জ্বলদর্চি

প্রেমের গল্প/(চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত)/(উৎসব ১৪২৮)/সন্দীপ দত্ত

প্রেমের গল্প
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
সন্দীপ দত্ত


রাত এগারোটার সময় অরিন্দমকে ফোন করল তৃষা। "তুমি রান্নাবান্না কিছু জানো?"
মাস চার আগের পুরনো একটা 'সানন্দা' আজ সকালে অনেক কষ্টে জোগাড় করেছিল অরিন্দম। সংখ‍্যাটা বিয়েকেন্দ্রিক। কনে সাজানো তত্ত্ব থেকে শুরু করে বরকনের সাজপোশাক,ডেকোরেশনের ফোন নাম্বার এমনকি কলকাতার তাবড় তাবড় ক‍্যাটারারের যোগাযোগ নম্বর পর্যন্ত দেওয়া আছে সেখানে। এ বাড়িতে পত্রিকা নেওয়ার চল নেই। মানুষজনই অল্প। হাতে গোনা মাত্র তিন। বাবা,মা আর সে। বাবা সোমপ্রকাশ শুধুমাত্র খেলা আর রাজনীতি বোঝেন। খালি ও দুটোর জন‍্যই প্রতিদিন দুটো পেপার ঢোকে বাড়িতে। একটা বাংলা আর একটা ইংরেজি। মা অনন‍্যা টিভির বাংলা সিরিয়ালের পোকা। সংখ‍্যাটা তাই এক বন্ধুর বোনের কাছ থেকে নিতে হয়েছে তাকে। নিতে হয়েছে যে কথাটা বলে,সেটা মিথ্যে। আসল সত‍্য অরিন্দম প্রকাশ করেনি। বন্ধুর বোনকে ও বলেছিল,"বিদেশ ভ্রমণের ওপর কোনও লেখা থাকলে দিস। ভাবছি একবার দেশান্তরি হব।" তা বন্ধুর বোন মহুয়া যে একেবারে হনিমুনের ট‍্যুর দিয়ে বসবে,অরিন্দম ভাবতে পারেনি। পাতা ওলটাতেই তাই পুলকে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু ও পুলক বেশিক্ষণ কাজ করেনি। ওসব পরে। পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছতে হলে আগে পাহাড়ে ওঠা শিখতে হয়। অরিন্দমের সামনে এখন উঁচু নিচু ভূমিতল। দেখেশুনে পা ফেলতেই তার বুক কাঁপছে। আবার থেমে গেলেও চলবে না। যবে থেকে তৃষার সাথে আলাপ হয়েছে তার,দুনিয়ার কোনও মেয়েকেই আর সুন্দরী লাগেনা। মনে হয়, সব গুলোই কেমন যেন পেতনী পেতনী। সেখানে তৃষাই একমাত্র অভিনেত্রী। অভিনেত্রী,রাজকন‍্যে,পরী আর যা কিছু। সাতাশ বছরে ওরকম রূপসী মেয়ে এই চন্দননগরে আর দ্বিতীয়টি চোখে পড়েনি তার। আলাপ হওয়ার পর আট মাস প্রেম গড়িয়েছে। এবার বিয়ে না করলে শেষে আঙুল চুষতে হবে তাকে। কিন্তু কথাটা বাবা মাকে এখনও বলতে পারেনি অরিন্দম। কলকাতার এক ছোট কোম্পানিতে একটা ছোটখাটো কাজ করে সে। মামুলি বেতন। তবে সে যাই হোক,তৃষাকে এবার বউ হিসেবে ঘরে না তুললে চাপা একটা অস্বস্তি সারাক্ষণই তাকে কুরে কুরে খায়। তৃষা হাওড়ার মেয়ে। আলাপটা হাওড়াতেই হয়েছিল। তারপর ফোনে এগিয়ে যায় সম্পর্ক। সপ্তাহে একদিন দেখা করে। গতকাল ছিল ওদের দেখা করবার দিন। অনেকক্ষণ গল্পগুজব করবার পর চিনেবাদামের ঢেকুর তুলে অরিন্দম তৃষাকে বলেছিল,"তোমাকে এবার আমি বিয়ে করব। বাবা মাকে একবার বলে দেখব,যদি রাজি হয় তো ভাল,নইলে বাড়ি ছেড়ে দেব আমি। তোমায় নিয়ে আলাদা থাকব। তোমার কোনও আপত্তি নেই তো তৃষা? মানে আমার ঐটুকুনি টাকায় সংসার করতে?"
"আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে......" বলতে গিয়ে তৃষা থমকে গিয়েছিল।

"তবে কী? ভাবছ আমায় বিয়ে করলে তোমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে? কখ্খনো না। আমি সবসময়ই চাই,তুমি তোমার গবেষণাটা চালিয়ে যাও।।"
ইতিহাসের মেধাবী ছাত্রী তৃষা। বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয় থেকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ওপর রিসার্চ করছে। গবেষণার এটা ওর তৃতীয় বছর।
ঠোঁট কামড়ে তৃষা বলেছিল,"না অরিন্দম,আসলে সমস‍্যাটা হল তোমার ঐ ঐটুকুনি টাকা। আমার বাবা মা কিছুতেই রাজি হবেনা। বাবা মাঝে মাঝেই বলে,আমার সাথে এক টাকাওয়ালা ছেলের বিয়ে দেবে। যার অনেক টাকা। প্রচুর ব‍্যাঙ্কব‍্যালেন্স। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আমায় যাতে চোখের জল ফেলতে না হয়। আমি যাতে রানির মতো থাকতে পারি। দু'চারটে গাড়ি,একাধিক বাড়ি না থাকলে আজকাল ভাল থাকা যায়না। ভাল রাখা তো নয়ই।"
"তুমি তো পালিয়ে যেতে পারো। কত মেয়েই তো পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ে একবার হয়ে গেলে মেয়ের বাবা মার কাঁচকলা। কিচ্ছু করতে পারবে না। তখন মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না ওদের। তোমার বয়েস পঁচিশ,আমার সাতাশ।"
"নাগো,পালিয়ে বিয়ে করে মজা নেই।" তৃষা বলে।
"তাহলে? এখন যদি হুট করে তোমার অন‍্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়ে যায়? আমি যে তাহলে মরে যাব তৃষা! তোমার বাবা মার সাথে আমার আলাপ করিয়ে দিলে আমি বুঝিয়ে বলতাম। নিয়ে যাবে একদিন?"
"কোনও লাভ হবে না অরিন্দম। তোমার টাকা নেই।"
"তাহলে কী করবে? চলো,দুজনে একসাথে আত্মহত্যা করি।" বলে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়েছিল অরিন্দম।
"দাঁড়াও। ভাবছি।" দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছিল তৃষা।
তৃষার দীর্ঘশ্বাসটা নিজের বুকে নিয়ে অরিন্দম কাল ফিরে এসেছিল চিন্তায়। রাতে ভাল ঘুম হয়নি। তৃষার এখন যা বয়স,যে কোনও মূহুর্তেই বাড়িতে সম্বন্ধ আসতে পারে। তখন বিয়েটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। যেভাবেই হোক,ও রাস্তা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু কীভাবে করবে? কীই বা করবে অরিন্দম? ভাবতে ভাবতে কাল রাত থেকে আজ সারাদিন অনেক কথাই মাথায় এল। আজ সকালবেলা অরিন্দম কাজে বেরনোর সময় মা একটা কথা বলেছিল। "ভাবছি তোর জন‍্য এবার একটা সম্বন্ধ দেখব পিপুল। আমরা আর কদ্দিন? তোর সংসারটা গুছিয়ে দিতে না পারলে আমরা যে মরেও শান্তি পাব না। টাকা পয়সা আমরা চাইনা। মেয়ে দেখতে শুনতে ভাল হলেই আমরা খুশি। ব‍্যবহার যেন ভাল হয় আর একটু আধটু রান্না পারে। ব‍্যস,আমাদের তাহলেই হবে। আমাদের জন‍্য বলছি না পিপুল। তোর যাতে সুবিধে হয়।"
পিপুল অরিন্দমের ডাকনাম। বাড়িতে বাবা মা তাকে এই নামেই ডাকে।

মায়ের বলা কথাগুলো আজ সারাদিন মাথার মধ্যে ঘুরেছে অরিন্দমের। তৃষার ব‍্যাপারটা বাড়িতে বলার কি একটা সুযোগ দিল মা? তৃষা দেখতে শুনতে ভাল,ব‍্যবহারও মিষ্টি। কিন্তু মেয়েটা রান্নাবান্না জানে কিনা জানা নেই। সকালে কলকাতায় কাজে যাওয়ার পথে মহুয়ার কাছ থেকে একটা পুরনো 'সানন্দা' নেওয়া যে কারণে,তা আসলে তৃষা শাড়ি পরলে কেমন লাগে,সেটা দেখার জন‍্য। তৃষা কখনও শাড়ি পরেনি। কোনও দিন না। শাড়ি পরলে নাকি ওর নাভি চুলকোয়। সারাক্ষণ শুধু জিন্স আর টপ। আধুনিক মেয়ে,সেটা নাহয় হতেই বারে। আজকাল কোনও অনুষ্ঠান ছাড়া ক'টা বাড়ির বউ শাড়ি পরে? সমস‍্যাটা তৃষার রান্না নিয়ে। ও যদি রাঁধতে পারে,অরিন্দম একশোয় একশো। মায়ের কাছে কথাটা পাড়তে পারবে সহজে। বিকেলবেলা বাড়ি ফিরতে ফিরতে ট্রেনে বসে অরিন্দম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল,আজ রাত এগারোটা দশে যখন সে তৃষাকে ফোন করবে,প্রথমেই জিজ্ঞেস করবে ও রান্না পারে কিনা।

     রাত্রি এগারোটায় অরিন্দমকেই ফোন করে তৃষা যখন এ ধরনের কথা বলে,অবাক তো লাগবেই। অরিন্দম তাই অবাক হয়ে গেল।
"রান্নাবান্না? আমি?"
"হ‍্যাঁ,তুমি। জানো কিছু?"
"রান্নাবান্না আমি কী করে জানব? কিছুই জানিনা।"
"দরকার নেই। তবু কাল সকালে তুমি একবার আমাদের বাড়িতে এসো। আমাদের বাড়ির রান্নার কাজের লোক কাজ ছেড়ে হঠাৎ করে দেশের বাড়ি চলে গেছে। ও আর আসবে না। বাবাকে আমি তোমার কথা বলেছি। বলেছি,আমার এক চেনা জানা রান্নার লোক আছে। ভাল রান্নাবান্না করে। এখন তুমি যদি এই সুযোগটা নিতে চাও,আমায় পাবে। চব্বিশ ঘন্টার ডিউটি। সকালের চা কফি থেকে আরম্ভ করে রাত্রের ডিনার পর্যন্ত। কোম্পানিতে তোমায় কত টাকা বেতন দেয়?"
"চার হাজার।"
"এখানে তোমাকে পাঁচ হাজার দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকবার একটা রুম। রাজি আছো কিনা বলো।"
"এসবের মানে কী তৃষা?"
"বললাম তো রাজি আছো কিনা বলো। রাজি থাকলে কাল সকালেই তোমাকে আসতে হবে। হাওড়ায় নেমে কোন্ পথ দিয়ে এলে আমাদের বাড়ি পাবে,সব তোমায় এসএমএস করে জানিয়ে দেবো। তোমায় সুযোগ দিচ্ছি অরিন্দম। নিতে না পারলে ঠকে যাবে। এছাড়া তুমি আর অন‍্য কোনওভাবেই আমাদের বাড়িতে ঢুকতে পারবে না।"
"তাবলে এইভাবে? ক'দিনের জন‍্য? বাড়িতে কী বলব আমি?"
"বাবা মা মাঝেমধ‍্যেই এধার ওধার যায়। তুমি আমায় জড়িয়ে ধরতে পারবে অরিন্দম। চুমু খেতেও পারবে। বলো,আসবে কিনা? আমার বাবা মা ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নেবে তোমার। ওটা এমন কিছু না। যা যা পদ জিজ্ঞেস করবে,সবেতেই হ‍্যাঁ বলবে তুমি। বলবে,সব পারি। বাকিটা আমি ম‍্যানেজ করে নেবো। হাজারটা রান্নার বই গোপনে সাপ্লাই দেবো তোমায়। কোনও অসুবিধে হবেনা  আর তোমার বাবা মাকে কী বলবে,ওটা তুমি তোমার বুদ্ধি খেলিয়ে বের করো।"
"আমার বুদ্ধি হারিয়ে যাচ্ছে তৃষা।"
"তোমার বাবা মাকে একটা মিথ্যে কথা বলবে তুমি। বাবা মাকে মিথ্যে বলতে পারো তো?"
"বলিনি কোনওদিন। তবে তোমার জন্য পারব।"
"বলবে,পুরনো কাজ ছেড়ে নতুন এক কোম্পানিতে জয়েন করেছি আমি। থাকতে হবে ওখানেই। কাজ বেশি,তবে বেতন খারাপ নয়। মাসে আট হাজার। চার পাঁচমাস ছাড়া ছাড়া ছুটি মিলবে। তখন যাব বাড়ি।"
"বিয়ের জন‍্য মেয়ে দেখা শুরু করলে কী বলব?"
"বলবে,ওসব পরে। নতুন কাজ। অনেক দায়িত্ব। ক'টা বছর যাক,তারপর। আজকাল শহরের ছেলেরা সাতাশ বছরে কেউ বিয়ে করেনা। তিরিশ বত্রিশের পর এগোয়।"

পরদিন সকাল সকাল তৃষার বাড়িতে এসে পৌঁছে গেল অরিন্দম। তৃষার বাবা তেজেন্দ্রনারায়ণ আর মা সুশীলা অরিন্দমকে বাজিয়ে নিলেন। তবে অসুবিধে হল না তেমন। উতরে গেল সে। শুরু হয়ে গেল তার নতুন জীবন। প্রেমের জন‍্য যে এত নিচে নামতে হবে,ভাবেনি সে। না নেমে তো উপায়ও ছিলনা। তৃষা তার ভালবাসা। তৃষা তার জান। ভালবাসার জন‍্য সে নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে পারে।


এখন অরিন্দম অনেকটাই পরিণত। তৃষার দেওয়া রান্নার বই পড়ে পড়ে অনেকগুলো রান্নাও শিখে ফেলেছে। প্রণ পোলাও,থাও সেক,মাসালা কর্ন,ক‍্যাপসিকাম পকোড়া আরও অনেক কিছু। তৃষার সাথে বিয়েটাই শুধু হল না,এই যা। তানাহলে তেজেন্দ্রনারায়ণ আর সুশীলা মাঝেমধ‍্যেই বাইরে গেলে  তৃষাকে জড়িয়ে ধরে অরিন্দম আদরও করে। কানের লতিতে চুমু খায়। ঘাড়ে,ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ইংরেজি সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মতো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েও থাকে অনেকক্ষণ।

     ফাঁকা ঘরে আজ যেমন দাঁড়িয়েছিল। তেজেন্দ্রনারায়ণ আর সুশীলা শপিং করতে বাইরে গেছেন। তৃষার সরু কোমরে হাত রেখে তাকে নিজের বুকের কাছে টেনে অরিন্দম বলল,"বিয়েটা এবার করে নিলে ভাল হতো না সোনা?"
"তোমার সাথে আমার বিয়েটা তো কবেই হয়ে গেছে। শাঁখা সিঁদুর পরলেই বুঝি বিয়ে? আজকাল ওসব কেউ পরেনা।" তৃষা বলে।
"তোমার বাবা মা যদি তোমার জন‍্য পাত্র দেখে?"
"দেখবে না। আমি ওদের যা বলার বলে দিয়েছি।"
"দেখবে না! কী বলেছ তুমি?"
"একটা মিথ্যে কথা।"
"মিথ‍্যে কথা!"
"হ‍্যাঁ। বলেছি,আমি বিয়ে করব না। গবেষণা শেষ হলে কলেজে চাকরি করব। বিয়ে যে করতেই হবে তার কোনও মানে আছে? ছেলেরা সারাজীবন বাবা মার পাশে থাকতে পারে,মেয়েরা পারবে না কেন? এমনিতেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ওপর থিসিস তৈরি করতে যথেষ্ট চাপে রয়েছি আমি।" বলে চোখ টিপে হাসল তৃষা। মুখে হাসি নিয়েই বলল,"তুমিও তোমার বাবা মাকে তিরিশ বছরের গল্পটা বলে এখন ঝুলিয়ে রাখবে। তিরিশের পর বলবে বত্রিশ। বত্রিশের পর চৌত্রিশ। এভাবে রিনিউ হতে থাকবে আমাদের প্রেম। লাইসেন্স যেরকম হয়। ভালবাসার সম্পর্কের পুর্ননবীকরণ মানেই তো বিয়ে।"
"বেশ বলেছ তো!" মজা পেল অরিন্দম।
"কার মাথা দেখো!"
"সত‍্যি! তবে তোমার গবেষণার বিষয়টিও কিন্তু ভারি সুন্দর। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত!"
"তাই?" হাসল তৃষা। "ভাল। কিন্তু তোমাকে কাছে পাবার প্ল‍্যানটা কেমন বললে না তো?"
মুখে কোনও কথা বলল না অরিন্দম। তৃষাকে আরও ভালভাবে জড়িয়ে ধরল। পাগলের মতো চুম্বন করতে শুরু করল তারপর। তৃষার বাবা মা ফিরতে এখনও আধঘন্টা বাকি।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments