জ্বলদর্চি

হুল দিবস /দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে


হুল দিবস

দোলনচাঁপা তেওয়ারী দে 

আজ ৩০শে জুন হুল দিবস। এই দিনটি কেন বিখ্যাত এবং এই দিনটির গুরুত্ব কি, আসুন সেই সম্পর্কে সবকিছুই জেনে নিই।

হুল দিবস সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মরণে পালিত হয়, যা ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন শুরু হয়েছিল। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সিধু ও কানহু মুর্মু এবং তাঁদের সঙ্গীরা। এই দিনটি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক

১৮৫৫ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মরণে প্রতি বছর ৩০ জুন হুল দিবস পালিত হয়, যা আদিবাসী বীর সিধো, কানহো, চাঁদ, ভৈরব প্রমুখের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল । ঝাড়খণ্ডের ৪০০টি গ্রামের ৫০,০০০ এরও বেশি আদিবাসী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। 

 'হুল',যার আক্ষরিক অর্থ বিদ্রোহ।  এই জনজাতি আন্দোলন শুধুমাত্র ভারত নয়, সর্বোচ্চ সম্মানে বিরল। 'সাঁওতাল বিদ্রোহ' এক দৃষ্টান্তও বটে। শাসকের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে অধিকার করে চাওয়ার এই সংগ্রাম আজও প্রেরণার স্রোত। সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। তার আগে ১৮৫৫ তে এই বিদ্রোহ সর্বোচ্চ ঐতিহাসিক বিদ্রোহ হিসেবে মনে করা হয়।

সহজ, সরল সাঁওতাল জনগণ জল-জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল । ভূমির উপর কর চাপায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। তাদের  কোম্পানি লেঠেল হিসেবে ব্যবহার করতো। শুধু তাই নয়, সাঁওতাল রমণীদেরও খারাপ নজরে দেখতো তারা। যা কখনো ভালোভাবে নিতে নিতে পারেনি সাঁওতারা। আস্তে আস্তে ক্ষোভ পূঞ্জীভূত হতে থাকে এবং বিদ্রোহের রূপ ধারণ করে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলায় (বর্তমানে ভারতের ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশার অংশবিশেষ) সাঁওতাল জনগোষ্ঠী জমি, বন ও জীবিকা হারানোর সংকটে পড়ে।জমিদার, মহাজন ও ঔপনিবেশিক প্রশাসনের নিপীড়নের ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধে। ঋণের দায়ে এবং জমির অধিকার হারিয়ে অনেক সাঁওতাল পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন বর্তমান ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার ভাগনাডিহি গ্রামে সিধু মুর্মু ও কানু মুর্মুর নেতৃত্বে সাঁওতালরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাদের সঙ্গে ছিলেন চাঁদ ও ভৈরব নামের আরও দুই নেতা। ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদারি শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ ইতিহাসে "সাঁওতাল হুল" নামে পরিচিত। সাঁওতালরা তীর-ধনুক ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসন ও জমিদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনী নামিয়ে বিদ্রোহ দমন করে। বহু সাঁওতাল নিহত হন, এবং আন্দোলনের নেতাদের অনেকেই নিহত বা বন্দি হন। এই বিদ্রোহের পর প্রশাসনিক ও আইনি কিছু পরিবর্তন আনা হয়। পরবর্তীকালে সাঁওতাল পরগণা নামক একটি আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চল গঠিত হয় এবং ১৮৭৬ সালে সাঁওতাল পরগনা প্রজাস্বত্ব আইন প্রণীত হয়, যা সাঁওতালদের জমির অধিকারের কিছু স্বীকৃতি দেয়।

🍂
ad

Post a Comment

0 Comments