জ্বলদর্চি

শহুরে কিসসা ৭/রাজ অধিকারী

শহুরে কিসসা ৭

রাজ অধিকারী


এ' কিসসা কোনও শহরের নয়
এ' সমস্ত মায়া কোনও বেকার যুবকের কথা নয়
শুধু বছরের পর বছর
যাদের গলায় মৃতদেহ আটকে আছে
যারা রাস্তার আলোকে হলুদ থেকে লাল হতে দেখেছে
যারা হাসপাতালে গেছে রুগী দেখতে
গেছে বান্ধবীর মায়ের জন্যে
হাতে নিয়ে ফল ও হরলিক্স
যারা রুগী দেখতে দেখতে একদিন
বিরক্ত হয়ে
সবকিছু পালাতে
নিজের গলায় সুঁই গেঁথে দিয়েছিল
তারপর আবার গেছে হাসপাতালে
নিজেকে মৃতদেহ হয়ে দেখতে
কতটা আরাম করেছিল তারা 
যাদের জিভ নীল হয়ে গে'ছিল
কথা বলতে না পেরে
সেই
প্রত্যেকটা মানুষ পথ্য হিসেবে 
গিলে নিতে পারে আমাকে
আমি অধিকার দিলাম
হজম করে নিতে পারে এই অঙ্গার

কিন্তু এই কিসসা তাদের জন্যও নয়
তাদের কথাও আমি বলছিনা
যারা জেনেছিল 
এই পেচ্ছাপ ও ফুলফোঁটা পৃথিবী
রোজ ঘুরে যাচ্ছে
নিজের মেরুদণ্ডকে সাক্ষী রেখে
এ' পাথরের গোলক ঘুরে যাচ্ছে রোজ
রোজ সেই বেকারের মতো
তবু যারা বলেছিল
এক টুকরো জমি পেলে
অধিকার পেলে
ঘুরিয়ে দেবে এই পৃথিবী
যেখানে তারাই সবথেকে স্থির
তারা উঁচু কোনও পাহাড় চিরে দাঁড়াবে মেঘে
তারা সেই ওপর থেকে দেখবে আমাদের ছুটে বেড়াতে
তারা ততক্ষণ ঘাড় থেকে মাথা ঘোরাবে আমাদের
যতক্ষণ না প্রতিটা মানুষ পৃথিবী হয়ে ওঠে

এই শহরে
এক বুক আগুন নিয়ে ঘুরেছে যারা
তারা কিছু করবে ভেবেছিল
যারা কিছু করেছে রোজ এই শহরে
তারা শুধু আগুন লিখেছিল

এই আঙুল তুলে কথা বলা
এভাবে মানুষকে বলা তুমি নালার কীট
তুমি বারুদের থেকেও বারুদ গুঁড়ো
তুমি ধর্ষিতার বুকে একথোকা জবা
তুমি এইসব যারা-দের কথা
তুমি এই সমস্ত তারা-দের কথা
তোমার ধানক্ষেত ছিঁড়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য
তোমার দুই স্তনের মাঝে রেলট্র্যাক বিছিয়ে দেওয়া
হাঁ করে থাকা মুখে 
স্টীম ইঞ্জিনের ইতিহাস
আলজিভ থেকে অন্ত্রের পথে বিদ্যুৎ
যোনিদ্বার থেকে ছিটকে আসা জারজ শহর
তার পাশে পাশে থাইয়ে লেগে থাকা
আলকাতরার ফোস্কা ও জীবনের মতো ধূসর পিচ
হাঁটুতে গোটা সভ্যতার ব্যাথা
কোমরে শুধু আমাদের হাত
হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে তোমায়
হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে 
হাত যাচ্ছে ছুঁয়ে তোমাকে

তোমার শরীরে এখনও দালালের বাস আছে বলে
এখনও নোংরা লাল পিক জমাট বেঁধে আছে বলে
নালা থেকে উঠে আসে মানুষ
কালো কালো হাত পা
গোটা শরীরে শুধু লক্ষ লক্ষ সিরিঞ্জ
তারা উঠে আসে এখনও
দিনের আলো দেখে
রাতে দেখে মারোয়ারী নক্সাল
হাইওয়ে থেকে উঠে যাওয়া গাড়ির সামনে দাঁড়ায়
মাথা ফাটিয়ে দেখায় ভেতরে কাঠগোলাপ
জামাপ্যান্ট খুলে দেখায় সোনাগাছি খালপাড়া
তারা চুরি করে দেখে সব সত্য
তারা কোনওদিন বড়ো চুরি করতে পারে না
তারা নালা থেকে তুলে আনে সন্তান
নীল চোখ, সোনালী চুল, ধবধবে সেই নালার সন্তান
তাকে স্কুলে পাঠায়
রচনা লেখায়
জীবনের লক্ষ্য
প্রিয় মহাপুরুষ
প্রিয় ঋতু
কেন গরু হবে মা
কেন বাবা হবে রবীন্দ্রনাথ

ধর্মাবতার
এদের বড়ো করবেন না
নীতিশিক্ষার বাঁশ গুঁজে দেবেন না এদের নালায়
এদের পর্নফিল্ম বানাতে দিন
আমার চোখে ভরে দিক এরা সূঁচ
আমার হাত-পা সেলাই করে ফেলে দিক সার্কাসে
বা আমাকে ল্যাংটো করে চাবুক মারুক
বলুক নপুংসক হয়ে মুজরা করতে
আমার চোখের পাতা কেটে নিক
যাতে নিজেকে পুড়তে দেখে বন্ধ না করি চোখ
এদেরকে কালাজাদু শিখতে দিন ধর্মাবতার
তুকতাক করে আমাকে জুড়ে দিক
আমার প্রতিটা অঙ্গের সাথে আমার প্রতিটা অঙ্গ জুড়ে দিক
আমাকে মহাশূন্যে ছুড়ে বলুক
চাঁদ থেকে বামুন মেরে আসতে
আমার টুকরো টুকরো করে
চোখের সামনে রেখে দিক আমার পিঠ
তারপর বলুক
ভিক্ষা করে আয়
করে আয় নক্সাল
বল ভিয়েতনাম
বল রাম
বল আজান
বল কংগ্রেস
বল মাফলার
বল তুই অঞ্জলি দিবি না আর
তুই নিজেকে নাস্তিক বলবি
তুই দীক্ষা নিবি
করবি আহ্নিক সন্ধ্যায়
তুই ভিখারির বাচ্চার বুকে লাথি মারবি
সমাজসেবায় নোবেল আনবি তুই
রাস্তায় যাবি মিছিলে
বলবি শ্রমিকের কথা
খুলি উড়ে যাক গুলিতে
ফাঁটা খুলে নিয়ে চিৎকার করবি
হীরকের রাজা মহান!

আমি এদের কারোর কথা লিখিনি এই কিসসায়
শুধু কানে পৈতে তুলে
বিড়ি মুখে বলেছি
টাকার নাম ভগবান।


জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

1 Comments