জ্বলদর্চি

বিজ্ঞান-সাধিকা জার্মান কেমিসিস্ট ড. ইডা এভা ট্যাকে-নোডাক ― ইতিহাসে অবহেলিত এক নারী /পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা

বিজ্ঞানের অন্তরালে বিজ্ঞানী ।। পর্ব ― ৪৪

বিজ্ঞান-সাধিকা জার্মান কেমিসিস্ট ড. ইডা এভা ট্যাকে-নোডাক ― ইতিহাসে অবহেলিত এক নারী 

পূর্ণচন্দ্র ভূঞ্যা


ভুল! মস্ত বড় ভুল। হ্যাঁ, মস্ত বড় ভুল করে বসলেন এনরিকো ফার্মি (১৯০১―১৯৫৪)। 'পোপ অব ফিজিক্স'। সত্যিকারের সবজান্তা। সেজন্য কলিসিয়াম ছাড়া রোমের আরও একটা দ্রষ্টব্য বিষয় অবশ্যই তিনি। তাঁকে যে কোনও প্রশ্ন দেওয়া হোক না কেন, অবধারিতভাবে তিনি তার সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে দেবেন। অসাধারণ প্রতিভা। তা, ফিজিক্সের সেই পোপ কিনা ভুল করে ফেললেন! ব্যাপারটা কী? কোথায় ভুল করেছেন এনরিকো ফার্মি?

  মাদাম কুরি'র কন্যা শ্রীমতি আইরিন কুরি আর জামাতা ফ্রেডরিক জোলিও আলফা পারটিক্যালের আঘাতে পরমাণুর প্রাথমিক নিদ্রা ভাঙিয়েছেন শুনে ফার্মি মনস্থির করলেন নব-আবিষ্কৃত নিউট্রন পারটিক্যাল দিয়ে সংঘর্ষ ঘটিয়ে পরমাণুর অন্তর বিদীর্ণ করা যায় কি-না পরীক্ষা করে দেখবেন। যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। অনেকগুলো মৌল পদার্থ নিয়ে পর পর পরীক্ষাকার্য চালালেন ল্যাবরেটরিতে। প্রথম আটটি পরীক্ষায় রেজাল্ট শূন্য, আশানুরূপ ফল মিলল না। নবম পরীক্ষাটি ছিল মৌল পদার্থ ফ্লুওরিন নিয়ে। সে-পরীক্ষায় মিলল অভূতপূর্ব সাফল্য। চকিতে গাইগার কাউন্টারে যন্ত্রের কাঁটা দুলে উঠল। গাইগার কাউন্টার যন্ত্রে অদৃশ্য রেডিও-অ্যাক্টিভিটি ধরা পড়ে। কাঁটা দুলে ওঠার অর্থ ― নিউট্রন দিয়ে প্রচণ্ড আঘাতে ফ্লুওরিন পরমাণু বিচূর্ণ হয়ে পড়েছে ও অন্যান্য মৌল পদার্থের আইসোটোপ জন্ম দিয়েছে। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল। বাধ সাধল ইউরেনিয়াম-এ এসে। সবচেয়ে ভারী মৌল পদার্থ ইউরেনিয়াম পরমাণুকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করে ফার্মি'র ধারণা জন্মাল― তাঁর বীক্ষণাগারে ইউরেনিয়াম হয়তোবা কোনও ট্রান্স-ইউরেনিয়াম কিংবা ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল পদার্থের জন্ম দিয়েছে; যা তখনকার সময়ে প্রাপ্ত জ্ঞাত বিরানব্বইটি মৌলের মধ্যে নেই।
   
  আর সেখানেই বিরাট ভুল করে বসলেন ফার্মি। পরীক্ষালব্ধ ফলের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে অসমর্থ হলেন তিনি। সেটা ১৯৩৪ সালের ঘটনা। শেষ পর্যন্ত ফার্মি'র দাবি টেকেনি। আসলে নতুন কোনও ধাতুর জন্ম হয়নি সেদিন। বরং বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছিল। সে-বিশেষ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনার কথা প্রথম শুনিয়েছিলেন এক জার্মান দম্পতি। ওয়ালটার নোডাক (১৮৯৩―১৯৬০) আর ইডা নোডাক। ফ্রাউ ইডা নোডাক একজন অদ্ভুত মহিলা-রসায়নবিদ। তিনি বলেছিলেন―
'এনরিকো ফার্মি নতুন কোনও মৌল পদার্থ আবিষ্কার করেননি। হয়তো তিনি ইউরেনিয়াম পরমাণুর কেন্দ্রস্থল নিউক্লিয়াসটিকে ভেঙে দু'টুকরো করে ফেলেছেন। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, পরমাণু বোমা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ধাপে পৌঁছে গেছেন তিনি। আর সে-ধাপটি হল 'নিউক্লিয়ার ফিশন'। নিউক্লিয়াসের ভাঙন। এ কথা বলে বোমা ফাটালেন শ্রীমতী নোডাক। কিন্তু, নাহ! সেদিন কেউ কর্ণপাত করেনি তাঁর কথায়। ফার্মি নিজে তো নয়ই, এমনকি কিংবদন্তি জার্মান সায়েন্টিস্ট অটো হান (১৮৭৯―১৯৬৮) কিংবা ইংল্যান্ডের রাদারফোর্ড (১৮৭১―১৯৩৭)-ও বিশ্বাস করেনি নোডাক দম্পতির ব্যাখ্যা। অথচ, এই ঘটনার পরে চার বছর পেরিয়ে গেছে। ১৯৩৮ সালের গ্রীষ্মে ফ্রিৎজ স্ট্রাসম্যান (১৯০২―১৯৮০)-কে সঙ্গে নিয়ে বৈজ্ঞানিক অটো হান 'নিউক্লিয়ার ফিশন' আবিষ্কার করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিলেন। পুরস্কার স্বরূপ নোবেল প্রাইজ জিতে নিলেন প্রৌঢ় বৈজ্ঞানিক অটো হান, ১৯৪৪ সালে। 

  অথচ, শ্রীমতি ইডা নোডাক-এর কথা শুনলে চার বছর আগেই নিউক্লিয়াসের ভাঙন সম্পর্কে অবহিত হতে পারতেন পণ্ডিতবর্গ। বিজ্ঞান আরও এগিয়ে যেত। কিন্তু, অদৃষ্টের কী পরিহাস! অজান্তে সর্বপ্রথম নিউক্লিয়াস বিভাজনের সংবাদ গোচরে আনলেন তিনি, আর কৃতিত্ব নিয়ে গেল অন্য কেউ!
   
  কিন্তু, কে এই ইডা নোডাক? কী তাঁর পরিচয়, যে কিনা সারাটা জীবন খ্যাতির অন্তরালে দিন কাটালেন?

  বিশ শতকের গোড়ায় স্বতন্ত্র মহিলা বৈজ্ঞানিকের অপ্রতুলতা ছিল দেখার মতো। স্বল্প সংখ্যক মহিলা পদার্থবিদ চোখে পড়লেও মহিলা রসায়নবিদ! হাতে গোনা দু-একজনের অস্তিত্ব নজরে আসে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় তাঁদের অবস্থান এতটাই নগন্য ছিল যে বিশ শতকের আগে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজে বেড়াতে হত তাঁদের। পড়াশুনার ন্যূনতম অধিকার টুকু ছিল না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক লেখাপড়া যৎসামান্য জুটলেও উচ্চশিক্ষা লাভের আশা তো গুড়ে বালি! প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কটুক্তি, গঞ্জনা ছিল নিত্য সঙ্গী। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে শিক্ষা অর্জন করতে হত তাঁদের। পৃথিবীর সর্বত্র একই চিত্র। একই অভিজ্ঞতা। তথাকথিত উন্নত দেশগুলোতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। জার্মান দেশেও একই চিত্র, একই পটভূমি। এ হেন পরিমণ্ডলে ইডা এভা ট্যাকে-এর জন্ম উত্তর জার্মানির রাইন অঞ্চলের ল্যাকহসেন মফস্বল এলাকায়, ১৮৯৬ সালের পঁচিশে ফেব্রুয়ারি। ছোটবেলা থেকে তাঁর ব্যতিক্রমী চিন্তা ভাবনা― কোনও ভাবেই সে শিক্ষক হতে নারাজ। গবেষণা হোক কিংবা ইন্ডাস্ট্রি― জার্মানির সব জায়গায় তখন পণ্ডিত পদার্থবিদদের রমরমা। রসায়নবিজ্ঞানী খুব একটা চোখে পড়ে না। কিশোরী বয়স থেকে সেজন্য তার বাসনা― একজন সফল রসায়নবিদ হতে চায় সে। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটা তাঁর বরাবরের অভ্যাস। কন্যার এ হেন ডিসিশনের সঙ্গে একমত তাঁর বাবা। নিম্ন রাইন অঞ্চলে তাঁর বাবার একটি বার্নিশ ফ্যাক্টরি রয়েছে। 

  বার্লিনের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেল কুমারী ইডা। সেটা ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ। মাত্র বছর ছয়েক আগে, ১৯০৯ সালে, কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে দেওয়া হয় মহিলা বিদ্যার্থীদের জন্য। ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানের ক্লাসে তখন পঁচাশি জন স্টুডেন্ট। তার ভেতর মাত্র ন'জন কেমিস্ট্রি পড়তে সম্মত হল। ন'জনের মধ্যে একজন― কিশোরী ইডা। তিন বছর পর, ১৯১৮ সালে রসায়ন ও মেটালর্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক ডিগ্রি পায় সে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে গোটা জার্মানিতে মাত্র ৩% শিক্ষিত মহিলা কেমিস্ট্রি নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে। তারপর শিক্ষার গ্রাফটা তরতর করে উর্দ্ধমুখে বাড়তে থাকে। যুদ্ধ চলাকালীন সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫%। গ্র্যাজুয়েশন করার পর বার্লিন টারবাইন ফ্যাক্টরির কেমিস্ট্রি ল্যাবে চাকুরি গ্রহণ করে কুমারী ইডা। সেই সঙ্গে ১৯২১-এ বার্লিনের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট সম্পূর্ণ করে। ১৯২২-এ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে আংশিক সময়ের গবেষণা চালিয়ে যেতে মনস্থির করে। এসময় বার্লিন ইউনিভার্সিটিতে আসে ওয়ালটার নোডাক নামের এক তরুণ গবেষক। ইউনিভার্সিটির ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগে গবেষণায় যোগ দেয় সে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক ওয়ালদার নার্নস্ট-এর অধীনে। তরুণ গবেষকের কাজ ছিল পর্যায়সারণীর নিরুদ্দিষ্ট মৌল পদার্থের খোঁজ করা। ওদিকে, চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে পুরোপুরি গবেষণায় ডুবে যাওয়া ঠিক করে ইডা। এসময় থেকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে ওয়ালটার নোডাক-এর সহযোগী গবেষক হিসাবে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ঘটে। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করলেও তাঁর পারিশ্রমিক― 'অবৈতনিক'। ইতিমধ্যে গবেষণার সূত্র ধরে ওয়ালটার নোডাক-এর সঙ্গে তাঁর পূর্ব পরিচিতি ছিল। পরিচিতি থেকে প্রেম। ভালোলাগার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুজনের মধ্যে। রিসার্চের পাশাপাশি চুটিয়ে প্রেম করেছেন দুজনে।
      
  
১৯২৬ সালের ঘটনা। কুমারী ইডা ট্যাকে'র ডক্টরেট আগেই সম্পূর্ণ হয়েছে। পার্টনার হিসাবে নিযুক্ত হয়ে পূর্ণ উদ্যমে দুজনের গবেষণার কাজ চলছে। এসময়ে পবিত্র বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন তাঁরা দুজন। গতবছর, ১৯২৫ সালে ইডা, তাঁর প্রেমিক স্বামী ওয়ালটার নোডাক আর অটো বার্গ একটি প্রবন্ধ ছাপলেন। আর্টিকেলে তিনজনে ঘোষণা করলেন― দুটি নতুন মৌল ― 'রেনিয়াম' (৭৫) আর 'মাসুরিয়াম' (৪৩) ― আবিষ্কার করে ফেলেছেন তাঁরা। প্রথম মৌলের নামকরণ 'রেনিয়াম' করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক ইডা ট্যাকে নোডাক-এর প্রিয় জন্মভিটার সম্মানে। দ্বিতীয় মৌল 'মাসুরিয়াম' নামকরণের পেছনে জড়িয়ে রয়েছে সায়েন্টিস্ট ওয়ালটার নোডাক-এর জন্মস্থানের সম্মান। শুধু আর্টিকেল ছেপে চুপচাপ বসে থাকলে তো হবে না! প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। হাতে-গরম প্রমাণ চাই। সেদিকে তাকিয়ে রইলেন পণ্ডিতগণ।
      
  শুরু হল কঠোর অধ্যাবসায়। রেনিয়াম আর মাসুরিয়াম মৌল পদার্থ দুটি খুঁজে পেতে ল্যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটে। সাফল্য এল ১৯২৮ সালের দোরগোড়ায়। ৬০০ কেজি (১৩০০ আউন্স) মলিবডেনাইট পদার্থ থেকে এক গ্রাম (০.০৪ আউন্স) রেনিয়াম বের করতে সমর্থ হলেন তাঁরা। সমস্যা বাধল মাসুরিয়াম মৌলকে ঘিরে। কারণ তাঁরা মাসুরিয়াম মৌল পদার্থ তন্য তন্য খুঁজেও পাননি। এ হেন অসফলতার কালো ভুত শ্রীমতি ইডা নোডাক-এর পিছু ছাড়ল না। পরবর্তীকালে তিনি যা-কিছু আবিষ্কার করেছেন, সব কিছুই পূর্বের ব্যর্থতার ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেল। রেস ছড়িয়ে পড়ল আগামী আবিষ্কারের ক্ষেত্রে। তাঁর কাজের মূল্যায়ন করা হল পূর্বের ব্যর্থতার কথা মাথায় রেখে। ফলে তাঁর গ্রহণ যোগ্যতা এত তলানিতে ঠেকেছিল বিজ্ঞানের অভিজাত শ্রেণীর কাছে যে, পণ্ডিতগণের মানসিকতার পরিবর্তন করা গেল না― এমন করুণ অবস্থা! ১৯৩৪ সালে কঠিন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে হাতে-নাতে প্রমাণ পেয়ে যান শ্রীমতি ইডা নোডাক। যখন তিনি এনরিকো ফার্মি'র পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের বিরোধিতা করে একটি আর্টিকেল ছাপলেন নিজের বক্তব্যের সমর্থনে; কেউ বিশ্বাস করল না। অনেক পরে, ১৯৩৮ সালে এসে তাঁর বক্তব্য স্বীকৃত হয়েছিল, সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর।
       
  বাস্তব বড় কঠিন! ততধিক কঠিন প্রতি মূহুর্তে নিজের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে টিকে থাকা। তারপরেও মেলে না ন্যূনতম সম্মান, অধিকার। অধ্যাপক স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৩৫-এ শ্রীমতী নোডাক চলে গেলেন ইউনিভার্সিটি অব ফ্রেইবুর্গ-এ, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসাবে। জীবন সায়াহ্ন পর্যন্ত তিনি গবেষক হয়ে কাটিয়ে দেন সেখানে। ১৯৪২-এ নাৎসি অধ্যুষিত ফরাসি দেশের স্ট্রাসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন। ১৯৪৪ সালে স্ট্রাসবার্গ হিটলারের বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়ে ফরাসি উপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত হলে'পর শ্রীমতী নোডাক জার্মানি ফিরে এলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে গেলেন তুর্কি। সেখানে কয়েক বছর কাটিয়ে ১৯৫৬ সালে তিনি পুনরায় জার্মানি ফিরলেন। জার্মানির হামবুর্গের স্টেট রিসার্চ ইন্সট্যুট-এ জিও-কেমিস্ট্রি বিভাগে কাজে যোগ দিলেন। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে অবসর গ্রহণ করলেন। 

  শেষমেশ, ১৯৭৮ সালের চব্বিশে সেপ্টেম্বর চিরশান্তির দেশে পাড়ি দিলেন এ হেন বৈজ্ঞানিক। তাঁর মৃত্যুর পরে, গতবছর ২০২০ সালে তাঁর বিদেহী আত্মার সম্মানার্থে 'এ মেমোরিয়াল মেডেল অব দি ডিসকোভারি' বের করে ইন্সট্যুট অব সেফটি ইন টেকনোলজি অ্যান্ড রিসার্চ (ISTR)। মেডেলটির নকশা এঁকেছেন বিখ্যাত রাশিয়ান ইগর পেত্রভ।
      

  বার তিনেক তাঁর নাম কেমিস্ট্রি বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। প্রিয় স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম মনোনয়ন করা হয়েছিল বার চারেক― যথাক্রমে ১৯৩২, ১৯৩৩, ১৯৩৫ ও ১৯৩৭ সালে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি! কখনও নোবেল পুরস্কারের চূড়ান্ত তালিকায় একবারও ঠাঁই পায়নি তাঁর নাম। তবে নোবেল পুরস্কার না-পেলেও স্বীকৃতি এসেছিল অনেক দেরিতে। তাঁর কাজের মূল্যায়ন করতে বড্ড দেরি করে ফেলেছিল তথাকথিত এলিট গ্রুপের অনেক পণ্ডিত মানুষজন। সেজন্য, রেনিয়াম আর মাসুরিয়াম (যার পরবর্তীতে নাম হয় 'টেকনেসিয়াম'― আবিষ্কর্তা এমিলিও সেগ্রে (১৯০৫―১৯৮৯) ও কার্লো পেরিয়ার (১৮৮৬―১৯৪৮)― সাল ১৯৩৭) আবিষ্কার পাদপ্রদীপের তলায় সম্মানের সলতে টুকু টিমটিম করে জ্বালিয়ে রেখেছিল। ফল― মৌল পদার্থ রেনিয়াম আবিষ্কারের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৩১ সালে সম্মাননা প্রদর্শন করল জার্মান কেমিক্যাল সোসাইটি। মর্যাদাপূর্ণ 'লিবিগ মেডেল' পেলেন নোডাক দম্পতি। ১৯৩৪ সালে সুইডিশ কেমিক্যাল সোসাইটি থেকে 'শিলি মেডেল' (Scheele Medal)। ওই বছর মৌল পদার্থ রেনিয়াম-এর উপরে জার্মান পেটেন্ট পেয়েছিলেন তাঁরা।

তথ্যসূত্র :
● বিশ্বাসঘাতক ― নারায়ণ সান্যাল
● Ida Tacke ― Human Technopole
● A tale of oblivion : Ida Noddack and the 'Universal Abundance' of Matter
● Ida NODDACK ― History of Scientific Women
● Ida Noddack, German Chemist ― Britannica
● Ida Noddack ― ওইকিপেদিয়া

আরও পড়ুন 

Post a Comment

0 Comments