গুচ্ছ কবিতা -৬
বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়
মন
জানো কি মিত্র/মানস চিত্র/কখনও রয় না/ শূন্য,
দ্বিধা সংশয়/সংকোচ ভয়/মন রাখে সদা/পূর্ণ ,
অহং উদ্ধত/স্বার্থ অমিত/মানসকে করে/ধ্বংস,
তা হলে কিভাবে/ মনকে বাঁচাবে/ হবে তুমি পরম/হংস ?
কুচিন্তা যতো করো পরাহত উদার দরাজ মনেতে,
যে সব কামনা করে লাঞ্ছনা সরাও বিসর্জনেতে,
শুভ চেতনার মহৎ প্রেরণা জাগুক তোমার মানসে,
প্রাণের পরশ আনুক হরষ চেতনা জাগাক অবশে ।
লোলুপ চিত্ত কামনা ভৃত্য সুচিন্তা দেয় সরিয়ে,
লিপ্সা অপার করে পারাপার মনটাকে রাখে ভরিয়ে,
গুরু দেন আশা তিনিই ভরসা তাঁকেই স্মরণে রেখো হে,
তাঁর উপদেশ পথ নির্দেশ মনে করে তাঁকে ডেকো হে ।
গুরু কে ? এই প্রশ্নের উত্তরে জানাই :
অনেকেই আসে তিলক ফোঁটায় নিজের দেহকে সাজিয়ে,
এই সাজ দেখে ভুলোনা বন্ধু গুরু নিও তুমি বাজিয়ে,
মেকি টাকা সেকি বাজারেতে চলে?ফেলে দিতে হয় শেষে ,
দোকানদারকে দিলে এই টাকা গলাটা ধরবে এসে ।
যার ছোঁয়া পেলে দেহ মনে জাগে অপূর্ব শিহরণ,
বিপত্তি কালে যার কাছে পাও ভরসা,আস্বাসন,
শ্রী রামকৃষ্ণ বিবেকের গুরু সাধকের প্রিয় ধন,
অর্জুন গুরু তাঁরই প্রিয় সখা শ্রীকৃষ্ণ নারায়ণ ।
যুদ্ধ নয় শান্তি চাই (অষ্টক, সপ্তক)
** Mankind must put an end to War or War
will put an end to Mankind .
J. F. Kennedy
যুদ্ধ দেয় না কাঙ্খিত জয় ইতিহাস এটা বলে,
তবু অরি দল সৈন্য সাজায় সুনিপুণ কৌশলে,
ধন ও সম্পদ ক্ষয় হয়ে যায়,
কত শত জন জীবন হারায়,
আত্ম-রক্ষা, যুদ্ধ এ নয়,
যুদ্ধবাজরা এমনটা কয়,
ধ্বংসলীলায় হয়,
পরিচয় ।।
জিগীষা এসেছে বারবার ভবে,জিঘাংসা নিয়ে বুকে,
জিজীবিষা তাই ভীত ও ত্রস্ত দুখে --
পালাতে চেয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র হতে,
কোনও ভাবে কোনও মতে ;
সমাজ হোক নিরাময়,
বিদূরিত ভয়,
ক্ষয় ।।
ভালোবাসা
ঝড়ের ধূসর-ঢালা সন্ধ্যায় তুমি দেখা দিয়েছিলে এসে,
মুগ্ধ দু চোখে দেখেছি তোমাকে বুক ভরা ভালোবেসে ।
চিনি না তোমায় দেখিনি কখনও কোথা হতে এলে নেমে,
ভাবলাম আমি বাঁচবো এবার যদি পাই এই প্রেমে।।
কুয়াশায় ঘেরা চারু দেহ খানি দেখিনি এমন আগে ,
অপরূপ দেহ সুষমা তোমার এনে দিলো অনুরাগে ।
ভালোবাসা দিলে কাছেতেও এলে ফের চলে গেলে ফিরে,
নিদারুণ কালো হতাশার ধোঁয়া এলো চারি পাশ ঘিরে।।
তোমার অতল অথৈ হৃদয়ে ওঠে বড়ো বড়ো ঢেউ,
কোনো দিনই বুঝি প্রবেশ অধিকার পাবে না সেখান কেউ ।
তুমিই আমার জীবন সজনী তুমিই আনার প্রাণ ,
পাশে না থাকলে স্তব্ধ অচল আমার প্রাণের গান ।।
কার দোষ
আমি যে পরম ভক্ত-
মাঝে মাঝে আমি চোখ বুঁজে থাকি,
তখন করো না যেন ডাকাডাকি,
প্রভুর প্রেমের ছলনায় থাকি-
অর্থের অনুরক্ত ,
মাথায় তখন ঘোরাফেরা করে
ফন্দি দুরূহ শক্ত।।
আবেগে কখনো চোখে আনি জল,
কেউ কেউ ভাবে এ আমার ছল,
ছলাকলা আমি শিখিনি কখনও,
নয় অনুচিত জীবন যাপনও,
লক্ষ্য আমার ধনোপার্জন ও,
স্বার্থ আমার বল;
তোমরা আমার শিষ্য, সেবক,
পূজক ও সম্বল।।
অনেক ভক্ত আমার ঘরেতে-
আসা যাওয়া করে নিত্য,
তারাই আমার পরম পূজক-
সেবক,অনুগ,ভৃত্য।
আমার যতেক লিপ্সা,বাসনা,
প্রত্যাশা,সাধ,মনস্কামনা,
তারাই মেটায় হয়ে একমনা-
তৃপ্ত করে এ চিত্ত।
আমার কপট আশিসে তারাও-
হয় না কি পরিতৃপ্ত?
অবিশ্বাসীরা ডেকে হেঁকে বলে-
আমি নাকি মহাভন্ড,
ভাবি নাকি শুধু নিজের স্বার্থ,
ভাবিনা কখনো কি পরমার্থ।
অর্থ এবং স্বার্থে বিভোর-
আপদ, মহা পাষন্ড,
এরাই আমার পরিকল্পনা সব
করে যে লন্ডভন্ড।।
ছয়খানা বাড়ি হাঁকিয়েছি আমি?
সে তো তোমাদেরই জন্যে।
নইলে সবকে রাখবো কোথায়
ভেবে হতে হত হন্যে।
নিন্দুক, যারা কুৎসা রটায়,
এসব কথায় কান দিতে নাই,
ব্যবসিত আমি নই জেনো ভাই-
দর, দাম আর পণ্যে।।
ভক্তিপুরিত আমাদের দেশ-
মহান ভারতবর্ষ,
জন্মিত হেথা অনেক সাধক-
জগতে তাঁরা আদর্শ।
মানব প্রেমেতে অবিচল মতি,
দূর করেছেন বহু দুর্গতি,
এদেশের মাঝে এনেছেন তাঁরা-
আদর্শ,প্রেম, হর্ষ।।
এইসব মহাপুরুষের মাঝে-
আমার তো স্থান নাই,
নিন্দিত আমি,বর্জিত আমি-
দুষ্ট,ভ্রষ্ট ভাই।
আমি বুঝি শুধু আমার স্বার্থ,
অর্থ আমার যে পরমার্থ,
তবুও আমার অভিনয় গুণে-
অনেক শিষ্য পাই।
আমারই কি এতে সব দোষ,
আর তোমাদের দোষ নাই?
(গুরু নিবি বাজিয়ে)
আনন্দ
তিন ধরণের আনন্দে গড়া আমাদের ধরাধাম,
'বিষয়ানন্দ','ভজনানন্দ','ব্রহ্মানন্দ' নাম।
নারী-কাঞ্চন জাত নন্দকে বিষয়ানন্দ কয়,
প্রভু গুণ গানে লব্ধ নন্দ ভজনানন্দ হয়,
ঈশ দর্শনে তৃপ্ত সাধক ব্রহ্মানন্দ পান,
সাধনার শেষে সাধকের আসে আত্মাশ্রয়ী জ্ঞান।
ধ্যান
ধ্যানীর মনটি তৈল ধারার মত,
সদাই সে রয় ঈশ ভাবনায় রত,
উপর উপর ভাসলে কি আর রত্ন লব্ধ হয় ?
রত্ন যে শুধু জলেরই অতলে রয়।।
সূত্র; শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের উপদেশামৃত
0 Comments