জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/(উৎসব ১৪২৮)/নারায়ণ প্রসাদ জানা

গুচ্ছ কবিতা
নারায়ণ প্রসাদ জানা


ঘাস বিচালি

ঘাড় ঝুঁকিয়ে  খাচ্ছ ঘাস এদিক ওদিক চরে
লেজ নাড়িয়ে পাখার মত করছ হাওয়া বেশ ,
এভাবেই অন্নখুঁটে খাও ঘুরে ঘুরে ।
মাথা খানি উপরে তুলে -
ছাড় যদি ভীষণ আওয়াজ জোর
তখন কিন্তু বুঝবে বিপদ ; --
ঘনিয়ে পেছনে তোমার, প্রশ্ন জাগে
কোথায় পেলে এমন কথার জোর ?
জাবর শুধু কাটতে পার অবসরের ফাঁকে,
যদি কোন মুক্ত ভাবনা 
মাথার মধ্যে ঘূর্ণিতোলে ,
চার দেয়ালে আটক রেখো
বদচিন্তা ওসব উগরে দাও নির্জনে ,
বিবমিষার খবর কেউ জানতে না পারে।
বিরুদ্ধতার ভাষায় যদি
জোয়ারে ভাসাও লেখনী-রাজপথ,
তখন তোমার দুহাতে পড়বে কড়া শিকল ,
পচতে হবে চার দেয়ালের অন্ধকুঠুরিতে।
মাথা নামিয়ে খাচ্ছ ঘাস এদিক ওদিক চরে
ঘরেতে দেব বিচালি অনেক ; -খাও মনের সুখে ।
উপর তলায় কন্ঠছেড়ে ; ভীষণ জোরে 
তোল যদি প্রতিবাদের আওয়াজ
তখন কিন্তু করবে ঝাঁঝরা
আস্ত বুলেট তোমার মগজটা।



সৌরাজ্য

শান্তি দিলে আমায় তুমি রুদ্রাবাসে
জ্বলছে চিতা হাওয়ার টানে পোড়ায় অলিক
হাতের রেখায় উঠেছে ফুটে বিষবৃক্ষ
এক মুখেতে অনেক মুখোশ বিহ্বল মন।

শূন্যতায় ভরেছি বুক সৌরাজ্য
মিথ্যা ভাষণ হৃদয় মাঝে দহন জ্বালা
ভূভুক তুমি লজ্জাহীন পোশাক কোথায়?
শিশুটিকে ভুলিয়ে রাখ খেলার ছলে ।

তোমার কথায় বিশ্বাস রেখে শিখন্ডী হই
তবুও এখন হয়নি আমার বোধোদয়
ঘুণপোকাতে খেয়েছে ঝিকুর শিরদাঁড়া
রাজা তুমি স্তাবকতায় কাটাও কাল।

বুভুক্ষু সব পথের প্রান্তে ভুখা মিছিল
শূন্য থালা ঝনঝনিয়ে পাঁজর কাঁপায়
তোমার এখন যোগনিদ্রা রাজাসনে
ভূভুক তুমি ভেক ধর বহুরূপীর।




মৃগয়া

আফতাব পাশ ফিরতেই তোমার
প্রতিটি নিশুতি মলিনী যুবতী,
তলোয়ারের খাপ থেকে 
বেরিয়ে আসে তীক্ষ্ণ রদন নখর ,
দিনের আলোয় চেনা সে মুখ 
আঁধারে ভীষণ অস্পষ্ট অচেনা ।
বদলে দাও নিয়মের কড়া বাঁধন ,
অনেক বেশি সাবলীল হয়ে ওঠে -
তোমার অস্ত্র সঞ্চালন ।
রাজবেশের ধরাচূড়া ছেড়ে
বেরিয়ে আস সৌনিক রূপে ,
বিধান দাও ধড়ের থেকে মাথা নুইয়ে দেওয়ার।
আনায়ীর তীক্ষ্ণ শরের নিশানায়
 বলাকার ডানার থেকে জ্যোৎস্না ঝরে যায় অবেলায়,
রাতের শিশির কান্না হয়ে রক্তে ভেজায় হরা মাটি।
রাত শেষ হওয়ার আগেই পাকা জুয়াড়ির মত দান ফেল,
উত্তপ্ত তৈলে নিক্ষিপ্ত পাকোয়ানের মত
বাড়তে থাকে তোমার লালসা,
স্বপ্নের ভেতর ঘনায় নীল চোখের মৃত্যু ,
তোমার মৃগয়ায় পরিনত কর ক্রীড়নকে সুনয়নীকে।
যেভাবে আখুভুক খেলা শেষ করে আখুর সাথে
 তুমিও তোমার পাশার দান ফেল সেইভাবে,
দিনের আলোয় ধড়াচূড়া রাজবেশ
গভীর আঁধারে ভূভুক তুমি শ্বাপদ চতুর আহুড়ি।



সীমান্ত

সূর্য নেমে এলো ধীরে ধীরে সীমান্তে
রক্তিম আভায় ভরাট সবুজ শস্য ক্ষেত,
তোমার আঁচলখানি সীমানা পেরিয়ে
দিগন্তহীন নীল আকাশ শামিয়ানা।
ভরে নিয়েছ যত দুঃখ ব্যথা যন্ত্রণার গান গুপীযন্ত্রে,
বুকের মধ্যে ভারী হয়ে ওঠে নীরব নুড়ি পাথরের স্তর।
গোপবালার মত কপোল ভেজা অশ্রু
অন্তঃসলিলা হয়ে মিশে গেলো কালো যমুনার জলে।
কাটিয়ে দিলে পথ চেয়ে অর্ধেক জীবন,
সীমান্ত থেকে ফিরে এলো দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষে
লাশ হয়ে যাওয়া বরূথিনী।



দুর্গতিনাশিনী

যে চিতাতে জ্বলছে আগুন
পুড়ছে শরীর মানুষীর ,
দিওনা ঢেলে শান্তির বারি
নিভিয়োনা ও চিতার আগুন।
ঐ আগুনের ভেতর হোতে
আসুক উঠে রণচণ্ডী
ত্রিশূল হাতে গর্জে উঠে
অসুর নাশুক দুই হাতে ,
এবার ওর দুই হাতে মা
সাজিয়েদে অস্ত্র দশহাতের।
চোখের জল শুকিয়ে খাক্
ঝরুক গরল বারুদ সম
পুড়িয়ে দগ্ধ হোক জঞ্জাল ।
অট্টহাসে ফাটিয়ে বুক
কাঁপিয়ে তোল ভ্যূলোক-দ্যূলোক ,
ত্রিনয়নে জ্বেলেদে এবার
লাঞ্ছনার যত আগুন ,
সে অনলে পুড়িয়ে পাপ 
সোনার বরন হোক এ জগৎ।
মৃদঙ্গতে কাঁপিয়ে ধরা
বিদীর্ণ কর মাটি-পাতাল ,
অসুর গুলো জ্যান্ত ধরে
কবরদে এবার পাতাল ঘরে।


আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments