খোঁজো তুমি গৌরাঙ্গ সহচরে
গৌতম বাড়ই
দেখেছেন তিনি হাত বাড়িয়ে হাতের উপর
জননী আমার পাপড়ি মেলা পদ্মফুলে
একপাশেতে মাতা আমার
অন্য পাশে জনক-কে
দু-মুঠো অন্নজল কিছু অবজ্ঞার খোসা তরকারি
বোঝে কী মানুষগুলো ছিল বড্ড দরকারি
যে যখন বুকে লেগে থাকে আজও
কৃষ্ণচূড়া হয়ে ওঠে অজানা ফুলটিও
মুখ তুলে চাওয়া শুধু গভীর বাঁচবার
জানি এ বেঁচে থেকে মরে যেতে চায় অনেকে
তবে বাঁচা আর মৃত্যুর মাঝেও
আছে এক ঘনঘোর অন্য জীবন
যেখানে লেগে থাকে জন্মের স্বাদ
তন্ময় হয়ে খোঁজ করে মাতৃজঠর
'কেউ কিছু নিয়ে আসেনা আর কেউ কিছু
নিয়েও যায়না'
এরকম একটি বোকাকথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়
নরম বা জনাকীর্ণ বাজারে
আর বাজারে মাথা তুলে হরদম
দাঁড়িয়ে আছে তোমার-আমার বৃদ্ধাশ্রম
যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ধর্মগ্রন্থ শোনেনা পড়েনা
চুপ করে শুধু চুপ করে
আকাশ দেখে যায় সারাবেলা
তারাদের সাথে কথা বলে সারা রাত্তির
তাদের কী অ-ধার্মিক বলা হবে ?
অ-ধার্মিক বা কী করে বলি -
সারাটা জীবন ধরে সংসারধর্ম পালন করেছেন
তাই একটা ধর্মযুদ্ধ চলে অনন্ত সারাজীবন
জীবন আর জীবের মাঝেও আরও এক ব্রহ্মধারা
আদি স্রোত কোল বেয়ে কুলুকুলু
সমস্ত উৎসরস আজও বড় নির্বোধ নিরাকার
শুধু মানুষের তিরস্কৃত ভণ্ডামী দিয়েছে আকার
মহাকার এই মহাশূন্যের -----
আদিতে সংঘাত
উথাল- পাথাল করে দেয় এক অতল গহবর
মহাশূন্যের সব অন্ধকার শুষে নিয়ে
চারিদিকে বিস্ফারিত হয়েছে আলোর সুষমা আর তেজ
সেই আদি আলোর স্রোত আমাদের আদিম জঠর
কল্পনা করে এঁকেছিল 'মা'
কল্পনার বাইরে যে নিত্যপুরুষ
তিনি আমাদের পিতা ---- প্রপিতামহ
আর এর মাঝখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আমরা
অযুত-বিযুত বংশধরেরা
দূরস্থানে আছে আমাদের পূর্বপুরুষ আর
আমাদের জগণ্মাতার অপরিশোধ্য ঋণ
সাহস ছাড়ালে খোসা আর খোসা ছড়িয়ে পরে
এক অবিভক্ত পেঁয়াজের
পাঁচশো বছর আগেকার এক ছবি অবিকল ভেসে যাচ্ছে
এক দুই তিন চার হাজার হাজারে
ছুটছে নীলাচল গৌরাঙ্গমাধবের সাথে
আমাদের বৃদ্ধাশ্রম আর তাদের পিতা-মাতারা
কেন তবে উড়ে চলে মাধবের পথে
কোনও কিছু জবর টেনেছে কি তাদের?
তিতিক্ষু তিতিক্ষু
ঐ যে ছুটে চলে গৌড়ের প্রবীণ সজ্জনেরা
শতাব্দী প্রাচীন এক মায়াবী কেদারায়
দোদুল ঝুলনায়
আকাশ আর চাঁদের এক অদ্ভুত সন্ধি ফুটে ওঠে
ক্রমে অন্ধকার হলে
খাদের কিনারায়
আহা কতদিন হল যে পার
ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে মানুষ দেখিনা আর বিভেদের জ্বালায়
বহ্নিচিতা উঠে আসে বুকের কিনারায়
এখন বোঝে মানুষটা ছিল খুব দরকারি
হন্যে হয়ে খুঁজুক সারা নীলাম্বর
বকের মতন শিথিল হতেই হবে বেলা বাড়লে আরও
দুটি মুখ তাকিয়ে আছে পরস্পর-ও
একটু আগে না হয় বাড়ো
আগে বাড়তে বাড়তে কোথায় চলেছে প্রভু দীননাথ
এতটা বাড়লে নাকি
পিছিয়েই আসা হয় সময়ের চাকায়
আমাদের মৃত্যুর আগে অনেক মৃত্যু ঘটেছিল
এ পৃথিবীর নানা ঘটনায় রোগে ভোগে অকালে
তবুও অনেক মৃত্যু দেখি আজকের কালেও
আগামীতেও মৃত্যুর সাথে অনেক মৃত্যু
গায়ে মেখে নেব
সে সব কী চাপা পড়ে যাবে আহ্নিক গতির যাঁতাকলে
অস্তিত্ব বিন্দুবৎ !
এই প্রকাণ্ড ব্রহ্ম চেতনের আলোক তলে
রাতের সুদূর নীহারিকায় সফেদ দুগ্ধ রাজপথে
এ কোন চেতনায় বিস্মিত হই
যার অতল গভীর অন্ধকারেও চেতনার দরজাগুলি
বারবার নড়ে ওঠে
ভেতরের ভেতরে বারবার কম্পন
তুফানের গায়ে মেঘ করে আসে ধুয়ো ওড়ে
কৃশ- কৃশ ঘোড়াগুলি ছুটে চলে কালাপানি সাগরের নীলে
আমাদের বৃদ্ধাশ্রম অন্তর স্ফূরণের শেষ অধিস্থান
আমাদের থেকে
এখন একক সত্তা অনুভব করি কালোত্তীর্ণ ভৈরবী!
এক এবং একক মিশে যেতে পারি পাতাদের ক্লোরোফিলে
অণু থেকে পরমাণুতে
জাগতিক এক অসম্ভব শক্তিশালী হয়ে ওঠা যায়
বৃহতের জগত থেকে অণুতে অণুতে
উপলব্ধি
আমি আজ পর্যন্ত কোথাও যায়নি
আমার এই গভীর জলপ্রদেশ ছেড়ে
নীল থেকে নীলে মিশেছে আমার অপার বিস্ময়
শুধু দৃশ্যের জন্ম দিয়ে যায়
কবেকার বণিকের মাস্তুলভাঙা জাহাজ
পড়ে আছে নীল উপহ্রদে
এই এখন আহারিকা বাসস্থানের পাশে
পৃথিবীর কারও কোন বাড়ি নেই ঘর নেই
প্রদেশ দেশ রাজ্য গ্রাম নগর
সবই তো দৃশ্যান্তর মাত্র!
দূর দ্বীপ প্রদেশে কারা যেন ঘরবাড়ি তোলে
বসত করে প্রবাল প্রাচীরে ঘিরে
সে'ও তো মুহূর্তের অবস্থান
বৃদ্ধাশ্রমের সাথে বড় মায়াবী প্রতীক একটি বৃক্ষের
কখনও নেমে তার বয়স্ক শেকড়ে হাত দিয়ে ফেলি
শিহরণ খেলে যায় শরীর অভ্যন্তরে
আশ্রিত পাখিগুলি ডানা ঝটপট করে
উড়ে চলে সুদূরে আকাশের নীল প্রদেশে
মুখোমুখি বসবার চেয়ার শূন্য হয়ে যায়
ভেসে যায় সাগরের নোনাজলে
খোঁজো তুমি গৌরাঙ্গমাধবে
যে গভীর দর্শনে তোমায় একদিন চলে যেতে হবে নীলাচলে
দৃশ্য আলোড়ন তোলে
আলোড়ন বুকের মাঝে বারবার
নিজস্ব কিছু তার
অন্তরের ঝকমকি
শ্বাস-প্রশ্বাসে দেয় উঁকি
মন বৈচিত্র্যে শূন্যে মেলায় এই নরদেহ
ছুটে চলো ছুটে চলো নিঃসন্দেহ
সব কিছু কিছু নয় অতি সামান্য এই দেহ-পদার্থ
উচ্ছন্ন জীবন থেকে শূন্যতা ভালো
বটবৃক্ষ শেকড় গেড়েছে ছড়িয়েছে নিজের অবস্থানে
বড় মমতায় হাত বোলাই তার গায়ে
অবস্থানে ব্রহ্মলোক দেখো হে স্থিতধী
আমি খুঁজে পেয়েছি আমার অমৃতলোক
আমার গৌরাঙ্গমাধব
জলথেকে উঠে আসা এই অনন্ত জীবন
জলপ্রদেশের অসীম বিস্তারিত গভীরতার
ছায়াপথের সলিলে হারাবে
শূন্যে মিলাবে
দৃশ্যে মিলাবে সমস্ত চরাচর
আমি বাড়িয়ে রেখেছি আমার দুই হাত
হাতে নেই আমার কোনও ধর্মগ্রন্থ
চোখ রেখেছি আকাশে-আকাশে সমতলে-সমতলে
অসীম উচ্চতায়
------ শেষ--------
4 Comments
Khub sundor hoyeche
ReplyDeleteআন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো।
Deleteএক দার্শনিক উপলব্ধি ও জীবনের আলেখ্য। খুব ভালো লাগল।
ReplyDeleteঅনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ রইলো।
Delete