গুচ্ছ কবিতা
বিজন সাহা
ধুসর আকাশ
গলির মোড়ে
যেখানে অন্ধকার হারিয়ে গেছে আলোয়
অথবা ঘটেছে ঠিক উল্টোটা
একটা হাসি দাঁড়িয়েছিল।
মুক্তো ঝরা কিন্তু নিঃশব্দ।
একটু উপরে দুটো চোখ
হাস্যোজ্জ্বল।
কিছু বোঝার আগেই সব আকাশে মিলিয়ে গেল -
সেই ঠোঁট, সেই দুটো চোখ
সেই হাসি।
এখন সেখানে শুধুই ধূসর আকাশ।
কাজান, ২১ নভেম্বর ২০২২
দৃষ্টিভঙ্গি
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করে দেখার দৃষ্টিকোণের উপর
রাস্তায় হাঁটার সময় দালানগুলো মনে হয় দৈত্যের মত
এই বুঝি হাত বাড়িয়ে মটকে দেবে ঘাড়
তারপর সোজা পেটে চালান করে দেবে।
উঁচু দালানে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে চাইলে
নীচের দালানগুলো মনে হয় শিশুর মত
অথবা রঙ বেরঙের ঢেউ
লাল, কমলা, হলদে
শহর নয়
যেন বিশাল সমুদ্র।
কাজান, ২২ নভেম্বর ২০২২
তারার হাসি
রাতের তাপমাত্রা এখানে ছাব্বিশ ডিগ্রি -
হিমাঙ্কের নীচে।
বরফের কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে ভোলগা।
যদি না বাতাস শিস দিয়ে গান গাইতো
পথিক শুনতে পেত ভোলগার নাক ডাকার শব্দ।
রাস্তা জুড়ে শুয়ে আছে বরফ কণা
ঠিক যেন গৃহহীন মানুষের দল
একে অন্যের গায়ে গা লাগিয়ে যেন শীত থেকে বাঁচতে চাইছে
ওদের শরীর মাড়িয়ে মানুষের হেঁটে যাওয়ার কচ কচ শব্দ
বাতাস নিয়ে যায় দূর দূরান্তে
এই মায়াবী পরিবেশে বসন্ত সাজে সজ্জিত
গাছেরা সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে
বরফের সাদা ফুলে আপাদমস্তক ঢেকে।
আর ঠান্ডায় জমে বুড়ো চাঁদ আঁটকে গেছে মগ ডালে।
নিশাচর ভবঘুরে এক জন দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে
ভোলগার বুকে চাঁদের আলোর লুটোপুটি খাওয়া
গাঢ় নীল আকাশের গায়ে লেপটে থাকা তারারা
চাঁদের আলোর খেলা দেখে মিটিমিটি হাসছে।
দুবনা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇
যুদ্ধ
সামার ক্যাম্প। শিশুদের কোলাহল।
রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়ো হয়েছে শিশুরা
এসেছে দনবাসে ছেলেমেয়েরাও -
একসাথে গ্রীষ্মের উষ্ণতা উপভোগ করবে বলে।
সবাই জমা হয়েছে ডাইনিং রুমে।
সবাই অপেক্ষা করছে খাবারের জন্য।
হঠাৎ বিকট শব্দ। না, তেমন কিছু হয়নি।
পরিবেশনকারীর হাত ফস্কে হাতাটা পড়ে গেছে।
এমন হয়। নতুন কিছুই নয়।
কিন্তু একি! এতগুলো বাচ্চা মেঝের উপর শুয়ে আছে কেন?
আর ছোটদের নিজেদের শরীর দিয়ে ঢেকে রেখেছে আরেকটু বয়সী সবাই?
পরিবেশনকারী হতভম্ব। বাকী শিশুদের চোখ বিস্ফারিত।
এমন কী হয়েছে যে মেঝেতে শুয়ে পড়তে হবে?
পরে দেখা গেল যারা শুয়ে পড়েছিল তারা সবাই দনবাসের শিশু।
বিগত আট বছরে প্রতিটি শব্দই তাদের কাছে গুলির শব্দ।
শব্দ মানেই চারিদিকে ভাঙা কাঁচ আর বোমার টুকরো।
শব্দ মানেই কারো মৃত্যু।
তাই আজ তারা আর কারো অপেক্ষা করে না।
শব্দ শোনা মাত্রই মাটিতে শুয়ে পড়ে।
আর প্রতিটি শিশু জানে নিজের জীবন দিয়ে হলেও
তাকে রক্ষা করতে হবে তারচেয়ে ছোট কাউকে -
যে একদিন তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে।
যুদ্ধের শিশুরা এভাবেই সারা জীবন বুকের ভেতর যুদ্ধ বয়ে বেড়ায়
বয়ে বেড়ায় যুদ্ধের বিভীষিকা।
দুবনা, ২০ জানুয়ারি ২০২৩
আলো আঁধার
অন্ধকারে হারিয়ে গেছে আলো
আজকের দুনিয়ায় শুনি সেটাই নাকি ভালো
শান্তি নয় যুদ্ধ চাই চারিদিকে এক আওয়াজ
ছেলে বুড়ো যুদ্ধে যাবে সবাই করে কুচকাওয়াজ
বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পোড়ে যুদ্ধের এই আগুনে
লক্ষ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন গুনে
মৃত্যুতে কার কি এসে যায়? নেতারা সব ঠিক করে
এক বিলিয়ন থাকবে বেঁচে, বাকীরা সব যাক মরে।
দুবনা, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
জীবন
কবি তুই কবে কবি
দ্বেষ দিয়ে হয় না দেশ
ভালো বাসা ভালোবাসা হলে
জীবনটা ভাই কাটত বেশ
জলে যখন আগুন জ্বলে
প্রকৃতিতে বিপর্যয়
মানুষের প্রকৃতি এই
সবাইকে চায় করতে জয়
জীবন নিয়ে ভাবে না সে
ভাবছে এমন দেখায় ভাব
এটাই যদি জীবন হয়
এ জীবনে কিসের লাভ?
সত্যের সে পায় না দেখা
চারদিকে তার মিথ্যা দেয়াল
নিজের সত্যে অন্ধবিশ্বাস
এটাই তার হয়েছে কাল
দুবনা, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
0 Comments