গুচ্ছ কবিতা
অপর্ণা বসু
ভঙ্গুর
আওয়াজ করে শব্দ ভেঙ্গে যায়
কত ভালোবাসা
আর মনোযোগ দিয়ে সাজানো
কত ধৈর্য্য দিয়ে গড়া আকাশ
কড়াৎ কড় শব্দে ভেঙ্গে চুর চুর
ঢেউ কাঁপে বুকের ভিতর
এমন আকাশ ফাটা বৃষ্টি আমাকে ভাসিয়েছে কতবার
কতবার হারিয়েছি সব
তবুও এসবই করি
এও এক রোগ মনে হয়
উপশমহীন এই রোগের অছিলায়
আকাশে শব্দ সাজাই বারবার
প্রতিবারই বিকট আওয়াজে
সব শব্দ ভেঙ্গে যায়।
ছোট
ক্রমশঃ তুমি ছোট হয়ে যাচ্ছ
একটা ছোট্ট পিঁপড়ের মতন এতটুকু
অথচ বুঝতেও পারছনা
নিজেকে দেখছ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে
মনে হচ্ছে তুমি কত্তো বড়
ভাবছ তোমার দৈর্ঘ্য একদিন আকাশ ছোঁবে
বড় বড় স্বপ্ন দেখতে গিয়ে
নিজের ছোট ছোট ভুল গুলো
টেনে বড় করছো অনবরত
আর সেই ভুলের স্তুুপ
তোমায় একটু একটু করে ঢেকে ফেলছে।
তুমি খুব ছোট হয়ে যাচছ
একেবারে এত্তোটুকু।
ধ্বনি
বাগানে কাঁঠালচাঁপার ঝোপে
চাপ চাপ অন্ধকার
সেখানে কারা যেন
যাওয়া আসা করে
পরিত্যক্ত বুকের ওপর
অদম্য ইচ্ছারা কিলিবিলি নকশা তোলে
কালো রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে
সেই গোপন চলনবিলাস, অভিসার
সেই মর্মর ধ্বনির মূর্ছনায় শিহরিত হই
বেহুঁশ জেগে থাকি একা, নিস্পন্দ আমি
বিবশ শরীরে।
গান
ইদানীং গানে ঢুকে পড়ছে
খোঁড়া হাঁস ,মাতাল শহর আর কিছু শ্লোগান
খোঁড়া হাঁস রাস্তা পার হচ্ছে খুব অসংলগ্ন ভাবে
যেন খুব কষ্ট হচ্ছে যেন পড়ে যাবে
অথচ জলে কি সবছন্দে সাঁতার কাটছে
নিজে আনন্দ পাচ্ছে অন্যকেও দিচ্ছে
এই সুন্দর দৃশ্য গানে আসে
ধর্মের বোতল গলায় ঢেলে
ক্লান্ত শহর বেকার শহর মাতাল হয়ে নাচে
সব জখম ভুলে উদ্দাম নাচে
নাচতে নাচতে গানে ঢুকে পড়ে ওরা
প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর ফুরিয়ে এলে শ্লোগান একতরফা
তখন আর করার কিছুই থাকেনা
আমার ভীষণ গান পায়।
মানভঞ্জন
জেগে আছে রাত ঘুমিয়ে পড়েছে পাড়া
স্মৃতির দুয়ারে বার বার কড়া নাড়া
কান্না জড়ানো দুইটি চোখের তারা
ঝাপসা হয়ে নেমেছে জলের ধারা
তির্যক বাণে বিদ্ধ এ বুক
শাসনে রেখেছি বেঁধে
শয্যা আমার কঠিন ম্যাটিতে
গুমরিয়ে উঠি কেঁদে
বাসা ভেঙ্গে যাওয়া পাখি যেন
ডানা ঝাপটিইয়ে মরে
চিরচেনা সেই সুবাস সহসা
ছড়ালো বুকের পরে
গাঢ় অভিমান মুছে নিল প্রিয় ঠোঁট
মল্লিকা বন বাতাসে উঠলো ভরে
আঁধার রাতের অপেক্ষা অবসানে
বাতায়ন ভেঙ্গে জ্যোৎস্না এলো যে ঘরে।
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
0 Comments