জ্বলদর্চি

বিবর্তনের পথে..../নিশান চ্যাটার্জী

জীবনের গভীরে বিজ্ঞান-১৬

বিবর্তনের পথে....

নিশান চ্যাটার্জী


"আমরা ছিলাম আদিম মানব, জঙ্গলে তে বাস
খাদ্য ছিল কাঁচা মাংস, বনের লতা ঘাস"।। হ্যাঁ আমাদেরকে এভাবেই বর্ণনা করা হয়। যদিও আজকে আমরা সুসভ্য প্রজাতির প্রতিভূ তথাপি আমাদের আসল পরিচয় কিন্তু লুকিয়ে আছে উল্লেখিত বক্তব্যে।  কিন্তু জঙ্গল থেকে আজকের এই চমকপ্রদ উত্থানের পথটিও বেশ চমকপ্রদ। মানুষের বিবর্তনের ধারা বোঝার জন্য বিভিন্ন বিজ্ঞানী তাদের অনুসন্ধানকৃত ফলকে জীবাশ্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞানী হাক্সলে ১৮৬৩ সালে তার বই "MAN'S PLACE IN NATURE" এতে, মানুষের নিকটতম আত্মীয় হিসেবে এপ্ জাতীয় বানরের কথা বলেন। 

বিজ্ঞানী ইউগিন ডাবিশ  জাভার সোলো নদীর থেকে কিছু প্রাকমানবিক জীবাশ্ম অংশ খুঁজে পান এবং জাভা মানবের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। প্রাচীনতম জীবাশ্মের প্রাপ্তির ভিত্তিতে অনুমান করা হয় যে, মানুষের পূর্বপুরুষদের উৎপত্তি হয়েছিল পূর্ব আফ্রিকাতে। প্রায় চার থেকে পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে। চীন এবং এশিয়ার অন্যান্য অংশেও প্রচুর জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। মানুষের এই বিবর্তন সংক্রান্ত একাধিক তত্ত্ব থাকলেও প্রধানত উৎপত্তি জনিত দুটি তত্ত্বের কথা আলাদা করে আলোচনা না করলেই নয়। এই মতবাদ দুটি হল এক আঞ্চলিক মতবাদ। যার মূল বক্তব্য হলো- মানুষের পূর্বপুরুষদের উৎপত্তি হয়েছিল আফ্রিকাতে এবং তারপর তারা বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ও আধুনিক মানুষের সৃষ্টি হয়। অপর মতবাদটি হল বহু আঞ্চলিক মতবাদ। এই মতবাদ অনুযায়ী, মানুষের পূর্বপুরুষদের সৃষ্টি হয়েছিল,একই সাথে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে। বর্তমানের আধুনিক মানুষের নামের অর্থ হল জ্ঞানী মানুষ। বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপে হোমো গণের আরও কিছু প্রজাতির সৃষ্টি হলেও বর্তমানে কেবলমাত্র হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতিটিই জীবিত এবং পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত। অনেকেই হয়তো জানেন মানুষের এই বিজ্ঞানসম্মত নামের প্রস্তাবক হলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং ট্যাক্সোনোমির জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস। মানুষের ভাষার সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ৫০,০০০ বছর পূর্বে। স্তন্যপায়ী আবির্ভূত হয় সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী থেকে। আজ থেকে প্রায় ২০০মিলিয়ন বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এ ঘটনা ঘটেছিল। এরও বহু পরে  অলিগোসিন পিরিয়ডে এপ্ এবং মানুষের সাধারণ পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটে। স্তন্যপায়ীদের অন্যান্য বর্গের মধ্যে মানুষ প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত। এই প্রাইমেটদের অধীনে যে তিনটি উপবর্গ রয়েছে তার মধ্যে একটি হল হোমিনিড। মানুষ এই হোমিনিডের অন্তর্গত। হোমিনিডের অন্তর্গত বিভিন্ন জীবের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও তারা প্রত্যেকেই দ্বিপদ গমন ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল। হোমিনিডদের বিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ বর্তমান। যেমন শুষ্কতা মতবাদ অনুযায়ী,আদি বৃক্ষবাসী হোমিনিডরা পরিবেশের পরিবর্তনের ফলে, অরণ্যভূমির সংকোচন এবং তৃণভূমির বিস্তারের কারণে বৃক্ষবাসী স্বভাব থেকে ভূমিতে হাঁটার উপযোগী হয়ে নিজেদের তৈরি করেছিল। একে অনেকেই তৃণভূমি মতবাদও বলেন। ক্রমশ হোমিনিডদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন ও বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়েছে এবং প্রায় ২.৩ মিলিয়ন বছর পূর্বে হোমো হ্যাবিলিস নামক হোমিনিড প্রজাতি বিভিন্ন সরল সরঞ্জাম তৈরি করত। প্রায় ১ মিলিয়ন বছর পূর্বে অপর একটি হোমিনিড প্রজাতি হোমো ইরেকটাস আফ্রিকা থেকে পরিযান সম্পন্ন করে ইউরেশিয়ায় পৌঁছয় এরা আবার আগুনের ব্যবহার করতে পারতো। 

এরপর প্রায় ৩৫ থেকে ৬৫ হাজার বছর পূর্বে হোমো স্যাপিয়েন্স অষ্ট্রেলিয়াতে পৌঁছায়। এরা সেই সময়কার ভূখন্ডের সংযোগের মাধ্যমে এশিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ভাষার উৎপত্তি মানুষের বিবর্তন, বিস্তার ও ক্রমবৃদ্ধিতে সাহায্য করে, কারণ এর ফলে তারা সমবেত চিন্তাকে বাস্তবায়িত করা, সমস্যার সমাধান করা, এবং পরিকল্পনা ও তার রুপায়ণ করতে সক্ষম হয়েছিল।।

 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments