জ্বলদর্চি

এক টুকরো অ্যাডভেঞ্চার..... /সুব্রত মাইতি

এক টুকরো অ্যাডভেঞ্চার.....
সুব্রত মাইতি

   আমরা চারজন ছুটির ঘন্টা শুনতে শুনতে হঠাৎ দুটো সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম,জ্যৈষ্ঠ মাসের বেলা দশটা নাগাদ।দুটো সাইকেলে দুজন করে ইট আর এবড়ো খেবড়ো মোরাম রাস্তা ধরে নদী পাড় বরাবর। ঝুঁকে পড়ছে বেনা ঘাস আর পার্থেনিয়াম।নদীর জল তলানিতে ঠেকেছে, মাঝে মাঝে কয়েকবার কালবৈশাখীর বৃষ্টির জন্য। এই সামান্য জলে শালুক পাতাগুলো মুখ তুলে তাকিয়ে আছে। আমার সাইকেলের পেছনে পাঁচ বছরের অয়ন আর অন্য সাইকেলে সৌম্য বার বছরের আর শ্রেয়া আট বছরের। মনের মত গল্প করতে করতে চলছি রাস্তা বরাবর। ছোট্ট অয়ন বলছে এগুলো কিসের খেত আমি বললাম ঝিঁঙে আর শসা খেত।ইদানিং আমাদের এদিকে ও খুব সবজি চাষ করছে চাষিরা।নদী বাঁধে শিমুলতলা গিয়ে একটা মাটির জমিদারি বাঁধের দিকে সাইকেল ঘোরালাম।সঙ্গে থাকা ছোটরা বলছে মাটির রাস্তায় সাইকেল চালানো দারুণ লাগছে। 

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 
জমিদারি বাঁধের বিপরীত দিকে ত্রিপলের ছোট্ট ঘরে রান্না বান্না করছে দুজন, আর পাশে বল্লী কাঠ দিয়ে সুর করে ভাঙা বাঁধ বাঁধছেন। সঙ্গে থাকা সঙ্গীরা বলছে কী গান গাইছে গো ওরা?ঠিক বলেছে ওরা সত্যি এই যে কাজের সময় এই মানুষেরা বেশ কাঁচা কথার সুরে গান ধরে। এই সুর এদের কাজের শক্তি ও বল।আমরা ধীর গতিতে সাইকেল নিয়ে যখন চলছি আকাশে মেঘ রোদের লুকোচুরি। চলতে চলতে আমরা শ্যামবাবুর ঝিলের পাশে এসে পৌঁছলাম,ঝিলের জল মারা হয়েছে। মাছধরা হয়েছে ঝিলের ধারে ভেজা জাল ও কয়েকটা বড় বড় হাঁড়ি পড়ে আছে। এদিকে পাঁকের মধ্যে পায়ের যে গর্তগুলো,সেগুলোতে জল আছে আর তাতে ছয়টা বক ঘুরে ঘুরে মাছ ধরছে। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আমরা এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করলাম।
     সময়ের সঙ্গে আমাদের চাহিদা বদলে গেছে। আগে এই ঝিলের জায়গাটাতে গাছের বাগান ছিল। তবে আশেপাশে এখনও গাছগাছালিতে ভর্তি। মাটির রাস্তা শেষ করে লাল মোরাম রাস্তা ধরে চলতে শুরু করলাম। সারি সারি দেবদারু ঝুঁকে পড়েছে কালবৈশাখীর তান্ডবে সঙ্গে এদিক ওদিক বাঁশও।সৌম্য বলছে এই মোরাম রাস্তায় আগে  আমি নেমন্তন্ন বাড়ি গিয়েছি।মাথা নুইয়ে নুইয়ে যেতে যেতে পাশে ঝোপের মধ্যে ডাহুকের ডাক।পাড়ার বৌরা বলছে এই ছোটরা তো আমাদের এলাকার নয়।আবার মোরাম থেকে জমির কয়েকটা আলপথ পেরিয়ে পাকা রাস্তায় উঠলাম।সকলে ঘামে ডুবে গেছি,চোখে মুখে ক্লান্তি আর তেষ্টায় প্রাণ আইঠাই।আর একটু সাইকেল চালিয়ে এগারোটা পঁয়তাল্লিশ নাগাদ ফিরলাম। আমারা একটু বসে সৌম্যর দেওয়া জল পান করে যে যার বাড়ি পৌঁছলাম।

Post a Comment

0 Comments