জ্বলদর্চি

মেয়েজন্ম /শ্রীজিৎ জানা

শিল্পী -মেঘা দাস



মেয়েজন্ম

শ্রীজিৎ জানা


দ্বিতীয় সন্তান যখন আবার মেয়েই হল একেবারে ভেঙে পড়ে অসীম। ভীষণ আশা করেছিল এবারে ছেলেই হবে।তাছাড়া আশা করাটা বোধহয় অসীমের পক্ষে অমূলক নয়।বাবার একমাত্র ছেলে অসীম।তার ঠাকুমা বোলতো শিবরাত্রির সলতে। বংশ রক্ষাকারী বলে বাড়িতে অসীম দুধেভাতে আহ্লাদে বড় হয়েছে। গ্রামে অকুড় সম্পত্তি। ধানিজমি, পুকুর,সব্জীআনাজ, আম, জাম কাঁঠালের বাগান, সবেমিলে মিনি ভূস্বামী বলা যায়। লেখাপড়াতে বরাবরই চৌকস সে। স্কুলের চাকরী পেতে খুব একটা ঝক্কি পোয়াতে হয়নি তাকে। বাবা অবিনাশ ঘোষাল তো যারপরনাই খুশী ছেলের চাকরীর সুবাদে। দু'পুরুষ বাদে তাদের বংশে কেউ একজন সরকারী চেয়ারে বোসলো। অম্নি অবিনাশ চন্দ্র গোঁ ধরল বৌমা করবে চাকরীয়ালা। যেমন ভাবনা তেমন তার দৌড়ঝাঁপ। গিন্নী প্রভা খানিকটা বেঁকে বসে।
--- চাকরীয়ালা বৌমা এলে কে সংসার সামলাবে! কলম ঠেলে এসে খুন্তি নাড়তে যাবে কেন! মাস ফুরোলে মোটা টাকা মাইনে তার , শুনবে কারুর কথা!
---আরে আপ ভালো তো জগৎ ভালো। তুমি খামখা বাড়াবিস্তর ভাবছ। খোকা আমাদের একমাত্র ছ্যানা। ভালো হলেও সই আর খারাব হলেও সই।
প্রভার কথা ফুৎকারে উড়িয়ে পাঁচ-সাতখানা ঘটক লাগিয়ে দেয় অবিনাশ। শেষ অব্দি চাকরী করা বৌমাও জুটিযে ফেলে। শিপ্রা একটা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা।
বিয়ের দু'বছরের মাথায় শিপ্রার কোলে আসে অদ্রিজা। কী টুকটুকে মুখখানা। ঘোষাল গিন্নী প্রভার মুখে হাসি ধরে না।বলে,
--দ্যাখো দ্যাখো পুন্নিমার চাঁদ কেটে যেন বসিয়ে দিয়েছে দিদুনের মুখে।
অবিনাশ চন্দ্র মিয়ানো হাসি মুখে মেলে ধরে। মনের ভিতরে যে তার অন্য আশা হাঁ করে বসেছিল তা ঘোষাল কত্তার মুখ দেখলে বোঝা যায়।রাতে বিছানায় গিন্নীকে ধমকে উঠে অবিনাশ।
--- হয়েছে তো নাতনি! তাতেই দেখি খুশিতে খলখলিযে উঠেছো! নাতি তো হয়নি! হলে তাহলে কী নাই করতে।
---মেয়ে ঘরের লক্ষ্মী সেটা যদি তুমি বুঝতে।
---আমার বোঝার দরকার নেই। আর তুমি হযেছো শাউড়ী, বলিহারি! কোন কিছুই কী বৌমাকে শিখাতে নেই!
---অরা আজকালকার বৌমা। মোদের কথা শুনবে কেন? অরা তিথি-বার দেখে মেলা মেশা,ঠাকুর থানের ওষুধ খাওয়া কুনুদিন মানবে নি।
---মানে নি বলেই যাউ বংশ উজাড় হয়ে। এত সম্পত্তি ভূতের বাসা হয়ে জাউ।
--- কেন হবে? বৌমার আর কি বাচ্চাকাচ্চা হবেনি!
---দেখ আবার অরা  ভিতরে ভিতরে কীসব প্যালান করে রেখেছে।

অসীম ভেবেই রেখেছিল আরেকটা সন্তান তারা নেবে। শিপ্রারও ইচ্ছে অদ্রিজার একটা ভাই হোক। তবে ওরা দুজনেই কিছুটা সময় নিচ্ছিল। মাঝে দেরি হচ্ছে দেখে শিপ্রার দিদা একদিন বলেই ফ্যালে,
---আর ছ্যানাপনা তমরা লিবেনি না কী? কথায় আছে এক টাকাও টাকা আর একটা ছ্যানাও ছ্যানা নাকি!
প্রথমে মেয়ে হওয়া মানেই পরের সন্তান কে আসবে, এ নিয়ে মারাত্মক একটা চাপ মা-বাবাদের ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। কমন রুমে স্কুলের কলিগদের অনেকেই চোখ নাচিয়ে অসীমকে বলে,
---সেকেন্ড ইস্যু নিচ্ছো নাকি ব্রাদার।
ইঙ্গিত স্পষ্ট অসীমের কাছে। শিপ্রাকেও শুনতে হয় কত গালগল্প। তার ছোট মাসীর ছেলের তো পরপর দুটোই মেয়ে। কলিগ অপর্ণার দাদারও পরপর তিনটে। মিড ডে মিলের রাঁধুনিরা পর্যন্ত শিপ্রাকে জোর করে বলতে ছাড়েনা,
---জান ত ম্যাডাম ভগমান একচোখা।যাকে ব্যাটা দ্যায় ত ব্যাটাই দিয়ে যায়। আর যাকে মেইছ্যানা দিবে তাকে শুধু মেইছ্যানা।
শিপ্রা কারো কথার উত্তর দ্যায় না। অদ্রিজার বয়স পাঁচ পেরোতেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয় ওরা দুজনে।  বন্ধু জয়ন্ত একদিন অসীমকে ডেকে বলে,
---শোন্ ব্যাটাচ্ছেলে  পুত্র জন্ম দেওয়া ইজি ব্যাপার না।  সেকালে রাজারা পুত্রেষ্টি যজ্ঞ কোরতো।সেসব সেকেলে ব্যাপার। তবে এক্ষেত্রে বস্ পুরোটাই ফিজিক্যাল প্রোসেস। তার জন্য একটা ডিফারেন্ট সেক্সচুয়াল মেথড ফলো করতে হয়। কখন সেক্স করবি,কীভাবে করবি সবই প্রেসকাইব করে দেব। ওটা ফলো কর। পরে একটা পার্টি দিয়ে দিস।
অসীম কথাটাকে উড়িয়ে দিতে পারে না। জয়ন্তর দুটোই ছেলে। অগত্যা উৎসাহ ভরে জয়ন্তর নির্দেশ মানতে রাজি হয়।
এদিকে শিপ্রার উপরে চলে প্রভার জোরজুলুম। পঞ্চানন্দ ঠাকুরের কলা বেলপাতা খেতে হবে। তার খাওয়ার নিয়মে অন্যথা করা যাবেনা। মুখে পুরে পুকুরে ডুব দিতে হবে।আর সেদিন থেকে কাঁঠালি কলা খাওয়া বন্ধ।ওদিকে শিপ্রার মা মানত করে বসে তাদের বুড়ো শিবের থানে। ছেলে হলে দন্ডী কাটবে শিপ্রা। মেজ মাসি তাদের গ্রামের মহাপ্রভু থানে শিপ্রাকে নিয়ে গিয়ে পুজো দেন। থানের মাটি মুখে নিতে বলে শিপ্রাকে। জয়ন্তর সেজ জেঠিমা কোথাকার এক পীরের থান থেকে তাবিজ এনে শিপ্রার হাতে বেঁধে দেন। শিপ্রার ভেতর থেকে গর্জে উঠতে চায়। কিন্তু পারে না। সাতপাঁচ ভেবে সবার সবরকম নিয়মকানুন মুখ বুজে মেনে নেয়।
পিসি শ্বশুড়ি বাড়িতে এলেই শিপ্রার কানের কাছে একই কথা প্যান প্যান করে শোনাতে থাকে,
---পুত্র না হলে পুত নরকে ঠাুঁই হয়ে পুরাণে বলে। বৌ একটা ব্যাটাছ্যানা কর দিখি।
কথা শুনে গা-পিত্তি জ্বলে শিপ্রার। নিজের অথচ তিন ছেলে থাকতেও কেউ ভাত দ্যায় না। আজ এর ঘর কাল ওর ঘর ঘুরে মরে। তবু ছেলের আশ করতে ছাড়েনা। শিপ্রারও মনে মনে একটা ছেলেই চায়।

সকলের সবটা মেনেই সন্তান আসে শিপ্রার গর্ভে। ন'মাসে সাধের ভোজে পাড়ার বয়স্ক মহিলারা মুখ বুজায় না,
---বুইলি পভা তোর ইবার লাতিই হবে।
--মোরও তায় মনে হয়। পেটটা বোতুলা লাউ হয়ে ঝুলে গ্যাছে।
---ঠিকই বোলছো। শরীলটা ত একেবারে ভেঙে গ্যাছে।চোখের গর্তে দুমুঠা চাল ধরে যাবে।
প্রভা তাদের কথা শুনে খুশিতে ডগমগ করে। দ্বিগুন খাতির যত্ন করে তাদের। শিপ্রারও চোখের কোণে খুশির আলো ঝিকিয়ে ওঠে।

সেদিন শিপ্রা একটু যন্ত্রণা অনুভব করতেই জয়ন্ত নার্সিংহোমে ভর্তি করে দ্যায়। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন,
---আজই ডেলিভেরি হবে।বাট্ সিজার কেস।
জয়ন্ত সম্মতি দেয়। ঘোষাল কর্তা বারবার ফোন করতে থাকে। শিপ্রা তখন লেবার রুমে। হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়।  তারই মাঝে এক সিস্টার এসে জানায়,
----জয়ন্ত ঘোষালের বাড়ির কে আছেন?
---আমি
বলেই ঝটিতে দৌড়ে যায় জয়ন্ত সিস্টারের দিকে। সিস্টার হাসিমুখে জানায়,
----আপনার মেয়ে হয়েছে। লাইগেশন কি করাবেন?
শোনামাত্রই জয়ন্ত অনুভব করে যেন পায়ের তলার মাটিটা নড়ে উঠল চরম কম্পনে।

জয়ন্তর মন থেকে পুত্র সন্তান লাভের ইচ্ছেটুকু মুছে গ্যাছে এক্কেবারে। ইতিমধ্যে বাবা গত হয়েছেন।শিপ্রাও তেমন কোন উৎসাহ দেখায় না আর। বড় মেয়ে অর্ণা পড়ছে সেভেনে। অদ্রিজা ক্লাস ফোরে। গ্রাম ছেড়ে বাড়ি করেছে সড়ক পথের ধারে শহরতলি এলাকায়। দুজনেই স্কুল আর মেয়েদের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত।এরই মধ্যে জয়ন্তর এক কলিগ সুমন্ত তাকে বোঝায়।জীবনে ছেলে কেন দরকার। জয়ন্ত তার কথাকে প্রথম দিকে পাত্তা দ্যায় না। শিপ্রাকে শোনানো মাত্রই ঝাঁঝিয়ে উঠে সে। দ্বিতীয় বার মেয়ে হতে তাকে কত কথা শুনতে হয়েছে।হাসাহাসি করেছে অনেকেই মুখটিপে। কেউ কেউ আড়ালে অপয়া বলতেও ছাড়েনি। ঝরঝরিয়ে কেঁদেছে শিপ্রা। জয়ন্তকেও কম হ্যারাস হতে হয়নি। আড্ডায় বন্ধুরা কথায় কথায় বলছে,
---তোর দ্বারা ছেলে করা হবে না।
---আরে ওর যন্ত্রে জোর নেই।জং ধরে গ্যাছে।
কেউ তো ইয়ার্কির চরম সীমা ছাড়াতে কুন্ঠাবোধ করেনি,
---ভাল একটা এডভাইস দিচ্ছি ব্রাদার।  নিজে না পারলে গোয়াল বদলে দে।

কথাটা শোনাতে যেন জয়ন্তর কানে কে যেন গরম সীসা ঢেলে দিল। তাতেও মুখে হাসি রেখে সব মেনে নেয়।
তবে মাঝে মাঝে মনটা ভারাক্রান্ত হয় তার। বয়সকালে কী হবে তাদের দুজনের। কে দেখবে তাদের। গাঁয়ের অত সম্পত্তি!  এখানে এতবড় বাড়ি! কিন্তু দুটো সন্তানের পর আবার সন্তান নিলে লোকের কাছে মুখ দেখাবে তারা কিভাবে! অথবা আবার যদি মেয়েই হয় তবে একেবারে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যাবে তারা। এই ক'বছরে কিছুটা ধাক্কা তারা কাটিয় উঠতে পেরেছে। 
কিন্তু সুমন্ত পিছি ছাড়ে না। কোন একটা অছিলায় জয়ন্তর বাড়ি এসে শিপ্রাকে বোঝায়। শিপ্রা মুখের উপর বলে,
---আর কোন রিস্ক নিতে মোটরই রাজি নয় আমরা।
হাল ছাড়ে না সুমন্ত। বলে,
---কলকাতার এক নার্সিংহোমের সাথে আমার পরিচিত। ওরা খুব গোপনে এবং পরিচিতদের জন্য করে থাকে। আমি সেটার দায়িত্ব নিচ্ছি।  ছেলে হলে রাখবে,আর নাহলে…।
প্রথমটা বেঁকে বসলেও, পরে জয়ন্তর স্বর কিছুটা নরম শোনায়। শিপ্রা তবে কোনমতেই সায় দেয় না।

রাতে বিছানায় জয়ন্ত তার মনের কথা বলে। শিপ্রা রুখে উঠে,
---লিঙ্গ নির্ধারণ আর ভ্রুণহত্যা দুটোই তো অপরাধ।
---সে তো জানি কিন্তু আমাদের ফিউচারটা তো ভাববে।
---কেন? মেয়েরা তো আছে?ওরা কম কিসে? তাছাড়া লোকে কি বলবে। দুজনে টিচার হয়ে তিনটে বাচ্চা নেব!
জয়ন্ত গুচ্ছের লোকের নাম ধরে ধরে শিপ্রাকে বোঝায়। তার বাবার ইচ্ছের কথা শোনায়। অবশেষে শিপ্রা অরাজির মতো করে রাজি হয়। সুমন্তর সাথে কলকাতা গিয়ে নার্সিংহোমে কথা বলে জয়ন্ত। একটা মোটা টাকায় রাফা হয় চুক্তি। কিন্তু পুরোটাই ভীষণ গোপনে। 
এদিকেও গোপন রাখে জয়ন্ত। কেউ টের পায় না তাদের তৃতীয় সন্তান গ্রহণের কথা

চার মাস পর যথারীতি নার্সিংহোমে যায় দুজনে। ডাক্তারবাবু  একটা টেস্ট করেন শিপ্রার। রেজাল্ট শুনে দুজনের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। শিপ্রার গর্ভে যে ভ্রুণ বেড়ে উঠছে আসলে সে একটি মেয়ে। এবার কী করবে তারা। দিশেহারা লাগে দুজনকে।
সুমন্তকে ফোনে জানায় জয়ন্ত। সুমন্ত সব শুনে আশ্বস্ত করে তাদের,
---আরে টেনশন কোরো নাতো। কথা তো হয়েই আছে।মেয়ে হলে অ্যাবরশান করাবো।তোরা ফিরে আয়। আমি বাকিটা কথা বলে নিচ্ছি।
জয়ন্ত স্বাভাবিক হতে পারেনা। তবে শিপ্রার কাছে পুরোপুরি নিজেকে প্রকাশ করতে চায় না।  দুজনে বাড়ি ফিরে আসে।

পরের দিন সুমন্তকে সাথে নিয়ে জয়ন্ত আবার রওনা দেয় কলকাতা। নার্সিংহোম মালিক সুমন্তর ভীষণ ক্লোজ। তার অফিসে কথাবার্তা হয়। কিন্তু ডাক্তার বাবু একটা কন্ডিশন সামনে রাখেন। তিনি স্পষ্ট জানান,
---বেবি চার মাসের মানে, অলরেডি তার হাত ও পায়ের অবয়ব তৈরী হয়ে গ্যাছে। এই সিচুয়েশনে বেবিকে ডেলিভেরি করাতে হবে। ওটা আমার দায়িত্ব বাট মারতে আমি পারবো না। বেবির বাবাকে ওই কাজটা করতে হবে।

নার্সিংহোম মালিক মিস্টার দত্ত বলেন,
--বাট স্যার ওরা আমাদের ভীষণ ফ্যামিলিয়। তাছাড়া ওদের সাথে একটা চুক্তি হয়েছে। ওরা পুরোটাই পেমেন্ট করেছে অলরেডি।
----সরি মিস্টার দত্ত। এটা আমি পারবো না। বেবিকে মারার কাজটা ওর বাবাই নিক। তাছাড়া আমাকে না জানিয়ে এই ডিসিশন আপনার নেওয়া ঠিক হয়নি মিঃ দত্ত।
---কিন্তু স্যার….
----কোন কিন্তু নয়। তেমন হলে আমি আপনার হোমে আসা বন্ধ করে দেব। প্রাণ বাঁচানো আমার কাজ,হত্যা নয়। আয় এম ও ডক্টর -নট বুচার! একজন বাব হিসেবে কেনই বা এই ডিসিশন নিচ্ছেন। যাকে জন্ম দিয়েছেন,তাকে সানন্দে স্বাগত জানান। ছেলে বা মেয়ে আজকের দিনে সবাই তো ইকুয়াল। মেধায়,কার্যক্ষমে এভরি হোয়ার। এই অনৈতিক কাজ আপনি কেন করছেন?
চুপ করে যায় মিস্টার দত্ত। তিনি বিলক্ষণ জানেন ডাক্তারের মেজাজ-মর্জি। চোখ ইশারা করে জয়ন্তদের বেরিয়ে যেতে বলেন। ডাক্তারবাবু চলে গেলে,মিস্টার দত্ত্ জানা,
---চিন্তা নেই সুমন্তবাবু। আগামীকাল আসুন অন্য কাউকে দিয়ে করানোর অ্যারেঞ্জ করে রাখছি। ডোন্ট ওরি।

একরাশ ভাবনা নিয়ে বাড়ি ফিরে জয়ন্ত। শিপ্রাকে সত্যিটা জানায় না। তবে অনেক রাত অব্দি চোখে-পাতায় এক করতে পারে না। হাজার ভাবনা হুড়মুড়িয়ে তার চোখে ঝেঁপে আসে। একটা পুত্র সন্তানের আশায় কী বিভৎস হয়ে উঠছে তারা। কী নিষ্ঠুরতার পথ বেছে নিতে হবে তাকে। ধীর পায়ে উঠে যায় পাশের ঘরে। যেখানে শুয়ে আছে তার দুই মেয়ে।সারাক্ষণ তাদের দুজনকে জড়িয়ে থাকে মেয়ে দুটি। জয়ন্ত বিরক্ত হয় কথায় কথায়। শিপ্রাও মুখ ঝামটা দ্যায় তাদের। তারা সহজে রাগে না। মাথা নীচু করে সরে যায়। জয়ন্তর কত কলিগ এসে তাদের ছেলেদের বদমাইশির কথা বলে। আশেপাশে দেখে মা-বাবদের উপর ছেলেদের অত্যাচা। নিউজ দেখতে দেখতে শিউরে উঠে। তার মা বলে,
---জানু কচি মেয়েদের মায়া বড় মায়া। আজ অদের হেলাছেদ্দা কোরছু একদিন দেখবি অরাই তোদের চোখের মণি হবে।

বিছানায় ফিরে আসে জয়ন্ত। নিজেকে নিজেই যেন ঘৃণা করতে থাকে। পরক্ষণেই ভাবে আবার মেয়ে হলে চারপাশ থেকে যারপরনাই বিদ্রুপ ছুটে আসবে। রাস্তাঘাটে বেরোনো দায় হয়ে যাবে। কিন্তু তাবলে নিজের হাতে মারতে হবে সন্তানকে। শিউরে উঠে জয়ন্ত।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল সে মনে নেই।শিপ্রার ঠ্যালায় ধড়ফড় করে উঠে বসে। সেই মুহুর্তে বেজে উঠে সুমন্তর ফোন। আজ শিপ্রাকে নিয়ে কলকাতা যেতে হবে। মিস্টর দত্ত সব অ্যারেঞ্জ করে রাখবেন। চটপট করে রেডি হয়ে শিপ্রাকে আসছি বলে বেরিয়ে যায় জয়ন্ত। রাস্তার মোড়ে এসে সুমন্তর মোবাইলে কল করে সে। ওই প্রান্ত থেকে সুমন্ত বলে উঠে,
---আরো কোথায় তোমরা। কুইক এসো আটটার ট্রেনটা না ধরতে পারলে টাইমলি পৌঁছাতে পারবো না।
---তুমি দাঁড়াও আমি আসছি। একটু কথা আছে।
বলেই ফোনটা পকেটে রেখে বাইকটা ঘুরিয়ে নিয়ে স্টার্ট দ্যায় জয়ন্ত। শর্টকাট রাস্তাটা মারাত্মক থারাপ। অন্যদিকে দিয়ে তাই পৌঁছবে সে আজকে। দেরি হলেও ক্ষতি নেই। ট্রেন ছেড়ে যাক স্টেশন দুঃখ নেই,বাকি সব থাকলেই তো হোলো তাদের।

জ্বলদর্চি পেজে লাইক দিন👇
 

Post a Comment

0 Comments