জ্বলদর্চি

পরম চেতনার দলিল : অরুণ দাসের ম্যানিফেস্টো/ঋত্বিক ত্রিপাঠী

পরম চেতনার দলিল : অরুণ দাসের ম্যানিফেস্টো

ঋত্বিক ত্রিপাঠী 

সম্প্রতি অমিত্রাক্ষর প্রকাশনা থেকে  প্রকাশ পেয়েছে পরম চেতনার ম্যানিফেস্টো। নির্মাণ করেছেন কবি অরুণ দাস। জীবন ও জগতের আছে বাহ্যিক জগৎ।  অন্তর্জগতের অনন্ত বস্তুতে আছে মনের প্রকৃত স্বরূপ। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে গেলে চাই বাহ্যজগতের দ্বন্দ্বময় রূপকে এড়ানো সম্ভব হলে। এই লক্ষ্যে অরুণ চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর  এই বইতে।

  অরুণ জানিয়েছেন,  উচ্চতর চেতনায় শব্দের মধ্যেকার 'ব্রহ্ম' স্বরূপকে আবিষ্কার করা যায়। পরম চেতনায় এই স্বরূপের সঙ্গে আত্মিক সংযোগ ঘটিয়ে পরমাত্মিক আনন্দ লাভ করা যায়।
  

   কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব!  লেখক সে লক্ষ্যও স্থির করে দিয়েছেন। তাঁর লেখার অংশবিশেষ -- "বস্তু ও বিশ্বের প্রকৃত জ্ঞানই উপলব্ধির পরম সত্য। এর সঙ্গে প্রয়োজন সব ইন্দ্রিয়ের উপর কবির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক জ্ঞান আহরণের ক্ষমতার বাইরে যে সকল জ্ঞানতত্ত্ব আছে অসম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তাকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। ইন্দ্রিয়ের উপর কবির নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ হলে জ্ঞানের উপলব্ধিও যথার্থ হয়। এই জ্ঞানের যথার্থ প্রয়োগের দ্বারা কবি তাঁর অনুভবকে কবিতায় পূর্ণাঙ্গভাবে ধরে রাখতে পারেন। উচ্চতর চেতনা কবির প্রভৃত আত্মিক উন্নতি ঘটায়। কিন্তু ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ না হলে পরমচেতনার পারিমার্থিক জ্ঞান তাঁর কাছে অস্পষ্ট হয়ে পড়ে। পরমচেতনার পূর্ণ উপলব্ধি তাঁর দ্বারা সম্ভব হয় না।"


   পরম চেতনা জন্ম নিলে জড় ও জীবের মধ্যেকার অন্তর্নিহিত গুণকে অনুভব করা যায়। মূলত লেখক অরুণ তাঁর এই বইতে বারবার কবির নিরপেক্ষতার কথা তুলে ধরতে চেয়েছেন। তা আসবে শুধুমাত্র চেতনের মাধ্যমে নয়, চাই পরম চেতনাও। তবেই যোগী থেকে মহাযোগী হওয়া সম্ভব। পরম চেতনায় পৌঁছাতে লেখক নানা পরামর্শ ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন। দিয়েছেন যুক্তি। 

  বস্তুত লেখক অরুণ দাস নিজে একজন সার্থক কবি। তাঁর কবিতায় থাকে নানা পরীক্ষা। থাকে জীবন ও তার সৌন্দর্যকে ধরার চেষ্টা। চরম সত্য বলে কিছু হয় না। তবে চরম, পরম সত্যে পৌঁছাতে চাই অন্তর্লীন জগতের যাত্রা। সেই যাত্রাপথের যাত্রী অরুণ আমাদের মতো পাঠকেও পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন তাঁর এই বইতে। 

  বলতে দ্বিধা নেই, তাঁর প্রচেষ্টা পূর্ণমাত্রায় সফল। যাঁরা কবিতার রহস্যময়তার মধ্যে আনন্দ পেতে চান, তাঁদের কাছে এই বই সংরক্ষণযোগ্য।

   উল্লেখ্য,  উত্তর আধুনিক ও অতিচেতনা - দুই আন্দোলন-ধারা পরবর্তী সময় তথা বর্তমান সময়ে কবিতা আন্দোলনের নতুন দিক নির্দেশ করবে-- অরুণ দাসের পরম চেতনার ম্যানিফেস্টো।

  এই ম্যানিফেস্টোই জেড প্রজন্মের পাঠককের কাছে অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে এ সময়ের কবিতার গভীরতা চিনতে।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments