জ্বলদর্চি

গুচ্ছ কবিতা/ তাহের আলি

গুচ্ছ কবিতা 
তাহের আলি



আনন্দময়ীর আগমন

বেশ কয়েকটা পাখি উড়ে যায়,
অনেক অনেক দূরে, নীল নীলিমায়।
অনেকক্ষন চেয়েছিলাম তাহাদের পানে,
কোথায় যাবে তারা কোন গৃহকোণে।
পাহাড়ের কোলে এক সুন্দর বনানী
সেখানেই ধরিল তারা অশ্বত্থের ডালখানি।
অনতিদূরেই ছিল এক স্নিগ্ধ শহর,
পাখ পাখালিদের করে বড় ই কদর।
সেদিন শারদ সকাল ,ভাসিল আগমনীর গান।
পাখিরাও জানিত তাহা, জুড়িল মধুর তান ।
ওরা সব প্রাণের পাখি ,খুশিতে ভরা মন,
ঢাকের তালে তালে, দেখাল আনন্দ নাচন।
শহরবাসী অনেক খুশি, আনন্দময়ীর আগমনে,
ছোট থেকে বড়,ঘর নামাল উমা দর্শনে।
অন্ধকার নামিলে পরে,
আলোকিত হল উমা।
সবাই বলিল,ভারি সুন্দর আমাদের মা।


পুজোর আনন্দ

সোনা, মাকে দেখবো আয়,
মা এসেছে বিশ্বজুড়ে।
উড়ছে যে মন ,
খুশির জোয়ারে।

তোতন যাবে,নোটন যাবে,
মিতুল যাবে তাই।
এই কটা দিন থাকবো মোরা,
দু্:খ কিছু নাই।

তুই তো খাবি জিলিপি,
আমি খাব ঝালমুড়ি।
সবাই মিলে দেখবো ঠাকুর,
হবে তখন হুড়োহুড়ি।

সেথায় বসে ছোট্ট মেলা,
আমি কিনবো কানের দুল।
আমার উপর হিংসে করে,
তুই কিনবি খেলার পুতুল।

আর যে হবে ম্যাজিক খেলা,
আনন্দেতে দেখবো সবাই।
তুই হয়তো করবি রে ভয়,
আমি তোরে সাহস জোগাই।

সন্ধ্যা যখন আসবে নেমে,
আমরা তখন ফিরবো বাড়ি।
মাকে দেব কাঁচের চুড়ি,
করবে না সে আদৌ আড়ি।


বিরহ মিলন

স্বচ্ছ নীলের বুকে
কালো মেঘের মিছিল হলো।
সেই মিছিলের মধ্যভাগে ছিলে তুমি।
ঘন কালো চুল,
অঙ্গ তার সোনালী বরন,
এক দুধসাদা শাড়ি পরে,
কী অপূর্ব লাগছিলো তোমাকে।
তুমি হাত নেড়ে
তোমার প্রেমিককে ডাকছিলে।
কিন্তু সে এলো না।
সে খোলা আকাশের
নীচে বসে রইল।
সে নির্জনতা খুঁজছিল।
হয়তো তার বুকে বিরাজ করছিল,
শূন্যতা ,বিশাল শূন্যতা।
হয়তোবা বিরহ বেদনা,
তার হৃদয়টাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল।
বিলাসী চাঁদ এসবের সাক্ষী ছিল।
সে বাতাসকে বললো–
প্রেমময় ভাই আমার,
তোমার স্নিগ্ধতা, তোমার শীতলতা,
পরিবেশন করে দাও
এই নীল আকাশে।
এই যুগলপ্রেমীর বিরহ,
মিশে যাবে, এক নিমেষে।



দারিদ্র রেখা

কাল তো রবিবার, ছুটির দিন,
কাল তোর পুজোর কাপড় কিনতে যাব।
নরেন বাবু একথা বলে
নরেন বাবু রামুর বাবা,
একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
দারিদ্র তার শরীরি
ভাষায় পরিস্ফুট।
বাবার কথায় এক
আনন্দ ঢেউ রামুর মনে বয়ে গেল।

রামু বলল–ওই বড় দোকানটায়
অনেক ছেলে মেয়ে তাদের বাবা–মার
সঙ্গে যাচ্ছে, তারা যেন বড়ই খুশি।
চলো আমরাও সেখানে যাই।
নরেন বাবু বলে– না বাবা, ওইখানে
শুধু বড়লোকেরা যায়।
বড়লোক আবার কারা
ছোট্ট রামু বাবাকে প্রশ্ন করে।
বাবা বলে– বড়লোক
মানে তাদের অনেক অর্থ আছে
তারা সেখানে গিয়ে অনেক দামি,
অনেক কাপড় কিনে।
আমাদের এতো পয়সা নেই বাবা।

দারিদ্র কি জিনিস রামু বুঝল, বাবাকে বলল–
জানো বাবা ,আমরা গরিব বলো, বাবা জানো,
আমার ছোট্ট বন্ধু মন্টু সে আবার
আমাদের থেকেও বেশি গরিব।
তার বাবা নেই, ছেঁড়া জামা পরে
স্কুলে আসে, বড় কষ্ট হয় আমার ,তার জন্য।

বাবা, আমাকে তুমিতো
দুটো জামা প্যান্ট দিবে বলেছিলে।
আমাকে একটা দাওনা।
আমার বন্ধুকে একটা দাও।
তার একটা জামা প্যান্ট কেনারও পয়সা নেই।
ছেলের উক্তিতে নরেন বাবুর মনটা নীল
আকাশের থেকেও বড় হয়ে গেল
কয়েক ফোঁটা উষ্ন,
আনন্দাশ্রু তার চিবুক 
বেয়ে পড়তে লাগলো।
রামুকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।


 মতাদর্শ

আমি জানি,ভালোই জানি,
তোমার আছে শানিত কৃপান।
আমি আরও জানি,
করে দিতে পার ছত্র খান।

তুমি জানো আমি ক্ষুদ্র।
আমি দূর্বল, শক্তিহীন।
আমি নিরস্ত্র ঢালহীন।
লড়াই করি নাই কোনোদিন।

আমি সংগ্ৰাম করি মাত্র,
যাহা প্রতিষ্ঠা করিবে মতাদর্শের।
সংগ্ৰাম করি তাদেরই বিরুদ্ধে,
সব অনাচারের ,সব অবিচারের।

আমার প্রতিবাদী ভাষা আছে।
বয়ে নিয়ে যায় পশ্চিমা বায়।
আমার প্রতিবাদী লেখনি আছে।
যাহা লেখা হয়ে যায়, 
নীল আকাশের গায়।

তুমি রেগে যাবে জানি।
আমার ভাষায়, আমার লেখায়।
  তবে রেগে যাওয়া হবে অর্থহীন।
ভয় পাই না সেথায়।

অনেক বাধা আসবে জানি,
আমার উপর একবার নয় বহুবার।
তখনও বলে যাব, লিখে যাব,
নিরস্ত হবো না ,
কোনোদিন কোনোবার।

যদি তোমার শানিত কৃপানে,
আমার বুকের রক্ত ঝরে।
ওই তো বহতা নদী,
পৌঁছে দেবে সহানুভূতির অন্দরে।

একদিন সব মিলিত সহানুভূতিতে,
জন্ম নেবে এক মস্ত পাহাড়।
ওই পাহাড় যখন পড়বে ধসে,
পরিবেশ বদল হবে পুর্নবার।


মেঘ রাজ্য সফর

ক ' দিন ধরে দেখছি,
তুমি আমাকে ভালবাসছো না।
তুমি চাইছ, আমি কোথাও চলে যাই।
হ্যাঁ, আমি চলে যাব।
ঘুড়ি হয়ে উড়ে যাব।
লাটাই থাকবে তোমার হাতে,
বেশ কিছুটা উড়ে যাওয়ার পর,
তুমি সুতো কেটে দেবে।
আমি দিশাহীন, নিশানাহীন উড়ে যাব।

উড়তে উড়তে আমি,
পৌঁছে গেলাম মেঘেদের রাজ্যে।
পেঁজা তুলো দিয়ে রাজ্যটি সুশোভিত।
অপরূপ লাগছিলো পরিবেশ।
সেখানে মেঘবালিকাদের সাথে,
আমার আলাপ হলো।
চন্দন চর্চিত বৃষ্টির ফোঁটা দিয়ে,
তারা আমাকে বরন করে নিল।
তাদের আতিথেয়তায়, আমি স্নিগ্ধ হলাম।

আমি মেঘবালিকাদের সখা হলাম।
মেঘ রাজ্যের নানা স্থান,
তারা আমাকে ঘুরে দেখাল।
মুখরিত রজনীর পুলকিত জোৎস্নায়,
এক সুন্দরী ঝর্নাকে দেখাল।
শুভ্রবসনা মেঘবালিকারা জোৎস্নায়
সেখানে স্নান করল।
বিস্ময়ে বিমূঢ় হলাম
এই মনোরম পরিবেশে।

মেঘের রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে,
আমি আমার প্রিয়তমাকে দেখতে পেলাম।
প্রবহমান তটিনী তীরে,
সে নিঃসঙ্গতা অনুভব করছিল।
বিরহবেদনায় তার নয়নবেয়ে
নেমে আসছিল বেদনাশ্রু।
আমি বিচলিত হয়ে গেলাম।
তার কাছে ফেরার জন্য ব্যাকুল হলাম।

মেঘবালিকাদের সমীপে একথা ব্যক্ত করলাম।
তারাও সমব্যাথী হল।
প্রিয় সখা আমাদের –
প্রিয়তমার নিকট তড়িৎ যেও,
তার বিরহ সহিতে পারি না কেও।
তারা বৃষ্টি আনল।
আমি বৃষ্টি বেয়ে
নেমে এলাম নিজগৃহে।
প্রিয়তমার সঙ্গে মিলিত হলাম,
সিক্ত হলাম তার প্রেমরসনায়।


বন্ধু তুমি এসো

বন্ধু তুমি এসো
আমার তরে,আল পথ ধরে,
আমার কুটিরে।
ধানক্ষেত বেয়ে
তটিনীর রূপ পানে চেয়ে।

তুমি এসো
কোন এক হেমন্তের সকালে,
আকাশের সাথে ,কথা বলে বলে।
রকমারি পাখির কলতানে,
গাছগাছালির ছায়া ঘনে।

তুমি এসো
কোন এক চৈতালী সাঁঝ বেলায়,
বিরহী সুরের মূর্ছনায়।
তখন আমি নিথর ঘুমে,
ক্লান্ত তখন সেই নিশায়।

তুমি এসো
কোন এক বৃষ্টি ভেজা দুপুরে।
আমি তখন ব্যস্ত হবো,
তোমার আপ্যায়নে
বিরিয়ানির পাত্র ধরে।


প্রতিবাদী রাজপথ

আমার মনে কষ্ট আছে,
বুকে ব্যথা আছে,
খোদাই করা আছে
আমার হৃদয়ে, অভিমান।
থাকাটাই স্বাভাবিক কিনা বলো।
আমি রাজপথ, প্রতিবাদহীন রাজপথ।

দলিত মথিত করে আমাকে,
দীর্ণ বিদীর্ণ করে দেয় আমার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।
এক টুকরো নীরব সান্তনা পাইনি কোনোদিন।
হয়তো বলবে,এটা তোমার জীবনদর্শন,
হয়তো তাই।

অবশ্য প্রলেপ দেওয়া হয়
আমার মুখমন্ডলে।
যাতে আমি সুশ্রী থাকি।
আমি রাজপথ,
আমার বুকে জনতা হাঁটে 
গাড়ি ঘোড়া ছুটে, আরো কত কি।
আনন্দের সাথে, আর্তনাদের সুর
অনুরনিত হয় আমার হৃদযন্ত্রে।
আমি যেন সর্বংসহা।

বুভুক্ষ মানুষের মিছিল হয় আমার বুকে।
তারা বলে খাদ্য দাও।
বেকারদের মিছিল হয়,
অবস্থান করে আমার বুকে,
দাবী চাকরি দাও।
যাদের ছাদ নেই,
তারাও আন্দোলন করে আমার উপর,
তাদের ছাদ চাই।
আরো কত সুখ দুঃখের
কাব্য আছে, আমার পান্ডুলিপিতে।

সবই সহিতে পারি বন্ধু।
মানুষের কান্নার রোল
আমার অন্তরকে পীড়া দেয়।
তখন আমি প্রতিবাদী হই।
বলি–সত্য এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা হোক,
অত্যাচারী নিপাত যাক,
ঈপ্তিস মুখে এক চিলতে হাসি আসুক।


পেজে লাইক দিন👇



Post a Comment

0 Comments