প্রেমের গুচ্ছ কবিতা
শান্তা সাহা
পৌষের বৃষ্টি
ভালোবাসা ঘুরে ফিরে আসে
আসে নিয়ে বিরহের আধাঁর,
স্হির স্থবির কালো জলে
জল পোকাদের গোল গোল সাতাঁর !
মেঘ জমে ভাঙ্গা জানালার কাঁচে
উড়ে যায় নীল সাদা দিন !
পৌষের বিকেলে প্রৌঢ়া বৃষ্টি
জমে ওঠে মেঘলা মুহূর্ত ঋণ ...
এমনি করেই ভালোবাসা আসে ,
মন খারাপের ভেজা চোরা গলি ...
কেন যে এত পেতে চাই কাছে
বলেছি তোমাকে সব ....
সবটা, কি করে বলি?
অভিমান আগলে রাখে পথ
ভালোবাসারা উড়নচন্ডী খুব !
আগলে পথ তবু পারে না আগলাতে ,
পথ শুধু ভিজে গিয়ে নির্বাক নিশ্চুপ!
হারানো শীত
টিনের চালে হিম ,
শীত অতঃকিম!
উত্তুরে ঐ হাওয়া,
মনের ফিরে চাওয়া!
মাঠেতে সর্ষে ফুল,
কুয়াশা বিলকুল!
সবুজ ধানের বুক ,
দাদুর মাঙ্কি ঢাকা মুখ !
খেজুর রস মিঠে ,
শীতের পুলি পিঠে !
লেপ ,কাথা ,কম্বল
বাড়েও খানিক অম্বল !
নদীর মাঝে গান ,
সারাটি দিনমান !
ফুলে ভরা চারদিক ,
পারেতেই পিকনিক !
শীত আজকে নাই !
ঠিকানা তার চাই !
নেই কো টিনের চাল !
ওসব অতীত কাল !
শহর জুড়ে ছাদ ,
ধোঁয়াশা ধরা চাঁদ!
হারানো শীত বেলা ,
ঋতুর অন্য খেলা !
নয় তারা চার্মিং ,
কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিং!!
খোঁজ
আমরা যারা কবিতায় বাঁচি, বেঁচে থাকি রোজ ,
দুমুঠো ভাতের পরেও কবিতার করি খোঁজ !
জীবন চলে দ্রুত অথবা ধীর যেমন সম্ভাব্য ,
গদ বাঁধা জীবনেও থাকে কিছু কথা কিছু কাব্য !
সেসব নিয়েই পথ চলি ,মেলে দিই মুক্তো ডানা ,
এলোমেলো অফুরান পথ পথেই চেনাজানা !
বয়ে যাওয়া মুহূর্তের অনাবিল কত দিন
ভালো থাকার অভ্যেসের তবু কিছু ঋণ!
পথ হাঁটি বন্ধুর, আসে শুভেচ্ছার বিনিময়,
পথ চলতি ধুলোতে সবই এই জীবনের ক্রয়!
মুগ্ধ যন্ত্রণা
নিয়মিত তোমার খবর রেখেছি ,
তোমার ভালো থাকার খবরে ভালো রেখেছি নিজেকে দূর থেকে...
মেঘলা দিন হঠাৎই তোমায় খুঁজে নিলে মুষড়ে পড়েছি দূর থেকেই ...
বৃষ্টি শেষের ঝাপসা মন খারাপের ভ্যানভ্যানে মাছি উড়ে এসেছে মুষড়ে পরা ক্ষতের ওপর ,
নীল আকাশে লাল ফড়িঙের লাজুক ওড়া না দেখা পর্যন্ত সে এক অস্থিরতা...
আজ শরতের রোদ্দুর জড়ানো তোমার খবরগুলো বড় অনিয়মিত,
হাওয়াদের অনিয়ন্ত্রিত আনাগোনায় ভেসে আসে তোমার ভালো থাকার সুর ...
আলোর মুখ ফেরানো 'আমি'র ওপর মেঘ জমে, দলা পাকানো মন খারাপগুলো একের ওপর আরেক বসে হারিয়ে ফেলে ভালো থাকার ঠিকানা !
মাছিগুলো দিগভ্রান্ত ...
দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষতের ওপর এলোপাথাড়ি উড়ে বেড়ায় দিশাহীন শূন্যতায় ...
আমার মন খারাপের লম্বা চওড়া চুপ কথাদের ওপর শ্বাস ফেলে তোমার ভালো থাকারা !
আমি ঘ্রাণ নিই, সেই নিভৃত দূরত্বের...
আর বুকের ভেতর খোঁজ পাই অভিমানের গলিত লাভার ..
গা গোলানো এক পোড়া গন্ধে ডুকরে উঠি !
সূর্যাস্ত নামে আমার সবুজ প্রেমের অবুঝ মনে!
পাড় ভাঙ্গা মনে বিসর্জিত হয় আমার অযুত কথারা ...
নতজানু হই ওদের নিঃশর্ত নিঃশব্দ নিশ্বাসে ...
মন বলে, ভালোবাসা ...
এক আলো ..
এক অনন্ত বোধ ..
চরাচর ব্যাপী এক মুগ্ধ যন্ত্রণা!
তালিকাভুক্ত বিষণ্ণতা
আমি কি বিষণ্ণতা বিলাসী?
ভালোবাসার আলোর তলায় বিরহ আর বেদনার যে কুচি অন্ধকার আমি কি শুধু তারই খোঁজ পাই?
প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের পাদদেশে যে অদেখা পাখশাট আমার চোখ শুধুই কি তারই সন্ধান করে?
জীবনের মন্দ ভালোর যাপনে আমি কি শুধুই মন্দ বাতাসকেই মাপি?
মিলনের প্রাক মুহূর্তের যে অস্হিরতা তাতেও কি আমি ফেরী করি বিচ্ছিন্ন উদাসীনতা?
চুম্বনের শেষে শুকিয়ে ওঠা ওষ্ঠের যে পরিতাপ তাতেই কি আমি অনুভব করি এক অতলান্ত অপ্রেম?
আলিঙ্গনে আবিষ্ট আমি শরীরের উষ্ণ নৈকট্যে শিউরে উঠি নম্র নখের নির্মমতায় শুধুমাত্র অকারণ অনুভবে?
মিলন মুহূর্তের ধমনীর উষ্ণ স্রোত আমার শরীরকে নিয়ন্ত্রণহীন করে না ...
চুম্বন মুহূর্তের আগুন আমায় হলুদ পৃথিবীর খোঁজ দেয় না..!
দেয় না বাসন্তিক নির্যাস !
গোধূলির শেষ আলোটুকু নিয়ে নিদারুণ এক ঔদাসীন্য জন্ম দেয় আলোহীন, রঙহীন এক ঘর্মাক্ত বিষণ্ণতার !
একাকীত্বের নগ্নতায় সে এক ভয়ংকর ভালোবাসা!
তবুও তোমরা আমায় বিষণ্ণতা বিলাসী বলবে?
বলো!
0 Comments