জ্বলদর্চি

ফ্যারাও/ (শারদ১৪২৮)/অমিতরূপ চক্রবর্তী

ফ্যারাও
অমিতরূপ চক্রবর্তী


ইন্দুর সমস্যাটা ছিল ওর স্বামী পর্নোগ্রাফি দেখে ঠিক অমন ভাবে ইন্দুর সঙ্গে মিলিত হতে চাইত। ইন্দু পদ্ধতিটা শিখতে যে ক’বার পর্নোগ্রাফির দৃশ্যগুলো দেখেছে- অসহ্য লেগেছে। এমন দৃশ্য বেশিক্ষণ দেখা যায় না। যৌনউত্তেজনা নয়, বরং অ্যাতো ওপেন আর অ্যাতো ভালগারিটি যে বেশিক্ষণ দেখা যায় না। অথচ ওর স্বামী ভদ্রলোকটি দিব্যি খেয়েদেয়ে গলা অবধি চাদর টেনে মোবাইলে ঘন্টার পর ঘণ্টা সেসব ছবি নির্বিকারে দেখে যায়। মোবাইলের চলন্ত ছবির আভা মানুষটার মুখে পড়ে। তখন দেখা যায় মানুষটির চওড়া কপাল, পুরু চামড়ার গাল, স্থির দুটো ঠোঁট। বেশ পুরুষালি চৌকো চিবুক। মাথার ঘন স্বাস্হ্যবান চুল। তিনটে ভাঁজ পড়া গলা। ইন্দু পাশ ফিরে ঘুমোনোর চেষ্টা করার ছলে আসলে এইসব দেখে। তার স্বামী মানুষটিকে দেখে। চওড়া কাঁধের শেষে রোমশ বাহু শুরু হওয়া মানুষটিকে দেখে। বুকের চুলে আটকে থাকা মিহি সোনার চেইনটা দেখে। দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে। 
ঘুম ভাঙে যখন ও দেখে ওর স্বামী মানুষটি সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় একটা বাঘের মতো ওর ওপরে এসে দ্রুত হাতে ওকে নিরাবরণ করছে। এমনিতে এখন ইন্দু শুধু অন্তর্বাস ছাড়া আর কিছুই পরে শোয় না। আগে বুটিক প্রিন্টের নাইটি পরে শুত। স্বামীর ইচ্ছেতে নাইটি বিসর্জন দিয়ে এখন শুধু অন্তর্বাস পরে শোয়। 
ঘুম থেকে তুলে স্বামী মানুষটা যখন দ্রুত হাতে ইন্দুকে নগ্ন করতে থাকে, তখন শুয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ইন্দুর। এরপর কী কী ঘটতে থাকবে- তাও ওর মুখস্থ। ইন্দুকে সম্পূর্ণ অনাবৃত করে মানুষটা ওর যোনিতে মুখ দিয়ে লেহন করবে। তারপর উঠে বসে ইন্দুকে দুই ঊরুর মধ্যেখানে ফেলে মাথার পেছনে সজোরে চাপ দিয়ে তার লিঙ্গ লেহনে বাধ্য করবে। তখন কখনো ইন্দুর দম আটকে আসে। জলে ডোবা মানুষের মতো একটু বাতাস নিতে ছটফট করে ওঠে ও। 
তারপর ইন্দুকে উবু করে বীর্যস্খলন ঘটিয়ে মানুষটা ধপ করে বিছানায় নিজেকে ছেড়ে দেবে। ভীষণ দ্রুতবেগে ওঠা-নামা করতে থাকবে মানুষটার কালো লোমে ঢাকা চওড়া বুক। নাভিসমেত সামান্য মেদ আসা পেট। কপালের রেখায় বড় বড় জলদানার মতো ঘাম ফুটে উঠবে। লিঙ্গটা কালো মোজার মতো নেতিয়ে থাকবে জঙ্ঘার কাছে, অসংখ্য রোমের মধ্যে। ইন্দু উঠে যখন বাথরুমে পরিষ্কার হয়ে ফিরে আসবে, তখন দেখবে ওর স্বামী মানুষটি ওই অবস্থাতেই পড়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছে। সে পরিষ্কার হবে সকালে ঘুম ভাঙার পর। অমন নগ্ন অবস্থাতেই ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে, কাঁধে তোয়ালে ফেলে বাথরুমে ঢুকে যাবে। 
তারপর ব্রেকফাস্ট সেরে অফিসে বেরনোর আগে ইন্দুকে চুমু খাবে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলবে ‘নিজের খেয়াল রেখো।‘
মানুষটি বেরনোর আধ ঘণ্টা পরেই বেবি আসবে। এসেই একটা গরম ঝড় তুলে দেবে ঘরে। বাসি কাপড়চোপড়গুলোকে এমনভাবে শানে আছড়াবে যেন ওরা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠবে। সিংকে এমনভাবে বাসন মাজবে মনে হবে বাসনগুলো এবার টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। ক্লিনার দিয়ে প্রায় একটা ঘূর্ণির মতো পাক খেয়ে খেয়ে সব ঘর মুছে ধপ করে বসে সোফার গায়ে হেলান দিয়ে বলবে ‘ওফ! বৌদি এবার চা দাও।‘
বেবির আবার চয়েস আছে। দাদাবাবুর বৌদির অন্তর্বাস ধোবে না। প্রথমদিন এসেই বলেছিল ‘ও আমি পারব না বৌদি। তোমাদের জিনিস তোমরাই ধোবে। এক বাড়িতে ওসব ধুতে গিয়ে হাতে রক্ত লেগে গিয়েছিল! মাগো!’ বলে মুখ ঘেন্নায় বেঁকিয়ে ফেলে বেবি। 
ইন্দু চা দিতে দিতে বলেছিল ‘সবাই কি একরকম হয় নাকি?
-‘নাগো বৌদি, এই ব্যাপারে কাউকে বিশ্বাস নেই। তখন তো হুঁশ থাকে না কারো।‘
ইন্দুর তখন মনে হয়েছিল বেবির সস্তা পাউডার মাখা গালে ঠাস ঠাস দুটো চড় মারে।
পরে ভেবেছিল ইন্দু বেবি কিছু খারাপও বলেনি। ওই সময়ে ইন্দুর না হোক তার স্বামী মানুষটির সত্যিই কোনো হুঁশ থাকে না। একবার তো বেডকভার, গায়ের চাদর সব নোংরা করে ফেলল। তখন দারুণ শীত। ওই শীতে অত রাতে সেসব বেডকভার, গায়ের চাদর ধুতে হয়েছিল ইন্দুকে। ওগুলো মেশিনে ঢোকাতে মন চায়নি।
এইটুকু বাদ দিলে ইন্দুর স্বামী মানুষটাকে নিয়ে সত্যি কোনো অসুবিধে নেই। প্রতি সপ্তাহের শেষে নিজেদের গাড়ি করে দূরে কোথাও কাটিয়ে আসা, দামি রেস্তোরাঁয় খাওয়া বা মলগুলোয় গিয়ে খুচরো কিছু কেনাকাটা করতে করতে সময়টা একটা প্রজাপতির মতোই যেন উড়ে যায়। সুখী, সুন্দর মানুষের গমগমানিটা অনেকদিন মনকে উষ্ণ করে রাখে। মাসে একদিন তারা সিনেমা দেখে। বেশিরভাগই ইংরেজি সিনেমা। হয়তো ধুন্ধুমার মার-কাটারির নয়তো ভীষণ উচ্চমার্গের। যেমন একটা নৌকোয় দু’জন মুণ্ডিতমস্তক মানুষ কোথাও ভেসে চলেছে। ভেসে চলেছে তো চলেইছে। কথা বলছে খুব টুকরো টুকরো। পর্দার নীচে কোন বিদেশি ভাষায় সেটার আবার ইন্টরপ্রিটেশনও দেখা যাচ্ছে। তার স্বামী অপলক চোখে তখন পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকে। হাতের প্যাকেটে খাবার মুখে তুলতেও ভুলে যায়। ইন্দু তখন মাথা একটু ঘুরিয়ে দেখে চারপাশে চেয়ারে বসা মমির মতো সব মানুষ। এই প্রকাণ্ড, প্রায় আন্দজ করা যায় না এমন ঘরটায় আলো-আঁধারি। গমগম করা সংলাপ বা আবহ সংগীতের শব্দ। প্রকাণ্ড ঘরটাও যেন ওই নৌকোর মতো ভীষণ মন্থর গতিতে কোথাও ভেসে চলেছে। 
ইন্দুকে প্রথম স্টিল পর্নোগ্রাফির ছবি দেখিয়েছিল পরশমণি। ঠিক ইন্দুকে নয়, ইন্দুদের। পরশমণি কাজ করত একটা বেসরকারি অফিসে। সুতপাও ওই অফিসে কাজ করত। সুতপার সূত্র ধরেই ইন্দুর সঙ্গে পরশমণির পরিচয়। নিজেকে নিয়ে খুব উচ্চাশা ছিল ছেলেটার। ইন্দু, সুতপা পরশমণি কখনো কখনো ছুটিতে শহরেই কোথাও বেড়াতে যেত। কাফেতে কফি বা অন্যকিছুও খেত। নদীর ঘাটে সন্ধেয় আড্ডা দিত। কী যে দৌড়ঝাপ করত ছেলেটা। কখনো চুপ করে বসতোই না। সব জায়গাতেই একটা হিরোগিরি দেখানো ছিল ওর বাতিক। একবার দৌড়ে রাস্তার ওপারে ফুট থেকে বাদাম না আইসক্রিম কিনে আনার সময় একটা প্রাইভেট কারের নীচে তো চলেই গিয়েছিল ছেলেটা। গাড়িতে ছিল কয়েকটা ছেলে। ভীষণ মদের গন্ধ আসছিল ওদের গা থেকে। পরশমণিকে তো সার্টের কলার ধরে শূন্যে উঠিয়েই ফেলেছিল, সুতপা ইন্দু ছুটে গিয়ে ব্যাপারটাকে সামাল দেয়। ইন্দু একটা হলুদ সালোয়ার কামিজ পরেছিল সেদিন। ধস্তাধস্তি, বাদানুবাদের সময়েই হয়তো ওড়নাটা বুকের ওপর থেকে সরে গিয়ে থাকবে। ডিপ কাটে তখন স্পষ্ট আন্দাজ করা যাচ্ছে ওর পরিণত স্তনজোড়া। ডাই করা চুলের নেশায় বুঁদ ছেলেটি সেদিকে চেয়ে বলেছিল ‘ওয়াও বেবি, ইউ আর সো হট!’
গাড়িটা যখন চলে যায় পরশমণি ডিভাইডারের ঘাসে কোমর চেপে ধরে কাতরাচ্ছে। সুতপা আর ইন্দুর সে কি হাসি তখন। হাসিতে মুক্তোর মতো ছড়িয়ে পড়তে পড়তে সুতপা বলেছিল ‘তাহলে আমাদের হিরো, জেমস বন্ড! শেষে এই অবস্থা হল তোর। টম অ্যান্ড জেরির টম বনে গেলি? চুঃ চুঃ চুঃ!’
এমনই একদিন দিনের বেলা যখন ওরা একটা রঙিন ছাতার নীচে বসে কফি আর টোস্ট খাচ্ছে, পরশমণি হঠাৎ টেবিলে মুখ এগিয়ে চাপা গলায় বলল ‘তোরা কতটা অ্যাডল্ট হয়েছিস, আজ তার টেস্ট নেব।‘
সুতপা আর ইন্দু যখন একটু অবাক হয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে, পরশমণি বলল ‘তোদের এখন বিয়ে দিলে তিন তিনটে ইস্যু হয়ে যাবে। এখন তোদের আমি যে জিনিসটা দেখাব, সেটা দেখে তোরা যদি লজ্জায় চক্ষু মুদিস, তাহলে তোদের থেকে ন্যাকা এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। বাই দ্য বাই, আমি তোদের এও বলে রাখছি তোদের কারুর প্রতি আমার কোনো সেক্সুয়াল আর্জ নেই। ইট জাস্ট এ ফান অথবা তোদের ম্যাচিওরিটির পরীক্ষা নেওয়া বলতে পারিস।‘
এই কথা বলে ও ওর ব্যাগ থেকে বের করেছিল একটা ইংরেজি ম্যাগাজিন। ওপরে খবরের কাগজের মলাট লাগানো। তা দেখে কেউ বুঝতে পারবে না সেটা কীসের বই। আশপাশ একবার দেখে পরশমণি হাঁ করে মেলে ধরল বইটার একটা পাতা টেবিলের ওপর কাপ-গ্লাসের আড়ালে। সেখানে তখন দুটি মানুষের নির্বস্ত্র বুনো রমণের দৃশ্য। 
সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় সুতপা ইন্দু দু’জনেই মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়েছিল। তা দেখে পরশমণি বলেছিল ‘ওরে আমার বার্বিডলের দল, পৃথিবীর যেখানেই যাও, যদি লাইফ লিড করো এ দৃশ্যে তোমাদের অ্যাক্ট করতেই হবে। এখানে আলো আছে, ক্যামেরা আছে। তোমাদের ঘরে থাকবে ঘুটঘুটে অন্ধকার কিম্বা নাইটল্যাম্প।‘
সুতপা অন্যদিকে তাকিয়ে তাকিয়েই ধমক দিয়ে বলেছিল ‘তুই এটা বন্ধ করবি। কেউ দেখলে কী ভাববে? ছিঃ!’
পরশমণি বলেছিল ‘কী ভাববে আর, দু’জন সোমথ্থ রাধিকাকে রতিক্রিয়া শেখাচ্ছি। জীবনের অনিবার্য সত্যদর্শন করাচ্ছি।‘
-‘এই তুই তোর মুখটা থামা আর বইটা বন্ধ কর। নাহলে আমরা কিন্তু উঠে যাব বললাম।‘
-‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোট সে তরী/ আমারই সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।‘ ‘আমারই সোনার ধানে’ বলার সময় ম্যাগাজিনটা রোল করে পাকিয়ে সুতপাকে নাচিয়ে নাচিয়ে দেখাচ্ছিল পরশমণি। 
অন্যদিকে তাকিয়ে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে মুখ ফিরিয়েছিল সুতপা। ‘তুই এই ম্যাগাজিন দিয়ে কী করিস বলতো?’
মুখ ভেংচে পরশমণি বলেছিল ‘কী করিস বলতো! নেকু, জানো না? এই বই দিয়ে ছেলেরা কী করে জান না। হস্তমৈথুন বোঝো? ভাল ভাষায় যাকে বলে মাস্টারবেট- তাই করে। বাথরুমের নালায়, টয়লেটের পিটে আমাদের ছেলেদের কত সন্তান বাবা-বাবা বলে চিৎকার করছে জানিস?’
-‘তুই করিস?’
-‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট করি। কে করে না।‘
-‘ছিঃ!’
-‘মাস্টারবেটের কত অ্যাডভান্টেজ জানিস? তোদের হাতে-পায়ে ধরতে হয় না। চোখ বুজলে ক্লিওপেট্রা থেকে শুরু করে সবার সঙ্গেই সেক্স করা যায় আর লায়াবিলিটিও নেই। অন্যমনস্ক হওয়া যায়। জ্বালা-যন্ত্রণা ভোলা যায়।‘
-‘ছিঃ!’
-‘ছি কোরো না ডলপুতুল। মাস্টারবেটের কত ইতিহাস আছে জান? প্রাচীন মিশরে একটা উৎসব হত, যেখানে ফ্যারাও ও অন্যান্য গন্যিমান্যিরা মাস্টারবেট করে নীলনদের জলে তাদের সিমেন ফেলতেন।‘
-‘এই তুই চুপ করবি?’
-‘কেন? এটা ট্রু। কোনো ইতিহাসের অধ্যাপককে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।‘
-‘থাক, তোর আর ট্রু শোনাতে হবে না।‘
-‘এই যে ইন্দু, কী শান্ত মেয়েটি, মুখে রা নেই- ওরও কি নিস্তার আছে? এই প্লে-তে তো ওকেও নামতে হবে একদিন।‘
-‘তুই কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছিস!’ সুতপার স্বর রাগত শোনাল। 
খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল পরশমণিও। বুঝতে পারছিল ইন্দুকে জড়িয়ে কথাটা এভাবে বলা ঠিক হয়নি। ইন্দু ওদের বন্ধু হলেও একটু দূরত্বে। সুতপার বন্ধু। সুতপাও যেন খানিকটা অপ্রস্তুত। তবে মুহূর্তটা সামলে নিয়ে হেসে ইন্দুকে বলেছিল ‘এই হাঁদার কথায় কিছু মনে করিস না। ওর কোনো সেন্সই নেই, কোথায় কী বলতে হয়।‘
মুখে না প্রকাশ করলেও সুতপা আর পরশমণির কথা চালাচালিতে বেশ কৌতুক বোধ করছিল ইন্দু। এই ক’দিনে পরশমণির সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণাও জন্মে গেছে ওর। ওর এইসব কথায় আহত বা অসম্মান বোধ করার কোনো অর্থই নেই। এইরকমই ছেলেটা। জোকার টাইপ। 
ইন্দু ওদের অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতে একটু হেসে বলেছিল ‘না না, আমি কিছু মনে করিনি। পরশমণিবাবু কত খোঁজ-খবর রাখেন, তাই ভেবে একটু অবাক হচ্ছিলাম শুধু।‘
ইন্দুর কথায় খানিকটা স্তব্ধ চোখে পরশমণির দিকে তারপর দুম করে বোমা ফাটার মতো হাসিতে ফেটে পড়েছিল সুতপা। ব্যাপারটা ধরার পর পরশমণিও যোগ দিয়েছিল সুতপার হাসিতে। ইন্দুর ভাল লাগছিল। পরশমণি যাই হোক, মনটা পরিষ্কার। 
ধীরে ধীরে দু’জন বন্ধুর মধ্যে একটু একটু করে ঢুকে পড়ছিল ইন্দু। পরশমণি কখনো-সখনো ইন্দুকে ফোনও করত। খোঁজখবর নিত। কিন্তু ওর যে স্বাভাবিক আচরণ, সেটা ফোনে কথা বলার সময় গুটিয়ে রাখত। তাতে একটু খারাপ লাগত ইন্দুর। ও চাইত পরশমণি ওর সঙ্গেও ওর সহজাত ভঙ্গিতে কথা বলুক। যেমন সুতপার সঙ্গে বলে। সৌজন্য, ভাল-মন্দের কোনো পরোয়াই নেই। 
ইন্দুরা যে শহরে থাকত, সেখানে শহরের একদিকে নদীবাঁধ পেরলে একটা খুব সুন্দর নারকেল বনের মতো ছিল। কর্পোরেশনের কোনো কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে সেটা তৈরি করা হয়েছিল। বেশ ছড়ান জায়গা নিয়ে তৈরি নারকেল বনটার তিনদিকের সীমানা কোমর সমান বরফি আকৃতির জাল দিয়ে ঘেরা ছিল। বিকেলের দিকে বা ছুটির দুপুরে ইয়াং ছেলেমেয়েদের দঙ্গল ওখানে গিয়ে হইহই, দৌড়ঝাপ করত। বনের একদিকটা ঢালু হতে হতে মিশে গেছে নদীর সঙ্গে। শীতকালে ভিড় হত আরো বেশি। ইয়াংস্টারের দল নারকেল গাছের গায়ে নানা রঙের বেলুন লাগিয়ে বন্ধুদের জন্মদিনও পালন করত। আর ফটাস ফটাস করে বেলুনগুলোকে ফাটিয়ে দিত। 
একদিন সুতপা আর পরশমণিদের সঙ্গে ইন্দুও সেখানে বেড়াতে গিয়েছিল। পরশমণির বাইকে। ডাকাবুকো ছেলেটা সেদিন সুতপা আর ইন্দুকে নিয়েই রাইড করেছিল। সুতপা বলেছিল ‘বাইকে বসতে হবে, দু’দিকে পা দিয়ে। জিন্স পরে আসবি।‘
জিন্স দু-একটা থাকলেও ইন্দু পরত না বিশেষ। মায়ের খুব একটা পছন্দ ছিল না মেয়েদের জিন্স পরা। অবশ্য কোনোদিন বাধাও দেননি। মায়ের ব্যাপারটা টের পেয়ে ইন্দুই জিন্স পরত না। বাবার এসব নিয়ে কোনো বক্তব্যই ছিল না। তিনি অফিস আর খবর নিয়েই বুঁদ হয়ে থাকতেন। সেদিন অবশ্য ইন্দুকে জিন্স পরতে হয়েছিল। 
পরতে গিয়েও বিপদ। টেনেটুনেও জিন্সকে ঊরু দিয়ে কোমরে তোলা যাচ্ছে না। এই স্কাই ব্লু রঙের জিন্স ওকে উপহার দিয়েছিল চেন্নাইয়ে থাকা ওর দূর সম্পর্কের এক দিদি। তখন ট্রায়াল দিয়ে দেখেছিল ইন্দু। একদম ফিট। হঠাৎ সালোয়ার কামিজ ছেড়ে এমন স্কিনফিট জিন্স পরে ট্রায়ালরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কেমন লজ্জাও হচ্ছিল। ওপরে কামিজ তুলে ফিটিংস দেখার সময় কোমর থেকে পায়ের দিকটা কেমন ছেলেদের মতো মনে হচ্ছিল। 

কোনোরকমে নাভির নীচে জিন্সটা তুলে বোতাম আঁটার পর জিপার টানতে গিয়েও সমস্যা। চেনে প্যান্টি আটকে যাচ্ছে। এই দু’বছরে বেশ মুটিয়ে গেছে তাহলে ও। কোনোরকমে প্যান্টির ওপর দিয়ে জিপার টেনে তোলার পর ইন্দুর ভয় হতে লাগল পাছে বাইকে বসতে গিয়ে প্যান্টের সেলাই ফেটে না যায়। তাহলে যে কী ভয়ংকর কেলেঙ্কারি হবে। নিজেকে সহজ করতে ঘরের মধ্যে কয়েক পাক হেঁটে বেড়াল ইন্দু। খাটে বসল, উঠল। চেয়ারের ওপর এক পা তুলে জুলিয়াস সিজারের ভঙ্গিতে দাঁড়াল। না, খুব একটা অস্বাছন্দ্য বোধ হচ্ছে না যেন। 
সুতপাদের সামনে আসতেই পরশমণি ওর সহজাত ভঙ্গিতে সানগ্লাস নাকের ওপর টেনে নামিয়ে চোখ ঝুলিয়ে বলল ‘এ আমি কী দেখছি রে? রাধা থেকে একেবারে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি! মাই গড!’
সুতপা ওকে থাবড়া মেরে বলল ‘এইজন্যেই মেয়েরা দশভূজা। নে, স্টার্ট দে। ইন্দু আমার পেছনে চেপেচুপে উঠে আয়। ফুটরেস্টে আমার পায়ের পাশে পা রাখবি। আর মণি, সাবধান তিন তিনটে জীবন কিন্তু তোর হাতে। খুব সাবধান। বাইক চালাতে চালাতে একদম বকবক করবি না।‘
-‘আমি স্পিচলেস। যা দেখলাম!’
সুতপা আবারো ওর পিঠে থাবড়া মেরে বলল ‘একদম অসভ্যতামি নয়।‘
শেষ সেপ্টেম্বরের পড়তি দুপুর তখন। নারকেল বনটায় কেউ নেই। নদীর ওপার থেকে ঢলতে থাকা সূর্যের লাল-কমলায় মেশা আলো নারকেল পাতার ফাঁক দিয়ে এসে ঝিলিক দিচ্ছিল। হাওয়ায় শীতের চোরা টান। কেউ নেই বলে পাখির ডাক জোরে জোরে শোনা যাচ্ছিল। দূরে নদীর ঝিকমিক করা জলরেখা। পৃথিবীর আশ্চর্য প্রশান্তি সেদিন যেন উড়ে এসেছিল নারকেল বনটায়। 
বসার কাঠের স্ক্রু আঁটা চেয়ারে সুতপারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কেমন নিস্তব্ধ হয়ে বসেছিল। পরশমণিও বাইকের সিটে এক পা নামিয়ে বসে আনমনা। অবশ্য নীরবতা ভাঙল ও-ই।
-‘তোর দামাস্কাসে তো এখুনি আমেরিকা বোমা ফেলবে।‘
-‘মানে?’
-‘কোনো উদ্ধত দেশ আমেরিকা পছন্দ করে না।‘
ব্যাপারটা বুঝতে ইন্দুদের খানিকটা সময় লেগেছিল। বোঝার পরেই সুতপা উঠে পরশমণিকে মারতে গেল। পরশমণিও দৌড়ে নারকেল গাছের ফাঁক গলে কোথায় যেন পালিয়ে গেল। ব্যাপারটা ছিল সুতপার হলুদ গেঞ্জি কাপড়ের টপটা। ঠিক যেখনে সুতপার ঢাউস স্তন দুটো, তার ওপরেই কালো প্রিন্টে লেখা দামাস্কাস। এটা নজর করেই পরশমণির ওই উক্তি। 
সুতপা ইন্দুকে বলেছিল ‘পাজিটা এই রকমই রে! কিচ্ছু মুখে আটকায় না। কোনোকিছু ভাবেও না। আমি তো নজরই করিনি।‘
ইন্দু হাসতে হাসতে বলেছিল ‘নজর করলেও এই ভাবনা কি তোর মাথায় আসত?’
-‘ঠিকই, উজবুকের মাথাতেই উজবুকের ভাবনা আসে।‘
-‘তবে ও বেশ মজার, প্রাণোচ্ছল।‘
-‘এটাই ওর প্লাস পয়েন্ট জানিস। মা-বাবা নেই। কাকাদের সংসারে থেকে মানুষ। তবু ওর সঙ্গে মিশলে, কথা বললে মনে হবে না কোনো দুঃখ আছে ওর। আর ওর সামনে তুই মনখারাপ করে থাকতেও পারবি না। থাকতে দেবে না।‘
-‘এমন মানুষ তো বিরল।‘
-‘হবে হয়তো। তবে কী ব্যাপার রে? তোর গলায় যেন কেমন সুর। প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস নাকি ওর? খরবদার! ওর প্রেমে পড়িস না। ও প্রেম করার ছেলেই নয়।‘
২.
বেশ কিছুদিন পরশমণির একটা ছবি ইন্দুর বইয়ে রাখা ছিল। একটা ফুল ছবি। পরশমণি একটা বাদামি ফাইবারের চেয়ার ঘুরিয়ে ওটার ব্যাকরেস্টে দুই হাত আড়াআড়ি রেখে থুতনি ঠেকিয়ে সামনে তাকিয়ে আছে। এই ছবিটা দেখিয়ে ও বলত ‘হলিউডের কোনো ডিরেক্টার আমার এই ছবিটা দেখলে প্লে বয় হিরো হিসেবে আমাকে নিয়ে নিত।‘
-‘কেন, দেশীয় কোনো ডিরেক্টার নয় কেন?’ সুতপা জিজ্ঞেস করত।
-‘ও বাবা, আমাকে তাহলে কাস্টিং কাউচের পাল্লায় পড়তে হবে। দেখা যাবে কার না কার বউ এসে…’
ছবিটা ছিল ইন্দুর কাছে। ইন্দুর বিয়ের আগ পর্যন্তও। ততদিনে সুতপা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে মারা গেছে। পরশমণি খুব কম কখনো-সখনো ফোন করত। ওর সেই উচ্ছ্বাস, দুঃখকে ভাসিয়ে দেওয়া প্রাণবন্ত আবেগ আর নেই। সুতপা না থাকায় পরশমণির সঙ্গে দেখা হওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সম্পর্কটুকু টিকে ছিল ওই ফোনের সূত্রে। ইন্দুর কখনো খারাপ লাগত পরশমণির কেন ওর সঙ্গে দেখা করার স্পৃহা একেবারেই নেই?
সুতপা মারা যাবার ছয় মাসের মধ্যে ইন্দুর বিয়েটাও ঠিক হল অতর্কিতে। ইন্দুর শ্বশুরমশাই এক বিয়েবাড়িতে ইন্দুকে দেখে পছন্দ করেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দুদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠান। এক ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে উত্তরবঙ্গে। ছেলে কাজ করে একটা এক্সপোর্ট-ইম্পোর্টের কোম্পানিতে। উঁচু পোস্ট। লোভনীয় বেতন। বাবার তৈরি বিশাল বাড়ি। ইন্দুর বাবা-মা সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। 
এরমধ্যেই একদিন পরশমণির ফোন। ‘কনগ্র্যাজুলেশন।‘
ইন্দুর সারা বুকে তখন তোলপাড় করা অভিমান। সাড়া না দিয়ে ও চুপ করেছিল।
-‘ইন্দু তুমি আছ না নেই?’
অস্ফুটভাবে ইন্দু বলেছিল ‘আছি।‘
-‘তোমার সঙ্গে আমার একদিন দেখা করা ভীষণ প্রয়োজন। তবে তোমাকে বাইরে কোথাও আসতে বলব না। কারণ তুমি এখন প্রায় এনগেজড। তোমার বাড়িতেই এসে তোমার সঙ্গে যদি একবার দেখা করি? কোনো সমস্যা হবে?’
-‘না।‘
-‘তাহলে আসছে শনিবার আসি? দুপুরে আসব, খাওয়া-দাওয়াও করব। মাসিমাকে বলে রেখো।‘
-‘আর?’
-‘আর কিছু নয়। আপাতত এই। শনিবার দেখা হলে বাকিটা।‘
রিসিভারটা রেখে বিছানায় গিয়ে আছড়ে পড়েছিল ইন্দু। তার সমস্ত দেহ নিংড়ে বা এইসব দেওয়াল, ঘরবাড়ি বা যতদূর দেখা যায় সব দৃশ্য, আকাশ-বাতাস বা হয়তো জগৎ নিংড়ে একটা আকুল কান্না ইন্দুকে চিড়েফুঁড়ে বেরিয়ে শান্ত হতে চাইছিল। ঘুমিয়ে পড়েছিল কখন ইন্দু। ঘুম ভেঙে দেখল বিকেল হয়ে গেছে। বালিশের ওয়াড় তার চোখের জলে গাঢ় হয়ে ভিজেছে। অস্পষ্ট জল শুষে নেবার দাগ আছে তাতে।  
শনিবার ইন্দু নিজেকে লোহার মতো করে রেখেছিল। শনিবারের আগের দিনগুলোয় তার-ই মহড়া নিয়েছে। কিছুতেই পরশমণির সামনে অ্যাতোটুকুও দুর্বলতা প্রকাশ করবে না, সে ভেতরে যাই ঘটুক। সামান্য ফ্লোরাল প্রিন্টের একটা সালোয়ার কামিজ আর ওড়নায় নিজেকে সহজ করে রেখেছিল। 
সেই শনিবারে গলানো সোনার মতো রোদ উঠেছে। পরশমণি এল দুপুর দু’টোর দিকে। দরজা খুলতেই হেলমেট পরা পরশমণিকে দেখে চমকে গিয়েছিল ইন্দু। ইচ্ছে করেই ও মাথা থেকে হেলমেটটা খোলেনি। ইন্দুকে ভয় পাইয়ে দেওয়াই বোধহয় ওর উদ্দ্যেশ্য ছিল। 
ঘরে ঢুকে তবে মাথা থেকে হেলমেটা খুলল পরশমণি। ইন্দুকে দেখে হাসল। ইন্দু লক্ষ্য করল পরশমণির চেহারায় ফিকে কালি পড়েছে যেন। 
-‘কেমন আছ?’
-‘ভাল।‘
-‘ভাল তো থাকতেই হবে। নতুন জীবনে পা দিচ্ছ। ডেডবডি হয়ে যাবে নাকি?
চোখের মণির পেছনে গরম জলের সূঁচ ফুটেছিল ইন্দুর। কিন্তু ও ভাঙবে না আজ পরশমণির সামনে। নিজেকে অচঞ্চল রেখে বলল ‘চা, কফি চলবে তো?’
-‘না না, সোজা ভাতের থালা। প্রচুর খিদে পেয়েছে। মেসোমশাই, মাসিমা কোথায়?’
-‘ডাকছি।‘
মা-বাবাকে পরশমণির কথা আগেই বলে রেখেছিল ইন্দু। ওঁদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল পরশমণি। মা-বাবা দু’জনেই পরশমণির মাথায় হাত ছোঁয়ালেন। বাবা পরশমণিকে ওদের বাড়ি পরিবার সম্পর্কে কিছু কিছু জিজ্ঞেস করলেন। সেসবের খুব সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে গেল পরশমণি। ইন্দু একটা আলাদা সিঙ্গল কৌচে বসে পরশমণিকে লক্ষ্য করছিল। বার কয়েক পরশমণির সঙ্গে দৃষ্টি-সংযোগও হল ইন্দুর। মা বললেন ‘অনেক বেলা হয়েছে, চল খেয়ে নেবে। বেশি কিছু আর করতে পারিনি। যা করেছি, তাই দিয়েই খাবে কষ্ট করে।‘
পরশমণি বাধ্য ছেলের মতো কোনো কথা না বলে ঘাড় হেলাল। 
অনেক কিছুরই আয়োজন করেছিলেন ইন্দুর মা। খাবার টেবিলে বসে একমনে খেয়ে গেল পরশমণি। মাঝে মাঝে মা-বাবার সঙ্গে টুকিটাকি কিছু কথা। ইন্দুর সঙ্গে একটাও না। ভাল করে খেতেও পারছিল না ইন্দু। খাবার মুখে দিতে হাঁ করতেই যেন মনে হচ্ছিল এবার আর সামলে পারবে না নিজেকে। কেঁদে ফেলবে। 
খাওয়াদাওয়ার পর ইন্দুর মা বললেন ‘এবার তোমরা দুই বন্ধুতে মিলে মন খুলে গল্প কর। ইন্দু তুই ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা। তোমাকে আমাদের খুব ভাল লেগেছে বাবা।‘ বলে ইন্দুর মা হাত দিয়ে পরশমণির চিকুক ছুঁলেন।
ইন্দুর ঘরে আসার সময় পরশমণি ওর ব্যাগটা নিয়ে এল। ইন্দুর খাট সামনেই পড়ে, তাতে না বসে ও বসল দেওয়ালের কাছে একটা চেয়ারে। তারপর চারপাশ দেখে বলল ‘এই তোমার কুঞ্জবন তাহলে।‘  
ইন্দু পরশমণির দিকে দেখছিল না। দেখার মতো মনের জোরও ছিল না। ইন্দু দেখছিল জানালা দিয়ে বাইরের গাছপালা, বাগান। 
-‘তোমার কাছে আমার একটা জিনিস আছে ইন্দু, আমি ওটা নিতে এসেছি আর তোমার তো বিয়ে, তাই সেজন্য একটা অ্যাডভান্স গিফ্ট। দ্যাখো তোমার পছন্দ হয় কিনা।‘ 
সমূলে ভেসে যাবার আগে পরশমণির দিকে ঘুরে তাকাল ইন্দু। দেখল পরশমণির ঠোঁট কথা বলছে ঠিকই কিন্তু ওর চোখের মণি জলে গলে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। ব্যাগ থেকে পরশমণি বের করে এনেছে একটা ছোট্ট টেডি। স্কাই ব্লু রঙের। ঠিক যেমন ছিল নারকেল বনে বেড়াতে যাবার দিন ইন্দুর জিন্সটি। ওই অবস্থায়ই পরশমণি নাকের জল টেনে বলতে লাগল  ‘নাও, এবার শ্রীরাধিকা তোমাকে এবার জীবনের সত্যদর্শন করতে হবে। মনে আছে আমি দেখিয়েছিলাম। আহা, তোমার কথা ভেবে হয়তো তোমার স্বামী মানুষটি ঘুমোতে পারে না। কে জানে সেও টয়লেটে ঢুকে……….’
আর পরশমণিকে কথা বলতে দিল না ইন্দু। এক হ্যাঁচকায় ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল সিঁড়ি দিয়ে ছাদের ঘরটার পেছনে। যেখানে গাঢ় ছায়া পড়ে আছে। তখন তপ্ত দুপুর। গাছপালায় মাথায় পাতলা হাওয়ার টান। ছাদের ঘরটার দেয়ালে পরশমণিকে দাঁড় করিয়ে জিপার নামিয়ে টেনে বের করল ওর কোমল পুরুষাঙ্গটা। তারপর নিজের হাতেই ওটাকে নাড়াতে থাকল ইন্দু, যতক্ষণ না পরশমণির চোখের মণি গলা জল ওর লিঙ্গ দিয়ে ঘন দুধের মতো ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এসে ইন্দুর ওড়না কামিজ নোংরা করে দিল।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments