জ্বলদর্চি

মাটিমাখা মহাপ্রাণ। পঁচিশ শুভঙ্কর দাস

মাটিমাখা মহাপ্রাণ। পঁচিশ 

শুভঙ্কর দাস 

"অসীম আকাশে কালের তরী চলেছে
রেখার যাত্রী নিয়ে, 
অন্ধকারের ভূমিকায় তাদের কেবল
আকারের নৃত্য ;
নির্বাক অসীমের বাণী
বাক্যহীন সীমার ভাষার অন্তহীন ইঙ্গিতে---
অমিতার আনন্দসম্পদ
ডালিতে সাজিয়ে নিয়ে চলেছে সুমিতা
সে ভাব নয়, সে চিন্তা নয়, বাক্য নয় 
শুধু রূপ,আলো দিয়ে গড়া।"


বাবা কুমার! 

কে? 

দেখতে পারছিস? আমাকে দেখতে পাচ্ছিস?

কুমারচন্দ্র পথ হাঁটছিলেন।দীর্ঘপথ। মেঘের মধ্যে দিয়ে, নদীর জলের মধ্যে দিয়ে, ঘন বনের মধ্যে দিয়ে পথ হাঁটছেন। হাঁটছেন তো হাঁটছেন।এতো দ্রুত স্থান পরিবর্তন হচ্ছিল যে,তিনি নিজেই অবাক হচ্ছিলেন। 
সহসা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লেন।সামনে ঘন কুয়াসা। এতোখানি জমাট যে, সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না! একটা অতি পরিচিত আহ্বান। তারপরেই কুয়াসার চাদরটা যেন সরে গেল চোখের সামনে থেকে,একটি বৃহৎ বটবৃক্ষ, গাছটিকে দেখে কুমারচন্দ্র  চমকে উঠলেন। এই গাছটির নিচে কতদিন বাবার হাত ধরে তিনি এসেছেন, বসেছেন এবং প্রখর রৌদ্রের মধ্যে এসে বসার পর, এই বৃক্ষ তার শীতলছায়ায় বুক জুড়িয়ে দিয়েছে। সেই অতি পরিচিত বৃক্ষের নিচে বাবা বসে আছেন।
মুখ তাঁর প্রসন্ন।
ঠাকুরদাস কতবার এইখানে বসে কুমারকে গাঁয়ের সবুজশ্যামল শক্তির কথা,দশের মঙ্গলের জন্য চিন্তার কথা কথা বলেছেন।কখনো কোনো লোককাহিনি বা কোনো গাঁয়ের কোনো অপরিচিত ভালো মানুষের ভালো কাজের কথা বলতেন!

কুমারচন্দ্র অবাক হয়ে সেসব শুনতেন!

বাবা কুমার, মনে আছে তো কী বলেছিলাম 

কী বাবা?

এই বৃক্ষের মতো হতে হবে,দেখেছিস,নীরবে ডালপালা ছড়িয়ে কত ক্লান্ত ও তপ্ত মানুষজনকে আশ্রয় দেয়, এক শান্তির সন্ধান দেয়। আবার নতুন করে কাজ করার বা পথ হাঁটার শক্তি জোগায়, দেখেছিস? 

হ্যাঁ বাবা

এইরকম হতে হবে, যেমন ছিলেন দানবীর চন্দ্রশেখর 

চন্দশেখর কে বাবা?

বাবা,তিনি এক বিরাট মানুষ,বিরাট তাঁর হৃদয়। তাঁর নামে মেদিনীপুরে ছড়া চালু আছে,শুনবি? 

হ্যাঁ

দানে চনু অন্নে মানু রঙ্গে রাজনারায়ণ। 
কীর্তে ছকু বিত্তে নরু রাজা যাদবরাম।

এই যে শুরুতে আছে দানে চনু অর্থাৎ চন্দ্রশেখর।দানবীর চন্দ্রশেখর। ছড়ার শুরুতেই তাঁর নাম।

কোথায় বাড়ি?

রাজবল্লভ গ্রাম 

তাঁর দানের কথা শুনবি?

বলো বাবা,আমি শুনতে চাই

শোন,মেদিনীপুরের সবচেয়ে নামকরা দেওয়ান ছিলেন চন্দ্রশেখর ঘোষ। ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তায় ইংরেজ রাজসরকারের প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন।কালেক্টটারসাহেব পর্যন্ত তাঁর কাজকর্মে মুগ্ধ। এর ফলে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছিলেন। কিন্তু সেই উপার্জিত অর্থ নিজের বিলাসিতার কাজে লাগাননি, অসংখ্য পিতৃদায়, মাতৃদায় এবং কন্যাদায়গ্রস্ত বিপন্ন মানুষজনকে সাহায্য করতে লাগাতেন। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তাঁর দয়ার দান পেতে ছুটে আসতে লাগল।
এইরকম এক দরিদ্র ও অসহায় ব্রাহ্মণ চললেন চন্দ্রশেখরের গৃহে, যদি কিছু অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়।তিনি কোনোদিন চন্দশেখর ঘোষকে চোখে দেখেননি, কিন্তু শতমুখে তাঁর দয়ার কথা জানতে পেরেছিলেন, তাই মনে নিশ্চিত আশা ছিল,একবার চন্দ্রশেখরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই সহযোগিতা অবশ্যই পাবেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন, পথের যেন কোনো শেষ নেই। শেষে একটি গাছতলায় সেই ব্রাহ্মণ একটু বিশ্রামের জন্য আশ্রয় নিলেন। ঠিক সেই সময় একজন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন। অতি সাদামাটা পোশাক পরিহিত। সদা প্রসন্ন এবং হাস্যমুখ।
লোকটিকে দেখে ব্রাহ্মণ জিজ্ঞেস করলেন,আচ্ছা,বলতে পারেন,দেওয়ান চন্দ্রশেখর ঘোষের গৃহ কতদূর? 

বেশি দূর নয়, এই সামনের মাঠটি পেরোলেই পৌঁছে যাবেন চন্দ্রশেখর ঘোষের গৃহ।  লোকটি উত্তর দিলেন

বেশ,খুব দরকার ছিল তাঁর সঙ্গে?

কী দরকার?  

লোকটি সরল সাধাসিধা দেখে ব্রাহ্মণ তাঁর চন্দশেখর ঘোষের কাছে আসার সকল বৃত্তান্ত খুলে বলল।

তখন লোকটি নিজের পরিচয় দিল।আমি চন্দ্রশেখর ঘোষ। 

ব্রাহ্মণ বিস্মিত হলেন এবং লোকটির কথাবার্তাতে তাঁর বিশ্বাস হল।

চন্দ্রশেখর জানালেন,আমি একটি বিশেষ কাজে দূর দেশে যাচ্ছি,তাই রাজবল্লভে আমার সঙ্গে দেখা হবে না।

একথা শুনে ব্রাহ্মণ মুষড়ে পড়লেন।তাঁর মুখে মেঘের ছায়া। তাহলে কি তাঁর আশা পূর্ণ হবে না!

ব্রাহ্মণের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে চন্দ্রশেখর বললেন,ঠিক আছে,আপনি আমার গৃহে যান।সেখানে গিয়ে আমার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে বলবেন,পথে আপনার আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল।আমি বলেছি,আমার কাছারিতে আমি যে বালিশটি ব্যবহার করি,সেই বালিশের এক কোণে দুশো টাকা আছে।সেই টাকা আপনাকে দিয়ে দিতে।

একথা শুনে ব্রাহ্মণ অন্তরে শক্তি পেলেন।অতি দ্রুত মাঠ পেরিয়ে চন্দ্রশেখরের গৃহে এলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেলেন, সর্বত্রই হতশ্রী অবস্থা। সর্বত্রই হতাশা ও বিষাদের ছায়া।খুব গুরুতর কোনো শোকের ঘটনা ঘটে গেছে।
গৃহের বাইরে ব্রাহ্মণের আগমনের সংবাদ শুনে জ্যেষ্ঠপুত্র বেরিয়ে এলেন।শুষ্ক মুখ,খালি পা, রুক্ষ চুল।
জিজ্ঞেস করলেন,কী ব্যাপার?
তখন ব্রাহ্মণ সকল বৃত্তান্ত জানালেন এবং শেষে সহযোগিতার কথাটিও উল্লেখ করলেন।

কী বলছেন?  বাবার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?  সবিনয়ে প্রশ্ন করলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র। 

নিশ্চয়, তিনি মাঠের ওপারে এক গাছতলায় দেখা করে এসব বলেছিলেন,দৃঢ়কণ্ঠে বললেন ব্রাহ্মণ। 

জ্যেষ্ঠ পুত্র তখন কাছারিতে প্রবেশ করলেন। উন্মুক্ত করলেন পিতার প্রিয় উপাধানটি। সত্যি আশ্চর্য ব্যাপার।উপাধানটির এক কোণে গচ্ছিত আছে দুশো টাকা। এটি দেখা মাত্র জ্যেষ্ঠ পুত্রের চোখে জল এলো।

তারপর বাইরে এসে সেই ব্রাহ্মণের হাতে টাকাটি তুলে দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,এতে আপনার কন্যার বিবাহের ব্যবস্থা আশা করি করতে পারবেন।
ব্রাহ্মণ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? 

আসলে আপনার সঙ্গে পিতা চন্দ্রশেখর ঘোষের আর কোনোদিন সাক্ষাৎ হবে না,আজ তিনদিন হল তিনি স্বর্গে গেছেন।

অসীম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় ব্রাহ্মণের চোখে জল ভরে এলো।মানুষের দুঃখ ও অসহায়তায় একজন পরম দয়ালু ব্যক্তি মৃত্যুর পরও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।মানুষকে রক্ষা করে যাচ্ছেন।


একি শোনালে বাবা,আমার তো চোখে জল এসে গেল,বলে উঠলেন কুমারচন্দ্র।

এই চোখের জল দরকার বাবা,অসহায় ও নিপীড়িত মানুষের জন্য চোখের জল যেন বন্ধ না হয়,জীবনের প্রতিটি শ্বাসবায়ু দিয়ে মানুষের জন্য কিছু কর, তাতেই আমার আত্মা শান্তি পাবে। 

নিশ্চয় চেষ্টা করব,তোমার কথা আমি সারাজীবন অক্ষরে অক্ষরে পালন করব,আমাকে আশীর্বাদ করো

বলেই কুমারচন্দ্র পিতার চরণ স্পর্শ করতে গেলেন এবং দেখলেন তিনি কিছুতেই সেই চরণ স্পর্শ করতে পারছেন না! এক কুয়াসার পরেত জমতে শুরু করেছে। আস্তে আস্তে কুমারচন্দ্রের চোখের সামনে জমতে শুরু করেছে।বাবা বাতাসের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে, কুমারচন্দ্র ভয় পেয়ে গেলেন,তিনি অস্থিরভাবে বাবাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে লাগলেন এবং মুখে চিৎকার করতে লাগলেন, বাবা,বাবা তোমাকে দেখতে পারছি না,হারিয়ে যেও না,বাবা,তোমাকে দেখতে পারছি না!

কী হল? কী হল গো? অমন করছ কেন? চারুশীলা সভয়ে বিছানায় বসে পড়লেন।

কী? একি দেখলাম?  বাবা!  বাবা কোথায়? মুখ-বুক ঘামে ভিজে গেছে কুমারচন্দ্রের।

বাবা! ওহ্ তুমি আবার বাবাকে স্বপ্নে দেখেছো?

স্বপ্ন! 

হ্যাঁ গো

একি স্বপ্ন বলতো? বাবা, একি বললেন, মানুষের পাশে থাকতে....বাবা আমি থাকব...আমি তোমার কথা রাখবই, বিছানায় কাতর স্বরে বলে উঠলেন কুমারচন্দ্র।

চারুশীলা আঁচল দিয়ে কুমারচন্দ্রের কপালের ঘাম মুছিয়ে দিলেন।তারপর ঘরের কোণে রাখা কুঁজো থেকে জল এনে বললেন,খেয়ে নাও,শান্ত হও।

কুমারচন্দ্র জল খেলেন।জিজ্ঞেস করলেন,চারু,এখন কত রাত?

জানালার কাছে গিয়ে চারুশীলা বাইরের দিকে তাকালেন,বললেন,রাত শেষ হয়ে আসছে,একটু পরেই ভোর হবে

ওহ্, আমাকে যেতে হবে

ওমা!  কোথায়?

সুতাহাটায়

একি, দাঁড়াও বাইরে এখনও অন্ধকার, ভালো করে আলো করে ফুটুক

কুমারচন্দ্র প্রস্তুত হতে হতে বলে উঠলেন,পথে না নেমে পথের অন্ধকার দূর করা যায় না চারু।

তাহলে আমিও যাব

সে কি চারু,তোমাকে কী কাজ দিয়েছি, ভুলে গেলে

তখম চারুশীলার মনে পড়ল, সকালে অন্তত কুড়িজন মহিলা আসবে,তারাও এই জাতীয় বিদ্যালয়ের দেশসেবার কাজ শিখবে।প্রথমে চরকা কাটা, তারপর সুতো দিয়ে কাপড় বানানো,এই কাজে চারুশীলা খুবই দক্ষ।

কুমারচন্দ্রকে লন্ঠন হাতে এগিয়ে দিতে এলেন চারুশীলা। মাঠের পর মাঠ হেঁটে যেতে যেতে কুমারচন্দ্র পেছন ঘুরে দেখলেন,সদর দরজার কাছে এখনও চারুশীলা একটি আলোর বিন্দু হয়ে স্থির দাঁড়িয়ে আছেন।

কুমারচন্দ্র যখন সুতাহাটায় পৌঁছালেন,তখন সবে ভোর হচ্ছে।এখন শীতকাল,কিন্তু তাঁর তেমন ঠান্ডা লাগছে না। বাজারের ঠিক মাঝখানে তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।তারপর হাতের তালি মেরে সুর করে গেয়ে উঠলেন,এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন "

যারা দোকানপাট, বাজারহাট খুলতে এসেছিল,তারা সকলে কুমারচন্দ্রের হাততালি ও গলার আওয়াজ পেয়ে সেই দিকে এগিয়ে গেলেন।

ভাইসব,আজ ২৪ শেষ ডিসেম্বর। ইংল্যান্ডের যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলস কলকাতায় আসছেন, এ আমাদের গর্বের দিন নয়,গ্লানির দিন।যারা আমাদের দেশের মানুষকে সম্মান করে না,আমরাও তাদেরকে কোনো সম্মান করব না।আপনারা তো জানেন,এই ইংরেজ রাজসরকার চব্বিশ জন কৃষককে আন্দোলনের জন্য গুলি করে হত্যা করেছে। এই সরকারের অত্যাচারের কাছে এই ঠান্ডা, এই শীত কিছুই নয়।কিছুই নয় একদিনের রোজগার।তাই সেই বিদেশী শাসককে আমরা সম্মান জানাবো না,আমরা সবকিছু বন্ধ রাখব।চলবে একদিনের হরতাল।এই হরতালে আমরা বুঝিয়ে দেবো,আমরা ওদের রাজ্য ও রাজপদের প্রধান ব্যক্তিকে ঘৃণা করি।

কিন্তু কুমারদা,মোরা সামান্য মুদিকারবারী, আর এই সুতাহাটা একটা ছোট্ট এলাকা,এখানে এইসব হরতাল করে কি অত বড় জাহাজকে টলানো যায়?
একজন অল্প বয়স্ক দোকানদার জিজ্ঞেস করল।

জাহাজ যে জলে ভাসে,সেই জলই তাকে ডোবাতে পারে,একটা ছোট্ট ফুটোও তাকে সলিলসমাধি করাতে পারে,এই আন্দোলন এখানে এলাকার ক্ষেত্রে হয়তো ছোট দেখাচ্ছে, আসলে একে একটা ঢেউয়ের শুরু বলা যেতে পারে। এখানেও তো ইংরেজ পুলিশের থানা আছে,টনক ঠিক নড়বেই।মাথায় খবর ঠিক যাবেই, তারপর যেভাবে ইউনিয়ন বোর্ড আমাদের গলা চেপে ধরে আছে,তার তো একটা বিহিত করা দরকার।

ঠিক বলেছেন,এই জনতা সমর্থন করে উঠল।

সত্যি এই বাড়তি ট্যাক্সের জন্য মোদের ঘটিবাটি বিক্রি হওয়ার জোগাড়। আচ্ছা,কুমারদা,এই আন্দোলনে এই ইউনিয়ন বোর্ড সত্যি বাতিল হবে?

অবশ্যই হবে, হতেই হবে। এর জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।আমাদের নেতা বীরেন্দ্রনাথ শাসমল কী বলেছিলেন,মনে নেই, যতদিন ইউনিয়ন বোর্ড বাতিল না হচ্ছে, ততদিন তিনি পায়ে জুতো পরবেন না!
তাহলে ভাবো,একজন সত্যিকারের রাজার পুত্র আমাদের জন্য কী ক্লেশ ওঠাচ্ছে, আরও আমরা এখনও এইসব নিয়ে চিন্তা করব।মনে রাখবে এই আন্দোলনে ইউনিয়ন বোর্ডকে পরাস্ত করতে পারবে।

কী এই ইউনিয়ন বোর্ড?  কী রকম মারাত্মক হয়ে উঠেছে ইংরেজ সরকারের এই চাল? ইউনিয়ন বোর্ডের জন্য কেন সাধারণ মানুষের দমবন্ধ হয়ে আসছে?

ঘটনাটি এইরকম 

১৯১৯ সালে ইংরেজ রাজসরকার পল্লি স্বায়ত্তশাসন আইন (Bengal Village self-Govermment Act-BVSGAA) পাশ হয়। এই আইনের আওয়াত ছয় থেকে নয় জন নতুন ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য হবেন।
এরাই জনস্বার্থ, সমাজসেবা এবং গ্রামীণ উন্নয়নমূলক কাজকর্মের নির্দেশ ও তদারকি করবেন,এমন কি গ্রামে গ্রামে সালিশি করা,শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং চৌকিদার ও দফাদার নিয়োগ পর্যন্ত করতে পারবেন।এদের চালিত করবেন পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট।
এগুলো শুনতে খবই ভালো লাগলেও আসলে এ হল কালো আইন। এই ইউনিয়ান বোর্ডের সদস্যরা ইংরেজ রাজসরকারের চর। এরা গ্রামে গ্রামে এমন স্বেচ্ছাচারী নিয়ন্ত্রণ শুরু করল যে সাধারণ মানুষ একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়ল।এ অনেকটা সেই জমিদারীর ইজেরাদার নিয়োগের মতো।যত পারো প্রজাদের শোষণ করে জমিদারের কোষাগার ভরানো।
গাছ কাটতে হলে ইউনিয়ন বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে। গ্রামের মানুষ নিজেরা কোনো সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।সবই নিয়ন্ত্রণ করবে ইউনিয়ন বোর্ড। তারপরও আরও মারাত্মক আইন এই,এই ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্যের বেতন থেকে শুরু করে সমস্ত রকম সুযোগসুবিধার ভার বহন করবে সেই গ্রামের মানুষ।তার ফলে পরিবার পিছু ট্যাক্সের পরিমাণ কয়েকগুণ রাতারাতি বেড়ে যায়।
এই সমস্যা চরমে উঠেছে।মানুষের যেটুকু সম্পত্তি-জমিজমা আছে,সবই ট্যাক্স জমা করতে ফুরিয়ে যাচ্ছে। 
এই সত্যটি প্রথম অনুভব করেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল। তিনি এই ইউনিয়ন বোর্ড আইনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলেন।
তিনি কলকাতায় ছোটাছুটি করতে লাগলেন। বরিশালের প্রাদেশিক সম্মেলনে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল এই ভয়ংকর সত্যি উদঘাটন করেন।আন্দোলনের প্রস্তাব দেন।
তখন সেই সম্মেলনের নেতারা একই সঙ্গে অসহযোগ ও ইউনিয়ন বোর্ড এর আন্দোলন চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু কলকাতার বাবু নেতারা এই গ্রামীণ সমস্যাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।তাদের বক্তব্য, এই ইউনিয়ন বোর্ডের প্রভাব নিতান্ত গ্রাম্য,তাই এতে মাথা ঘামানোর চেয়ে বীরেন্দ্রনাথের উচিত কংগ্রেস সংগঠনকে অসহায় আন্দোলনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ করা।
তার ফলে কংগ্রেসের Executive Committee এই ইউনিয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন অনুমোদন বাতিল করেন।
কিন্তু বীরেন্দ্রনাথ থেমে থাকার পাত্র নন।তিনি ছুটলেন গান্ধিজির কাছে। তাঁকে সবটা বুঝিয়ে বললেন। গান্ধিজিও কংগ্রেসের কর্মসমিতির বিরুদ্ধে গিয়ে বীরেন্দ্রনাথকে অনুমতি দিতে সাহস করলেন না।তবে তিনি মুখে বললেন,বীরেন্দ্রনাথ ইচ্ছে করলে নিজের দায়িত্বে এই আন্দোলন চালাতে পারে। তখন বীরেন্দ্রনাথ একলা চলো নীতি গ্রহণ করলেন। তিনি একাই এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে লাগলেন। নিজেই গ্রামে গ্রামে গিয়ে ইউনিয়ন বোর্ডের ভয়ংকর পরিণাম সম্পর্কে মানুষজনকে বোঝাতে লাগলেন।
সেই কাজে বর্তী কুমারচন্দ্র জানা।তিনি সুতাহাটায় বাজারের একেবারে মধ্যিঝানে বসে রইলেন।

তাঁর উপস্থিতির একটা দারুণ প্রভাব পড়ল।
দুপুরের কিছু পরে সতীশ মাইতি এলেন।বলে উঠলেন,

কুমারদা, এমন অভাবনীয় দৃশ্য আগে কোনোদিন চোখে পড়েনি!

কেমন?

সব দোকানপাট তো বন্ধ, এমন কি স্কুল-পাঠশালা বন্ধ রেখেছে।কেউ রেজিস্ট্রি অফিসে আজ রেজিস্ট্র করতে আসেনি!

এটা কিন্তু রাত পর্যন্ত চালাতে হবে।
আমি ততক্ষণ এই স্থান ছেড়ে কোথাও যাবো না

কিন্তু অনাহারে তো শরীরে প্রভাব পড়বে,কিছু খেয়ে আসুন

না,যতক্ষণ না এই হরতাল সম্পূর্ণ হচ্ছে, কিছুই খাব না।

কুমারচন্দ্র বাজারের মধ্যে একটি চটের ওপর বসে রইলেন।তাঁকে ঘিরে জনা পঞ্চাশেক লোক বসে রইল।সুতাহাটা থানার পুলিস তিন রাউন্ড চক্কর মেরে সবকিছু শান্তিপূর্ণ দেখে থানায় ফিরে গেছে।

ঠিক সন্ধে নামার মুখে সূর্যকান্ত চক্রবর্তী উপস্থিত হল।
কাছে গিয়ে কুমারচন্দ্রের কানে কানে কীসব বললেন।
কুমারচন্দ্র তখন সতীশের দিকে তাকিয়ে বললেন,সতু, তোমাকে আজ বৈষ্ণবচক যেতে হবে না,তোমার বদলে আমি যাবো,একটা গরু গাড়ি ঠিক কর

আজ্ঞে আমি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব,বললেন সতীশ 

না,আমি একাই পারব,তুমি  এদিকটা সামাল দাও, আমি আসছি,আয় সূর্য 

বলেই সেই ভীড়ের মধ্যে আলতো অন্ধকারে মাথায় একটা গামছা বেঁধে কুমারচন্দ্র গরুর গাড়িতে উঠে পড়লেন।সঙ্গে বন্ধু সূর্যকান্ত।

কিছু সময় পরে ইংরেজ পুলিশের একটি গাড়ি এসে থামল। তারপর কিছুক্ষণ অনুসন্ধান করে রওনা দিল বাসুদেবপুরের দিকে। রাতের দিকে পুলিশ বাসুদেবপুরে যখন কুমারচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করবে বলে এসে দাঁড়াল, তখন কুমারচন্দ্র বৈষ্ণবচকে সতীশ মাইতির বাড়িতে জলভেজানো ভাত এবং আলুমাখা-কাঁচা লঙ্কা সহযোগে সারাদিনের অভুক্ত অভিযান ভঙ্গ করছিলেন।
খেতে খেতে কুমারচন্দ্র বলে উঠলেন,পুলিশকে আমি ভয় পাই না,কিন্তু এই সময় গ্রেফতার হওয়া চলবে না

কেন রে?  জিজ্ঞেস করলেন সূর্যকান্ত 

আরে বন্ধু আমেদাবাদ যেতে হবে,সেখানে কংগ্রেসের সম্মেলনে যোগদান করব 

ওহ্ 

আরও একটি বড় পবিত্র ব্যাপার আছে

কী?

বারদৌলিতে গান্ধিজি আছেন,সেখানে তিনি সত্যাগ্রহ আন্দোলন করছেন,তাতে যোগদান করব 

আমিও যাব

তাহলে চল বন্ধু, তবে আজ যা হল,এতে ইংরেজ রাজসরকারের একটু হলেও টনক নড়বে,এতদিন কলকাতায় হরতাল দেখে এসেছে, এবার তাই গাঁয়েদেশে ছড়িয়ে গেছে,এবার বুঝবে, গাঁয়ের সরল-সাধাসিধে মানুষগুলোকে রাগালে কেমন বুকে জ্বলন্ত ড্যাসনা ঢোকে!

যা বলেছিস, তাহলে রাতটা কি এখানে বিশ্রাম নিবি? 

না, পুলিশ জাল পাতা শুরু করেছে, আমাদের রাতেই পালাতে হবে।

আচ্ছা 

গরুর গাড়িটি নিয়ে যখন অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন,সেই সময় জাতীয় বিদ্যালয়ের এক ছাত্র হাজির হল।

কী রে জনার্দন?  কী হল?

স্যর,আপনাকে ধরার জন্য পুলিশ আপনার বাড়ি গিয়েছিল,তারপর অনেক তল্লাস করে আপনাকে না পেয়ে আবার সুতাহাটায় আসে।সেখানে সতীশ মাইতিকে ধরে।তিনি প্রথমে কিছুই জানেন না,বললেন।তারপর পুলিশ ভয় দেখায়,হরতালকারীদের দোকানপাট ভেঙে দেবে,যদি কুমারচন্দ্র কোথায় আছে না বলে!

তারপর? 

তারপর সতীশ মাইতি বুদ্ধি করে বলে দেন,ট্রেনে করে কোথাও যাওয়ার কথা বলছিল, তিনি বুঝতে পারেননি! 

সে কথা শুনে পুলিশ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়

আচ্ছা, বুঝেছি 

সূর্যকান্ত বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন,কী বুঝেছিস? এবার তো ট্রেনের টিকিট কাটতে গেলেই ধরা পড়ে যাবো।

না,একটা উপায় বের করেছি,আমরা খড়্গপুর হয়ে যাবো না,কারণ ঐখানে ধরার জন্য ওৎ পেতে থাকবে।

তাহলে?

আমরা যাব হাওড়া, সেখান থেকে ইস্টার্ন রেল ধরে আমেদাবাদ চলে যাবো,আর পুলিশ বাবাজি বোকার মতো খড়্গপুরে মাছি তাড়াবে, চল, চল বলেই কুমারচন্দ্র জনার্দনকে বললেন
তুই বাড়িতে একটু খবর দিয়ে দিস

ঠিক আছে, বলেই জনার্দন বেরিয়ে গেল।

অন্যদিকে কুমারচন্দ্র ও সূর্যকান্ত হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে সোজা আমেদাবাদের পথে এগিয়ে গেলেন।
প্রথমেই দর্শন করলেন জালিওয়াবাগ। সেখানে গিয়ে সেই মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে কুমারচন্দ্রের চোখে জল এলো।তিনি মাঠের ওপর শুয়ে পড়লেন।সারা গায়ে মাটি লেগে গেল।
মুখে বললেন,এতোখানি পবিত্র ধূলি আমি কোনোদিন গায়ে মাখিনি, সূর্য,এতে আমার ভাইবোনের রক্ত মিশে আছে।
তারপর তিনি জালিওয়াবাগের মাঠ থেকে কিছুটা ধূলি ফতুয়ার পকেটে নিয়ে নিলেন।মনে মনে ভাবলেন,যেখানে জাতীয় বিদ্যালয় গঠন করেছেন,সেখানে ছড়িয়ে দেবেন।
জালিওয়ানাবাগের প্রবেশদ্বারটি একবার দেখলেন সূর্যকান্ত। তিনি বিষণ্ণকন্ঠে বলে উঠলেন,এইরকম একটি মাত্র প্রবেশদ্বারের সামনে ইংরেজ অফিসার একগাদা বন্দুকবাজ নিয়ে এসে নিরীহ ও অসহায় মানুষের ওপর গুলি চালিয়ে দিয়েছিল!  বন্ধু, এরা নাকি শিক্ষিত বলে সারা বিশ্বের কাছে গর্ব করে! এরা মানুষের পদবাচ্য নয়! শিক্ষিত হওয়া অনেক দূরের কথা।

কুমারচন্দ্র সেই প্রবেশপথের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।তারপর জালিওয়নাবাগের মাঠের দিকে তাকিয়ে আবার আনত প্রণাম করলেন। 

সূর্যকান্ত বলেই চললেন,সত্যি কুমার, এই ইংরেজ সরকারের আমলে যে পাশ করে শিক্ষিত হয়েছি,বলতে লজ্জা লাগছে,এতো আমাদের মতো ভারতবাসীর কাছে চূড়ান্ত অপমান।

কুমারচন্দ্র বলে উঠলেন,আমি অজ পাড়াগাঁয়ের ছেলে,কিন্তু যেদিন জালিওয়ানাবাগের ঘটনা শুনি,সেদিন মনে হল,এই মাটি আমারই রক্তে ভরে উঠেছে,আমার ভাইবোনের বুকে গুলি লাগেনি,যেন আমার বুকে গুলি লেগেছে,সেই সময় বুঝলি,যেখানেই দাঁড়াতাম,মনে হত, এই আমার দেশ,যখন যেসব মানুষজনকে দেখতাম,মনে হত, এই আমার ভাইবোন। আর সেই দেশকে জুতোর তলায় পিষে ফেলবে আর আমি ইংরেজিতে গালভরা ইংল্যান্ডের ইতিহাস, ভূগোল অথবা ইংরেজি-জানা কেরানি হওয়ার চেষ্টা করব,ঘৃণার সঙ্গে তা সরিয়ে দিই।

সেদিন আমি তোকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কত বুঝিয়েছিলাম,আমি নিজেও পরীক্ষা দিয়েছি, পাশ করেছি,এখন এখানে এসে মনে হচ্ছে, যেন কেউ আমাকেই সজোরে থাপ্পড় মেরে নির্দেশ দিয়েছে, আমার গালে কেমন আঘাত লেগেছে,তার বর্ণনা করো,নম্বর দেব! ছিঃ ছিঃ 

নারে, তুই পাশ করেছিস,সত্যিকারের শিক্ষিত হয়েছিস,তাই জাতীয় বিদ্যালয়টা এতো সুন্দর চালাতে পারছিস,তুই আমাকে অনেক সহযোগিতা করছিস 

নারে কুমার,আমি বইপড়ার পরীক্ষায় পাশ করেছি,কিন্তু মনুষ্যত্বের পরীক্ষায় তুই শুধু পাশ করিসনি,অন্যকেও পাশ করার রাস্তা দেখাচ্ছিস, তোর মতো বন্ধু পেয়ে আমি ধন্য।
আয় আমরা এই পবিত্র স্থানে হাতে হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করি,এই বর্বর সরকারের বিরুদ্ধে আমরণ লড়াই করে যাব,এতেই আমাদের মৃত ভাইবোনের আত্মার শান্তি হবে।

আত্মার শান্তি! কুমারচন্দ্র একটু অবাক হলেন।

হ্যাঁ,তাঁরা যেজন্য প্রাণ বলিদান করেছেন,আমাদের দেশমাতার সেবার মাধ্যমে তাই আত্মাশান্তির পূজা হবে।

ঠিক বলেছিস

দে, হাতটা বাড়িয়ে দে

নিশ্চিত,বলেই কুমারচন্দ্র হাত এগিয়ে দিল।
দুই বন্ধু হাত দুটো ওপরের দিকে তুলে চোখ বন্ধ করে আবার প্রণাম জানাল শহীদদের উদ্দেশ্য। 



সেখান থেকে বেরিয়ে কুমারচন্দ্র পৌঁছে গেলেন বারদৌলি। সেখানে গিয়ে দেখলেন গান্ধিজি বোম্বাইয়ের সাম্প্রতিক দাঙ্গার জন্য এই সত্যাগ্রহ আন্দোলন তুলে নিয়েছেন। 
তখন কুমারচন্দ্র গান্ধিজিকে প্রণাম করে কংগ্রেস অধিবেশনে চলে গেলেন।
যাওয়ার গান্ধিজি বলে দিলেন,গ্রামকে জাগাতে হবে,শক্তিশালী করতে হবে,গ্রামেই হল আসল দেশের শক্তি। এবং শেষ পর্যন্ত গ্রামকেই পাখির চোখ করে কাজ করতে হবে।
আমি নিজে এবার গ্রামকে ডাক দেবো,গ্রামের পর গ্রামে ঘুরব। 

কুমারচন্দ্র গান্ধিজির সেই কথা সারা অধিবেশনে ভাবতে লাগলেন।তারপর অধিবেশন শেষ হলে বন্ধু সূর্যকান্তকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়াগ দর্শন করলেন এবং গয়ায় এসে উপস্থিত হলেন।
সেখানে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্য পিণ্ডদান করেন।
পিণ্ডদানের কাজ সম্পন্ন করে কুমারচন্দ্র ও সূর্যকান্ত ফল্গুনদীর চড়ার বালির ওপর গিয়ে বসলেন।

আচ্ছা, সূর্য, তুই চন্দশেখর,মেদিনীপুরের মহান দানবীর চন্দ্রশেখরের কথা জানিস

নাম শুনেছি,কিন্তু সেভাবে জানি না!

তবে শোন, বলে কুমারচন্দ্র তাঁর বাবার মুখ থেকে শোনা কাহিনিটি বলল।

দেখছিস,কুমার,মানুষের সত্যিকারের কাজ তাঁর মৃত্যুর পরও বন্ধ থাকে না,কী আশ্চর্য! 

হ্যাঁ,আমরাও এমনভাবে কাজ করে যাব,দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য,যাতে আমাদের মৃত্যুর পরও এই কাজ বন্ধ না থাকে

ঠিক বলেছিস

তাহলে চল দেশে ফিরে যাই,সেখানে অনেক কাজ বাকি আছে

চল বন্ধু.... 

ক্রমশ...

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments