জ্বলদর্চি

তিনটি প্রেমের কবিতা /শ্যামশ্রী দাশগুপ্ত

তিনটি প্রেমের কবিতা

শ্যামশ্রী দাশগুপ্ত 



 
বন্ধুর অপেক্ষায়
           
এসো বন্ধু, এসো একা একা সংগোপনে ,
                 অনেকখানি অবসর নিয়ে।
বসবো দুজনে, নীরবে নিভৃতে,
         প্রেমহীন ধনীগৃহের অসুখীগৃহকোণে।

 বলবে আমাকে?, ‘আজও ভালোবাসি,
     খুব কি অচেনা জীবনের বানভাসি?
আছে নাকি নকল  কিছু অক্ষরমালার চিঠি? 
        থাক, তবে ভুলে যাওয়া প্রথমকাহিনী।

এসো বসি গল্প করি কিশোর প্রলাপ,
    গল্প করি রুপকথার  কুমড়োপটাশ।
গল্প করি  আমার ইচ্ছে গাছের ডালপালার,
       গল্প করি  সাত জনমের অভিসার। 

    গল্প করি বুকুল ফুলের বকুলবীথি, 
       দিগন্তে তাল তমালের বিনোদিনী ।
এসো বসে গল্প করি, নুপুরের রিনিঝিনি,
         গল্প করি ভালোবাসার বিরহিণী । 
   
     এসো বসে গল্প করি, দুহাত দিয়ে স্বর্গ রচি,   
              একহাতে বালুকা অন্য হাতে তরবারি।
      তবুও প্রেম করি, বেলাশেষে মিছে লুকোচুরি,
                  আমি আর তুমি, চিরসখার পূজারিণী।




 ক্ষণিকের তরে
        
তুমি কি বলবে বন্ধু, কেন এই ব্যাকুলতা,
আঁধার নামলেই কেন এই বিহ্বলতা?
কেন বলছ, শূন্য গৃহে কাঁদি সারারাত,
  ছিল যে, তারেই কেন ডাকি বার বার।

এমন মিথ্যা কথা বলা খুব সহজ বন্ধু,
কারণ ঐ যে ‘ছিল‘! যেদিন ছিল, সেদিন তুমিও ছিলে।
কখনও কি বলেছ তারে আপনারে ভুলায়ে,
ওরে, দাঁড়াও, ক্ষণিকের তরে, দুয়ারের ওপারে।

কিছু কথা তুমি বল, কিছু কথা বলি আমি, 
কিছু দায় শুধু তোমার, অনেকটাই শুধু আমার। 
কিছু যদি দিতে না পার, অভিসম্পাতটুকু নিও,
অভিশাপ কিংবা অভিসার, সবটাই গোপনে দিও।




বিজন ঘর
  
বিজনঘরে স্মৃতির সিন্দুক খুলে দেখি বন্ধুদের বসতবাড়ির খুঁটি, 
দুয়ারে মঙ্গলঘট, ঘরে আলপনা, আকাশে চাঁদিয়াল, ভোকাট্টা ঘুড়ি। 
কিশোরী আমি, কিশোর তুমি, আরও অনেক তুই, তুমি, তোমরা,
দুপুরবেলা, আমার বেলা, বেলা অবেলায় চিলেকোঠায় আমরা।

কিছু গল্প ছিল ফুলের মত, কিছু স্পর্শ ছিল আষাঢ়ের প্রথম দিবস,   
 রক্তিম পান্নার গর্ভগৃহে মহাকালের মহামিলনের আপোষ কত শত। 
অমাবস্যার রাতে তারারা কথা বলে চুপিচুপি রাই বিলাসিনীর অভিসার,
অপরূপা চাঁদ আমার ঘরে বয়ে আনে, বন্ধু তোমার নীরব অধিকার।    
ইথারে তরঙ্গে ভেসে আসা বন্ধুর চিঠি, ভেসে আসে চিরকুট, সাতকাণ্ড, 
আমাকে ‘আমি’ হয়ে উঠতে ,বন্ধু আছো দাঁড়িয়ে রুদ্র পুরের রুপকান্ড।
 স্মৃতির বাঁকে বাঁকে বন্ধু তুমি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা, ডাক দিয়েছ সাঝবেলায়,
 তুমি ‘হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যকুল’, আমি শুনি কালের কলরব অবেলায়।  
  
  দিন বয়ে যায়, ছন্দ হারায় বিষণ্ণতায়, তবুও তুমি বল কানে কানে ‘সই চলো’,   
বেঁচে থাকার রসদ সে যে, দিবাবসানে শেষবেলায় বেহিসাবি আমি এলোমেলো। 
অপেক্ষা তোমার, অপেক্ষা আমার, অপেক্ষা আমাদের নাবলা ভালোবাসার,
নব জনমের ইতিহাস, নব জনমের উপন্যাস, তোমার প্রথম প্রেমিকার।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇




Post a Comment

0 Comments