জ্বলদর্চি

শুধুমাত্র বেঁচে আছি/গৌতম বাড়ই

শুধুমাত্র বেঁচে আছি
গৌতম বাড়ই


সভ্যতাকে অবজ্ঞা করতে নেই 
সভ্যতার মহেঞ্জোদারো মাটির বুকেও চাপা থাকে 

ফেলে এসেছি সময় ফেলে এসেছি অনটন  
যা বলি সেটা তো ছেঁদোকথা 
প্রায়ঃশই সবাই বলি 
যে ভালোলাগা গ্রামের তার পোয়াটুকু লাগলে 
শহরে নগরে দরকার কী! 

অথচ 

সভ্যতার প্রথম পাঠটি ছিল 
অবিরত বৃক্ষছেদন
বসতি থেকে বসতি 
গ্রাম থেকে শহর থেকে নগর 
আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ স্বপ্নগুলো দিয়ে 
গুদামঘর বানিয়েছি
যেখানে রক্তের বোতলগুলো বন্দী থাকে থরেথরে
বিশুদ্ধ বাতাসের সিলিন্ডার 

ধরুন স্বপ্নের ডেবিট ক্রেডিট হচ্ছে 
অথবা লাভ- ক্ষতি 
অথবা সাম্যাবস্থার যাচাই 

আমার স্বপ্নগুলো দেখেছি ছকে ফেলে
সত্যি হলে কিছু অপূরণীয় ক্ষতি হত
স্বপ্নের যতই প্রজাপতি উড়ুক আর 
হরিণের অরণ্যে মায়াবী হারিয়ে যাক 

এখানে বিষাদ আর মায়াস্বপ্নের স্থান নেই 
এখানে বুকের ওঠাপড়া ধুপধাপ নেই 

কিছুটা পরখ করে দেখেছি 
পঞ্চাশটিরও বেশি পাতাঝরা হেমন্ত শেষে 
আমার তিন চতুর্থাংশ কংক্রীট লেপন হয়েছে
মাঝে-মাঝে কেদারবদরী কিংবা সিকিমের তালে 
খানিকটা লেপন ধুয়ে আসি 
পুরী গেলে যেমন জগন্নাথপ্রভুর পাণ্ডারা পিছু ধরে 
আমার পেছনেও থাকে এক মহানগর 

মৃতেরও মৃত্যু হয় বারবার ছারখার হয় চারধার 
তবুও শেষ হাসিটুকু শুকিয়ে থাকে ঠোঁটে 
ধানকাটা মাঠে গোড়াটুকু দাঁত বের করে চেয়ে থাকে
আমোদের পরে প্রমোদকাননের শূন্যতা
এ বড় ব্যথার যাত্রাপালা 

মহানগরের মৃত্যুরখাদে যত ইঁট জড়ো হয় 
ভূগর্ভের মাটির ব্যথা 
কোথাও খাদের ভরাটে আবার কোথাও খাদ 
শতাব্দীর শেষে সব গ্রাম হারিয়ে যাবে 
হয়ত কারও কারও বুকে বেদনাও হয় 
নগরের বাইপাসে ধন্বন্তরী চিকিৎসা প্রচুর 
স্বাস্থ্যসাথী বুকপকেটে আটকা থাকে 
দৃশ্য একই চরিত্রগুলো পাল্টে যায় 


আমরা অনটন ফেলে এসেছি 
এখানে ধূমধাম করে বিয়ের উদযাপন হয় 
আর আবার 
এখানে ধুমধাড়াক্কা বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় 
খাওয়ার আগে স্টার্টার খাই 
মনেই রাখতে পারিনা কত যে খাওয়া না খাওয়া !
খবর আসে ভোজের গন্ধ মিটতে না মিটতেই 
এই যা ---
দাশের ছেলে আর ঘোষের মেয়ের বিয়েটা টিকলো না।
রিটার্ন গিফটা রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল 

নাক চোবাচ্ছো খর্ব সভ্যতা !
ধর্ম আফিম খায় হুক্কাবারের ঘনঘটায় 
তোমার তিমির আমার তিমির মিলে 
জাহান্নামে যায় দূরের চাঁদটা


তারপরেও কিছু ভালোবাসা থাকে 
তারপরেও কিছু ধার করা থাকে 
যার তিলে তিলে এক প্যান্ডেমিক মৃত্যু গড়ে যাই 
অনুভব করেছি বলেই বলছি 
যার ত্রিসীমানায় কখনও কোন বিপদ এসে দাঁড়ায়নি
সে মৃত্যুর কারিগর হতে চায় বড় 
যে ভালোবেসেছিল তার জোনাকিওড়া মিটিমিটি 
দূর থেকে অন্ধকারে চোখে পড়ে 

একজন ক্ষয়িষ্ণু পুরুষ হতে 
একজন্ম স্রেফ একজন্মেই যায় হয়ে 
একজন নারী শীতের শীর্ণকায়া নদী 
এক একটি গ্রাম মরে গেলে সভ্যতার যেমন নগর 
তেমনি বুঝি নর- নারীর মহেঞ্জোদারো 

সভ্যতা আ গলে লাগ যা 
সভ্যতার অবজ্ঞা করতে নেই


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments