জ্বলদর্চি

উদরামৎস্যপ্রসাদম্ /শ্রীজিৎ জানা

উদরামৎস্যপ্রসাদম্

শ্রীজিৎ জানা


প্রৌঢ় সূর্যের কিরণ ছটায় কাঁচা হরিদ্রাভ রঙের আলপনা।দিগন্তরেখায় সবুজ প্রকৃতি আর রাঙা মেঘের মিতালী যেন দুচোখে এঁকে দ্যায় সম্মোহন। মৃদুমন্দ বাতাসের আহ্লাদেপনা আর রোগাটে গড়নের নদীটির সলাজ নারীর ভঙ্গিমায় বয়ে চলা -সবে মিলে আজও গ্রাম-ই তিলোত্তমা সুন্দরী। 

  নিত্যদিনের মতো বটতলায় হাজির বটব্যালের ব্যাটেলিয়ন। কিন্তু তখনো বিপিন বটব্যাল ওরফে বটুদার পাত্তা নেই। তা নিয়ে যদিও শাগরেদরা কোন পুঁটিলাফ দিচ্ছে না। তারা মহান বটুদার স্বভাবচরিত্তির সমন্ধে সম্যক অবহিত। নেই তো নেই। হঠাৎ হাওয়াই চরকির মতো কোত্থেকে শোঁ করে হাজির হবে বোঝা মুশকিল। বাহনটি তার সাইকেল। নারদ যেমন ঢেঁকি ছাড়া দু'পা নট নড়চড়ন। বটুদাও তার পোষ্য যন্ত্রযান বিহীন একপ্রস্থও নড়ে না। সাইকেলটি তার বড় ন্যাওটা। বটুদা বলে,
---আমার সাথে ওর বয়েসও  ক্রমবর্ধমান। কিন্তু দেখছিস দুজনেই ক্যামন বয়েসটাকে ধরে রেখেছি।
বলেই চোখের ভ্রু নাচিয়ে স্মিত হাস্যে সাইকেলটির পাশে দাঁড়িয়ে ফিল্মি কায়দায় দারুণ একটা পোজে দাঁড়ায়। তারপর আবারো বলতে শুরু করে,
--ব্যাটা দিব্যি রোজ ঘাড়ে করে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আমাকে। কোনো ট্যাঁফুঁ করে না। ওতে চড়ে বসলেই ক্যামন যেন চিতোরের রাণার মতো একটা মেজাজ ফিল করি। যন্ত্র বলে কী মায়া থাকতে নেই! তোরা তো এক একটা যন্ত্রমানব হচ্ছিস দিনে দিনে। যত এস্ট্রোলুপিথেকাসের দল।

  বটুদার সাইকেল প্রীতি কারো অজানা নয়।আর সেই প্রিয় যন্ত্রযান চড়ে বৈকালিক আড্ডায় এসে উপস্থিত সভার শিরোমণি একমেব অদ্বিতীয়ম্ বটুদা।আজ তাকে দেখাচ্ছে  বেশ ফুরফুরে মেজাজে। গুনগুন করে গান বেরিয়ে আসছে তার কন্ঠ থেকে। সভাস্থ সকলের শ্রবণ যন্ত্রে তার অনুভূতি ক্যামন তা বুঝতে আড়চোখে দেখে নেয় বটুদা। তারপর আত্মতৃপ্তির ভাব করে বসে পড়ে বটতলার চাতালে। রোগা ঠ্যাঙদুটি সেলাই মেশিনের পাদানি দোলানির মতো সমান তালে দোলাতে থাকে।শিবেন যথারীতি মুখ খোলে,
---কী গান গাইছিলে গো বটুদা? ক্ল্যাসিক নাকি ফোক্?
---ক্যানো কানে কী কর্ণমল জমেছে বাবা শিবচন্দর
---না মানে, বুঝতে পারিনি তাই…
----তা বুঝবে কী করে। তোমরা তো সুরের দুনিয়ায় এক একটি আস্ত অসুর। সুর বুঝতে গেলে তালজ্ঞান দরকার। যত্তসব বেতাল পঞ্চবিংশতির দল।
বটুদাকে শান্ত করতে একটু নরম গলায় আমি বলে উঠি,
---আসলে কি জানো তো বটুদা,তুমি তো সুর ভাঁজছিলে,তাতে তো কথা ছিল না, তাই ধরতে পারিনি।
এবার বটুদার গলার স্বর সামান্য খাদে নেমে আসে,
---তাই বল। আসলে কীর্তনগানের সুর এমনই যে কানে গেলেই  বোঝা যাবে। বিশেষ করে আমার গলায় কীর্তন। যা শুনে একসময় বড় অস্তলের মহন্ত মহারাজ টানা পাঁচদিন ভাব সমাধিতে চলে গিয়েছিলেন। অনেক সাধ্যসাধনা করে তাঁকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো হয়। তা তোদের সেসব বলে তো লাভ নেই। তোদের বলা মানে গোবরে গম ফ্যালা।

  কথা শুনে সবাই হকচকিয়ে গেলেও ভেতরে ভেতরে খুশি চুড়ুৎফুড়ুৎ উড়তে থাকে। নিশ্চিত আজও একখানা জম্পেশ গল্প বটুদার কাছ থেকে শোনা যাবে। শুধু ভয় শিবেনকে। মাঝে ও যেন না তাল কেটে দ্যায়। তাই শিবেন কিছু বলার আগেই আমি বলে ফেলি,
---এটা তো ভারী অন্যায়  বটুদা। এই না তুমি আমাদের এত্ত ভালবাস? তুমি যে গান গাও এর আগে তো কোনদিন বলোনি? তোমার কন্ঠে গান শোনার যোগ্যতা কি আমাদের  নেই?
---কি যে বলিস!তোরা হলি বটুদার ভক্তকুল। তোরা ছাড়া বটুদা রসহীন রসগোল্লা । কিন্তু ব্যাপার হোলো…
এরপরে আরো কিসব যেন বলতে যাবে বটুদা আর তখনই অভ্যেসমতো শিবেনের কথা হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে,
----কিন্তু এখানে আমার একটা কথা ছিল।
---তোর আবার কী কথা?
একটু জোর গলায় জিজ্ঞেস করে শিবেনকে থামাতে চেষ্টা করি। কিন্তু শিবেন তো থামবার পাত্র নয়।
---বটুদা যে বলে আশ্রমটাশ্রমের ত্রিসীমানায় যায় নি কখনো। তাহলে মহন্ত মহারাজকে গান শোনানোর ব্যাপারটা ঘটল কিভাবে বুঝতে পারছি না তো। 
এবার বটুদার মুখে বিরক্তির ছায়া স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মনে মনে ভাবি আজ শিবেনের রাশিফলে নিশ্চিত বকুনিদশা আছে। একইসাথে গল্প যোগের ঘরে শনি প্যাঁচা হয়ে ঝুপ করে বসে পোড়লো বলে। এহেন কালযোগ টলানো বোধহয় অসম্ভব। মাথার মধ্যে এইসব হাবিজাবি ভাবনা যখন নাচনকোঁদন করছে ঠিক তখনই বটুদার রাগের ফুজিয়ামা উগরে দিল গরম লাভা,
---তুমি কি করে বুঝবে বাবা শিবচন্দর। ঘিলু তো তোমার আন্টার্টিকার জমাট বরফ হোয়ে আছে। দাদরা ও ঝাঁপতালে তোমার ব্রহ্মরন্ধ্র বরাবর দশ মিনিট বাজিয়ে দিলে ঠিকই বুঝতে পারবে।
এমন কড়া দাওয়াই পেয়ে শিবেন কিছুটা দমে যায়। গতিক বুঝে ঠিক ট্র্যাকে ফেরাতে বটুদাকে তোয়াজের স্বরে বলি,
---তুমি ছাড়ো তো ওর কথা।আগে বলো তোমার কীর্তন আর মহন্ত মহারাজের সমাধি বৃতান্ত। শোনার জন্য কান-মন লোভে ছটপট করছে।
---বোলবো বলছিস?কিন্তু একখান শর্ত আছে।
---বলো কী শর্ত?আমরা মানতে রাজি।
---শর্ত তেমন কঠিন না,ওই ভগীরথের গঙ্গা আনার মতো কেস।যেথানেই ভগীরথ পিছন ফিরে তাকাবে সেখানেই যেমন থেমে যাবে গঙ্গার গতি।তেমনই গল্পের মাঝে গলা বাড়ালেই আমিও গল্পের করে দেবো ইতি গজ।
শর্তখানা খুব কঠিন না হলেও শিবেনকে নিয়ে চাপা একটা দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। যদিও শিবেন তখনো অব্দি মুখে দরজা এঁটে চুপ।তাই ঝুঁকি নিয়ে বলে ফেলি,
--তুমি শুরু করো তো বটুদা। কোনো জিজ্ঞাস্য নেই আমাদের।
শুরু হোলো বটুদার ঘটনাবৃতান্ত।
---আমি তখন হুগলী জেলার   প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছি।তবে আকারণে নয়, একটি এন জিওর  সচেতনতামূলক কাজের সঙ্গী হয়ে। তাতে আবার আমিই হলাম মেন্টর।দশ দিনের কর্মসূচী। এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম বিভিন্ন জনসচেতনতার কাজে দিনরাত এক করে ফেলছি। এমন সময় ঘটলো এক কেলেঙ্কারিয়াস ব্যাপার! যাকে বলা যেতে পারে মৎসপুরানকাহিনী।
এখান পর্যন্ত বলে বটুদা একটু থামলেন। চোখ চারিয়ে  মাপতে চাইলেন আমাদের কৌতুহলের ভাবগতিক। বোধহয় সন্তুষ্টির পারদ ঠিকঠাক জায়গায় দাঁড়িয়েছে বলেই আবার শুরু হোলো ঘটনাবর্নন।
---গ্রামটার নাম ভারী অদ্ভূত, জানিস!পোল! পোল মানে ব্রিজ নারে উজবুকের দল। পোল অর্থে হোলো বাঁশ। নামের সাথে পাল্লা দিতেই মনে হয় গ্রামজুড়ে বিস্তর বাঁশবাগান। সেই গ্রামের বড়অস্তলের দ্বাদশ মহন্ত হলেন ত্রিপুরাশঙ্কর ত্রিপাঠী মহারাজ। তাঁকে নিয়েই যত ফ্যাসাদ।

  গল্পের গতি ধীর দেখে আমরা অস্থির হোযে উঠছি। এখনো তো গল্প গর্দানে আটকে ল্যাজ পেরোবে কিনা জানি না। তবে গল্পটা শুনার খিদে যে চোঁ চোঁ করছে তা নড়েচড়ে বোঝাবার চেষ্টা করি। বটুদাও শুরু করে তার মন্থর গমন। এবার কিন্তু তার মুখমণ্ডলে হাসির ছয়ালাপ 
----কি আর বোলবো তোদের। একে বৈষ্ণব ভাবের দেবস্থান। তার উপর কদ্দিন থেকেই মহন্ত মহারাজের বিশালাকার বপু থেকে তীব্র আঁশটে গন্ধ বেরুচ্ছে। কিন্তু কেন এমন সব্বনেশে উৎপাত তার কোন খেই খুঁজে পাচ্ছেনা কেউ। এদিকে ভক্তদের মধ্যে এনিয়ে বিস্তর জল্পনাকল্পনা চলছে। এরইমাঝে আমি মানে তোদের বটুদা পৌঁছুল মহন্ত মহারাজের ডেরায়।অস্তলে পৌছেই তো চক্ষু চাকাপাক খাবার জোগাড়। উরিব্বাস,সে কি পেল্লায় মহন্ত বাবার দেহায়তন। তা আন্দাজ সোয়া দেড় কুইন্টাল হবে। নধরকান্তি দেহখানি পাকা আপেলের মতো টুকটুক কচ্ছে। যেন টুসকি মারলেই রক্ত ঝরবে। মাথায় পাট করা উল্টানো চুল। গলায় তুলসীমালা। মুখে স্মিত হাসি। উঠতে আর বসাতে দুদিকে তিন তিন ছজন লাগে। পরনে ধূতি আর বগলকাটা হাফশার্ট।
গতি দেখে এবার কিন্তু মুখ খুলতেই হোলো। বললাম,
---বটুদা একটু গতিবেগ বাড়ালে হয়না। আর যে ধৈর্য ধচ্ছে না।
---রহো বৎস, অত উতলা হইও না। তো যেতেই ভক্তবৃন্দ আমাকে ছেঁকে ধরলে। ইতোমধ্যে এলাকা তোদের বটুদার ভাষণে বেশ উজ্জীবিত। মহন্ত মহারাজ নিভৃতে ডেকে  বললেন তার বিড়ম্বনার কথা। সব শুনে মহরাজের উপর বিপিন বটব্যাল তার এক্সরে দৃষ্টি শানালো। আর বল্লুম মহারাজ নো চিন্তা ডু কীর্তন। কল্য প্রাতে সব মুশকিলের আসান ঘটাবো। বলে বেরিয়ে এলুম।
  তার মানে আবার কিছুক্ষণের ইন্টারভেল।  এবার এতক্ষণ চুপ থাকা শিবেন কাঁচুমাচু করে বলে উঠে,
---বটুদা এবার আমি কি কিছু বোলবো?
---নাহ্,তুমি কিস্যু বলবে না বাবা শিবচন্দর। অনলি শ্রবণ করবে।
---না,মানে তারপর তুমি নিশ্চই মহন্তর গন্ধদশা দূর কল্লে
---আলবাত-কল্লুম মানে! পরদিন সকালে পাঁচশিশি ফুলেল তেল ঝোলায় ভরে নিয়ে হাজির। পেন্নাম ঠুকে মহন্ত মহারাজকে বল্লুম,-মহারাজ আজ প্রাতঃস্নানের পূর্বে আমি আপনার দেহাবয়বে সুগন্ধি তেল মর্দন করিতে ইচ্ছুক। আর তাতেই মেছো গন্ধ হাপিস হবে জম্মের মতো। মিতবাক মহন্ত ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিলেন। রোগ তো আমি আগেই আন্দাজ করেছিলুম। তৈলমর্দন একটা ছুতো মাত্র। বিছানায় চিৎ হয়ে শয়ন করলেন মহারাজ। কিন্তু কি আর বোলবো।বসলে বা  দাঁড়ালে বা শয়ন করলেও বাবাজির মধ্যপ্রদেশে থলথলে মেদবহুল মাংসের পাঁচখানা ভাঁজ পড়ে। কোন অবস্থাতেই সে ভাঁজের পাট খুলে না। আমি তো তেল মাখানোর অছিলায় সেই পেটের ভাঁজ খুলে দেখি প্রতি ভাঁজে চারটে-ছটা করে মুরলা আর পুঁটি মাছ চাপে মরে পচে একাক্কার! আর তা থেকেই গন্ধের উৎপত্তি।
পেটের ভাঁজে পুঁটিমাছ! বাপের জন্মে শুনিনি।অথচ জোর করে হাসি চেপে রেখেছি দুজনে। শিবেন কিন্তু মুখ ফস্কে জিজ্ঞেস করে ফেলে,
---বটুদা এটা কি করে সম্ভব?মহন্তর পেটের ভাঁজে মাছ এলো কোত্থেকে!
---সে তো আগেই জানতুম যে পন্ডিতপ্রবর শিবচন্দর এই প্রশ্ন করবেন। অতএব বাকিটা শুনুন বৎস। বাবাজি এম্নিতে তোলা জলেই স্নান সারেন। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল হোলো অস্তলের দিঘিতে ডুবস্নান করবেন। সেইমতো ব্যবস্থা হোলো। দিঘিতে জলে মাছে সমান। যেই না ডুব দিয়েছেন অম্নি মাছেরা পেটের ভাঁজে সুড়ুৎ করে ঢুকে পড়ে! অমন আস্তানা মাছেরা তো জম্মে পাইনি! কিন্তু  বেচারার দল আর বেরোতে পারে না। পেটের চাপে মাছের দল শুকিয়ে শুঁটকি বনে যায়। যখন সবমাছ বের করে দেখালুম বাবজির চক্ষু চড়কগাছ! ভক্তবৃন্দ  সহ সব্বাই আমার জয়ধ্বনিতে অস্তল কাঁপিয়ে দিলে। সেই আনন্দে সন্ধ্যায় বোসলো কীর্তনগানেন আসর। তাতেই বাবাজির অনুরোধে ধরলুম গান। আর সেই গানে বিভোর হয়ে বাবাজি চলে গেলেন সমাধিতে।

 এখান পর্যন্ত বলে চোখ নাচিয়ে দুজনের দিকে তাকালো বটুদা। আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম,
---এমন ঘটনাও কি ঘটা সম্ভব বটুদা?
---ওরে নাস্তিকের দল এখানেই শেষ নয়রে গল্প। 
---শেষ নয় মানে! আরো কী আছে ঘটবার?
---আছে বৎস,ওই যে শুঁটকিমাছ, যা মহন্তর উদরদেশ থেকে বেরুলো,তা মহাপ্রসাদ রূপে ভক্তকুলের মধ্যে বিতরণ শুরু হোলো পরের দিন থেকে। সে এক মহা সমারোহ।নাম দিলুম উদরামৎস্যপ্রসাদম্। সকলে ভক্তি গদগদকণ্ঠে উলুধ্বনি দিতে দিতে সেই মৎস্যপ্রসাদ নিতে ভিড় জমালো অস্তলে।ওদিকে প্রণামী বাক্স উপচাতে শুরু করলে।আর তোদের বটুদার খাতির তখন তুঙ্গে। যাকে বলে পিক আব দ্য এভারেস্ট! 
এতক্ষণ বহুকষ্টে চেপে রাখা হাসির বেগ এবার সুনামির মতো সশব্দে আছড়ে পোড়লো আড্ডায়। হাসির জোর হ্যাঁচকায়  বটুদা তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে। আমরা না থেমে উল্লাসে সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠি,
--জয় দ্বাদশ মহন্তর জয়!জয় বটুদার জয়! জয় উদরামৎস্যপ্রসাদম্

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments