জ্বলদর্চি

শুশুনিয়া: পাহাড় নয় এক টুকরো ইতিহাসও /সূর্যকান্ত মাহাতো

জঙ্গলমহলের জীবন ও প্রকৃতি

পর্ব - ৪১

শুশুনিয়া: পাহাড় নয় এক টুকরো ইতিহাসও

সূর্যকান্ত মাহাতো


"পুষ্করণাধিপতে মহারাজ শ্রীসিংহবর্মন: পুত্রস্য
 মহারাজ শ্রীচন্দ্রবর্মন কৃতি:" 

"চক্রস্বামিন দাসাগ্রেণাতি সৃষ্ট:"।

বন্ধুর মুখে এই সংস্কৃত উচ্চারণ শুনে বললাম, "এটা আবার কি ধরনের শ্লোক! রাজাদের নামও আছে দেখছি।" আসলে বন্ধুটির প্রাচীন সাহিত্য ও ইতিহাসের উপর বরাবরই ঝোঁক। নানান ধরনের পুরাণ, ধর্মগ্রন্থ, ইতিহাস নিয়ে চর্চা করে। আর সেসব থেকে নতুন কিছু পেলেই সকলকে সেটা জানিয়ে অবাক করে দেয়। ভাবলাম, এটাও সেরকমই কোন কিছু।

বন্ধুবর আমাকে অন্ধকারে রেখেই বললেন, "এই প্রাচীন 'লেখ'-টিকে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, "দি ওল্ডেস্ট ব্রাহ্মী ইনসক্রিপশন ইন বেঙ্গল।" শুধু তাই নয়। অশোকের আমলের হরফে লেখা যে 'প্রাকৃত লিপি' আছে, প্রাচীনতার দিক থেকে তারপরেই জঙ্গলমহলের এই প্রাচীন লিপিটির স্থান। সময়কাল খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক। আরো আছে। গুপ্ত যুগ থেকে বাংলার যে পরিচিতি একটু একটু করে প্রমান সহ বৃদ্ধি পেয়েছে সেটাও এই লিপি থেকেই প্রমাণিত হয়েছে।" (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস/ সুকুমার সেন, প্রথম খন্ড।)

"আরো আছে"
"আরো?"
"হ্যাঁ। প্রাচীন কালে বাংলাদেশে একসময় যে বিষ্ণু উপাসনা হত এটি তার প্রথম ঐতিহাসিক দলিল। (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস/ সুকুমার সেন)

জানার জন্য আমি প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ধৈর্য হারা হয়ে বললাম, "কি এই প্রাচীন লিপি, যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এতখানি!"

বন্ধু বললেন, "ব্রাহ্মী লিপিতে রচিত একটি প্রাচীন 'শিলালিপি'। সুকুমার সেন ও পূর্ত বিভাগের প্রাক্তন যুগ্ম সচিব অমিয় কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের বইয়ে একে 'গুহালিপি' বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমি একে 'গুহালিপি' বলে মনে করি না। বরং 'দেওয়াল লিপি' বা 'পর্বতগাত্র লিপি' বলেই অনেক বেশি যুক্তিসম্মত বলে মনে করি।"

আমি যদিও অন্ধকারে তবু বললাম, "সুকুমার সেন এবং অমিয়বাবুর মতো বিজ্ঞ মানুষের উপর ভিন্নমত পোষণ করাটা একটু দুঃসাহসিক হয়ে গেল নাকি!"
বন্ধু কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন, "একেবারেই না। তাহলে বিষয়টা খুলেই বলি। যে প্রাচীন লিপিটি নিয়ে এত কথা সেটা হল, 'শুশুনিয়া লিপি'। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা কিছুটা সংস্কৃত ভাষার একটি প্রাচীন লিপি। যার কিছুটা অংশ পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। আমি যেটুকু বলেছি সেটকুই। এছাড়া আরও একটি বিশেষ লিপিতে দুটো লেখা আছে। কিছুটা লম্বা লম্বা লেজ যুক্ত আকারের সেই লিপি। মাথার দিকটা কিছুটা শাঁখের মতো। এই "লেখ"-টির পাঠোদ্ধার এখনো সম্ভব হয়নি। আর 'পাহাড়ের গা' বললাম এ কারণেই, কারণ যেখানটাতে এই লিপি লেখা বা খোদাই করা আছে সেটা কোন মতেই গুহা নয়। পাহাড়ে গায়ের উপর বেশ বড় একটা চাটান পাথরের দেওয়াল। সেই দেওয়ালের উপরেই লিপিটি খোদাই করা হয়েছে। মূল পাহাড়ের উত্তর দিকে অর্থাৎ পিছনের দিকে একটি দুর্গম জায়গায় লম্বা এক চাটান পাথরের গায়ে লিপিটি রচিত হয়েছে। জায়গাটি বিশাল বড় বড় সাদা ও কালো চাটান পাথর দিয়ে ঘেরা। আত্মগোপনের একটি শ্রেষ্ঠ স্থান। শিলালিপির নিচে আত্মগোপনের মতো একটি আড়ালযুক্ত স্থান গড়েও তোলা হয়েছে। সেটাকেই কিছুটা গুহার মতো মনে করা হয়েছে। যদিও সেটা আদৌ কোন গুহা নয়। রাজা চন্দ্রবর্মন গুপ্ত রাজাদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতেই বোধ হয় এই পর্বত গাত্রে কিছুকাল আত্মগোপন করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে জায়গাটা দেখার পর আমার অন্তত সে কথায় মনে হয়েছে। আবার লিপিকৃত দেওয়ালের অদূরেই আছে একটি পাহাড়ি ঝরণা। সুতরাং আহার, পানীয় ও আত্মগোপনের একটি আদর্শ স্থান বলা যেতে পারে। তাই সেখানে সসৈন্য রাজা বাসস্থান কালেই হয়তো এই লিপি ও লেখচিত্রটি খোদাই করেছেন এমনটা মনে করা যেতেই পারে।"

"কী আছে সেখানে?" আমি উৎসাহ নিয়ে জানতে চাইলাম।
একটা বড় চাটান পাথরের অমসৃণ দেওয়াল। পাথরটা কেটে কেটে দেওয়ালের আকার তৈরি করা হয়েছে। দেওয়ালের মাঝখানে একটি চক্র আঁকা আছে। বাইরের দিকে একটা বড় বৃত্ত। তার ভিতরেই আছে আরও একটি বৃত্ত। বড় বৃত্তের বাইরের গায়ে চৌদ্দটি অর্ধ বৃত্ত রয়েছে। অর্ধ বৃত্তগুলোও দুটি করে। একটি বাইরের দিকে, একটি ভিতরের দিকে। অর্ধ বৃত্তগুলো বেশ নকশার আকারে চক্রের বাইরের বৃত্তটিকে ঘিরে রেখেছে। দুটি অর্ধ বৃত্তের মাঝখানে একটি অগ্নিশিখার মতো বেরিয়ে এসেছে। এই শিখাগুলোও সংখ্যায় চৌদ্দটি। চক্রের একেবারে কেন্দ্রে আছে আরও একটি  অগ্নিশিখা। দেখতে অনেকটা বাংলার "১" এর মতো। কেন্দ্র থেকে পুরো বৃত্তটা ৪৮টি স্পোক দিয়ে ঘেরা। চক্রের মুখোমুখি দাঁড়ালে চক্রের বাম পাশে একেবারে সমান্তরালে চক্রের পাশেই একটি শব্দে লেখা আছে, "চক্রস্বামিন দাসাগ্রেণাতি সৃষ্ট:"। লিপি 'ব্রাহ্মী'। একে 'গুপ্ত' লিপিও অনেকে বলেছেন। ভাষা অনেকটা সংস্কৃত ঘেঁসা বলে এর পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়েছে। এই শব্দটি যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক তার নিচেই আরো একটি শব্দ লেখা আছে। তবে এই শব্দটির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি। ঠিক এই শব্দটির হরফেই চক্রের নিচে ডানদিকেও দুটি শব্দ আছে। তারও পাঠোদ্ধার এখনো হয়নি। লম্বা লম্বা লেজযুক্ত, মাথার দিকটা অনেকটা শাঁখের মতো। চক্রের একদম নিচে পরিষ্কারভাবে দুটো লাইনে লেখা আছে, "পুষ্করণাধিপতে মহারাজ শ্রীসিংহবর্মন: পুত্রস্য/মহারাজ শ্রীচন্দ্রবর্মন কৃতি:"।

আমি বললাম, "কোন চন্দ্রবর্মন! পুরনো দিল্লির ধ্বংসাবশেষে কুতুব মিনারের কাছে 'কুতুব উল ইসলাম' নামে এক মসজিদের গায়ে একটি লৌহস্তম্ভ আছে। তার গায়েও খোদাই করা আছে 'চন্দ্র' নামে কোন এক রাজার নাম। শুনেছি তিনিও নাকি বাংলা ও বল্হিক দেশ জয় করেছিলেন। এ কি সেই 'চন্দ্র'?"

বন্ধু বললেন, "আরে, বাঁকুড়ার 'চন্দ্রবর্মন' এবং দিল্লির স্তম্ভে রচিত 'চন্দ্র' একই ব্যক্তি।"

বললাম, "হতেই পারে না। স্মিথের মতো প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন লৌহ স্তম্ভে রচিত 'চন্দ্র' আর কেউ নন তিনি সমুদ্রগুপ্তের পুত্র 'দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত'।"
বন্ধু বললেন, "এটাই তো তোদের দোষ। সব সময় খন্ড ইতিহাস জেনে তর্ক করিস। এ দোষ কেবল তোর একার নয়। সঠিক ইতিহাস না জানার দোষ। আমি মনগড়া কিছু বলি না। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মালব দেশে, প্রাচীন দশপুর যা এখন 'মন্দসোর' নামে পরিচিত, সেখানে এক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে থেকে একটি শিলালিপি আবিস্কার করেন। সেই লিপিতে দেখেন চন্দ্রবর্মার ভাইয়ের নাম নরবর্মন। তিনি ৪৬১ বিক্রমাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। সেই লিপির প্রামাণ্য তথ্য থেকে শাস্ত্রী মহাশয় প্রমাণ করেছেন দুই 'চন্দ্র' একই ব্যক্তি। তাছাড়া এলাহাবাদের দুর্গে অশোকের শিলাস্তম্ভে সমুদ্রগুপ্তের যে প্রশস্তি উৎকীর্ণ আছে, সেখানেও সমুদ্রগুপ্ত "চন্দ্রবর্মা" নামে এক আর্যাবর্তকে যুদ্ধে পরাজিত করার প্রমাণ আছে। তাই এই "চন্দ্রবর্মা'-ই হলেন রাজা 'চন্দ্রবর্মন'। সুতরাং শুশুনিয়া শিলালিপির 'চন্দ্রবর্মা' আর দিল্লির স্তম্ভলিপির 'চন্দ্র' যে একই ব্যক্তি তা তিনি জোর দিয়েই বলেছেন। (বাঙ্গালার ইতিহাস/ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।) এছাড়াও দিল্লী স্তম্ভের জনৈক 'চন্দ্র' বিষ্ণুর পাদগিরিতে বিষ্ণুর 'ধ্বজ' স্থাপন করেছিলেন এবং 'বঙ্গদেশ' ও 'বহ্লিক' দেশে যুদ্ধ জয় করেছিলেন। আবার শুশুনিয়া পাহাড়ের খোদিত চক্রে "চক্রস্বামিন দাসাগ্রেণাতি" তথা বিষ্ণুর অগ্রদাস রূপে চন্দ্রবর্মন নিজেকে দাবি করেছেন। 'চন্দ্র' নামে দুই রাজাই যেভাবে বিষ্ণুর একনিষ্ঠ উপাসক তাতেই তো পরিষ্কার তারা পৃথক দুই ব্যক্তি ছিলেন না। একজনই ছিলেন।

আমি বললাম, "তাহলে 'স্মিথ' এর মত ঐতিহাসিকেরা কি তবে ভুল লিখেছেন?"

বন্ধু বললেন, "না। তবে তথ্য বিস্মৃত তো হতেই পারেন। তাই তো তিনি পরবর্তীকালে সেই ভুল বুঝতেও পেরেছিলেন। কারণ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রাপ্ত শিলালিপির উপর একটি যথার্থ প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেটি প্রকাশিত হওয়ার পর 'ভিন্সেন্ট স্মিথ' শাস্ত্রীর মতকেই গ্রহণ করেছিলেন (Early History of India, Third Edition)।

বন্ধুর কাছে আমি চন্দ্রবর্মার সঠিক ইতিহাসটা জানতে চাইলাম। বন্ধু বলল, "তার আগে শুশুনিয়া লিপির লেখাটা সম্পর্কে একটু বলে নিই। শুশুনিয়া লিপির অর্থ যেটুকু উদ্ধার করা গেছে। সেটা অনেকটাই সংস্কৃত ঘেঁসা। চক্রের নিচের লেখাটি হল, "পুষ্করনাধিপতে মহারাজ শ্রীসিংহবর্মন: পুত্রস্য
 মহারাজ শ্রীচন্দ্রবর্মন কৃতি:
চক্রস্বামিন দাসাগ্রেনাতি সৃষ্ট:"
এর বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়--- 'পুষ্করনার অধিপতি মহারাজ শ্রী সিংহবর্মার পুত্র মহারাজ শ্রীচন্দ্রবর্মার কীর্তি। চক্রস্বামী অর্থাৎ বিষ্ণুর অগ্রদাসের দ্বারা সৃষ্ট।'

"এখান থেকে জানা গেল রাজা চন্দ্রবর্মন ছিলেন রাজা সিংহবর্মনের পুত্র। 'পুষ্করণা' ছিল তাদের রাজধানী। সমুদ্রগুপ্তের প্রশস্তি তথা "এলাহাবাদ প্রশস্তিতে" বঙ্গদেশ সম্পর্কে যে দুটি জায়গার নাম উল্লেখ আছে। তার একটি হল "সমতল" যা অধুনা পূর্ববঙ্গে অবস্থিত। এটি সমুদ্রগুপ্তের 'করদরাজ্য' ছিল। আর অন্যটি হল "পুষ্কর্ণ"। এই 'পুষ্কর্ণ' বা 'পুষ্করণ' বাঁকুড়া জেলায় অবস্থিত। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা সিংহবর্মন। তিনি তৃতীয় শতকের শেষভাগে রাজত্ব করতেন। সমুদ্রগুপ্তের সময়কালে পুষ্করণের অধিপতি ছিলেন রাজা চন্দ্রবর্মন। তিনি সিংহবর্মনের পুত্র। চতুর্থ শতকের প্রথম দিকে তিনি রাজত্ব করতেন। চন্দ্রবর্মনের রাজ্য শাসনের সীমা, পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর "হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। চন্দ্রবর্মনের দুর্গের নাম ছিল 'চন্দ্রবর্মনকোটা'। অবশেষে সমুদ্রগুপ্তের কাছে চন্দ্রবর্মনের পরাজয় তো আমরা ইতিহাসে পড়েছি। (ভারতের ইতিহাস ও জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম/ রাজু শেঠ)।

বললাম, "কিন্তু 'পুষ্করণ' বলে তো বাঁকুড়াতে কোন জায়গার নাম নেই!"

বন্ধু দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, "কে বলল নেই! আজকের 'পাখান্না' গ্রামটিই তো প্রাচীন কালের পুষ্করণ। পন্ডিত মহলে এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই। বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানার অন্তর্গত এই গ্রাম (জে. এল. নম্বর ৫৭ ও ৫৮)।

"কিন্তু এ পাখান্নাই যে লিপিকৃত 'পুষ্করণ', সেটার কি কোন প্রমাণ আছে?"

বন্ধু বললেন, "প্রাচীন সেই রাজধানীর কোন পরিচয় হয়তো আজ আর সেরকম ভাবে পাওয়া যায়নি। তবে প্রাচীন দিঘী আছে কয়েকটা। গ্রামের ইতিউতি উৎখনন এর ফলে প্রাপ্ত প্রাচীন পুর বস্তুগুলোর গুরুত্বও দারুণ। এগুলোই 'পাখান্না' গ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ১৯২৭-২৮ সালে একটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে হয়েছিল এই গ্রামের উপর। সেই সার্ভে রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে শ্রী কে. এন. দীক্ষিত একটি প্রবন্ধও লিখেছিলেন। সেখানে গ্রামের চতুর্পাশের শিলাখণ্ড, রাজগড় নামের এক ঢিবি, ঢিবির চারপাশে প্রাপ্ত ভাঙ্গা ইট, মাটির বাসন ও অন্যান্য প্রাচীন প্রাপ্ত পুরবস্তুর উপর আলোকপাত করেছিলেন। প্রাচীন জলাশয়কে বলে 'পুষ্কর' বা 'পুকুর'। এই নামকরণের থেকেও উনি সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, এই "পাখান্না' গ্রামটিই একসময় 'পুষ্করণ' নামে অভিহিত ছিল। (বাঁকুড়া জেলার পুরা কীর্তি/ অমিয় কুমার বন্দোপাধ্যায়)
আমি বললাম, "কয়েকটা প্রাচীন পুকুর বা দিঘী কিংবা ভাঙ্গা ইট, মাটির বাসন থেকে কি এত বড় প্রমাণ হয় যে পাখান্নাই পুষ্করন।"


বন্ধু বললেন, "না। সেটা হয়নি। তবে আরও কারণ আছে। পরবর্তীকালে এই গ্রামের উপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আশুতোষ মিউজিয়াম' দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে ছিল। তারা ছাঁচে ফেলা মুদ্রাসহ অন্যান্য ছাপার মুদ্রা, পোড়ামাটির তৈজসপত্র, টেরাকোটার মূর্তি এবং বিভিন্ন রকমের পুঁথি পেয়েছিলেন। সেগুলো 'আশুতোষ সংগ্রহশালায়' সযত্নে সংরক্ষিতও আছে। কারও সন্দেহ হলে যে কেউ সেগুলো দেখে আসতে পারে। ছাপ দেওয়া প্রাপ্ত তামার মুদ্রাগুলো খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যে প্রচলিত ছিল বলে মনে করা হয়। সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় 'পাখান্না' গ্রামে একটি পোড়ামাটির 'মূর্তি' পেয়েছিলেন। আশুতোষ মিউজিয়ামকে সেই মূর্তিটি তিনি উপহারও দেন। মনে করা হয় এই মূর্তিটি মৌর্য অথবা শুঙ্গ যুগের। (বাঁকুড়া জেলার পুরা কীর্তি/ অমিয় কুমার বন্দোপাধ্যায়) সুতরাং এটা নিয়ে কোন দ্বিমত থাকা উচিত নয়।"

এত বড় একটা ইতিহাস শুশুনিয়া পাহাড়ের গায়ে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে বছরের পর বছর? অথচ আমি সেটা এখনো স্বচক্ষে প্ৰত্যক্ষ করিনি! তাই বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম চন্দ্রবর্মনের সেই "বিষ্ণুচক্র" ও প্রাচীন লিপির ইতিহাসকে একবার সামনে থেকে প্ৰত্যক্ষ করতে।

চলবে...
 
পেজে লাইক দিন👇

Post a Comment

0 Comments