন্দ্র স্ট্রিটের শেষ বাড়িটায় যখন প্রথম কিশোরী রমলাদেবীকে দেখতে গিয়েছিলেন, এই রকম অসাধারন হাতের কাজ দেখে দেবেশবাবুর তাঁকে পছন্দ হয়ে যায়। সে কত কাল আগের কথা! তারপর সংসারের ব্যস্ততায় আর দায়িত্বের ভিড়ে কোথায় হারিয়ে গেলো সেই অসামান্য প্রতিভা! উদাসীন চোখে তাকিয়ে রইলেন তিনি।

'হ্যাঁ, এই জায়গাটা বেশ হবে', তাঁর গলায় তৃপ্তির সুর।
'আজ রমলা আমার সাথে এলে তার এই ঘাসের উপরে বসতে বেশ কষ্টই হতো। সারা বছর বাতের ব্যথায় যা ভোগে। কে জানে ওষুধপত্র সব সময়মাফিক খাচ্ছে কিনা', স্ত্রীর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি।
 রঙবেরঙের  সুদৃশ্য ফুল, ছোটো ছোটো প্রজাপতিদের  হুটোপাটি, পাখিদের বাড়ি ফেরার গান, সব মিলিয়ে দেবেশবাবুর মেজাজ ভারী ফুরফুরে।

'অলির কথা শুনে বকুল হাসে.. হুম হুম হুম হুম..হাসো না তো...'
এই যাঃ, কথাটা যেন কি ছিলো? আহা, বয়স কি কম হলো! সেই কোন ছেলেবেলার কথা! সংসারের সব ফাই ফরমাইশ খেটে দিনের শেষে তুলসীমঞ্চে প্রদীপ দিয়ে সামনের ছোট ঘরটায় মা হারমোনিয়ামটা নিয়ে বসতেন। তারপর সারা সন্ধ্যে জুড়ে চলতো সংগীতচর্চা। চার মেয়ের পর এক ছেলের সংসারে গান বাজনা ছিলো বিলাসিতা। তাও আবার মেয়ে মানুষের। নিজের শাড়ী কেনার টাকা থেকে একটু একটু করে সঞ্চয় করে এক কীর্তন দলের কাছে পুরানো হারমোনিয়ামটা কম দামে কিনেছিলেন মা। পরে অবশ্য চাকরি পেয়ে মাকে একটি নতুন স্কেলচেঞ্জার হারমোনিয়াম কিনে দিয়েছিলেন দেবেশবাবু, কিন্তু তখন ক্ষীণ হয়ে এসেছে তাঁর গান গাইবার ক্ষমতা।

চারপাশটা চোখ বোলালেন দেবেশবাবু। চোখ গিয়ে আটকে গেলো একটি বট গাছের তলায়। গাছের নিচে এক বৃদ্ধ যুগল অনবরত কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে একটি বাচ্চাকে। কিন্তু সে শুনতে নারাজ। দাদু ঠাকুমার সাথে চলছে নাতির মান অভিমানের পালা।
'কতদিন দাদুভাইকে দেখিনা', বুকটা কেঁপে উঠলো তাঁর।
বড়ো শখ করে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছিলেন দেবেশবাবু। প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথমের দিকে র‌্যাঙ্ক  করে যখন দীপুটা যাদবপুরে ভর্তি হয়েছিল, গোটা পাড়া মিষ্টি বিলিয়েছিলেন তিনি। ব্যাংকে চাকুরীরত দেবেশ মিত্রকে সবাই বরাবরই সমীহ করতো বেশি। কিন্তু দীপুর রেজাল্টের পর পাড়ার লোকে তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়ে দিয়েছিল এক নিমেষে। রমলাদেবী পেয়েছিলেন 'রত্নগর্ভার' আখ্যা। মেধাবী ছেলের এই সফলতা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন তাঁরা।

তারপর কেটে গেল ৪ বছর। দীপুর বি.টেক শেষ হতে চলল। একদিন হঠাৎই লাফাতে লাফাতে বাড়ি ফিরলো দীপু। হাতে কমলের দোকানের স্পেশাল রসগোল্লা। বিদেশে স্নাতকত্তরের সুযোগ পেয়েছে সে। কিন্তু দীপুর ছেলেপাগল মায়ের মুখে দেখা দিলো ঘন কালোমেঘের ছায়া। রমলাদেবী নাছোড়বান্দা। একমাত্র ছেলেকে বিদেশ বিভুঁইএ একা ছাড়তে তিনি নারাজ। এক সপ্তাহ ধরে চললো মান অভিমানের পালা।প্রতিজ্ঞার বন্যা বয়ে গিয়েছিলো মা-ছেলের মধ্যে। মায়ের কড়া নির্দেশ, 'ছমাস অন্তর দেশে ফেরা চাই। দিনে দুবার ভিডিও কল মাস্ট, আর বাইরের খাবার নৈব নৈব চ।'

হা ঈশ্বর! রমলার এই আবদার শুনে বিধাতা সেদিন নিশ্চয় পরিহাস করেছিলেন। সেদিনই হয়তো বাবা মায়ের সাথে ছেলের তৈরি হয়ে গিয়েছিলো এক অদৃশ্য বেড়াজাল নিজেদের অজান্তেই। এন্ট্রান্সে ভালো র‌্যাঙ্ক করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ তুখোড় রেজাল্ট করা দীপু সেই যে গেলো...।
 এরপর বছর তিনেক কেটে গেল। দীপুর ঘরে ফেরার আশা দেবেশবাবুরা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। দীপুর পথ চেয়ে বসে থাকতে থাকতে তাঁরা ক্লান্ত, তাঁরা বিধস্ত। প্রথম এক বছর মাসে মাসে কিছু টাকা পাঠানো এবং দিনে একবার করে ফোন আসতো ঠিকই, কিন্তু সময়ের স্রোতে এবং কালের নিয়মে বদলে গেল সব কিছু। কেবল বদলালো না মায়ের মন। স্ট্যাটাস, গ্ল্যামার এবং বিদেশি আদবকায়দার ভিড়ে মফস্বলের এক এঁদো পাড়ায় পড়ে থাকা সাধারণ ব্যাংককর্মী দেবেশ মিত্র এবং তাঁর স্ত্রী বোধহয় বড্ড বেমানান।

এক দুপুরে রমলাদেবী যখন তাঁর সাধের নকশিকাঁথা বুনতে ব্যস্ত এবং দেবেশবাবু ভাতঘুমে, হঠাৎই তাঁদের ড্রয়িং রুমের টেলিফোনেটা বেজে উঠলো বহু দিন পর। রমলাদেবী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। ফোনের রিসিভারটা কানে রেখেই তিনি হাঁক পাড়লেন, "ওগো শুনছো, আমার খোকা...আমার খোকা ফোন করেছে। খোকা কেমন আছিস বাবা? তোর শরীর ভালো আছে তো? এতদিন ফোনে নেই, তোর বাবা আর আমি চিন্তায় চিন্তায়..." এক নাগাড়ে বলে গেলেন রমলাদেবী। দেবেশবাবু তখন শোবার ঘর ছাড়িয়ে উঠে এসেছেন ড্রয়িং রুমের দিকে। আবারো তিনি শুনতে পেলেন রমলাদেবীর গলা।

'ওগো খোকা দেশে ফিরছে। আমার খোকা ফিরছে', গলা কাঁপছে রমলাদেবীর। 
'তুমি শুধু শুধু আমার খোকাকে দোষারোপ করো। বলি এখনো দাঁড়িয়ে কেনো, বাজারে যাও, আমার খোকা নাড়ু খেতে বড়...'
কথা আর শেষ হয়না। রমলাদেবী বুঝতে পারলেন দীপু ফোন কেটে দিয়েছে। মোটা হাই পাওয়ারের চশমার আড়ালে চোখের জল লুকোলেন দেবেশবাবু।

তারপর দীপু বাড়ি ফিরেছিল এক বিদেশিনিকে সঙ্গে নিয়ে। জানতে পারলেন তারা বিয়ে করেছে। এতো অসহায় বোধহয় আগে কোনোদিন লাগেনি দেবেশবাবুদের। ছেলের কথা ভেবে কথা বাড়ান না তাঁরা। দিন তিনেক থেকে বউকে নিয়ে ফিরে গিয়েছিলো দীপু। তারপর দুবছর পর কোল আলো করে এলো দাদুভাই। নাতি হওয়ার পর অবশ্য দীপুরা বেশ কয়েকবার এসেছে। স্কুলে শীতের ছুটি পড়লেই দাদু-ঠাকুমার কাছে আসার বায়না ধরতো সে। এর মধ্যে দীপু বেশ কয়েকবার বাবা-মাকে আমেরিকাতে  নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেছে ঠিকই কিন্তু তার কারণটা যে কি সেটা বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি দেবেশবাবুর।

ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসলেন তিনি। বটগাছটির দিকে আবার তাকালেন। বৃদ্ধ দম্পতি তখন উঠে গিয়ে বসেছে অন্য গাছের তলায়। আকাশের দিকে তাকালেন দেবেশবাবু। হঠাৎই তাঁর চোখ গেলো পার্কের গেটের দিকে। লালপাড় সাদাশাড়ী পরে কেউ একজন যেন এদিকেই আসছে। ঝাপসা হয়ে যাওয়া চশমাটা খুলে পাঞ্জাবিতে মুছে নিলেন একবার।
'আরে! একি! গিন্নি না?' হতভম্ব হয়ে গেলেন দেবেশবাবু।
'হাড়মাস ভাজা ভাজা করে খেলে দেখছি। বলি প্রেসারের ওষুধটা কদিন খাওনি সে খেয়াল আছে? আরে আরে করো কি! অমন সুন্দর তসরের পাঞ্জাবিটা , বাবা কত সাধ করে জামাইষষ্ঠীতে দিয়েছিলো। ঐটা পরে তুমি ঘাসে...ছিঃ... ছিঃ... তোমার আক্কেলকে বলিহারি", এক নাগাড়ে বলে দেবেশবাবুর দিকে তেড়ে এলেন রমলাদেবী।

রমলাদেবীর আকস্মিক আগমনে বেশ হকচকিয়ে গেলেন দেবেশবাবু। বিস্ময় যেন তাঁর আর কাটে না।
'আ মলো যা, অমন হাঁ করে দেখছো কি। বলি ভূত দেখলে নাকি? ভূতই বটে। বাতের ব্যাথায় কাবু সত্তর্ধ রমলাদেবী যে তাঁকে অনুসরণ করে এতখানি পথ পেরিয়ে এত তাড়াতাড়ি এখানে এসে পৌঁছোবেন তা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি দেবেশবাবু। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে তিনি বললেন,
"গিন্নি তুমি! তুমিও এলে! জ্বর থেকে আর সেরে উঠতে পারলেনা? এসো এসো এই বেঞ্চটায় এসে বসো"। 
রমলাদেবীর হাত ধরে পার্কের শেষ কোনায় একটি বেঞ্চে নিয়ে এসে বসালেন দেবেশবাবু। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। আকাশে মুখ তুলেছে শুক্লা চতুর্থীর রূপসী চাঁদ। বাতাসে শীতের আমেজ। রমলাদেবী তাঁর হাতের ব্যাগ থেকে একটি সাদা কাশ্মীরি শাল বের করে দেবেশবাবুর গায়ে জড়িয়ে দিলেন। স্ত্রীর দিকে একবার চোখ তুলে তাকালেন তিনি। চাঁদের মায়াবী আলোয় রমলাদেবীকে বড় মোহময়ী দেখাচ্ছে। 

দেবেশবাবু গলাটা একটু ঝেড়ে নিয়ে বললেন,
'গিন্নি?'
'হুম?', একদৃষ্টিতে অনমনা ভাবে উত্তর দিলেন রমলাদেবী।
'ভালো আছো তো?'
'হুম'
'সবিতার ছেলের যে শরীর অসুস্থ ছিলো? সে এখন ভালো?'
'হুম'
'হরেনের দোকানে ২০০ টাকা ধার ছিলো। তা মিটিয়েছো?'
'হুম'
'আর খোকা?'
'খোকা...'
হঠাৎ করেই অঘোষিত ভাবে রমলাদেবীর চোখে নেমে এলো শ্রাবনের বৃষ্টিধারা। দেবেশবাবুর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলেন তিনি। দেবেশবাবু তাঁর জীর্ণ মলিন হাতটা রমলাদেবীর  কাঁচা পাকা চুলের উপরে রাখলেন।
এইভাবে কেটে গেলো প্রায় মিনিট সাতেক। ঠিক তখনই এই অসময়ে হঠাৎ করে কোথা থেকে ভেসে এলো এক নাম-না-জানা পাখির অদ্ভুত গান। দূর থেকে ভেসে আসা সেই একটানা তির.র.র.র.র  তির.র.র.র.র সুরে কেমন যেন হয়ে গেলেন দেবেশবাবু। যেন কোন এক হারিয়ে যাওয়া দেশের গন্ধ মেশানো আছে সেই গানে, যেন ফেলে আসা দিনের মধুর স্মৃতি বয়ে আনছে সেই সুর। একি পরম প্রিয় সঙ্গিনীকে কাছে পাওয়ার উল্লাস, নাকি কাছের জনকে চিরকালের জন্য হারানোর নিদারুন আর্তনাদ! একটু বিভ্রান্ত হলেন দেবেশবাবু। তিনি জানেন না এ গান আনন্দের, নাকি বিষাদের। মিনিট দুয়েক চুপ করে সামনে লতাগুল্মর দিকে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে রমলাদেবীর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন,
"কতদিন তোমার গলায় গান শুনিনি। একটা গান গাইবে গিন্নি?'
দেবেশবাবুর আকস্মিক প্রস্তাবে রমলাদেবী বেশ অপ্রস্তুতে পড়ে গেলেন।
'ধুর, সেসব কবেই ছেড়ে দিয়েছি। বয়স তিনকালে গিয়ে এককালে ঠেকলো। এখন আবার ওসব গান টান...'
'আহা গাওই না'
'বলছো?'
'বলছি'
'তাহলে তোমাকেও দুকলি গাইতে হবে', রমলাদেবীর গলায় আবদারের সুর।
'আচ্ছা বেশ'।

সন্ধ্যের কনেদেখা মায়াবী আলোয়, জুঁই ফুলের গাছের তলায় বসে এক বৃদ্ধ কপোতকপোতি গেয়ে উঠলেন - 
                'জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে

                বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে...'
       
                                   ----

 আজ রবিবার। মিত্র বাড়িতে আজ শোকের ছায়া। এ বাড়ির কর্তা-গিন্নির আজ শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। ঘন্টা সাতেকের  ব্যবধানে দিন তিনেক আগে গত হয়েছেন দুজনেই। বেশ কয়েকদিন ধরে ধুম জ্বরে ভুগছিলেন তাঁরা। নড়াচড়ার ক্ষমতা ছিলো না। খাওয়া দাওয়া, ওষুধ পত্র এসব কিছুই জোটেনি। কাজের লোক সাতদিন ছুটিতে থাকার পর কাজে যোগ দিতে এসে ডাকাডাকির পর আবিষ্কার করে দুজনেই মৃত।

উপলক্ষ্য শোকের হলেও মিত্র বাড়িতে বেশ সাজো সাজো রব। ভোর থেকে পুরোহিত, হালুইকার, ক্যাটারারের আনাগোনা। এবাড়ির একমাত্র ছেলে দীপঙ্কর গত পরশু দুপুরের ফ্লাইটে বউ বাচ্চাকে নিয়ে বাড়িতে এসেছে। একেবারে শ্রাদ্ধশান্তি সেরে, বাড়ি বিক্রি করে এ তল্লাটের পাট চুকিয়ে চলে যাবে সে। মৃতপ্রায় স্তব্ধ বাড়িটা যেন হঠাৎ করে ফিরে পেয়েছে প্রাণের স্পন্দন। কর্তা-গিন্নির ইয়া বড় বড় দুটো সোনালী ফ্রেমে বাঁধানো ছবি রাখা হয়েছে বসার ঘরে। ছবি দুটো প্রায় ঢেকে গেছে গোলাপ আর রজনীগন্ধার মালায়। ভালো করে লক্ষ্য করলে মনে হবে কর্তা যেন স্মিত হেসে বলছেন, 'কি গিন্নি, বলেছিলাম না এ বাঁধন?'
আর গিন্নি যেন তখন লাজে রাঙা হয়ে গোলাপের আড়ালে মুখ লুকিয়ে বলছেন,'সেই তো দেখছি গো।'

সন্ধ্যে হয়ে আসছে। বাতাসে শীতের আমেজ। বাড়ির পাশের আম গাছটি থেকে একটি পাখি ডেকে উঠলো তির..র..র..র  তির..র..র..র। দূরে কোথা থেকে ভেসে আসছে 
                 জীবনমরণের সীমানা ছাড়ায়ে,

                 বন্ধু হে আমার, রয়েছ দাঁড়ায়ে ॥


আরও পড়ুন 

                                               

Post a Comment

1 Comments

  1. সহজ কিন্তু অসম্ভব সুন্দর বাস্তব গল্প।।।গল্প হলেও সত্যি।।।।♥️♥️♥️♥️

    ReplyDelete