অরুণ দাসের 'চূর্ণীকে লেখা চিঠি'
মায়া দে
কবি অরুণ দাসের "চূর্ণীকে লেখা চিঠিতে"- চূর্ণী আসলে এক অমোঘ সত্যি। জীবন জুড়ে অনন্ত আসা-যাওয়া। একটা নেশার ঘোর যেন। একটা আলোছায়ার খেলা । ঢেউ জাগে মর্মতলে। ছাপ ফেলে যাওয়া স্মৃতি অঙ্গে অঙ্গে বাজায় বাঁশি । অন্যমনস্ক মনে বাঁশীর হু হু করা বিরহ হুতাশ। হৃদয়ের নিভৃতবাসিনী এখন শূন্য ক্যানভাসে এক অনন্ত হাহাকারে,---নেই সে নেই।
কবি অরুণ দাসের গ্রন্থে "চূর্ণীকে লেখা চিঠিতে" নামেই চমক । চমৎকারিত্ব প্রেমে। কবির হৃদয় উচ্ছ্বসিত মাধুরী চূর্ণী। কবি জীবনভোর সঞ্চিত অমূল্য গোপন প্রেম। প্রেমের পূজারী কবির লেখাতেই রোমাঞ্চ ।যে সমারোহে আসা প্রেম তার করুন পরিনতি বিরহে। ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি মালা নিয়ে লেখা চিঠি চুর্ণীকে।কবির গভীর বিশ্বাস এ চিঠি নিশ্চয়ই চূর্ণী পাবে।
একটা জীবনের জন্য একটা অতীত সত্যিই অনিবার্য। যে অতীত স্মৃতিতে একটা আস্ত গোটা মানুষ একটা আস্ত গোটা মানুষকে খুঁজে পায়। হৃদয়ের নদী ও পায় গতি , মরুভূমির শূন্যতা ও পায় ভাষা । তৃষিত আকুল আঁখি রাত জাগা নদীর মাঝে খোঁজে আশ্রয়। সোনা রোদ চুঁইয়ে যাওয়া বালির গভীরে ভীরু শরীরের গন্ধ।।কত সহজেই ঝরে পড়ে সূর্য নদীটির বুকে। তারপর মিশে যায় স্রোতের শরীরে।
চূর্ণী সে তো স্বপনচারিণী। প্রেমের বেদনায় যার মূল্য। অজানা সাধনায় সে প্রেমের দূর্গ গড়া।রামধনুর রঙিন ছায়ার আচ্ছাদনে মোড়া সে প্রেম। সুদূর দিগন্তে সোনার আভায় ভেসে বেড়ায় তার স্বর্ণাভও আঁচল। তারাদের ভিড়ে সেই তারাটি চূর্ণী ,তার হৃদয়ে মিশে। সে তো কেবলই ছবি। চূর্ণী আজ কেবল ছবি। দুজনের কানাকানি কথা, দুজনের মিলন বিহ্বলতা –আজ শুধু স্মৃতি বেদনা। সময়ের সত্য এমনই নিষ্ঠুর।
কবি অরুণ দাস তার প্রেয়সী চূর্ণীকে লিখেছেন এক একটা হারানো প্রেমের স্মৃতি কাতর চিঠি।
চিঠিতে রয়েছে হৃদয়ে জমে থাকা এক একটা প্রেমের মনি মানিক্য ।নির্মল দুঃখ নির্মল প্রেমে আনে প্রশান্তি। বস্তুত কবি অরুণ দাস প্রেমিক কবি । প্রেমের জীবন্ত মানবী মূর্তি চূর্ণী। দুঃখের হোমাগ্নি শিখায় জ্বলে প্রেম সগৌরবে অক্ষয় ।
এই গ্ৰন্থের কতোগুলো লাইন মন ছুঁয়ে যায়—--
চূর্ণী আমাদের একটি সাদা পাতা আছে
কোমল নদীর শরীরে বেড়ে ওঠা চাঁদ
ঘন রাতে তার শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলে
লেগে থাকে শিশিরের দাগ।
মনে যার নিত্য আসা যাওয়া,তার জন্য লেখা চিঠিতে ——
তুই রমনী নোস রমনী নোস,রমনীয় সন্ধ্যেও নোস পাগলবর্ণ
যার গোপন গন্ধে সন্ধ্যে হওয়া দেশে
প্রদীপের আলোয় এসে
ভালোবেসে যায় অন্ধকার
নিদারুন অন্ধকার ।
প্রতি রাতে গাঢ় হওয়া তোর গোলাপী গালে
তোর গন্ধ মেখে লিখি আমারি মৃত্যু রং।
প্রেমের গভীর নান্দনিক দর্শন পাই—----
ঘন রাতে —---ঘনিষ্ট পাখিদের সাথী
বুকের গভীরে নেমে আসে অন্ধকার
কবে কোন বর্ণমালা , সাজবে আবার
সীমাহীন এ সংসার।
আর একটু দেখে নেব চিরবিরহের সাধনার বহিঃপ্রকাশ এই লেখায় —-----
বুক ভরা প্রেম ফেরায়নি তাকে
তার ভারি হওয়া ডানায় মুছে গেছে ভালবাসা
আজ ছিঁড়ে ফেলি এ শরীর
তুমি আঁচল পেতে রাখো
তোমার ফেলে যাওয়া চুমুদের পাঠালাম
তার কোন গন্ধ যেন না আজ
ছুঁয়ে থাকে এ পাপ শরীরের ভাঁজ।
রোমান্টিক কবি অরুণ দাস সার্থক এই গ্রন্থে "চূর্ণীকে লেখা চিঠিতে" । প্রেমের নব দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। পেয়েছি নতুন ব্যাখ্যা । নতুন প্রেমের ব্যাকরণ। আমরা পড়ে ঋদ্ধ হয়েছি। হয়েছি সমৃদ্ধ।
0 Comments