জ্বলদর্চি

নাস্তিকের ধর্মাধর্ম -- পর্ব-(৩০)/সন্দীপ কাঞ্জিলাল

নাস্তিকের ধর্মাধর্ম -- পর্ব-(৩০)

সন্দীপ কাঞ্জিলাল

ধর্ম ও দর্শন

কান্টের সময় থেকেই ইউরোপে বিশেষত ফ্রান্স ও জার্মানিতে বিশেষ বিশেষ দার্শনিক মতবাদের উপর ভিত্তি করে নানারকম দার্শনিক মতবাদের প্রচলন হয় যেমন, Anglo American philosophy, phenomenology, Existentialism,Deconstruction ইত্যাদি। এই মতবাদের প্রবক্তা হলেন যথাক্রমে Martin Heidegger, Jean Paul Sartre, Maurice Merteau-ponty,Michel Foucault এবং Jacques Derrida.উনবিংশ শতাব্দের শেষ পর্ব থেকে মধ্য পর্ব পর্যন্ত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর সময়ে ভাব-ভাবনা-চিন্তার জগতে বিরাট পরিবর্তন দেখা দিলে সব মানুষ বিষয়েই পুরনোকে সরিয়ে দিয়ে নব নব অনুসন্ধানের জগতে প্রবেশ করতে লাগলো। শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান সংস্কৃতি চর্চায় মানুষ নব উদ্যমে এগিয়ে যেতে থাকল। 

  ভিক্টোরীয় নৈতিকতার যুগের অবসানে এল আধুনিকতাবাদ (Modernism) এবং পথিকৃৎগণ হলেন T.S.Eliot,James Joyce,Gertrude Stein এবং Virginia Woolf. উজ্জ্বল হয়ে উঠল ইউরোপের সাহিত্যাকাশ। সঙ্গীত স্রষ্টাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন  Arnold Schoenberg,Igor Stravinsky,Anton Webern। নৃত্যক্ষেত্রে এলেন Emily Jaques-Delcroze, Rudolf Laban, Lois Fuller।চিত্রশিল্পী Edouard Manet বদলে দিলেন রং-রূপ ও ভাস্কর্যের দুনিয়া। জন্ম নিল Impressionism,Post-Impressionism,Cubism,Futurism,Expressionism,Constructivism,De Still এবং Abstract Expressionism স্থাপত্যশিল্পে আনল বিপুল পরিবর্তন। সব বিষয়েই একটা আন্তর্জাতিকতার ছোঁয়া লাগল নির্মাণের নানা আকৃতি ও কৌশলে। বিজ্ঞানের সুফল, প্রযুক্তির সাফল্য মানুষের জীবন ধারণের ক্ষেত্রেও আনল বিপুল পরিবর্তন। সৃজনশীল মানুষ নানাদিকে নানা ক্ষেত্রে তাদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ও বিন্যাস ঘটে যে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন ধর্মভাবনার ক্ষেত্রেও তার প্রভাব কম পড়ল না। 

  সৌন্দর্যতত্ত্বের বিকাশে শিল্পীদের মধ্যে যারা এই সময়ে ভাস্বর হয়ে ওঠেন, তারা হলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, স্যান্ড্রা বত্তিচেল্লি, রাসেন টিটিয়ান মিকেলেঞ্জেলো। ফ্লোরেন্স রেনেসাঁসের পীঠস্থান হয়ে ওঠে। এই সময়ে প্রসিদ্ধিলাভ করেন মানবতন্ত্রী ডাচ পুরোহিত ডেলি ভেরিয়াস ইরেসমাস (খ্রিঃ ১৪৬৯-১৫৩৬)। খ্রিঃ ষোলো শতকের এই অসাধারণ শিক্ষাবিদ প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে সারা ইউরোপ ভ্রমণ করেন। মিশন জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ এই মনীষী সেন্ট টমাস মুর ওজন কলেটের সান্নিধ্যে আসেন। ইতালির মানবতন্ত্রীদের দ্বারা উদ্বোধিত হয়ে তিনি অতীতের সমগ্র মানবসভ্যতার দিকগুলিকে ইতিহাসের আলোকে বিচার করে চার্চের অবিংসবাদী প্রভাব থেকে মানুষকে মুক্ত করতে নানা সংস্কারের পথ বেছে নেন, যার প্রভাব পড়ে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মাবলম্বীদের জীবনে। এই দুই সম্প্রদায়ের খ্রীষ্টানগণ নতুনভাবে প্রাণিত হন; ধর্মক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনে এগিয়ে আসেন ও অনুগামীদের প্রবুদ্ধ করেন। ইতালিতে পেত্রার্ক (খ্রিঃ ১৩০৪-১৩৭৪),জিওভান্নি বোকাচ্চিও (খ্রিঃ ১৩১৩-১৩৭৫),Francia,Francesco org. Francesco di Marco di Giacomo Raibolini (ফ্রান্সিয়া, ফ্রান্সেস্কো, মুল ফ্রান্সেস্কো ডি মার্কো ডি জিয়াকোমো রাইবোলিনি-খ্রিঃ ১৪৫০-১৫১৭/১৮),ইংল্যান্ডে শেক্সপিয়ার (খ্রিঃ ১৫৬৪-১৬১৬) মানবজীবনের সূক্ষ্মতম অনুভূতিগুলি, মানব সম্পর্কের জটিল মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলি তুলে ধরেন। 

  ইউরোপীয় সাহিত্যের পেত্রার্কের অবদান হল, তিনি দীর্ঘস্থায়ী অতীত জীবন চর্চার ক্ষেত্রগুলি থেকে বৌদ্ধিক রসদ আহরণ করেন এবং বর্তমান জীবনচর্চার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক গুলিকে পর্যবেক্ষণ করে রেনেসাঁসের পথ প্রশস্ত করেন। তিনি চার্চের সঙ্গে তার ন্যূনতম সম্পর্কের মধ্যে থেকে পরিব্রাজকের জীবন যাপন করেন এবং বহু মনীষীর সংস্পর্শে ও সম্পর্কে আসেন। তিনি নানা ক্ষেত্র থেকে উৎকৃষ্ট ও মূল্যবান বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত পান্ডুলিপি সংগ্রহ করে কালোত্তীর্ণ সংস্কৃতির সঙ্গে খ্রিস্টধর্মের উপদেশগুলির সমন্বয় ঘটাবার জন্য প্রভূত উদ্যোগ নেন। প্যারিসের বিখ্যাত চিন্তাবিদ কবি সাহিত্যিক বোকাচ্চিও জিয়োভান্নি চরম দারিদ্র্য ভোগ করেও মানবতন্ত্রী জীবন গড়ার কাজে পেত্রার্কের সহযোগী হন। খ্রিস্টীয় চোদ্দ  শতাব্দ থেকে সতেরো শতাব্দ কালসীমায় রেনেসাঁস যুগের বহু যুগন্ধর ও প্রতিভাবান মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রাখার ফলে সারা বিশ্বজুড়ে তার প্রভাব বিস্তার লাভ করে। 
এই যুগান্তকারী পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দার্শনিক কাসিবার (খ্রিঃ ১৮৭৪-১৯৪৫) অধ্যাপক বুর্কহার্স্ট ও অধ্যাপক ফার্ডিনান্ড শেভিলের মতামতগুলি প্রণিধানযোগ্য।

  নাৎসি আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সুইডেন ও পরে আমেরিকা চলে যান। কান্টের দর্শনকে ভিত্তি করে তিনি মানুষকে বিচার করেছিলেন। মানুষই পারে পুরাণ কথার উপস্থাপনার ভেতর দিয়ে তার ভাব ও ভাবনাকে ভাষায় প্রকাশ করতে এবং বিজ্ঞানের আলোকে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলিকে কাজে লাগাতে যা বিশেষ করে নিজেকে ও বিশ্ব প্রকৃতিকে জানতে সাহায্য করে।

  রেনেসাঁস সম্পর্কে তার বিচার হল,- "The man of the Renaissance possesses difinite characteristic properties which clearly distinguish him from 'the man of the middle ages' He is characterised by his joy in the senses,his turning to nature,his roots in the world,his self-containedness for the world of form, his individualism,his paganism,his amoralism." বুর্কহার্স্ট "রেনেসাঁসীয় মানবতন্ত্রকে যেভাবে আত্মস্থ করেছিলেন, তার নির্যাস তুলে ধরলেন এবং বললেন, এই মানবতন্ত্র " Was in fact pagan and become more and more so as its sphere widened in the fifteenth century."

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments