জ্বলদর্চি

কবিতাগুচ্ছ‌ /মৌমিতা চ্যাটার্জী

কবিতাগুচ্ছ
মৌমিতা চ্যাটার্জী

(কাজী নজরুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার নিবেদন)


সাম্যবাদে বিদ্রোহী

আমি সাম্যবাদের কবি।
আমি নিষ্পেষণের শিকল ভেঙেছি,
অত্যাচারীর আঘাত হেনেছি,
মহাযজ্ঞের বিভূতি তে আঁকি,সর্বহারার ছবি।
আমার কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে সাম্যবাদের গান-
আমার চোখে এক হয়ে গেছে ,আছে যত ভগবান।
আমি পাঠ করে যাই গীতার বাণী,
মুয়াজ্জিনের আজান।
কখন‌ও পুড়েছি মহাশ্মশানের চিতার বহ্নিশিখায়,
আমার আত্মা পেয়েছে শান্তি,ভাইয়েদের জানাজায়।
আমি,অহংকারীর মিথ্যা দর্প অনায়াসে ঠেলি পায়,
অসহায়,যত নির্ধনজাতি-ধুলো মেখে আছে গায়।।
সম্বলহীন-নরনারায়ণে,বুকেতে জড়াই স-সম্মানে,
নত করি শির তাদের চরণে, অবাধ,নির্দ্বিধায়।
আমি একাধারে মাতি মহাবিদ্রোহে,স্বার্থকে করি ঘৃণা,
উৎপীড়কের ধ্বজা ভুঁয়ে ফেলি,বাজিয়ে প্রলয় শিঙা।
পূর্ব থেকে পশ্চিম,উত্তর হতে দক্ষিন,
আমি,উন্মাদপ্রায়, দৌড়ে বেড়াই,
সতেজ,ক্লান্তিহীন।
আমি,প্রথম প্রেমের কলি হয়ে ফুঁটি,চপলা কুমারী মনে,
'নির্ঝরিনী'র সুর গেয়ে উঠি-'দোলন চাঁপা'র বনে।
আমি মনোযোগী হ‌ই পুনরূদ্ধারে জাতির হৃত গৌরব,
প্রবল ক্রোধে বাজাই ডমরু,আমিই রুদ্র-ভৈরব।
করি ঔদ্ধত্যের নাশ,
হৃদয়ে জপেছি সংহার বাণী,
আমি ধরণীর ত্রাস।।
আমি রোপন করেছি অতীত যুগে যে,মহামিলনের বীজ,
প্রীতির ছায়ায় বিকশিত হোক,হৃদয়ের সরসিজ।
আমি,স্বপ্নে রচেছি প্রভেদ মুক্ত-প্রোজ্জ্বল পৃথিবী,
যা আছে ভেদ,বাদ-‌অনুবাদ,
ক্ষয় করেছি ধর্ম আঘাত,
'মানব পরম সত্য'-জ্ঞানেতে হয়েছি সাম্য কবি,
আমিই স্বর্গ,আমিই দোজখ্,আমিই দীনের নবী।
আমার‌ই বুকের আগুনে জ্বালাব,চির অক্ষয় রবি।

জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇


জ্বলদর্চি তিরিশ পেরিয়ে... 

একদিন ঠিক যাব

নবান্নের ধানের শীষের ঠোঁট, আলো মেখে,
যেদিন জানাবে আন্তরিক আমন্ত্রণ,
মেঠো লাল পথের, হৃদয় জুড়ে,যেদিন বাজবে  অপরিচিতা, গ্রাম্য ষোড়শী বালার আলতা পায়ের নুপুর নিক্কণ,
বিবর্ণ হলদে কোনো এক অঘ্রাণের শেষবেলায়, আমায় ডাক পাঠাবে ব্যথিত সন্ধ্যাকাশের, ক্লান্ত তারার দল।
সেদিন ঠিক উড়ে যাব, ভর করে শঙ্খচিলের ডানায়,
দিকশূন্যপুরের ঠিকানায়।

আমায় ডাক পাঠাবে,
সাঁঝবেলার হাওয়া, মন্দমধুর, 
রূপালী নদীর অলস ঢেউ, ওপারের দিকভুলানিয়া সুর। 
বেদনাহীন উত্তরণের পথ, স্পষ্ট হবে
সবুজ খদ্যোতের আলোকিত আয়নায়।
শুভ্র চাঁদ মেলে দেবে একফালি মখমলি কিরণ, 
সেইদিন, মিশে যাব একমুঠো স্ফটিকের নিখিল জ্যোৎস্নায়।



চলার শপথ

যেটুকু শব্দ দিলে 
কথারা হয় আদুরে গান, 
যেটুকু মায়াবী জ্যোৎস্নায়, নাকের ডগা ছুঁয়ে থাকা স্বেদবিন্দুরা হয়ে ওঠে গহীন জলের নদী।
 হিমেল রাতের ক্ষীণ কুয়াশার, অন্তরঙ্গ ওমের চাদরের ঋণে ততটুকু বেঁধো, অবিরাম,
সাথে নিও, ছায়াপথ চলার, বুক ভরা  স্বেচ্ছা শপথ,
 শুরু থেকে শেষ অবধি।

Post a Comment

0 Comments