জ্বলদর্চি

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে, হীরকজয়ন্তী বর্ষে হবিবপুর সরস্বতী বিদ্যামন্দির হাইস্কুল

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে, হীরকজয়ন্তী বর্ষে হবিবপুর সরস্বতী বিদ্যামন্দির হাইস্কুল 

১৯৬৪ সালে মেদিনীপুর শহরের হবিবপুর সরস্বতী বিদ্যামন্দির হাইস্কুলের যাত্রা শুরু। সেই হিসেবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হীরকজয়ন্তী বর্ষে পা দিল। ঐতিহ্যে আস্থা রেখেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পেতে চায় আধুনিকতার স্বপ্ন-উড়ান।
১৯৬৪ সালে এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে। ১৯৮৪ সালে মাধ্যমিক ও ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রূপে প্রতিষ্ঠা পায় এই প্রতিষ্ঠান। যাত্রাপথের দীর্ঘ ইতিহাসে আছে ঐতিহ্য। বর্তমান ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে আধুনিক শিক্ষাদানের নানা আয়োজন। রয়েছে গ্রন্থাগার, মাল্টিজিম, কনজিউমার ক্লাব, প্রজেক্টরের অডিও-ভিস্যুয়াল মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা, নিজস্ব খেলার মাঠ, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি। আগামীদিনে, শিক্ষাকে আরও আধুনিকীকরণের পাশাপাশি খেলার মাঠ সংস্কারসহ একগুচ্ছ স্বপ্ন ও পরিকল্পনা রয়েছে। 
সম্প্রতি, মহাসমারোহে শেষ হল হবিবপুর সরস্বতী বিদ্যামন্দির হাইস্কুলের ৫৮ তম বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।  
১৯-২০ জানুয়ারি ২০২৩ ছিল বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মালা মজুমদার। সূচনাপর্বে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকশিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীবৃন্দ। সূচনায় খেলায় অংশগ্রহণকারী সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের খেলার নিয়ম-শৃঙখলা বজায় রাখার লক্ষ্যে শপথবাক্য পাঠ করান শিক্ষিকা বন্দনা দাস। দৌড়, স্কিপিং, অঙ্ক দৌড়, লং-জাম্প, গুলি-চামচ দৌড়, স্মৃতি-পরীক্ষা, মিউজিক্যাল চেয়ার, শট-পাট ইত্যাদি বিভাগে অংশ নেয় ছাত্রছাত্রীরা। ছিল ২০ টি ইভেন্ট। অংশ নেয় ১৮২ জন ছাত্রছাত্রী। ছাত্রদের মধ্যে দেবব্রত রায়(অষ্টম শ্রেণি) ও ছাত্রীদের মধ্যে সালমা খাতুন(সপ্তম শ্রেণি) সেরা খেলোয়াড় হিসাবে নির্বাচিত হয়। ছিল যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতাও। যেমন খুশি সাজো প্রতিযোগিতায় কেউ সেজে ছিল স্বাস্থ্যকর্মী, কেউ-বা ভারতমাতা রূপে, কেউ-বা নিয়েছিল কৃষ্ণ ঠাকরের রূপ। ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেবার জন্য শিক্ষকশিক্ষিকারাও উইকেটে 'বল ছুঁড়ে লক্ষ্যভেদ' খেলায় অংশ নেন। মিউজিয়াম চেয়ার, যেমন খুশি সাজো, উইকেটে লক্ষ্যভেদ ইত্যাদি খেলায় দারুণ উৎসাহ দেখে যায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। 
২৩ জানুয়ারি ২০২৩ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন পালন করা হয়। নেতাজির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মালা মজুমদার। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন শিক্ষক স্বরূপকুমার মণ্ডল ও শিক্ষক ভূপেন্দ্রনাথ সিং সর্দার। ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দ।
২৬ জানুয়ারি তথা প্রজাতন্ত্র দিবসে স্কুলের সভাপতি অশোক পালধি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ও প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। ওই দিন ছিল সরস্বতী পূজা। শিক্ষিকা অরিজিতা জানার তত্ত্বাবধান ও ছাত্রীদের সহযোগিতায় আলপনা ও হাতের কাজে অলংকৃত হয়েছিল পূজা মণ্ডপ। 
 ২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ছিল বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। ছিল নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন, কুইজ, হাতের লেখা ইত্যাদি প্রতিযোগিতা। 
৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছড়াকার, 'ছড়াপত্র সুসাথী' পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ দেব বর্মন এবং বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী জয়ন্ত সাহা। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁদের সম্মান জানানো হয়। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মালা মজুমদার, পরিচালন সমিতির সম্পাদক অশোক পালধি, অভিভাবক প্রতিনিধি রণজিৎ পাত্র প্রমুখ। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়। এদিনের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা পরিবেশন করে নাচ, গান, আবৃত্তি। সমগ্র অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সঞ্চালনা করেন শিক্ষিকা তৃণা মণ্ডল।

উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৮ ফেব্রুয়ারি প্রীতিভোজ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামূলক ভ্রমণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি এই সব ক্রীড়া ও নান্দনিক উৎসবে অংশ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা দারুণ খুশি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মালা মজুমদার জানান, "আজ আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানও হল। স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী জয়ন্ত সাহা ও বিশিষ্ট ছড়াকার প্রদীপ দেব বর্মন-কে অতিথি হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। তাঁদের বক্তব্যে আমরা সবাই ঋদ্ধ হয়েছি।"

জ্বলদর্চি এখন প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে। জ্বলদর্চিতে প্রকাশিত সমস্ত লেখা পড়তে জ্বলদর্চি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন। 👇

Post a Comment

0 Comments