জ্বলদর্চি

অশোক মহান্তীর কবিতা : জীবন ভাঙা পথে ঈশ্বরের গান -২/দিলীপ মহান্তী

অশোক মহান্তীর কবিতা : জীবন ভাঙা পথে ঈশ্বরের গান -২

দিলীপ মহান্তী

।২।
অশোক মহান্তীর প্রথম কবিতার বই ‘আবহ সকাল’। সেই সময় তিনি অশোককুমার মহান্তী নামে লিখতেন।পরবর্তী কালে আর 'কুমার' ব‍্যবহার করেননি। ‘আবহ সকাল’-এর ভূমিকাতে লিখেছিলেন: ‘ক্রমাগত ছুটতে থাকলে একদিন ক্লান্তি বাড়ে। ক্লান্তি- যা অবশ করে দেয় না মানুষকে; বরং শিখিয়ে দেয় আরো পথ আছে, আছে আরো অনেক রহস্য, যা গভীর, যা সত্য এবং সেই সব সত্যের মুখোমুখি একদিন মানুষকে স্পষ্টত গিয়ে দাঁড়াতে হয় ঋজু এবং তীক্ষ্ম, দৃঢ় অথচ ভয়াতুর, সংকটাপন্ন অথচ ক্ষুরধার আবেগের ভেতর দিয়ে।
ঘরের যেমন আসবাব ভাঙে, তেমনি হৃদয়েরও আসবাব ভেঙে যায় কখনো-সখনো, আর তাতে ক্ষতি হয় যেমন তেমনি পরিচয় মেলে অন্য আরেক উৎকর্ষতার, সেই উৎকর্ষই চিরকালের দিব্য।
একসময় মানুষকে তাই মুখ ফুটে বলতে হয় – তুমি নও, তোমার প্রেম অথবা করুণা নয়, আমি নিজেই এক অনির্বচনীয় সুখানুভূতিতে নিজেকে খুঁজতে শিখেছি আমার নদীকে, আমার স্রোতকে, আমার ভালোবাসাকে।’
           সূচনা পর্ব থেকেই তিনি কবিতার মাধ্যমে আত্মজীবনী লিখে চলেছেন। শব্দের পথ ধরে খুঁজছেন নিজেকে। নিজের প্রেমকে, নদীকে, স্রোতকে। প্রবহমান জীবনকে। এক প্রবল আত্মসম্মান বোধে সচেতন থাকতে চান সব সময়। তাঁর শিরায় শিরায় প্রবাহিত রক্তের মধ্যে নিজেকে জানার ব্যাকুলতায় ধরা পড়ে পৃথিবীর সজীবতা ও ধূসরতা। এই অন্বেষণ ও আবিষ্কারের আনন্দে তিনি কখনো প্রকৃতির কাছে, মানুষের কাছে গেছেন। কখনো পেতে চেয়েছেন ঈশ্বরকে। পংক্তিতে পংক্তিতে যে আত্মজীবনী লেখা হয় সেখানে পাঁজরে পাঁজরে শুধু দাঁড়ের শব্দ শুনিনা;  শুনি ও দেখি স্রোতের প্রাবল্য, টান ও গভীরতা। শুরু থেকেই এক গভীর দার্শনিক প্রত্যয়ে ধরা আছে তাঁর বিবেকের গান :

         ‘কতদিন নীরব রাতের ভাষা বুঝতে চেয়েছি।
          কতদিন নীরব নদীর কাছে গেছি।

          পাথরে মর্মর বাজে। কোন গান?
          অদৃষ্টপূর্বের খেলা দেখি।

          অদৃষ্টপূর্বের খেলা দেখতে দেখতে হিমের মতন স্রোত
          ছুঁয়ে গেছে হৃৎপিন্ড আমারও।

          আমাকে দেখেছে কেউ।

          আমাকে ডেকেছে কেউ ঐ দূর বন যেখানে বিলুপ্ত কোনো
          প্রাণীদের অস্থিচর্ম মাখা।
          কঙ্কাল করোটি মাখা
         পালক ও রক্তের স্বাদে মাখা।

         পালক ও রক্তের স্বাদ কখনো মেলে কি?
         কখনো মেলে কি বদ্ধ বাহুযুগ?

         বহুযুগ আগে যাঁরা কবিতা লিখতেন, তাঁদের জীবন থেকে
         প্রতিটি স্পন্দন এসে আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

         আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়, পাথরে মর্মর গান।
         কোন্ গান?
         অশ্রুতপূর্বের গান শুনি।
                             (হিমস্রোত : অতিবর্তী জাগো)

    একথা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই, কাব্যজীবনের প্রথম থেকেই প্রকৃত কবি হিসেবে তাঁর শক্তি সামর্থ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা অনুভব করি তাঁর কল্পনাপ্রতিভার ওপর এক অদৃশ্য শক্তির অনিবার্য নিয়ন্ত্রণ। যত সময় অগ্রসর হয়েছে ততই ফুটে উঠেছে এই বোধ। এই দৃষ্টিভঙ্গি। এটাই হয়তো তাঁর প্রেম, তাঁর বিশ্বাস, তাঁর ঈশ্বর সাধনা। বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রূপে তাঁর আবির্ভাব। সেই চালিকাশক্তি তখন কবির বাচনকে অবলম্বন করে ক্রমশ প্রকাশিত হয়েছেন; যার ফলে রচনা আর শুধুমাত্র রচনা হয়ে না থেকে হয়ে ওঠে দৈববাণী।
     একদিকে যেমন ভেতরের নদীকে স্রোতকে ভালোবাসাকে খুঁজছেন তেমনি সেই খোঁজা রূপ পাচ্ছে বাইরের নদীর প্রবহমানতায়। রহস্যময়তায়। সেই নদীতে মিশে যাচ্ছে জীবনের গোপন কান্নাগুলি। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির আংরায় ভেসে যাচ্ছে পঞ্চভূতের পৃথিবী।

   আমরা দেখতে পাই, নিজের জন্মভূমির কয়েকটি নদীকে কেন্দ্র করে লিখেছেন ' নদী- বিষয়ক ' কয়েকটি সাড়া জাগানো কবিতা। যাদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জীবন। জীবনের স্পন্দন। ছড়ানো আছে আত্মজীবনীর নুড়ি পাথর। যা যেকোনো কবিতা পাঠককে জাগিয়ে দিতে পারে। বুকের ভেতরে অতল রোদন দুলিয়ে দিতে পারে:

১.     আমার মায়ের শব তোমার বালিতে
       ঢেকে গেছে একদিন-- ধোঁয়ায়, কালিতে

              তারপরও সেই নদী
               সেই স্রোতধারা

              তারপরও বাল্যকাল
               আকাশের তারা,

      আমি যে দেখেছি নদী, তোমার বালিতে
      অস্তসূর্য ভুলে গেছে সন্ধ্যাবাতি দিতে।
       ( কাঁসাই : ৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি)

২.    তোমার পাথর- মুখ পাথরের ফাঁকে
      দু- একটি চুনোপুঁটি অন্ধকার মাখে

     এত শীর্ণ স্রোত, তাতে মেটেনা পিপাসা
     বালি খুঁড়ে জল নেয় জনপদ- আশা

     গ্রীষ্মের দুপুরে শূন্য- মেঘে ওড়ে চিল
     ধুলো ওড়ে-- ঝরাপাতা, আকাশের নীল

     কোনোখানে চিতা জ্বলে-- স্রোত বয়ে যায়
     তোমার অন্তরে থেকে তোমাকে হারায়।
    ( ভৈরববাঁকি : ৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি)

৩.   বুকের মধ্যে খুব গোপনে চমকে ওঠে ভয়
     মনের ভেতর নদী এবং মানুষ কথা হয়
     সবাই যখন তৃপ্ত, তখন অতৃপ্তি যায় ডেকে
     তোমার মতই মেঘ-কে এবং দুরন্ত-  বৃষ্টিকে

     বছর মধ্যে দু- একদিন তো তুমিও হও নদী
     খবরে নাম লেখা হয় না, ঘর না- ভাসে যদি।
      ( তারাফেণী : ৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি)

 ৪.   কী গভীর হা - হা ওর বুকে
        উৎস থেকে মোহনায়
                সাদা বালি
              সোনার আলোকে
            যত স্বর্ণ শিকারীর পায়ে
      সন্ধ্যাবেলা গিয়েছে হারায়ে।
     (সুবর্ণরেখা : ৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি)

৫.   তুমি শীর্ণ ছোট নদী
      বর্ষা এলে পেটে,
      ফুলে ফেঁপে ওঠে স্তন
      দিন যায় কেটে

     ঝরে তাতে স্নেহধারা
     এই মালভূমে,
     রূপালি ধানের মুখ
     মৃত্তিকাকে চুমে।
    ( ডুলুং : ৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি)

এই কবিতাগুলি পড়ার পর দু'জন কবির দুটি চিঠি পড়া দরকার‌। যে দুটি চিঠি কবি অশোক মহান্তীর কবিতা পড়ে, তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। কবিকে জানতে গেলে চিঠিপত্র খুবই সাহায্য করতে পারে। সামনা সামনি যেকথা বলা যায় না তা চিঠিতে বলা সম্ভব। চিঠির মাধ্যমে প্রেরক ও প্রাপক উভয়েরই চরিত্রের অনেকটা জানা যায়। এজন্য জীবনকে জানার জন্য চিঠি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁর জীবন ও লেখা পড়তে চাইছি, তাঁর এবং তাঁকে লেখা দু'ধরনের চিঠিই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি চিঠির আলোকে কবিকে অনেকটা বোঝা যাবে। বোঝা যাবে তাঁর কবি বৈশিষ্ট্যের প্রাথমিক কিছু প্রবণতা, অনুভব ও বিচ্ছুরণ। এক কবির চোখে আর এক কবিকে দেখার স্বাদই আলাদা‌। প্রথমে উদ্ধার করি কবি নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের একটি চিঠি :
                                                     বৈশাখী/১৪০১ সকাল
প্রীতিভাজনেষু অশোক, দ্বিতীয় সঙ্কেত থেকে আলোক শিশির বোঝা যায় উত্তরণের ধারাটি গূঢ়তর কবিতার দিকে‌।
একটু একটু মেঘ করেছে। খুব ভোরে যখন ছাদে বসেছিলাম, দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি পড়েছে গায়ে। এখন আকাশ রোদ্দুরের অধিকারে চলে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলো না‌। ইস্!
দ্বিতীয় সঙ্কেত ও আলোক শিশির ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি।
 একটু দেরি করলাম ইচ্ছে করেই‌। কারণ কবিতার তাৎক্ষণিক একটা effect  আছে যা পাঠককে আপ্লুত করে রাখে। এই আবেশ  কাটাতে না পারলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়‌। যাতে কবি বিভ্রান্ত হতে পারে। এই উচ্ছ্বাস কবির ক্ষতি করে দেয়।
আজ প্রায় ৭/৮ দিন পর (মানে বই দু- খানি পাঠের) দেখছি -  তোমার কবিতার যে রেশটুকু আছে তা সত্যি বলতে কী কবিতার একেবারে মর্মকথা তা। তোমার শিল্পকলা, মানুষ, তোমার বাস্তবতা ও স্বপ্ন এই জগৎ।
বাস্তবে কবিতা তো এই- ই। জীবন খুঁজবার গাঢ় অন্ধকার তোমার কবিতার অক্ষর। কবিতার বাণীও মানুষ পৃথিবীর অন্ধকারে কুড়িয়ে পেয়েছে। এমনকি, গ্রহলোকে মানুষ নেই বলে স্মৃতি নেই।
এই মধ্যে মধ্যে ছোট কবিতাগুলি এইসব স্পষ্ট উচ্চারণের অতীতে গিয়ে গাঢ় গভীর হয়ে উঠেছে। কিন্তু তোমার নিজের প্রকাশ যত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ততই যেন সরাসরি তা এতে ঘা মারছে। ভাবগম্ভীর ক্ষুদ্রাবয়ব কবিতায় যে রহস্য অন্যত্র তা নেই‌ । একই কবির এমন অসাধারণ দ্বিত্ব আমাকে তোমার সম্বন্ধে একটু যে অনুসন্ধিৎসু করেনি তা নয়।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে - দীর্ঘ দীর্ঘ দিন চলে যাবে ফের কবে তোমার কবিতা পড়তে পাবো জানি না। মাঝে এই সময়টুকু জুড়ে বসে থাকবে অন্য সব কবিদের কবিতা। বিগত তিন দশকে এত বেশি কবিতা পাঠককে পড়তে হয়েছে যে অশোক রুদ্র অমিতাভ ও অনির্বাণ অপাবৃতা সবাই মিলে একটি রসায়ন যেন। ফলে অনুসন্ধিৎসা কতটুকু আর তেজী থাকবে জানি না‌
তোমার কবিতা তোমারই মতামতের লতা। কবিতার দেহ থেকে মতামতের এই লতাকে একটু কি ইঙ্গিতায়িত করা সম্ভব বলে মনে হয়? কবিতা জীবনের কথা, ঠিকই। কিন্তু জীবনের কিছু আভাসও তো আছে। তা বৃহত্তর এবং গহন জীবনের হয়তো- বা‌।
এসব যে বলেছি তোমার লেখার স্বকীয়তার ওপর কোনোরকম কিছু আরোপের উদ্দেশ্যে তা নয়। ছোট কবিতায় তুমি যে ইঙ্গিত রেখেছো তার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়েই একথা বলছি। এবং এই সঙ্গে এটুকুও নির্দ্বিধায় বলি যে আমি অতি তুচ্ছ মানুষ‌। আমার মতামত আমারই। একে খুব একটা মূল্য দেবার কিছু নেই।
বুঝতেই পারছো - তোমার একটা চিঠি না পেলে আমি কী পরিমাণ সংশয়ে থাকবো। নোতুন বছরে শুভেচ্ছা জানাই।
               নারায়ণ মুখোপাধ্যায়।

    দ্বিতীয় চিঠিটি লিখেছেন দেবারতি মিত্র। ৩১. ৭. ২০০৩-এ। অর্থাৎ অর্থাৎ অশোক মহান্তীর মৃত্যুর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে।

সবিনয় নিবেদন,
আপনার ' ৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি ' বেশ কিছুদিন আগে পেয়েছি এবং পড়েছি, কিন্তু চিঠি লিখতে দেরী হয়ে গেল। বইটির মুখবন্ধে ' আমি কবি সাজিনি... অনেক চেষ্টায় ' আপনার এই অকপট আত্মকথন সহজেই আমাদের মন টেনে নেয়। আপনার কবিতায় সময় সাময়িক পৃথিবী, একটার পর একটা ঘটনা, উপায়হীন দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ সবই প্রবলভাবে উপস্থিত, কিন্তু তার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে কবির ভানহীন আন্তরিকতা ও কবিত্ব। 'খাবার'- এর মতো কবিতা লিখতে যাওয়া খুব বিপজ্জনক কারণ অতি ভাবপ্রবণতায় লেখা তরল ও খেলো হয়ে যেতে পারে, কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি, কবির কলমের জোরই একে বাঁচিয়ে দিয়েছে। 'শতকরা তিনজন কলেজ ছাত্রীকে', 'রূপহীনা', 'রক্তদান- শিবির', 'সমাজবদ্ধ', 'রাষ্ট্রনীতি' এসব কবিতাগুলি সম্পর্কেও ঐ এক কথা‌। 'হিতোপদেশ' কবিতাটির শ্লেষ মনকে নিরূপায় বিষাদে ছেয়ে দেয়।
'ছোট কবি' একটি চমৎকার কবিতা। 'নদী- বিষয়ক' কবিতাটি গাঢ় অনুভূতি ও মৌলিক ভাবনায় আচ্ছন্ন - এই বইয়ের সবচেয়ে আত্মমগ্ন বিধুর কবিতা এটি। 'কাঁসাই' পড়লে চোখে জল আসে, ' ভৈরববাঁকি' আমাদের কতদূরে, কোথায় নিয়ে চলে যায়। নদী সম্বন্ধে ক'টা কবি এরকম ভাবতে পারেন?
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। কখনো কলকাতায় এলে আমাদের বাড়িতে আসবেন। বাড়ির সকলকে আমার শুভেচ্ছা দেবেন ও আপনি নেবেন। চিঠি লিখবেন।
               দেবারতি মিত্র।

   নিজের জন্মভূমি - বাঁকুড়ার লালমাটিতেই তিনি বড় হয়েছেন, শিক্ষালাভ করেছেন। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কেটেছে মালভূমি ও জঙ্গলঘেরা দেশের গভীর অনুষঙ্গে। পরবর্তী কালে কলেজে পড়া ও বেঁচে থাকার জীবিকা ঝাড়গ্রাম শহরে। জন্মভূমি ও অন্নদাত্রী শহরের প্রকৃতি মোটামুটি একই রকম। আর এই দুই জায়গা দিয়ে প্রবাহিত নদী তাঁর শরীরের শিরা ধমনীর মতো। ভৈরববাঁকি তাঁর মাতৃভূমির নদী, কাঁসাই- এর অবস্থান বাড়ির কাছেই তার ওপর এই নদীর তীরেই তাঁর  মামাবাড়ি। তারাফেণীও এই অঞ্চলেরই। ভৈরববাঁকি ও তারাফেণীর  উৎপত্তিস্থলও তাঁর বাড়ির কাছাকাছি এক পাহাড় থেকে। ফুলকুশমা ঝিলিমিলি সড়ক ধরে ঝিলিমিলির দিকে এগিয়ে গেলে সেরেংসগড়া নামে এক  পাহাড় জঙ্গল ঘেরা গ্রাম পড়বে। যেখানে গেলে মনে হবে ঈশ্বরের দেশ। তার পাশে এক সুউচ্চ বিস্তীর্ণ পাহাড়ের একদিক থেকে ভৈরববাঁকির উৎপত্তি, অন্যদিক থেকে তারাফেণীর উৎপত্তি। ডুলুং ও সুবর্ণরেখাও ঝাড়গ্রামের কাছাকাছি অঞ্চল দিয়েই বয়ে চলেছে। সুবর্ণরেখার তীরেই আবার তাঁর শ্বশুরবাড়ি। এই নদীগুলির সঙ্গে যেন তাঁর রক্তের সম্পর্ক। এসব জায়গার মাটি ও মানুষ নিয়েই তাঁর পৃথিবী। এই সূত্রেই  কবিতার জগতের সঙ্গে, রূপের জগতের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর হৃদয়ের সান্নিধ্য তাঁর অন্যতম প্রস্তুতি, তাঁর প্রজ্ঞা ।

  যে পৃথিবীটা সুন্দরভাবে বিছানো আছে, সংবেদনশীল এক সূক্ষ্ম মনের মানুষ হিসেবে সহজভাবে সেই পৃথিবীর কথা বলেছেন, সেই পৃথিবীটাকে আমাদের দেখাতে চাইছেন। অথচ এই ভাঙাচোরা অসুস্থ পৃথিবীর মাঝখানে বসে তিনি কীভাবে পেলেন এত সমুদ্র সমান ভালোবাসা, বিশ্বাস, এই অপরিসীম আশার ধারাবাহিক স্রোত তা ভেবে আশ্চর্য হতে হয়‌। 'আবহ সকাল'(১৯৮৪), 'ধৃতরাষ্ট্রের মা' (১৯৮৯), 'অতিবর্তী জাগো' (১৯৯১), 'দ্বিতীয় সঙ্কেত' (১৯৯২), 'আলোক শিশির' (১৯৯৩), 'মাটির মন' (১৯৯৫), 'ঘাস রঙয়ের আকাশ' (১৯৯৮), '৪৮ বছরের স্বীকারোক্তি' (২০০৩)(‘যুদ্ধের বিকেল’ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর মৃত্যুর পর) - এই পথ প‍রিক্রমায় ধরা আছে সেই ইতিহাস। এর পরই আচমকা মাঝপথে থেমে গেল তাঁর এই ভালোবাসার দিনলিপির হৃদস্পন্দন। এই পথেই আমরা একটু একটু করে তাঁকে ছুঁতে চাই…
                                      (ক্রমশ)

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

1 Comments

  1. 'আমি যে দেখেছি নদী তোমার বালিতে/ অস্ত সূর্য ভুলে গেছে সন্ধ‍্যাবাতি দিতে' ― 'ঈশ্বর থাকেন জলে' সেই জল সরে গেলে ভাঙাপথে গান শোনা যায় তাঁর, দিলীপের কান দিয়ে সকল আত্মার

    ReplyDelete