জ্বলদর্চি

ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ৮২

 ছোটোবেলা বিশেষ সংখ্যা - ৮২



সম্পাদকীয়,
দেখব এবার জগৎটাকে। কেমন করে? সেটা বলব বলেই আজকের সংখ্যা। মলয় জেঠুর লেখা শুরু হচ্ছে এই সংখ্যায়। আমেরিকার একটা উপত্যকার কাহিনি আছে সেটায়। রহস্যের গন্ধ পাচ্ছ কি?  আরে দেখ দেখ পুরুলিয়ার সুদীপ আঙ্কেলের পাঠনো ছবিটায় প্রচ্ছদের পাখিটা কেমন ফুলের ওপর বসে আমাদের গল্প শুনছে। গল্প শোনা হয়ে গেলেই ও উড়ে  যাবে জগৎ ভ্রমণে । ইস, আমার যদি ঐ পাখিটার মতো দুটো ডানা থাকতো!  আরে বাবা ঐ পাখিটার মতো না হলেও গঙ্গা ফড়িং এর মতো হলেও ডানা হলেও হবে।গৌরাঙ্গ জেঠুর বাগানের ফড়িং টা কি সুন্দর ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু খায়, গল্প করে। ইচ্ছেমতো যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে। আমি যদি ওর মতো জগৎ টার যেখানে খুশি যেতে পারতাম তাহলে কোথায় যেতাম জানো? ইউক্রেন। সেখানে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ হচ্ছে। এই যুদ্ধটা কেমন তা রাশিয়া থেকে আমাদের ছড়ার মাধ্যমে লিখে পাঠিয়েছে তথাগত কাকু। সেখানে গিয়ে সেই যুদ্ধ যাতে থেমে যায় তার ব্যবস্থা করতামই করতাম। কিভাবে? কেন অনন্যা যেভাবে ছড়ায় লিখেছে  - ভালোবেসে। কি ভাবছো তো, মৌসুমী আন্টি মুখেতেই জগৎ মারছে। তা ভাব, তবু আমি জয়াবতীদের মতো ঘোড়া চড়ে জগৎ দেখতে বেরিয়ে পরব। তৃষ্ণা আন্টির লেখা উপন্যাসের জয়াবতীই আমাকে এই সাহস দিয়েছে এই তিন মাস ধরে। আর বীর পুরুষের ছেলেটাকে মনে আছে? যে মাকে নিয়ে যাচ্ছিল অনেক দূরে? তার কাছ থেকেও সাহস পেয়েছি। ডাকঘরের অমলকে চেন তো? জানলা দিয়েই যে জগৎটাকে দেখতো? দেখতে চাইলে জানলা দিয়েও কিন্তু জগৎ দেখা যায়। দেখার চোখ চাই শুধু। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু শুধু যে দেখেছেন তা নয়, আমাদের সকলকে অমল, সুধা, সকলের কথা লিখে দেখিয়েছেন। তাই তো তিনি   বিশ্বকবি। এবারের সংখ্যায় পীযূষ আঙ্কেল তাঁর কলমে আমাদের রবি ঠাকুরকে আবার চিনিয়েছেন। কেন? কারণ কাল তাঁর জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনে তাঁর সৃষ্টি দিয়েই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই, "চিরবন্ধু চিরনির্ভর চিরশান্তি, তুমি হে প্রভু..."🙏      মৌসুমী ঘোষ।


ধারাবাহিক উপন্যাস
জয়াবতীর জয়যাত্রা
চতুর্দশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক
 
১৮
 
প্যকাটি আসার পর তাদের যাত্রা শুরু হল।
লাগাম ধরে বসেছে জয়াবতী, পেছনে পুণ্যি, আর সবার শেষে প্যাকাটি মানে পানু, শ্রীমান প্রাণনাথ সেন । এখন দুপুর বেলা। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ ঘরের মধ্যে ঘুমুচ্ছে। কেউ কেউ দালানে গামছা বা শাড়ির আঁচল পেতে ঘুমুচ্ছে। খাঁচার পাখি, জলের মাছ, গাছের ডালে বাঁদর সবাই ঘুমুচ্ছে। ঘুম নেই শুধু এই তিনজনের চোখে। পানু এর আগে একবার  দুবার ঘোড়ায় চড়ে বাবার সঙ্গে ভিন গাঁয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু তাতে আনন্দ কিছু ছিল না। বাবার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হত। এবার এই মেয়েদুটো, যদিও জয়াবতী বেজায় ঠ্যাঁটা, তবু এদের সঙ্গে বেরোতে পেরে  তার খুব ভালো লাগছিল। সুবিধে হচ্ছে এরা দুকথা বললে সেও এককথা শুনিয়ে দিতে পারে, ওরা দুঘা মারলে সেও এক ঘা বসিয়ে দিতে পারে। বাবার সঙ্গে তো আর সেসব চলবে না। সারাক্ষণ এটা করো না, ওটা করো না। ঘোড়ার পিঠে চাপলে যাই বলো, নিজেকে বেশ রাজা গজা বলে মনে হয়। এখন নাকি দেশে সত্যিকারের রাজা বলে কেউ নেই।দিল্লিতে মুঘলদের কিছু আর পড়ে নেই। এদিকে  আলিবর্দি খাঁ মুর্শিদাবাদে বসে  বাংলা শাসন করবে কি, বর্গীদের সঙ্গে যুদ্ধু করেই শেষ।

এইসব ভাবছিল আমাদের পানু, বাবার কাছ থেকে ছেঁড়া ছেঁড়া জ্ঞান তার। হঠাৎ কে যেন চেঁচিয়ে উঠল বর্গী! বর্গী! ওরা চমকে দেখল একটা ছোট ছেলে, কঞ্চি হাতে এই ঠাঠা রোদে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, ওদের দেখে ভয়ে চেঁচিয়ে উঠেছে বর্গী! বর্গী! তা ভয় পাবারই কথা। তিনজনের মাথা মুখ গামছায় ঢাকা, কোমরে একটা করে আবার লাঠি। কাজল দিয়ে পানু আবার গোঁফের রেখা এঁকেছে। পানু ফিসফিস করে জয়াবতীকে বলল, ‘শিগগির সামনের পোড়ো মন্দিরের পাশ দিয়ে ঢুকে যা। ওদিক দিয়ে শ্মশানের পথ কিনা, কেউই আসবে না’
পুণ্যি আঁতকে উঠে বলল ‘বাবাগো শ্মশান! কাজ নেই গঙ্গাজল, ঘোড়া ঘুরিয়ে বাড়ি চল’
পানু দাঁত খিঁচিয়ে বলল ‘বাড়ি চল। এই না হলে মেয়েমানুষের বুদ্ধি! দেখলিনি ওই ছেলেটা ছুটতে ছুটতে সবাইকে খবর দিতে গেল। সবাই লাঠিসোঁটা, ঢিল নিয়ে তৈরি থাকবে। এ পথ দিয়ে ফিরলে বেঘোরে প্রাণ যাবে। শ্মশানে নদীর ধার দিয়ে একটা পথ আছে। একটু খানাখন্দ যদিও। কিন্তু ওপথে বড় একটা কেউ আসে না’
পুণ্যির মুখ শুকিয়ে গেল। কার মুখ দেখে উঠেছিল যে আজ। ওহ, গঙ্গাজলের মুখ দেখেই যেমন ওঠে তেমন উঠেছিল। কিন্তু ওর কথায় রাজি হওয়াই গুখুরি হয়েছে।
মনে মনে যার মুণ্ডুপাত করছে সেই জয়াবতী ততক্ষণে ভাঙ্গা মন্দিরের পাশ দিয়ে ঘোড়া নিয়ে চলেছে। তার শিরায় শিরায় উত্তেজনা। নদী, নদী দেখবে সে এতদিনে! ভাগ্যিস এল, নইলে পুকুর দেখেই মরতে হত জীবনে। সে ভারিক্কি গলায় বলল  ‘শ্মশান কত পুণ্যের জায়গা তা জানিস পুণ্যি? সবতাতেই তোর ভয়! এই ঠাঠা দুপুরে তোর জন্যে ভূত পেরেত ঘুরে বেড়াবে? তেনারা রাতের দিকে বের হন, চোখে আলো পড়লে সহ্য হয় না জানিসনি বুঝি?’

পুণ্যি ভয়ে ভয়ে বলল ‘তাহলে সেই শোলোকটা কি মিথ্যে?’
‘কোন শোলোক?’
‘সেই যে ঠিক দুক্কুরবেলা, ভূতে মারে ঠেলা, ভূতের নাম রসি হাঁটু মুড়ে বসি’
‘আরে ওসব দস্যি ছেলেপুলেদের ভয় দেখিয়ে ঘরে রাখার জন্যে। দেখলি না ওই ছেলেটা চেঁচিয়ে কী কাণ্ড করল। দুপুরে ঘরে ঘুমুলে তো আর কোন ঝঞ্ঝাটই হত না। আর প্যাকাটি, মেয়েমানুষের বুদ্ধির যে খুব নিন্দে করিস? এই মেয়েমানুষের বুদ্ধিতেই তোদের অষ্টধাতুর গোপাল ফিরে পেয়েচিস, এর মধ্যে ভুলে গেলি? আর আমাদের হাতে পায়ে ধরেই তো বেড়াতে এসেছিস। পুণ্যির তো দয়া শরীর। আমি তোকে কখখনো আনতাম না, তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি’
একটা ঝগড়া লেগে যেত, কিন্তু হঠাৎ ওদের কানে এল ঢাক ঢোল আর শোরগোলের আওয়াজ।
পুণ্যি অবাক হয়ে বলল ‘আজ তো কোন পুজোর তিথি নয় রে, এসব ঢাকের আওয়াজ কীসের?’      
জয়াবতী বলে  ‘শ্মশানকালীর পুজো হয়তো’
পানুর কিন্তু মুখ শুকিয়ে গেছে আওয়াজে। সে ভয় পাওয়া গলায় বলে ‘পালাই চল, এ হচ্ছে সতীদাহের বাজনা। জানি আমি’।
(ক্রমশ)


যুদ্ধচর্চা
তথাগত বন্দ্যোপাধ্যায়
 
রাশিয়া, ইউক্রেনেতে লেগে গেছে যুদ্ধ,
তা নিয়েই ভীত লোকে ধরাধাম শুদ্ধ।
এই নিয়ে বৈঠক শুরু হলো দোকানে,
বিভিন্ন মত আসে ক্রমাগত দু-কানে।
আসলে কি যুদ্ধ এ ইউক্রেন-রাশিয়ার!
নাকি বলি ইউক্রেন, রাশিয়া-আমেরিকার!
যুদ্ধের বিপক্ষে দেয় কেউ যুক্তি,
কেউ বলে যুদ্ধেই আসে ঠিক মুক্তি।
 
ছিলেন উপস্থিত শতোর্ধ্ব বৃদ্ধ,
অভিজ্ঞতায়, জ্ঞানে ঠাসা, সমৃদ্ধ।
যুদ্ধ কিভাবে লাগে, হয় কি কি ধরণের,
বলেন যা হলো দেখা আগে তাঁর মরণের-
"রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয়, আর্থিক লোভেতে,
প্রতিরক্ষা, ঔপনিবেশিক ক্ষোভেতে,
হতে পারে যুদ্ধ বা হামলা, আক্রমণ,
সীমা টেনে যুদ্ধ বা সীমা-অতিক্রমণ।
গৃহযুদ্ধ বুঝেছি বৌ পেয়ে ক্রুদ্ধ,
গোরিলা-, মল্ল-, কূট-, বায়ু-, নৌযুদ্ধ;
আজকাল দেখি বেশি অজা-, বাগ্‌-যুদ্ধ,
দেখে, শুনে, বুঝে তাই ক্রন্দন রুদ্ধ।
অপপ্রচার চলে ঠাণ্ডা লড়াইয়ে,
কোনো কোনো দেশ বাঁচে যুদ্ধে, বড়াইয়ে।
উন্নত প্রযুক্তি, আসে চাকরিও তো,
দু বিশ্বযুদ্ধেরই কতোনা উপজাত -
রক্ত-ভাণ্ডার আর রক্ত-সঞ্চারণ,
ভিন দেশে ভিন দিবালোক সংরক্ষণ;
রাডার, বৈদ্যুতিন-কম্পিউটার, জেট,
ইস্পাতও এসেছিলো ফ্লু-এর টিকা সমেত।
হিরো, হেরো উভয়েরই জীবনযাত্রাতে,
পরিবর্তন আসে অন্য মাত্রাতে।
বৈঠকে ঠকে, ঠকে না এলে প্রশান্তি,
পড়ে থাকে যুদ্ধই, হেসে ওঠে ক্রান্তি।
মৃত্যু ছাড়া কি বলো এ জীবন সার্থক!
তেমনই শান্তি মাঝে সাঝে রণ-প্রার্থক।"

যুদ্ধ-বিরোধী দল শুনে হয় চাঙ্গা,
স্বমত প্রকাশে শুরু হয় বাগ্‌-দাঙ্গা -
"কে যে কার অধিকার, কে যে কার বশ্য,
তা মেটাতে প্রজাদের মৃত্যু অবশ্য!
এমনিতে অতিমারিতেই ছিল জেরবার,
যুদ্ধ লাগলে তায় ক্ষয়-ক্ষতি সব্বার।
অগণিত প্রাণহানি, মানহানি, মামলাও,
আমদানি, রপ্তানি রদে ঠ্যালা সামলাও।
অর্থনীতিই পড়ে যায়- শুধু তাই নয়,
আন্তঃদেশীয় ডোরের ছেঁড়াছিঁড়ি হয়।
দেনা বাড়ে, কর বাড়ে, বাড়ে উদ্বাস্তু,
নেতা, মন্ত্রীরা ভাবে প্রজা জড় বস্তু।
মানসিক অবনতি, প্রাকৃতিক ক্ষতি হয়,
কবিরা সরব হন – 'পৃথিবী বাসের নয়।'
দেশ ভালোবেসে গেছে যুদ্ধে যে সৈন্য,
যে গেছে পেটের দায়ে, দশা ছিল দৈন্য;
কারোরই গুলিতে জীবন লেখা থাকেনা,
দ্রুততায় আবেগের অবকাশ রাখেনা।
শত্রু দেশেতে ফেলা বোমার তাণ্ডবই-
মারবে তাদেরই কারো পুরোনো বান্ধবী।
বিজ্ঞানে তিল তিল করে এগিয়েছি যা,
যুদ্ধে পিছোয় সেই এগোনো সভ্যতা।"

পাশ থেকে মৃদুভাষী মাধাইদা আগিয়ে,
হাসি মুখে ঝাড়ে জ্ঞান ঝগড়ায় না গিয়ে-
"ক্ষমতার লড়াইয়ে জেতে যদি অসুরে,
প্রজাকে মরতে হয় জুলুমে জ্বলে-পুড়ে।
ধরা যাক- অচিন্ত্য কাজে গেলো রাশিয়ায়,
যুদ্ধ লেগেছে দেখে কাজ ফেলে কাজিয়ায়-
জড়িয়ে সে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাবে কি?
গেলে তার কাজ যাবে, কাজ গেলে খাবে কি!
স্বদেশ অপরাজিত, না হলে যুদ্ধে ক্ষত,
কজন আর থাকে বলো যুদ্ধ থেকে বিরত।
স্বপক্ষে, বিপক্ষে -ভুলে যাবে কে কা'তে,
সত্যি যুদ্ধ শুরু হলে কোলকাতাতে।"

রঙ্গন ও গঙ্গাফড়িং 
গৌরাঙ্গ দাস

অনেক সময় নিয়ে ,মাথার উপর উড়ছে গঙ্গা ফড়িংটা। ব্যাপারটা বুঝতে পারছিনা, এক সময় অনুভব করলাম ফড়িংটা আমায় কিছু বলছে ।
প্রশ্ন করলাম - কিছু বলছ ভাই।
ফড়িং বলল-তোমার ফুল বাগানের -গাঁদা ফুল গাছে ফুটে থাকা ফুলের উপর একটু বসবো?
প্রশ্ন করলাম-কেন,তুমি কি উড়ে উড়ে খুব ক্লান্ত ?
ফড়িং বলল- না আসলে ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে ।ওর সঙ্গে একটু কথা বলতাম, ভাব করতাম ।ওকে আমাদের পাড়ায় আসবার আমন্ত্রণ জানতাম।
আমি বললাম -ও যাবে কি করে,ওতো ডালের সঙ্গে আটকে আছে ।
ফড়িং বলল- সে আমি বুঝি তবুও এই বলাটা মনের আন্তরিকতা ,আমিতো সারা দিন উড়ে বেড়াই, আর যাকে ভালো লাগে, তাকে আমন্ত্রণ করি আমাদের পাড়ায় আসতে । আমাদের পাড়াটা একদম সবুজ ঘাসে ঢাকা পড়া।কচি কচি ঘাস। আমরা ঐ ঘাসের জমিতেই থাকি। আমাদের পাড়ার চারিদিকে কৃষ্ণচূড়া আর রাঁধাচূড়া গাছ ।কয়েকটা শিরিশ পলাশ শিমুল গাছও ছিল ।ওরা আজ ক'বছর আর নেই, ক'বছর আগে মামা বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ছিলাম ক'দিনের জন্য ,ফিরে এসে দেখি -গাছ গুলো কারা কেটে নিয়ে গেছে। 
কেন যে কাটল বুঝতে পারলাম না।একটা কথা বলবো তোমায় ?
প্রশ্ন করলো ফড়িং।
বললাম-বলো।
ফড়িং বলল-আজ সন্ধ্যা অবধি তোমাদের উঠোনে একটু থাকতে দেবে?আমার খুব পছন্দ হয়েছে জায়গাটা।
কত কত টবে তুমি ফুল পাতাবাহার গাছ লাগিয়েছ,কি সুন্দর হাসছে ওরা। মাটিতে লাগান তোমার কামিনি ফুল গাছটা, কুড়িতে ভরে গেছে ।সন্ধ্যা হলেই ফুল ফুটবে একটু সুরভি নিয়েই চলে যাবো। তাছাড়া আজ আমাদের পাড়ায় একটা মিটিং চলছে , মাইকে মাইকে কানের পর্দা ফাটাবার উপক্রম ছাড়াও , গাড়িতে গাড়িতে ছয়লাপ ।গাড়ির ধোয়ায় পাড়াটা দূষণে ভরে গেছে । যদিও মিটিংটা দূষণ সংক্রান্ত। পরিবেশ বাঁচাবার জন্য ,নানান বড় মাপের বক্তারা এসেছেন ।যে যার মতো করে মতামত জানাবেন।কেউ বলবেন সুন্দরবনের ভবিষ্যত নিয়ে, হিমালয় থেকে বরফ গলবার কারণ,কেউ বলবেন দাবানলের উৎস কি ?
কেউ বলবেন পৃথিবীর ফুসফুস আমজান নিয়ে।শুনলাম সেই ছোট্ট মেয়েটি যে পার্লামেন্টের সামনে একা একা প্ল্যাকাট নিয়ে বসে থাকতো স্কুলে না গিয়ে, দূষণ মুক্ত পৃথিবীর জন্য সোচ্চার ছিল সেই মেয়ে -গ্রেটা থুনবার্গ ও আসছেন ।সন্ধ্যা হলেই তো মিটিং শেষ হয়ে যাবে , তখন আমি ফিরে যাবো ,এ সময় টুকুর জন্য তোমার অনুমতির অপেক্ষা ,যদি এতটা সময় থাকবার অনুমতি দাও , তা হলে ভালই কাটবে আমার সময়টা।কেন না, আমি তোমার লাগান গাছগুলোর সঙ্গে কথা বলতে পারবো । সবাই কে আপন করে তুলবো, তোমাদের তুলসী মঞ্চটা তেও বসবো, কি সুন্দর বানিয়েছ,গাছটাও কত সুন্দর ,কত মঞ্জরী হয়েছে ;মঞ্জরীর গন্ধটাকে অনুভব করবো। সময়টা কেটে যাবে সুন্দর । পাড়ায় ফিরে -সবাইকে তোমাদের গল্প বলবো ।ও-বড্ড ভুল হয়ে গেছে ,তোমার নামটাইতো জানা হয়নি।
কি নাম তোমার ভাই?
বললাম-রঙ্গন।
ফড়িং বলল-খুব সুন্দর নাম ঐ নামের ফুলের রঙ টাও খুব সুন্দর ।
       ভাই কামিনী ফুলের গন্ধ বের হচ্ছে , বুঝতেই পারিনি সন্ধ্যা হয়ে গেছে ।আসলে লাইট পোস্টের আলোয় বোঝার উপায় নেই -দিন না রাত ।কিছু মনে করোনা ভাই ,তোমার অনেকটা সময় নষ্ট করে দিলাম ।
     বললাম-না না, বরং তোমার জন্য ভালোই কাটলো আমার বিকেল ও সন্ধ্যেটা ।এখন থেকে সময় পেলেই তুমি বিকেল বিকেল এসো ,গল্প করবো ।তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে । পারলে তুমিও তোমার বন্ধুদের নিয়ে এসো ।
      ফড়িং বলল -ঠিক আছে ভাই ,তোমার কথা ভীষণ ভাবে মনে রাখবো, তোমাকেও একদিন আমাদের পাড়ায় যাবার নিমন্ত্রণ করবো ,যাবে কিন্তু ।আজ তবে আসি ভাই,ভালো থেকো ,সাবধানে থেকো।



ভালোবাসার ঘর 
অনন্যা মৈত্র 
বি এ প্রথম বর্ষ ( সাম্মানিক ইংরেজি ) 
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়


আজ মিলেছি আমরা কজন এসে
এই আমাদের নৌকো বাঁধার ঘাট 
নদীর বুকে হঠাৎ জেগে ওঠা
মুঠোয় ভরা আকাশতলির মাঠ।

এই ঘাটেতেই প্রথম রাখী বাঁধা 
এই ঘাটেতেই হাতের উপর হাত 
উজান-ভাটির ঢেউয়ের দোলায় এসে
এক হয়েছি আমরা অকস্মাৎ।

পরিচয়ের একটুখানি দ্বীপ 
স্বপ্নে সবুজ এই আমাদের চর
জীবনজোড়া পারাপারের মাঝে
আজ পেয়েছি ভালোবাসার ঘর।



ধারাবাহিক ভ্রমণ
মৃত্যু উপত্যকার গহ্বরে
পর্ব ১

মলয় সরকার

নামটা শুনেই কেমন গা ছমছমে ভাব আসছে না? বেশ ভূতুড়ে ভূতুড়ে লাগছে তো? ভাবছ সবাই, এরকম গল্প তো অনেক পড়েছি শুনেছি।কিন্তু ওগুলো তো সবই সত্যি সত্যি নয়, গল্পই।অবশ্য, ভূতুড়ে গল্প পড়তে ভালই লাগে, সত্যি সত্যি ভূত নেই জেনেও। চুপি চুপি বলি, তোমাদের যেমন ভূতের গল্প পড়তে ভাল লাগে, আমারও খুব ভাল লাগত ছোটবেলায়, যদিও এখন আর পড়া হয়ে ওঠে না।

যাক সে কথা।আমি কিন্তু এখন যে কথার ঝুলি নিয়ে বসেছি, তা কিন্তু, যতই ভয় ধরানো হোক, বা আশ্চর্যের হোক, এর এক বিন্দুও বানানো গল্প নয়।সবটাই নিছক সত্যি, জলের মত সত্যি।পৃথিবীর অনেক অনেক ঘটনা, অনেক অনেক জায়গা আছে যা গল্পের চেয়েও বেশি সত্যি, বেশি আশ্চর্যের। 

এরকমই একটা জায়গার কথা তোমাদের জানাতে বসেছি, যেখান থেকে আমি  নিজে ঘুরে এসেছি এবং ভয়ে ভয়ে প্রাণ হাতে করে নয়, প্রাণ ভরা আনন্দ নিয়ে, আশ্চর্য অভিজ্ঞতা নিয়ে। সেই আনন্দই তোমাদের সাথে আজ ভাগ করে নেব। 

হ্যাঁ, সেই জায়গাটার নাম , ঠিকই পড়েছ, “মৃত্যু উপত্যকা” ইংরাজীতে “ডেথ ভ্যালি”। এটি আমেরিকা মহাদেশেই রয়েছে ক্যালিফোর্ণিয়া এবং নেভাডা প্রদেশের মধ্যে। আমি আসলে গিয়েছিলাম কাছেই একটি জায়গায়। সেটির আবার আলাদা বিশেষত্ব আছে, সেটি হল নেভাডা প্রদেশের লাস ভেগাস । এর বিশেষত্ব হল দু’রকম। এটি আমেরিকা মহাদেশের প্রায় শুষ্কতম শহর, অথচ এর খ্যাতি হল জুয়া খেলা, খাওয়া , ফূর্তি, বিচিত্র দামী দামী হোটেল আর ঊচ্ছ্বল জীবনের জন্য।এর জন্যই সারা পৃথিবীর লোক এখানে আসে মজা করতে। হ্যাঁ, জুয়া খেলা আর মজা করার জন্যই একটা শহর, তাও মরুভূমির মাঝে।

থাক, এখন, এর কথা পরে সুযোগ পেলে বলব।

সেই লাস ভেগাসের থেকে খুব বেশি দূরে নয় এই মৃত্যু উপত্যকার দেশ, মাত্র ২১০ কি মি বা দু ঘন্টার গাড়ী দূরত্বে।কাজেই এমন একটি সুযোগ না ছেড়ে ঘুরে আসাই স্থির হল।আমরা গিয়েছিলাম আমাদের পরিবারের সবাই মিলে।

আগে এই জায়গাটার সম্বন্ধে কিছু কথা তোমাদের বলে নিই। তাহলে মোটামুটি তোমাদের একটা ধারণা হবে এই জায়গাটার সম্বন্ধে।এর ভৌগোলিক গুরুত্ব সত্যিই একটু অন্য ধরণের।এর মাটি এবং আবহাওয়ার বিপরীত মুখী চরিত্র ও ঘন ঘন পরিবর্তনশীল প্রাকৃতিক অবস্থা বিজ্ঞানীদের কাছে এর আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে।

এটি যদিও উত্তর আমেরিকার  সবচেয়ে গরম জায়গা, কিন্তু শীতকালে পাহাড়ের চূড়ায় জমে বেশ বরফ; যদিও শুষ্কতম জায়গা, অল্প যা বৃষ্টি হয় তাতেই ছোট ছোট জলাশয় তৈরী হয়ে সেখানে খেলা করতে থাকে হরেক রকম ছোট ছোট মাছ । শুধু তাই নয়, শুষ্কতম  মরুভূমির মত আবহাওয়াতেও হাসতে থাকে  মনভোলানো হাসি নিয়ে নানা রকমের সুন্দর সুন্দর বুনো ফুল এবং তাতে খেলে বেড়ায় নানা ধরণের পাখি, কীট পতঙ্গ। এটি যেহেতু আমেরিকার দুটি শুষ্কতম প্রদেশ, ক্যালিফোর্ণিয়া এবং নেভাডার মধ্যে, কাজেই এখানে মরুভূমির আবহাওয়া হওয়াই স্বাভাবিক এবং তাই এটি  শুধু আমেরিকার নয়, সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে গরম জায়গা। এখানে গরমকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠে প্রায় ৫৬-৫৭ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড, যা আমরা এখানে বসে ভাবতেই পারি না।

  আমরা যখন গিয়েছিলাম, তখন অবশ্যই তাপমাত্রা এরকম নয়, তাহলে যেতেই পারতাম না। এখানে যেতে গেলে সেগুলো দেখে, সময় বুঝেই যেতে হয়। আমরা গিয়ে ছিলাম লাস ভেগাস থেকে একটা গাড়ী নিয়ে। খুব সকাল সকালই বেরোনো হয়েছিল হোটেল থেকে।এখানে বৃষ্টিও প্রায় হয় না, সারাবছরে মাত্র দু ইঞ্চির মত। সেটাও তোমরা ভাবতেই পারবে না, যে কত কম। তাই সব কিছুই এখানে শুকনো।

  লাস ভেগাস থেকে  চমৎকার ফাঁকা ঝকঝকে পরিষ্কার রাস্তা।গাড়ী ছুটল দুরন্ত গতিতে।আর ওখানে রাস্তা অনেক ফাঁকা থাকার জন্য গাড়ী চলে আমাদের কোলকাতার বা সাধারণ রাস্তার থেকে অনেক বেশী গতিতে, প্রায় ১০০-১২০ কি মি গতিতে। আকাশও ঝকঝকে পরিষ্কার, উপরে একেবারে ঘন নীল আকাশ আর তার উপরে সোনালী রঙের রোদ।বেড়ানোর পক্ষে একেবারে উপযোগী আবহাওয়া। আমার তো মনে হল গান ধরি, সেই বিখ্যাত গান, “ ও আকাশ সোনা সোনা, ও মাটি সবুজ সবুজ–”।নাঃ,মাটি মোটেই সবুজ নয় আর তাছাড়া নিজের গানের গলার কথা ভেবে আর চেষ্টা করলাম না। রাস্তার দুপাশে, মানুষ না হোক, বুনো প্রাণী জমে যাওয়াও আশ্চর্যের কিছু নয়।

 রাস্তার দুধারে রয়েছে এখানে ওখানে যে ছোট ছোট ঘাসের ঝোপ রয়েছে তার শুকনো খড়ের মত রঙ, কোথাও কোথাও অবশ্য কিছুটা সাদাটে। দূরে রয়েছে শুকনো, গাছপালাহীন পাহাড়ের সারি, তার গায়ে নানা রকমের রঙ খেলা করে যাচ্ছে, কখনও সোনালী, কখনও লালচে আবার কখনও বেগুনী।সবুজের কিন্তু কোন চিহ্নও বিশেষ দেখছি না। না পাহাড়ে না মাটিতে।পাহাড়গুলো যে খুব উঁচু তা নয়, তবে একেবারে খুব ছোট যে, তাও নয়। আমার মনে হল, তোমাদের মত যারা ছোট তাদের কাছে তো ফাঁকা জায়গা, ফাঁকা মাঠ খুব কম, যদি এরকম একটা দিগন্তে ঠেকে যাওয়া ফাঁকা মাঠ, যার একদিকে শুধু রঙীন পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই, দিয়ে দেওয়া যেত তোমরা কি করতে। হয়ত বেশ খানিকটা ছুটোছুটি করে নিতে, কিংবা মনে হত ঘুড়ি ওড়াই প্রাণ খুলে, কিংবা আবার হয়ত কেউ বসে যেতে রঙ তুলি নিয়ে সত্যিকারের নীল আকাশ আর পাহাড়ের ছবি আঁকতে অথবা গান ধরতে গলা ছেড়ে । বেশ একটা ছুটি ছুটি মজা হত। আমারও হচ্ছিল, কিন্তু কি আর করি, গাড়ীতে বসেই দেখতে দেখতে মনে মনে সব রঙীন ছবি ভাবতে ভাবতে চললাম।

  যেতে যেতেই পরিচয় হল এখানকার এক স্বাভাবিক অধিবাসীর সঙ্গে, যারা এখানে থেকেই অভ্যস্ত। এখানে থাকার একটা বড় ব্যাপার হল, জল তো এখানে প্রায় পাওয়া যায় না, আগেই বলেছি, বৃষ্টিই হয় সারা বছরে মোট দু ইঞ্চির মত, কাজেই এখানে থাকতে হলে জল ছাড়াই থাকার অভ্যাস করতে হবে। আর তাই এখানে যারা থাকে তারা প্রায় সবাই জল ভীষণ ভীষণ কম খেয়েই অভ্যস্ত, এবং তেমনই, যেটূকু জল পাওয়া যায় সারা বছরে, তাকে ভীষণ কৃপণের মত অনেক বুঝে বুঝে খরচা করতে হয়। এই অধিবাসীরা হল, কোয়োটে (এক ধরণের শেয়াল), বাঁকানো শিং এর পাহাড়ে চড়া ভেড়া, ছোট বাঘের বা বড় বেড়ালের মত মাউন্টেন লায়ন, বালির কচ্ছপ, কিছু ইঁদুর জাতীয় প্রাণী বা খরগোশ ধরণের ছোট প্রাণী এইসব।এর মধ্যে কচ্ছপরা তো জল খরচ বাঁচানোর জন্য প্রায় সারাবছর ঘুমিয়েই কাটায়। তোমাদের যদি এই রকম জায়গায় থাকতে হত, ভাব , কি অবস্থা হত।আনন্দ হত সত্যিকারের,  না, জল তেষ্টা পাওয়ার ভয়েই অর্ধেক হয়ে যেতে। সেই  জন্যেই তো এর নাম মৃত্যুপুরী।মানুষ কি একেবারেই নেই? আছে, সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী মোট ৫৭৬ জন মানুষ থাকে, যারা এখানকার আদিবাসী। তাদের নাম টিম্বিশা শোশোন (Timbisha Shoshone)।
(ক্রমশ)


স্মরণীয়
(কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কলমে - পীযূষ প্রতিহার

১৮৬১ সালের ৭মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু এবং মাতা সারদা সুন্দরী দেবী। পিতা দেশভ্রমনে কলকাতার বাইরেই থাকতেন বেশীরভাগ সময় তাই রবীন্দ্রনাথের ছোটোবেলা কেটেছিল গৃহপরিচারক ও পরিচারিকাদের অনুশাসনের মধ্যে। ছোটোবেলায় ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলের মতো কয়েকটি স্কুলে কিছুদিন করে পড়লেও বিদ্যালয় শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেননি মোটেও। জমিদার ও সংস্কৃতিবান পরিবার হওয়ায় মুক্ত চিন্তা ও নানাবিধ বিষয়ে আগ্রহের জন্য বিদ্যালয়ের পরিবর্তে বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছেই যাবতীয় বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। তাঁর জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি, মেজ ভ্রাতা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ভারতীয় আই সি এস, অপর ভ্রাতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার, বোন স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন ঔপন্যাসিক। মাত্র আট বছর বয়সেই প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর প্রথম কবিতা 'অভিলাষ' প্রকাশিত হয় মাত্র তেরো বছর বয়সে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ১৮৭৪ সালে। পিতা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে ভারতের নানা জায়গায় ভ্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পিতার কাছ থেকে শিখেছেন সংস্কৃত, ইতিহাস, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান। ১৮৭৩ সালে পিতার সঙ্গে হিমালয় ভ্রমণ তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। ১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকায় তাঁর লেখা 'মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা', 'ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী' এবং 'ভিখারিনী' ও 'করুণা' নামে দুটি গল্প ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বিশেষত 'ভানুসিংহের পদাবলী'।  ১৮৭৮ সালে ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি এবং লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও শেষ করেননি। এইসময় তিনি যে চিঠিগুলো ভারতী পত্রিকায় প্রকাশের জন্য লিখতেন সেগুলো পরবর্তী সময়ে ১৮৮১ তে 'য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র' নামে চলিত ভাষায় প্রকাশিত হয়। বাংলা চলিত ভাষায় লেখা প্রথম গদ্য এটিই। দেড়বছর পর দেশে ফিরে রচনা করেন 'বাল্মিকীপ্রতিভা'। এর পরে পরেই তিনি রচনা করেন 'সন্ধ্যাসঙ্গীত'(১৮৮২) ও 'প্রভাতসঙ্গীত'(১৮৮৩)। এই সময়েই লেখেন 'ছবি ও গান'(১৮৮৪), 'প্রকৃতির প্রতিশোধ'(১৮৮৪), 'কড়ি ও কোমল'(১৮৮৬), 'মায়ার খেলা'(১৮৮৮), 'মানসী'(১৮৯০) প্রভৃতি কাব্য। এর পাশাপাশি তাঁর 'বউঠাকুরাণীর হাট'(১৮৮৩) ও 'রাজর্ষি'(১৮৮৭) উপন্যাস সহ আরও নানা গদ্য এবং প্রবন্ধ এই সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ বাবার নির্দেশে নদীয়া(বর্তমান কুষ্টিয়া), পাবনা ও রাজশাহী জেলার সঙ্গে ওড়িষ্যার কিছু অংশের জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। শিলাইদহে থাকার সময়কালে তাঁর মধ্যে দেশের দারিদ্র, শিক্ষার হালহকিকত ও সাধারণ মানুষের জীবনধারা কাছ থেকে দেখার ফলে তাঁর লেখার মধ্যে এক নতুন ধরনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। এইসময় সাধনা পত্রিকায় প্রকাশিত ছোটগল্প ও প্রবন্ধগুলি প্রকাশিত হতে থাকে। 'শিক্ষার হেরফের '(১৮৯২) প্রবন্ধে তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষার জন্য জোরালো সওয়াল করেন। 'সোনার তরী', 'চিত্রা', 'চৈতালি', 'কল্পনা', 'ক্ষণিকা', 'কথা ও কাহিনী' কাব্যগ্রন্থ তিনি শিলাইদহের বাড়িতে থাকাকালীন রচনা করেন। তিনি ১৮৯৬ সালে কলকাতায় ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের যে সম্মেলন হয়েছিল তার উদ্বোধন করেছিলেন 'বন্দে মাতরম' গান গেয়ে। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থনে নানা কবিতা ও গান লিখেছেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সমর্থনে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেন এবং রাখীবন্ধন পালনের কথা বলেন। রাখীবন্ধনের দিনটিকে স্মরণ করে 'বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু বাংলার ফল/ পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান' গানটি লিখেছিলেন। তাঁর লেখা 'জন গন মন অধিনায়ক' এবং 'আমার সোনার বাংলা' গান দুটি যথাক্রমে ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। 'স্বদেশী সমাজ' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ দেশের যুবশক্তিকে আত্মনির্ভরশীল হতে আহ্বান জানান। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন তিনি। সেখানে দেবেন্দ্রনাথ যে ব্রাহ্ম মন্দির স্থাপন করেছিলেন(১৮৯২সালে) সেই স্থানেই তিনি একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন যার নাম দেন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। যা পরবর্তীতে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় ও আরো পরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ওঠে। এই ব্রহ্মচর্যাশ্রমের প্রধান সহায়ক ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় মহাশয়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রথম 'বিশ্বকবি' অভিধায় ভূষিত করেন। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়টিকে রবীন্দ্রনাথ দেশীয় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে জীবনমুখী ও আদর্শ শিক্ষাদানের ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। যেখানে পরে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের সঙ্গে ভারতের আতিথেয়তা, শিক্ষা চর্চা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উৎকৃষ্টতা, মানবপ্রেম প্রভৃতি আদানপ্রদানের কেন্দ্র করে তুলতে চেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু ( বৌঠান কাদম্বরী দেবী, কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী, পিতা দেবেন্দ্রনাথ, কবিপুত্র শমীন্দ্রনাথ) তাঁর মনে গভীর শোকের ভাব এনেছিল যা তাঁকে বেশ কিছুটা পরিবর্তন করে দেয়। এই পর্যায়ে 'নৈবেদ্য' কাব্য ও 'চোখের বালি', 'নৌকাডুবি', 'গোরা' উপন্যাস উল্লেখযোগ্য। ১৯১২ সালের জুনে রবীন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডে যান এবং ইংরেজ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস এর লেখা ভূমিকা সহ 'গীতাঞ্জলি'র ইংরেজি অনুবাদ 'Song Offerings' প্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালের নভেম্বরে উক্ত কাব্যগ্রন্থের জন্য বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসম্মান 'নোবেল' পুরস্কার পান। এরপর 'গীতিমাল্য' ও 'গীতালি' কাব্যদুটিতেও আধ্যাত্মিক চেতনা লক্ষ্য করা যায়। ১৯১৬ সালে 'বলাকা' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি নতুন দিকে মোড় নেয়। এই পর্বে তাঁর আরো কয়েকটি অনবদ্য সৃষ্টি হল 'ফাল্গুনী' নাটক এবং 'চতুরঙ্গ' ও 'ঘরে বাইরে' উপন্যাস। ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে এক সমাবেশে ইংরেজ পুলিশ নিরস্ত্র মানুষের উপর নৃশংসভাবে গুলি চালালে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজ সরকারের দেওয়া 'নাইট' উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ জাপান যান। ১৯২০ সালে আবার ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স, হল্যান্ড, বেলজিয়াম হয়ে আমেরিকা যান তিনি। ১৯২১ সালে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরমধ্যে রচনা করেন 'পলাতকা' ও 'পূরবী' কাব্য এবং 'মুক্তধারা' নাটক। ১৯২১ সালেই বিশ্বভারতী পরিষদ গঠন করে একটি স্থায়ী নিয়মাবলী রচনা করেন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার দেশের হাতে তুলে দেন তিনি। এরফলে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিশ্বভারতীর অঙ্গ হিসেবে গড়ে তোলেন শ্রীনিকেতন কৃষি ও পল্লীসংগঠন। শ্রীনিকেতনের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় পশুপালন, তাঁতশিল্প, চাষাবাদ কুটির শিল্পের মতো প্রকল্প এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়নের জন্য গড়ে ওঠে পাঠাগার, হাসপাতাল, সমবায়, নলকূপ এবং শিল্পভবন।১৯২৪ এ প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বিখ্যাত নাটক 'রক্তকরবী'। ১৯২৬-২৭ এ আবার ইয়োরোপের কয়েকটি দেশ জাভা য় প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার নিদর্শন দেখে লেখেন 'জাভা-যাত্রীর পত্র'। ১৯২৯ সালে কানাডা এবং সেখান থেকেই আবার জাপানে যান। এই সময় 'মহুয়া' কাব্যগ্রন্থ; 'যোগাযোগ', 'শেষের কবিতা' উপন্যাস; 'তপতী', 'শেষরক্ষা' নাটক এবং 'ঋতুরঙ্গ' গীতিনাট্য তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। 
 ষাট বছর বয়স পেরিয়ে রবীন্দ্রনাথ চিত্রশিল্পের চর্চা শুরু করেন। লেখা কাটাকুটি করেই চিত্রচর্চার সূচনা। প্যারিস, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশে কবির চিত্র প্রদর্শনী দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। ইতিমধ্যে রাশিয়া ভ্রমণ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সেখানকার সামাজিক বিপ্লব ও কর্মযজ্ঞ দেখে অভিভূত হন। সেই অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায় তাঁর 'রাশিয়ার চিঠি' গ্রন্থে। 
 জীবনের শেষ দশবছর তাঁর বহু গান, কবিতা, কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমনকাহিনী ও সমালোচনা প্রকাশিত হয়। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য গদ্যছন্দে লেখা 'পুনশ্চ', 'শেষ সপ্তক', 'পত্রপুট' ও 'শ্যামলী' কাব্যগ্রন্থ। এইসময় পুরানো কয়েকটি কবিতাকে তিনি রূপান্তরিত করেন নৃত্যনাট্য রচনা করেন, যথা-'চিত্রাঙ্গদা', 'শ্যামা' এবং 'চণ্ডালিকা'।এই পর্যায়ে লেখা উপন্যাস হল 'দুইবোন', 'মালঞ্চ' এবং 'চার অধ্যায়'। এই সময় বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং লেখেন 'বিশ্বপরিচয়'(১৯৩৭)। প্রথম জীবনে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর সান্নিধ্য, পরবর্তীতে জার্মানিতে আইনস্টাইনের সঙ্গে পরিচয় এবং বিজ্ঞানের প্রতি অনুরাগ থেকে লেখেন 'সে', 'তিনসঙ্গী' ও 'গল্পসল্প' প্রভৃতি গ্রন্থ। প্রগতিশীল, বিশ্বভাবনায় মশগুল ও বিজ্ঞান মনস্ক কবির 'কালান্তর'(১৯৩৭) এবং 'সভ্যতার সঙ্কট'(১৯৪১) প্রবন্ধগুলি মানব সভ্যতার জন্য তাঁর শেষ বানী। 
     শিশু ও কিশোরদের জন্য রবীন্দ্রনাথের লেখার কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় 'বালক' পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর লেখাগুলোর কথা। 'শিশু', 'শিশু ভোলানাথ', 'খাপছাড়া', 'ছড়া ও ছবি', 'গল্প-সল্প-কল্পনা', 'সহজ পাঠ' ছাড়াও অসংখ্য ছড়া, কবিতা, নাটক ও গল্প লিখেছেন শিশুদের জন্য। চাঁদ, গাছপালা, মেঘ, পশুপাখি, বৃষ্টি, নদী, নৌকা, ফুল প্রভৃতিকে শিশুদের চোখ দিয়েই দেখেছেন এবং তাদের ভাবনা নিয়েই লিখেছেন। তিনি শিশুদের উপযোগী রস ও ছন্দে নির্মাণ করেছেন শিশুদের কাল্পনিক জগৎ। এছাড়াও ইংরেজিতে ছোটদের দুর্বলতা কাটানোর জন্য লিখেছিলেন 'ইংরেজী সহজ শিক্ষা'(প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ)।
  জীবনভর দেশে ও বিদেশে নানা সম্মান পেয়েছেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে নানাভাবে সম্মানিত করে। ১৯২১ সালে তাঁকেই প্রথম জগত্তারিনী পদকে ভূষিত করা হয়। পরবর্তী কালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদ গ্রহণ করে কয়েকটি বক্তৃতা দেন এবং ১৯৩৮ এ সমাবর্তনেও ভাষণ দেন। ১৯৩৫ সালে কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে অভিভাষণ দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি লিট দেয়। ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি লিট দিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করে। ১৯৪০ সালে শান্তিনিকেতনে এক অনুষ্ঠানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডি লিট প্রদান করে। ৭ই মে ১৯৬১ সালে ভারত সরকার তাঁকে সম্মান জ্ঞাপন করে তাঁর ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথের বিরাট রচনা সম্ভার মোট ৫৬টি কবিতাগ্রন্থ, ৪টি গীতিপুস্তক, ১১৯টি ছোটগল্প, ১২টি উপন্যাস, ৯টি ভ্রমণকাহিনী, ২৯টি নাটক, ১৩টি চিঠিপত্রের বই, ২২৩২টি গান ও প্রায় ২০০০ চিত্রাবলী নিয়ে গঠিত। 
   ১৯৪১ সালের ৭ আগষ্ট (২২শ্রাবণ ১৩৪৮বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথ কলকাতার জোড়াসাঁকোর বাড়িতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।


পাঠপ্রতিক্রিয়া
(জ্বলদর্চি ছোটোবেলা ৮১ পড়ে সুদীপ্তা আদিত্য যা লিখল) 

জ্বলদর্চি ইদানিং জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুবৈচিত্র্যের উপর বেশী নজর দিচ্ছে বলাবাহুল্য। পত্রিকার প্রথমেই একটা নিস্তেজ জরাজীর্ণ পাখির শহরতলীর রাস্তায় জলে এলোপাতাড়ি ডানা ঝাপটানোর একটা মুহুর্তবন্দী চোখে পড়বেই।আমরাই তো চাতকের মতন এতকাল দু ফোঁটা বৃষ্টির জন্য খটখটে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের জল শুকিয়েছি।কোনাগুলো এখন চিকচিক করছে পাখিটারো।রাজ্যে কালবৈশাখী এসেছে। এটাই সুখবর।চিন্তা নেই আর।

এত গরমে জয়াবতী ভালো আছে? লক্ষ্য পূরণে তার পথ আর কতটা বাকি?আসলে যা গরম পড়েছে!এভাবে ঘোড়ায় চড়ে দৌড়তে দৌড়তে একরত্তি মেয়েটা যেন হাঁপিয়ে না যায়!সঙ্গে ঠান্ডাজলে নুন চিনির সরবত খাও।একটু পুণ্যিকেও দিও।ভাগ করলে আনন্দ বাড়ে।আচ্ছা!জয়াবতী কি এবার সমুদ্র ভ্রমণে যাবে!স্নেহাবুনুর ছবিতে আরেক জয়াবতী আমি ওর কথা বলছি।ওতো কোদাল বালতি নিয়ে বালি খুড়ে কি যেন জয় করতে আগ্রহী।মনোযোগী।শেষ কোথায় আর শুরুই বা কোথায় ভেবে কূল ঠাওর করতে পারছেনা।পারবেই বা কি করে!আমরাই তো কতবার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছি এই ভেবে হাঁস আগে না ডিম আগে?আদম এর আগের পূর্বসূরি কে?দূর এতো প্রশ্ন প্রশ্ন খেলা আর ভালো লাগছে না। এবার চলো ব্রেক নেওয়া যাক। বাগানে ঘুরে আসি।

 আমাদের বাগানেও দোপাটি টগর জবা গোলাপ ফোটে।এইতো রাস্তার মোড়েই ফুলের দোকান।তোড়া পাওয়া যায় হরেক রকম।ওখান থেকেই কি শ্রীপর্ণা বুনু একটা কিনে নিয়ে উপহার দিলে আমাদের?এতো নিপুণ আঁকা।যেন সত্যি সত্যি বাগানবিলাস।লছমি আর রানিও তো বেশ ট্যালেন্টেড।গাছে মইছাড়া তড়তড় করে উঠে পড়ে কাঁচা আম পেড়ে আনতেও দরকার অদম্য সাহস।টক আমমাখার প্রনালী শুনে জিভ থেকে জল গড়িয়ে এলো।ব্রততী সেন মহাশয়ার কাছে এরকম আরো টক ঝাল মিষ্টি গল্প শুনতে চাই।গরমে গাছ লাগাবে!বরষার আগেই লাগাব।মনোহর বাবু তো শিখিয়ে দিয়েছেন কেমন করে একটা গাছ থেকে একটা বাগান করা যায়! কুঁড়ে আমি বটেই কিন্তু পছন্দের কাজের প্রতি কুড়েমি একটুও না।ফুল তো ফুটবেই ।তাই লেগে থাকতে হবে। শূন্য থেকে শুরু করে একশো করতে হবে।সময় লাগুক। ফুল ফোটাতেই হবে।এত ফুল আর ফুল নিয়ে মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল অসাধারণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে পড়তে হবে।না না এখন আর বই ঘাটাঘাটি করে নয় পীযূষ প্রতিহার মহাশয় নিজের কলমের ধারে কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়কে এনেদিয়েছেন বাঙালির ঘরে,উঠোনে,মনে।গুপি গাইন বাঘা বাইন আর হীরক রাজার দেশে এই নিয়ে প্রায় পনেরো বার দেখেছি ।একটা চলচ্চিত্রের পুরো নেতৃত্ব ভাবা যায়! সবকিছুর শেষে ঘুরে এলে কেমন হয়! পাখিদের কাছে।গরমে ওখানে অনেক ডাবের জল পাওয়া যায়। রসনাতৃপ্তি মেটে।এই রে আমার খুব মন খারাপ।আর কিছুখন থেকে যাওয়া যেত না!শেষ পর্ব ।কথায় আছে আশি তে আসিও না। কিন্তু একাশি ছেড়ে বিরাশি হবে জ্বলদর্চি।বয়স বাড়ছে।পরিণত হচ্ছে।ভাবলেই আনন্দ। মৌসুমী দিদিভাই আর টিমের সবাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম এর ফলক হিসেবে আমরা তো সপ্তাহের শেষে এভাবেই জ্বলদর্চি কে পাই। বাড়ির ছোটরা বড়োরা সঙ্গী পায় ছুটির দিনে।ভাবা যায়!

আরও পড়ুন 
জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments