জ্বলদর্চি

জঙ্গলমহলের ঝুমুর ও ঝুমুর সম্রাট /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি
পর্ব- ১০

জঙ্গলমহলের ঝুমুর ও ঝুমুর সম্রাট

সূর্যকান্ত মাহাতো

একটা ধমসা বানাই দে
একটা মাদল কিনে দে
আমি গাইব বাজাব
মইচ্ছা পড়া জীবনটাকে বেদম পাজাব।

এই ছিল তার মনের আকুতি।বাড়ির নাম রেখেছেন 'ঝুমুর'। দরজার নাম 'মাদল'। ঝুমুর নিয়ে কতটা প্যাশন থাকলে এমনটা সম্ভব! জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে তার একটাই পরিচিতি। তিনি 'ঝুমুর সম্রাট'। এই 'সম্রাট' খেতাবটা কোন সরকারি বা বেসরকারি স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে মেলেনি। মেলেনি কোনও বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞের কাছ থেকেও। মিলেছে কেবল ঝুমুর গানের আবেশে ডুবে থাকা আপামর ভক্ত ও শ্রোতাদের কাছ হতে। একজন শিল্পীর কাছে এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিই বা হতে পারে! তার সমস্ত গায়কী সত্তা তো শ্রোতাদের সঙ্গেই জড়িত। তারাই তো আসল বিচারক। ভালো কে ভালো বলাটাই তো তাদের সহজাত অভ্যাস। এর জন্য তারা কারও কাছে দায়বদ্ধও নয়। সুতরাং তাদের কাছ থেকে 'সম্রাট' উপাধি লাভের চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছু থাকতে পারে বলে মনেই হয় না।


হ্যাঁ। ঝুমুর শিল্পী বিজয় মাহাতোর কথায় বলছি। ঝাড়খন্ড, বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার অগণিত শ্রোতারাই তার ঝুমুর গানে মুগ্ধ হয়ে তাকে 'ঝুমুর সম্রাট' খেতাব দিয়েছেন। অধুনা ঝাড়গ্রাম জেলার অন্তর্গত জামবনী ব্লকের কাদোপিন্ডরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৫ সালের ২রা নভেম্বর। তখন গ্রামে বয়স্কদের কীর্তন সহ অন্যান্য গানের আসর বসত। বিজয় একদম ছোট্টবেলা থেকেই ওই আখড়াই বসে গান শুনতেন। এভাবেই গান শুনতে শুনতে তার সঙ্গীত ও সুরের কান তৈরি হয়ে উঠেছিল। বাবা শিবচরণ মাহাতো ছিলেন একেবারেই দরিদ্র ক্ষেতমজুর। তবে উনিও কাঁঠি নাচ ও ছৌ নাচের গান করতেন। অন্যদিকে মা সরস্বতী মাহাতোও ছোট্ট বিজয়কে বাঁদনা ও মকরের কতসব গান শোনাতেন। মামা রবীন্দ্রনাথ মাহাতোর কাছে শিখেছিলেন, কীভাবে আড় বাঁশি বাজাতে হয়। দারুণ রকমের বাঁশি বাজাতে পারতেন বিজয় মাহাতো।


সবকিছু নিয়েই সঙ্গীত বা গান যেন তার রক্তে মিশে গিয়েছিল। তাই তো বর্তমান সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ ঝুমুর শিল্পী ইন্দ্রানী মাহাতো বলেছেন, "ঝুমুর ছিল তার রক্তে"। কারণ ইন্দ্রানীদেবী কোন গানে সুর দিতে গিয়ে দেখেছেন যে, ওই সুর বহু পূর্বেই বিজয়বাবু করে গেছেন। কী দারুণ গায়কী প্রতিভা ছিল তার।

ঝাড়্গ্রাম রাজ কলেজ থেকে দর্শনে সাম্মানিকতা লাভ করেছিলেন। একবছর ডেপুটি ভ্যাকেন্সিতে চিচিড়া হাইস্কুলে শিক্ষকতাও করেছিলেন। কিন্তু অভাব বড় কঠিন। পেটে ক্ষুধা থাকলে সুর কোথা থেকে আসবে! তাই ঝাড়গ্রাম ছেড়ে টাকার জন্য কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন। মেট্রোরেলের রাস্তা তৈরি হবে বলে মাটি কাটার কাজে সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই যে বললাম সুর ছিল তার রক্তে। তাই কাজের অবসর মিললেই হাতে তুলে নিতেন আড় বাঁশিটা। মেঠো সুর ছড়িয়ে পড়ত মেট্রোর গলিপথ বেয়ে বস্তির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। সেই সুরে মুগ্ধ হয়ে পড়তেন শ্রমিকেরা। এভাবেই একদিন বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে পরিচয় হয়েছিল গানের শিক্ষক সুনীল চক্রবর্তীর সঙ্গে।

১৯৮১ সাল। নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য ঝারখন্ড আন্দোলন শুরু হয়েছে। চারিদিকে নেতাদের গরম গরম বক্তৃতা।  কলকাতায় বিজয় মাহাতোর মন আর পড়ে থাকল না। তার মনে হল, নিজের দেশে যখন ভাষা ও সংস্কৃতির আন্দোলন হচ্ছে তখন তার এভাবে কলকাতায় পড়ে থাকা উচিত নয়। ফিরে এলেন ঝাড়গ্রামে। ঝাড়খন্ড আন্দোলনে একসময় জড়িয়েও পড়েছিলেন। গেয়ে উঠেছিলেন---

লালগড়ের লালমাটি যত পালায় বহুবিটি
আরো পালায় বনের ভালুক
ছাতি ধুকধুক
ছেইল্যার বাপে ধরেছে বন্ধুক।

ঝাড়গ্রামে ফিরেই পুরোপুরি ডুবে গেলেন গানের জগতে। ঝুমুর গানের সুর ও মাদকতায় নিজেকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দিলেন। জুটি বাঁধলেন ভবতোষ শতপথীর(১৯৩৫-২০১৭) সঙ্গে। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট কবি, গীতিকার ও আঞ্চলিক লোককবি। সমসাময়িক অস্থিরতা ও প্রেক্ষাপটের উপর দারুণ সব কবিতা ও গান রচনা করেছেন। এক হাজারেরও বেশি গান তিনি লিখেছেন। বিজয় মাহাতো তাঁর একাধিক গানে অপূর্ব দক্ষতায় সুর দিয়ে গেয়ে উঠেছেন ----

"হামি গাইব বাজাব
মইচ্ছা পড়া জীবনটাকে বেদম পাজাব।"

ঝুমুর গান ও নাচের মধ্য দিয়েই ছড়িয়ে দিলেন নিজেদের দাবি দাওয়া। ঝাড়গ্রাম এর অন্যতম গীতিকার লক্ষ্মণ রায়ের লেখা গান  গেয়ে উঠলেন বিজয় মাহাতো---

শুন গো বাবু বহু বিটি
জল জঙ্গল হামদের মাটি
বাপের ভিটা বিকাঞ দিব নাই হে
অধিকারটা ছাড়াই লিব ভাই।


কলকাতায় থাকাকালীন মনের মধ্যে সংগীতের একটা খরা তৈরি হয়েছিল। সেটাই যেন এবার দ্বিগুণ  ভাবে পুষিয়ে নিতে চাইল বিজয় মাহাতোর মন। তাই ভবতোষ শতপথীর লেখা গানে গেয়ে উঠলেন---

একটা ধামসা বানাই দে
একটা মাদল কিনে দে
আমি গাইব বাজাব
মইচ্ছা পড়া জীবনটাকে বেদম পাজাব।

গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে অভাব যখন জেঁকে বসেছে খাদ্য ও অর্থের অভাবে মানুষ ধুঁকছে। এমন অবস্থায় সকলেই বাইরে চলে যেতে চাইছে। ভাবছে, বাইরে গেলে হয় তো বা সুরাহা মিলবে। সেই প্রেক্ষাপটেই বিজয় মাহাতো গান ধরেছিলেন---

"চল মিনি আসাম যাব
(আর) দেশে বড় দুখ হায় হায়
দেশে বড় দুখ রে
আসাম দেশে রে মিনি
চা- বাগান হরিয়াল।।"

জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব হল মকর পরব। শত অভাব-অনটনেও ঐ সময় সকলেই মাংস পিঠা খেয়ে আনন্দ স্ফূর্তি করে। এক বছর জঙ্গলমহল জুড়ে খুব আকাল দেখা দিয়েছিল। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসাবে এসেছিল প্রবল ঝড়। সেই ঝড়ে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। তবুও জঙ্গলমহলের মানুষ আশাবাদী ছিল। মকরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই বিজয় মাহাতো গান ধরেছিলেন---

আকাল বছর আইল ঝড়
উড়াই লিল চালের খড়।
খুদ কুঁঢ়হা ঢুকে গেল ঢঢরে
মাস পিঠা হবেক মকরে।

বিজয় মাহাতোর গানের শুরুর  দিকে কোন মঞ্চ থাকত না। গাছের তলাতেই ঝুমুরের অনুষ্ঠান করতেন। অনেক পরে মঞ্চ এসেছিল। ঝুমুর গান আঞ্চলিক ভাগে বিভক্ত। যেমন ঝাড়গ্রাম ঝুমুর, মানভূম ঝুমুর, ঝাড়খণ্ডের ঝুমুর ইত্যাদি। তবে তাদের মধ্যে ঝুমুরের মূল সুরটি বিচ্ছিন্ন নয়। তো, এই ঝাড়গ্রাম ঝুমুর কে তিনি আগলে আগলে রক্ষা করেছিলেন। অন্যান্য ঝুমুরের সুরকে ঝাড়গ্রাম ঝুমুরে মিশতে দেননি। ঝাড়গ্রাম ঝুমুরকে তিনি এক অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

বিজয় মাহাতোর মতে, ঝুমুর হল মাঠে ঘাটে কাজ করতে করতে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মধ্য থেকে  যে শ্রমলব্ধ কথাগুলো বেরিয়ে আসে, তাদের বঞ্চনার কথা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা-বিরহের কথাগুলোই পাঁজরা ভেদ করে যখন শব্দ হয়ে বেরিয়ে আসে আখড়ায় বা মঞ্চে তখন সেটাই ঢোল ধমসা মাদল সহযোগে যখন পরিবেশিত হয়, সেটাই হল ঝুমুর।

এক কথায় তার গান ছিল জঙ্গলমহলের মানুষের "আঁতের কথা'। জঙ্গলমহলের বিশিষ্ট কবি ভবতোষ শতপথী ছিলেন তার গানের অন্যতম গীতিকার। তাদের জুটি জঙ্গলমহলের ঝুমুরকে এক উচ্চ আসনে বসিয়েছে। সেরকমভাবে সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি বলে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দুজনেই আক্ষেপ করে গেছেন। তাতে কী! সেই আক্ষেপ তো পূরণ করে দিয়েছেন তাদের আপামর পাঠক ও শ্রোতাগণই। সেটাই বা কম কিসের! কত জনই তো স্বীকৃতি পেয়েও হারিয়ে গেছেন! কিন্তু তাঁরা তো হারাইনি। যতদিন ঝুমুর গান বেঁচে থাকবে, ততদিন তাঁরাও বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে। এখানেই যেন তারা  জিতে গেছেন।


ঝাড়গ্রাম সহ জঙ্গলমহলে ঝুমুরের শক্ত মাটিকে তাঁরাই উর্বর করে দিয়ে গেছেন। সেখানেই আজ শত শত ঝুমুর শিল্পী তাদের গান ও সুর দিয়ে শস্য শ্যামলিমা ফলাচ্ছে। উঠে আসছেন তরুণ গায়ক গায়িকা। অঞ্জলী মাহাতো, ইন্দ্রানী মাহাতো, ঝুমুর রানী, চুমকি রাণী মাহাতো, পরিতোষ মাহাতো, অজিত মাহাতো সহ আরও কত কত শিল্পী।

ঝুমুরের কথা ও সুরে আজ অনেক বদল এসেছে। পরিবর্তন তো সময়ের ধর্ম। তাই তাকে প্রতিরোধ করা বৃথা।

আজকের ঝুমুর অনেক বেশি প্রেমের সংগীত হয়ে উঠেছে। বারোমাস্যা বা বারোমেসে প্রেম সংগীত হিসাবেই ঝুমুর জনপ্রিয়তার শিখরে অবস্থান করছে। আসলে প্রেমে পড়া জঙ্গলমহলের মূলবাসী মানুষের সঙ্গে ঝাঁ-চকচকে শহরবাসী মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রেমে পড়লে মনের মধ্যে ভাবাবেগের যে অদ্ভুত উথাল পাথাল দশা ঘটে, সেটা সবার ক্ষেত্রেই এক। পার্থক্য শুধু প্রকাশ ভঙ্গিতে। জঙ্গলমহলের মানুষেরা তাই তাদের প্রেমময় ভাবাবেগকে ঝুমুরের মধ্য দিয়েই বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যেমন ঝুমুর শিল্পী অঞ্জলী মাহাতো গেয়ে উঠেন---

"তুই আমার মন বাগানের ফুল
তুই আমার খোঁপায় গুঁজা ফুল।"

তবে ভালোবাসায় বিরহের গানগুলোই চিরকাল সব থেকে বেশি দাগ কাটে মনে। সেটা কেবল ঝুমুরই নয়, বাংলা হিন্দি ইংরেজি সহ সব ভাষার গানেই সেটা সত্য। ঝুমুরে যেমন চুমকি রাণী মাহাতোর  বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় বিরহের গান হল ---

স্বপ্ন দেখাই গেলি চল্যে
আর জ্বলছি আমি দুখানলে
তোর বিহনে মন কেমন করে
ও সাথী আইরে আইরে আইরে ফিরে
তোর ভালোবাসা কাঁইদছ্যে ঘরে।


ঝুমুরের আবার কতকগুলো ভাগ আছে। যেমন---১)ঝুমুর, ২)ভাদরিয়া ঝুমুর(ভাদ্র মাসে করম নাচের মধ্য দিয়ে গীত হয়। আবার 'ভাদরিয়া' বলে বিশেষ একটা সুরেও গীত হয়।) ৩)ঝুমুর গানের রঙ(ক্ষুদ্র আয়তনের গান। নাচনি নাচের মধ্য দিয়ে পরিবেশিত হয়।) ৪) রং ঝুমুর(স্ত্রী পুরুষের দ্বৈত গীতি সংলাপের মধ্য দিয়ে পরিবেশিত হয়।) ৫) উদয়া বা টাড় ঝুমুর( দেহমিলন ঘটিত প্রেম গান)।


সারা বছর ধরে ঝুমুর গান গাওয়া হয়। এর কোনও নির্দিষ্ট দিন মাস ঋতু নেই। তাই ঝুমুরকে বারোমেসে গানও বলে। প্রেমধর্মী এই ঝুমুর গান কখনও দেহকেন্দ্রীক, কখনও দেহবলয়যুক্ত। তাই অনেকে এই গানে স্থূলতা বা গ্রাম্যতা বা অশ্লীলতা খুঁজে পায়। কিন্তু তাদের কথা ধরা যায় না। কারন তারা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যেও অশ্লীলতার দোষ খুঁজে পান। একাধিক ঝুমুর গানে বৈষ্ণব ধর্মাবলীর প্রভাব আছে। রাধাকৃষ্ণের প্রেমকথা যেমন আছে, তেমনি লৌকিক প্রেমও অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে। তার একটা পর্যায়ও আছে।

বিশিষ্ট গীতিকার ও গবেষক সুনীল মাহাতো এক সাক্ষাৎকারে সেটাই বেশ ভালোভাবে বলেছেন।প্রাচীনকালে ঝুমুর গীত হত জীবন জীবিকার উপর। বাদ্যযন্ত্র ছিল ঢোল, ধামসা, ঢাক ইত্যাদি। তারপর বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব পড়ল দারুণ ভাবে। তখন রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, বিরহ, রামায়ন, মহাভারতের গল্প স্থান পেল। এই গানগুলো খুব উন্নতমানের ছিল। পরে রাজদরবারেও  নাচনি সহযোগে ঝুমুর গান অনুষ্ঠিত হত। 'দরবারি ঝুমুর' বা 'নাচনিশালিয়া' ঝুমুর নামে তা পরিচিত ছিল। বাদ্যযন্ত্রেরও বদল ঘটতে লাগল। হারমোনিয়াম, তবলা এল। এল কর্ণেট। পরে এল মাদল। এখন যার ভূমিকা দারুণ।

তবে স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে ঝুমুরের শ্রোতা হয়ে উঠলেন সাধারণ মানুষ। তাদের চাহিদা মেটাতে গিয়েই ঝুমুর গান স্থূল ও নিচু স্তরের হয়ে উঠল। স্বল্প শিক্ষিত লোককবিদের হাতেই এই ধরনের গান রচিত হয়েছিল। এখনও সেই ধারা অব্যাহত। যে কারণেই শিক্ষিত সম্প্রদায় ঝুমুর গানে আগ্রহ হারিয়ে কিছুটা দূরে সরে গেছেন। তাদের মনে হয়েছে, ঝুমুর গান স্থূল, গ্রাম্য, রুচিহীন, অশ্লীলতা দোষে নাকি দুষ্ট।

দীর্ঘদিন ঝুমুর গানের ওপর কাজ করতে গিয়ে সুনীলবাবু দেখেছেন, ঝুমুরের থেকে শ্রুতিমধুর লোকসংগীত আর কিছু হতেই পারে না। সঠিক শব্দ ও ভাষা দিয়ে বাঁধতে পারলে ঝুমুর গানও যে অমর সৃষ্টি হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তো তিনি নিজেই। তাঁর কালজয়ী সেই সৃষ্টি হল---

পিঁদ্যাড়ে পলাশের বন
পালাব পালাব মন
নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে
হে কাটে হে
বতরে পিরীতির ফুল ফুটে।

সাধারণ লোককবিদের হাত থেকে সঠিক মানুষের হাতে পড়লে ঝুমুর কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে সেটাই তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। যারা ঝুমুর গানে নাক সিঁটকায় তারা একবার বিজয় মাহাতোর  কন্ঠে এই গান সহ অন্যান্য গানগুলো শুনুন। তারপর তো মন্তব্যের স্বাধীনতা থাকছেই। এ গান শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলের কছেই  সমানভাবে কী দারুণ রকমের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে! সুতরাং ঝুমুরগান মানেই রুচিহীন এমনটা বলা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।

তথ্যসূত্র:-
১)ঝাড়খণ্ডের লোকসাহিত্য--বঙ্কিমচন্দ্র মাহাতো
২)জঙ্গলমহল ও ঝাড়খন্ডী লোকদর্শন-- পশুপতি প্রসাদ মাহাতো
৩)আনন্দবাজার পত্রিকা--২৩শে জুন, ২০১৯
৪)ওয়েবসাইট ও অন্যান্য

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments